নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেরা পাতা

আমি একজন সাধারন মানুষ কিন্তু সবউদ্ভট কাজ করি...আমার বিশ্বাস আমার বন্ধুহলে আমি তুমাকেও আমার মত উদ্ভটপাগল বানাতে পারব...আমি পৃথিবীকে দেখি একজন পাগলেরদৃষ্টিতে...খিক..খিক..খিক*ব্যঙ্গ হজম করারক্ষমতা না থাকলে দূরে থাকুন*কঠিন সত্য হজম করারক্ষমতা না থাক

সাফায়েতুল ইসলাম

সাদা মনের মানুষ। জীবনে বড় হতে চাই এবং এই পৃথিবীটাকে বদলাতে চাই...।। আমি নিভৃতচারী এবং স্পষ্টবাদি।নিজের মতো থাকতে ভালবাসি।সবসময় সৎ পথে চলার এবং সত্য কথা বলার চেষ্টা করি।

সাফায়েতুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশ্বর থাকেন কুসংস্কার

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২

আমাদের জেনারেশনকে আমার বরাবরই কনফিউজড লাগে । বিভিন্ন ব্যাপারে আমাদের যেন কোন সুস্পষ্ট মতামত নেই । এত ভিন্ন ভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে ধরে যে তাদের মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না । কখনও মনে হয় একপক্ষ ঠিক কখনও বা মনে হয় অপরপক্ষ । আবার বেশিরভাগ সময়েই মনে হয় উভয়পক্ষের কথাতেই যেন যুক্তি আছে । কাউকেই যেন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে ঠিক একই কথা মনে হয় । যারা বলেন যে ঈশ্বর আছেন আর যারা বলেন যে ঈশ্বর নেই তাঁদের উভয়ের কথার মধ্যেই অনেক যুক্তি রয়েছে । কারোর যুক্তিই পুরোপুরি ফেলে দেওয়া যায় না ।

তবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণে যে কথাগুলি প্রচলিত সেগুলি হল । আমরাই হচ্ছি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ । ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন বলেই আমরা আছি । না হলে আমাদের কোন অস্তিত্ব থাকত না । ঈশ্বর সর্বদা আমাদের অন্তরে অধিষ্ঠান করেন । তাই ঈশ্বরকে পেতে গেলে মন্দির মসজিদ বা গির্জায় গিয়ে কিছু হবে না । নিজের অন্তরের মধ্যেই ঈশ্বরকে খুঁজতে হবে ।
কিন্তু এই ধরনের কথায় ঠিক যেন মন ভরে না । আমরা শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ আমাদের চাই যুক্তি । কোন ধর্মগুরু কি কথা বলল বা কি ধর্মগ্রন্থে কি কথা লেখা আছে সেটা কখনও প্রমাণ হতে পারে না । পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থেই যা লেখা আছে সেগুলি যে ঠিক তারই বা প্রমাণ কি ? বা সেগুলি যখন লেখা হয়েছিল তার পরে সেগুলিকে কোন বদল করা হয় নি তারই বা নিশ্চয়তা কোথায় ? আর ধর্মগ্রন্থগুলিকে বিনা বিচারে মেনে নেওয়াটাও কি একধরনের গোঁড়ামি নয় ।

ধর্মগ্রন্থগুলি হল অনেকটা জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধের মত । প্রথমেই মেনে নিতে হবে কোন প্রমাণ ছাড়াই যে এইগুলি ঠিক । না হলে কোন অঙ্কই কষা যাবে না । বেশিরভাগ ধর্মেই আছে যে কোন অবস্থাতেই ধর্মগ্রন্থগুলির বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না । বিনা বিচারে মেনে নিতে হবে সব কিছু । এই ব্যাপারটাই আমার আশ্চর্য লাগে । যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁরা তো এটাও তো বিশ্বাস করবেন যে মানুষের এই সভ্যতা মানুষের বিচার বিবেচনা বুদ্ধি সবই ঈশ্বরের দান । তাহলে মানুষ যদি তার বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে ধর্মের মূল বক্তব্যগুলি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তোলে তবে তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে না ।

অনেক সাধুসন্ত আর ধর্মগুরু কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিয়েই মানুষের মনে বিশ্বাস আনেন । অর্থাৎ তাঁরা নানা রকমের ম্যাজিক দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন ।

পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু দেখা যায় ঈশ্বরের নাম করেই বিভিন্ন দেশের শাসকেরা তাঁদের শাসন চালিয়ে গেছেন । ঈশ্বরের নামে শাসন করে তাঁরা দুর্বলদের উপর আধিপত্য চালিয়েছেন । দেশ শাসন করেছেন । রাজ্যজয় করেছেন । তাঁরা প্রচার করেছেন যে রাজা বা সম্রাট হচ্ছেন স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার বা তাঁর প্রতিনিধি । চার হাজার বছর আগেকার মিশরীয় রাজা থেকে আরম্ভ করে মাত্র কয়েকদিন আগে পতন হওয়া নেপালের রাজা সবাই একই পথের পথিক।

আবার মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্যও ঈশ্বরকে টেনে আনা হয় । তাঁদের বলা হয় তাঁদের স্বামীই হচ্ছেন তাঁর কাছে ঈশ্বর সমতুল্য । অর্থাৎ পতি পরম গুরু । আবার হিন্দু বা মুসলিম সব ধর্মেই আছে কোন পুরুষ যদি ভাল কাজ করে তাহলে সে মৃত্যুর পরে সে স্বর্গে বা বেহেস্তে যাবে । কিন্তু কোন মহিলা সম্পর্কে এটা বলা নেই যে তারা যদি ভাল কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে সে কয়টি পুরুষকে উপভোগ করতে পারবে ।

তা যাই হোক যার বিশ্বাস আছে সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে আর যার নেই সে করবে না । কিন্তু কোন কোন সময় সত্যিই মানুষের ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় যখন তারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় । সম্প্রতি ইজরায়েলে পোল্যান্ডের একটি ইহুদি মেয়ের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে সে লিখেছে – যখন দেখি মানুষদের জীবন্ত অবস্থায় ফার্নেসে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । বাচ্চাদের জার্মান সৈন্যরা কেবল খালি হাতে মেরে ফেলেছে তখন ঈশ্বরের উপরে আর কোন বিশ্বাস থাকে না । যদি সত্যিই ঈশ্বর থাকতেন তাহলে কিছুতেই তিনি তাঁর পথ অনুসারীদের এভাবে মরতে দিতেন না ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানে প্রায় নব্বই লক্ষ মানুষকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মেরে ফেলেছিল । যাদের মধ্যে বহু শিশুও ছিল । যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তাঁদের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন তাহলে তিনি কিভাবে এই অনাচার মেনে নিলেন । নাকি হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু মানুষের ভালমন্দে তাঁর কিছুই যায়-আসে না । ঈশ্বরবিশ্বাসরা প্রায়ই একটা কথা বলেন যে আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন । আমার জানতে ইচ্ছা হয় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ছয় কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে কার মঙ্গল হয়েছিল । টিবিতে মাঝেমধ্যেই দেখায় সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের ছবি । হাজার হাজার মানুষ খেতে না পেয়ে যাদের হাত পা কাঠি হয়ে গেছে । বাচ্চাদের প্রত্যেকটি পাঁজরা গোনা যাচ্ছে । যেকোনো মূহুর্তে তারা মারা যেতে পারে সুধু না খেয়ে । তাদের এই অবস্থা তাও কি ঈশ্বরের করুণার দান । অথবা কয়েকবছর আগে সুনামিতে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা সহ আরও বহু দেশে যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল তাও কি ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে ।

তাহলে আমাদের এই জগতে ঈশ্বরের কাজটা কি ! তিনি কি একটা বাচ্চার মত যে নিজের খেলনা গুলো নিয়ে খেলে ছড়ায় ভাঙে আবার গুছিয়ে রাখে । যখন যা ইচ্ছা তখন তা করে । আর এই সমস্ত কাজের মধ্যে কোন যুক্তিবোধ কাজ করে না । নাকি আমাদের এই দুঃখ দুর্দশা আনন্দ সবই আসলে একটা ভ্রম । আমরা মনে করছি যে আমরা ভাল আছি বা খারাপ আছি । কিন্তু আমরা আসলে যা দেখছি বা শুনছি তা সবই মায়া । এই অনুভূতিগুলির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই । কেন যুক্তি দিয়েই পৃথিবীতে অনাচারগুলির কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না । কেনই বা মানুষে মানুষে এত বৈষম্য আর কেনই বা খুব অল্পসংখ্যক কিছু মানুষ পৃথিবীর সব সম্পদ ভোগ করে তার কোন ব্যাখ্যা মেলে না । কেন কিছু মানুষ সারাজীবন ধরে সুখভোগ করে আর কিছু মানুষের সারাজীবন কাটে দুঃখে যেখানে সব মানুষেরই ঈশ্বর কৃপা সমানভাবে পাওয়া উচিত ছিল ।

