নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিলীন হয়ে আছি এক ধোঁয়াটে ধূসরে

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে। হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।

অপ্রচলিত

প্রচলিত সব ধারণার বিপক্ষে।

অপ্রচলিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প - একটি নীল গোলাপ এবং......

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৫২

শুভ আজ খুব উত্তেজিত। সকাল থেকেই উসখুস করছে। অবশেষে সে ঠিক করেছে নীলিকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। অনেকদিন থেকেই নীলিকে শুভ ভালবাসে, কথাটা ওকে সাহস করে বলা হয় নি কখনো। যদি ও ফিরিয়ে দেয়? শুভ জানে সে এই প্রত্যাখ্যান সইতে পারবে না। তবু আজ কি মনে করে যে নীলিকে টিএসসিতে আসতে বলল। নীলির সাথে তার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। কখন যে তার মনে আলাদা একটি জায়গা দখল করে নিল মেয়েটি তা সে নিজেও বলতে পারবে না। এখন সে নীলিকে পাগলের মত ভালোবাসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার এক বন্ধুর এক শৌখিন খালার বাগান থেকে একটি নীল গোলাপ যোগাড় করতে পেরেছে। ব্যাগে করে গোলাপটি নিয়ে এসেছে শুভ, নীলিকে আজ ভালো একটি চমক দেওয়া যাবে। তবে নীলি যদি তাকে ভালো না বাসে?
হয়ত নীলি তাকে শুধু ভালো একজন বন্ধু হিসেবেই দেখে। কিন্তু নীলিকে ছাড়া যে সে......

- এই শুভ! কি চিন্তা করিস এত?
হঠাৎ চিন্তায় বাধা পড়ায় চমকে উঠে শুভ। ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকাবার আগেই কুট করে একটি চিমটি কাটে নীলি।
- নীলি! এত জোরে মারলি ক্যান? উফফ এখনো তো জ্বলছে!
ঘাড় মালিশ করতে থাকে শুভ। সে দিকে চেয়ে নীলিমা মনে মনে হাসে। কেন যেন শুভকে চিমটি কাটতে তার খুব মজা লাগে।
- এত আগে চলে এলি যে? আমি তো আরও আধাঘণ্টা পর আসতে বলেছিলাম।
- স্যার ছেড়ে দিল আজ তাড়াতাড়ি, বোর হচ্ছিলাম ক্লাসে বসে থেকে। তুইও তো আগেই এসেছিস।
- হ্যাঁ, চলে এলাম একটু আগেই। আমার তো আর ক্লাস নেই এখন। চল অন্য কোথাও বসি, এখানে আজ অনেক গরম।
- হুম চল তাহলে।

হাঁটতে হাঁটতে কলাভবনের দিকে চলে যায় ওরা। শুভ সাধারণত অনেক কথা বলে, তবে আজ সে বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। নার্ভাসনেস না অন্য কিছু, কে জানে। ঘাসের উপর বসে পরে ওরা।

- এবার বল কি জন্য ডেকেছিস?
- আমি কি তোকে এমনিই আড্ডা দেওয়ার জন্য ডাকতে পারি না? কোন কারণ থাকতেই হবে এমন কোন কথা আছে নাকি?
- তা নেই, তবে তুই তো এমনি এমনি কিছু করিস না। ব্যস্ত ভিআইপি মানুষ তুই!
- খোঁচা দিচ্ছিস? তা দিতেই পারিস। পরীক্ষা চলছিল তো আমার। তুই তো জানিসই এ ব্যাপারে আমি কতটা সিরিয়াস।

শুভ হালকা করে তার ব্যাগে হাত বুলায়। আছে তো নীল গোলাপটি? হ্যাঁ, ওই তো দেখা যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না তার কি বলা উচিত। এ রকম পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পড়ে নি। মেয়েদের পারতপক্ষে এড়িয়ে চলত সে, প্রেম নিবেদন করা তো দূরের কথা। আচ্ছা সে কি নীলিকে না বলেই চলে যাবে? কিন্তু তাজা নীল গোলাপটি? ধুত্তোর এত সংকোচ করলে কি প্রেম করা যায় নাকি, বলে ফেললেই তো ল্যাটা চুকে যায়। যা হওয়ার হোক না, এর পর দেখা যাবে।

- এই তোর কি হয়েছে বল না? এমন করছিস ক্যান আজকে? আর ব্যাগের মধ্যেই বা কি আছে এমন, চোরা চোখে তাকাচ্ছিস একটু পর পর।
- কই কিছু হয় নি তো, ব্যাগে আর কি থাকবে বই খাতা বাদে?
- শুভ!!! ঘুরাচ্ছিস কেন রে কথা? প্রেমে পরেছিস নাকি? তা মেয়েটি কে?
- আরেহ ধুর। সে রকম কিছু না।
লাজুক হেসে বলে শুভ। তবে বুকের ভিতর দিয়ে যেন টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা নীলি কি আন্দাজ করতে পারে তাকে সে কতোটা ভালোবাসে? মেয়েরা নাকি অনেক কিছুই বুঝতে পারে। তবে কি সেও মনে মনে... কিছুটা সাহস ফিরে পায় এসব চিন্তা করতে করতে।
- দাঁড়া তোকে একটি জিনিস দিতে চাই, ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে বলে শুভ।
- আমাকে আবার তুই কি দিবি?
- দ্যাখই না কি দেই। বলে গোলাপটি ধরেও সারতে পারল না শুভ। বাপ্পা মজুমদারের একটি জনপ্রিয় গান বেজে উঠলো নীলিমার মোবাইলে।

- হ্যালো
- ...
- না আমি এই তো কলাভবনে বসে আড্ডা দিচ্ছি। তুমি কি করছ?
- ...
- দুপুরে খাও নি কেন এখনও?
- ...
- কখন আসব?
- ...
- আচ্ছা এখনি আসছি। বাই।

- সরি দোস্ত। ফাহিম ফোন দিল, আমার এখনি যাওয়া দরকার।
- কোন ফাহিম, চশমা পরা যে ছেলেটি তোর পিছে লেগে থাকতো সারাক্ষণ?
জবাবে শুধুই হাসল নীলিমা।
- তুই না ওকে দেখতে পারতি না? এত খাতির হল কবে থেকে, ফোন দিলেই সুড়সুড় করে চলে যাচ্ছিস?
- কেন তুই জানিস না? ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখিস নি কাল আমার?
- নাহ ফেবুতে যাওয়া হয় নি কাল বলল শুভ। এটা আর বলল না সে নীলির জন্য হন্য হয়ে নীল গোলাপ খুঁজছিল কাল।
- আসলে ফাহিমকে আমি যা ভাবতাম ও মোটেও সেরকম না। এবার একসাথে একটি প্রোজেক্ট করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কাল সে এমনভাবে প্রপোজ করে বসল যে আর না করতে পারলাম না। ছেলে হিসেবেও ভালো আর তাছাড়া আমারও তো সেরকম পছন্দের কেউ নেই। সব ভেবে রাজি হয়ে গেলাম, বুড়ি হয়ে যাচ্ছি তো! হেসে বলল নীলিমা।

- ভালোই তো। তোর একটি গতি হল এবার। খাওয়াবি কবে সেটা আগে বল। নির্লিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখালেও মনটা একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে শুভর।
- খাওয়াব তো। আরও কিছুদিন যাক না, মাত্র তো শুরু হল। আচ্ছা আমি যাই গে, পরে দেখা হবে শুভ। ভালো থাকিস। তুই যেন কি দিতে চাচ্ছিলি?
- না তেমন কিছু না, পরে দিলেও হবে।
- আরে বোকা! আবার কি হল। এত ভাব দেখাচ্ছিস কেন আজ? দেখা না কি আছে তোর ওই বোঁচকায়।
- রোবটের মত চেইন খুলে নীলিমার পেন-ড্রাইভটা বের করে নির্লিপ্ত মুখে ওর হাতে দিল শুভ।
- এটা রেখে চলে গিয়েছিলি সেদিন।
- ওমা এই সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে এত নাটকীয়তা করার কি দরকার ছিল? তুই পারিসও কিন্তু।
- হুমম
- আসি তাহলে, অনলাইনে আসিস আজ বিকালে, কথা হবে।
- আচ্ছা।