কেউ কেউ বলেন যে ঈশ্বর মানুষকে দুঃখ কষ্টে ফেলে পরীক্ষা করেন যে তারা কতটা সহনশীল হয়েছে । কিন্তু ঈশ্বর এরকম খামখেয়ালিপনায় কি লাভ হয় সেটা কেউ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলতে পারে না । একজন মানুষ সে হয়ত জীবনে চরম কষ্ট পেয়েছে যা নরকযন্ত্রণাই সামিল সে তো বলতেই পারে যে হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু তাতে আমার কি । ঈশ্বর থেকেও তো আমার কোন উপকার হয়নি । তাহলে ঈশ্বর থাকুন তাঁর মতো । আর আমি থাকব আমার মত ।

তবে শেষ অবধি আমার যেটা মনে হয় সেটা হল ঈশ্বর হয়ত আছেন কিন্তু তিনি সর্বশক্তিমান নন । অর্থাৎ তিনি চাইলেই কোন মানুষের ভাল বা মন্দ করতে পারেন না । হয়ত লড়াই করার জন্য কিছুটা শক্তি যোগাতে পারেন । যেমন কেউ যদি একটুও পড়াশোনা না করে তাহলে কি কেবল ঈশ্বরকে ডেকে পরীক্ষায় পাস করতে পারে । না তা কোনমতেই সম্ভব নয় । ঈশ্বর কেবল তাকে ভাল পরীক্ষা দেবার জন্য কিছুটা মানসিক শক্তি যোগাতে পারেন । কিন্তু তাকে পাস করিয়ে দেবার ক্ষমতা তাঁরও নেই ।

তাই মনে হয় ঈশ্বরের প্রতি আস্থার থেকেও যেটা দরকার বেশি সেটা হল নিজের প্রতি আস্থা । আর নিজের প্রতি আস্থার অভাব থাকলেই মানুষ যখন পরাস্ত হয় তখন সে ঈশ্বরকে দোষারোপ করে । অথচ প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই যদি ঈশ্বরের প্রকাশ থাকে তাহলে নিজের প্রতি আস্থাই ঈশ্বরের প্রতি আস্থায় রূপান্তরিত হয় ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০

মাহিরাহি বলেছেন: Julian Baggini writes that Hitler's Germany was not a "straightforwardly atheist state," but one which "sacrilized" notions of blood and nation.[7] Hitler angered Christians by appointing the neo-pagan Alfred Rosenberg as official Nazi ideologist. According to Max Domarus, Hitler had fully discarded belief in the Judeo-Christian conception of God by 1937

https://en.wikipedia.org/wiki/Religious_views_of_Adolf_Hitler

হিটলার সেক্যুলার চিন্তাভাবনার লোক ছিলেন, অনেকে মনে করেন তিনি ছিলেন নাস্তিক।

নাস্তিক মাও সেতুং আর স্তালিনের হাতে মারা পড়েছেন আরো কোটি কোটি লোক।

কুখ্যাত পল পটও লক্ষ লক্ষ আস্তিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছেন, কিছু মানুষের কুচিন্তার জন্য কোটি কোটি মানুষকে প্রান দিতে হয়েছে।