পরিশিষ্টঃ
অস্তগামী সূর্যের আলোয় শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়ে বসে প্রেম করছে নিলয় আর চৈতি। আচমকা চৈতি বলে উঠলো ওমা দেখো না, কি সুন্দর একটি নীল গোলাপ ভেসে আছে? চৈতি বা নিলয় কেউ জানল না নোনা জলে গোলাপটি সিক্ত।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৮

অনিকেত রহমান বলেছেন: যত তাড়াতাড়ি পারা যাক নীলাকে শুভর মনের কথা বলে ফেলা উচিৎ।।



অনেক আবেগি লেখা । শেষটা সুন্দর ছিল।।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫২

অপ্রচলিত বলেছেন: বেশ পুরনো একটি পোস্ট পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন দেখছি!
আলাদা করে বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ দিতেই হয় ;)

খোলামেলা মতামত এবং প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন নিরন্তর :)

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:২৭

মামুনূর রহমান বলেছেন: পরিশিষ্টটা চমত্‍কার

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৩৯

অপ্রচলিত বলেছেন: শুধু পরিশিষ্টটাই যা একটু ভালো :P
আসলে অনেকদিন পরে একটি গল্প লেখার ব্যর্থ প্রয়াস ছিল এটি। অস্থির একটি সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটু হালকা হওয়ার জন্যই আসলে গল্পের আশ্রয় নেওয়া। অগোছালো ভাবে লিখেছি আর কি, আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করা যেত। নিজের অক্ষমতা স্বীকার করে নিচ্ছি।

যাই হোক, পুরনো একটি পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবসময়। অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য ;)

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১২

মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: এমনই হয়। আসলে সবারই উচিত তাড়াতাড়ি মনের কথাটা বলে দেওয়া। কারণ সময় কারো জন্যেই বসে থাকে না। আর মানুষও না। +++ B-))

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৫

অপ্রচলিত বলেছেন: সহমত। :)
নতুন একটা ধারাবাহিক লেখা শুরু করে ফেলুন প্রিয় লেখিকা :P
আর ভালো থাকুন নিরন্তর।

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৩৮

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভাল লাগল।


আমি অবশ্য বলে দেয়ার পক্ষপাতী নই। আমার ভালোবাসার কথা যদি আরেকজন নাই বুঝল, যদি মুখ ফুটে বলেই দিতে হল তবে আমিই বা কি ভালোবাসলাম আর কাকেই বা ভালোবাসলাম!!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

অপ্রচলিত বলেছেন: হুম, সেটাও ঠিক। আসলে এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সবাই তো আর এক রকম নয়।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩২

মশিকুর বলেছেন:
চমৎকার গল্প। নীলি নামটি পুরাই আন কমন। প্রথমে অনেকক্ষণ নীলা পড়েছি আমি :( একটু আগেই একেবারে একই থিমের একটি গল্প পড়লাম :)

শুভকামনা।।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

অপ্রচলিত বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যর জন্য বিনীত ধন্যবাদ আর অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন মশিকুর। অনেকদিন আগের একটি পোস্ট পড়ে মন্তব্য করেছেন। সেজন্য বিশেষ ধন্যবাদ।

অফুরন্ত শুভ কামনা আপনার জন্য।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৭:৪২

ইসিয়াক বলেছেন: মনের অব্যক্ত কথা অযথা চেপে রাখলে এমন করে হারাতে হয় সব।

গল্প ভালো লাগলো।
শুভ হোক সকল সময়।

১২ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৩:৩৬

অপ্রচলিত বলেছেন: বাহ, বহুদিন পর পুরনো গল্পে মন্তব্য পেলাম। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।

ভালো থাকুন সর্বদাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.