এদের শাস্তির জন্য পরকাল থাকাটাই স্বাভাবিক নয় কি।




২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৭

আরব বেদুঈন বলেছেন: বানরের বংশধর দাবিদার নাস্তিকদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ
“আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা
অবতীর্ন করেছি, তাহাতে
তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ
থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন
সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি
সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ
ব্যাতিত তোমাদের সকল
সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি
আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর
কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত
করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা
বাকারা:২৩, ২৪)।
এটা এমন এক বিষ্ময়কর কথা, যা মানব
ইতিহাসে কোন গ্রন্থকারই নিজের
বইয়ের পক্ষে দাবি করেন নি এবং
জ্ঞানবুদ্ধি থাকা অবস্থায় কোন
মানুষই এমন সাহস করতে পারবেন না
যে, সে কোরআনের মত একটা বই
লিখে ফেলেছে।
কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ চলে
আসছে সেই কোরআন নাযিলের সময়
থেকে। শত শথ লোক, শত শত সংগঠন এই
চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা করতে
এগিয়ে এসেছে। চরমভাবে ব্যার্থ
হয়ে সম্পূর্ণ নিরাস হয়ে ফিরে
যেতে হয়েছে তাদের সাবাইকেই।
দুটি ঘটনা :
১. লবিদ বিন রাবিয়া। তৎকালীন
আরবের শেষ্ঠ কবি। তার শক্তিশালী
ভাষা আর তেজোদিপ্ত ভাব তাকে
সারা আরবে পরিচিত করে
তুলেছিল। উনি যখন কোরআনের এই
চ্যালেঞ্জের কথা জানলেন তখন
জবাবে একটি কবিতা রচনা করে
কাবা শরীফের চৌকাঠের উপর
ঝুলিয়ে রাখলেন। পরে একজন
মুসলমান কোরআনের একটি সূরা
লিখে ঐ কিতাবের পাশে ঝুলিয়ে
দেন।
লবিদ পরের দিন কাবার দরজায়
এলেন এবং ঐ সূরা পাঠ করলেন।
অত:পর বললেন, “নি:সন্দেহে এটা
মানুষের কথা নয় এবং আমি এর উপর
ইমান আনলাম” অত:পর তিনি প্রকাশ্য
কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে
গেলেন। তিনি কোরআনের ভাব আর
ভাষায এতো বেশী প্রভাবান্নিত
হন যে, পরবর্তীতে তিনি আর
কোনদিন কোন কবিতাই রচনা করেন
নি।
২. দ্বিতীয় ঘটনাটি হল ইবনে
মুকাফ্ফা এর। যা ঘটে কোরআন
নাযিলের প্রায ১০০ বছর পর। এই ঘটনা
প্রথমটির চাইতেও চাঞ্চল্যকর। এই
ঘটনা সম্বন্ধে প্রাচ্যবিদ Wollaston
বলেন “That Muhammad is boast as to the
literary excellence of Quran was not
unfounded is further evidence by a
circumstance which occurred about a century
after the establishment of Islam”
ঘটনাটি এরকম, ধর্মবিরোধীদের
একটি সংগঠন সিদ্ধান্ত নিল ওরা
কোরআনের অনুরুপ একটি বই লিখবে।
এই লক্ষে ওরা ইবনে মুকাফ্ফার
(মৃত্যু-৭২৭ খৃ) কাছে এলো। যিনি
ছিলেন ঐ সময়ের সবথেকে জ্ঞানী,
প্রখ্যাতি সাহিত্যিক এবং বিষ্ময়কর
প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার
নিজের কাজের উপর এতো বেশী
আস্থাবান ছিলেন যে উনি সাথে
সাথে রাজি হয়ে যান। এবং বলেন
এক বছরের মধ্যে তিনি কাজটি করে
দিবেন। শর্ত ছিল এই এক বছরকাল
সময়টা যাতে তিনি পুরোপুরি
মনোযোগের সাথে সূরা রচনা
চালিয়ে যেতে পারেন এ জন্য
তার যাবতীয় সাংসারিক আর
অর্থনৈতিক কাজের দায়িত্ব
সংগঠনটিকে নিতে হবে।
ছ’মাস পেরিয়ে গেলে সঙ্গিরা
কি পরিমান কাজ হয়েছে জানার
জন্য তার কাছে এলো। তারা
দেখতে পেল বিখ্যাত ঐ ইরানী
সাহিত্যিক অত্যন্ত ধ্যানমগ্ন অবস্থায়
হাতে একটি কলম নিয়ে বসে
আছেন; তার সামনে রয়েছে একটি
সাদা কাগজ এবং কক্ষের সর্বত্র
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে
ছিড়েফারা কাগজের স্তুপ। অসীম
প্রতিভাধর, যাদুকরী ভাষার
অধিকারী ঐ ব্যাক্তি আপন সর্বশক্তি
ব্যায় করে ছয়মাস চেষ্টা করে
কোরআন তো দূরের পথ একটি আয়াতও
রচনা করে উপস্থাপন করতে পারেন
নি।
যা হোক শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত লজ্জিত
ও নৈরাশ্যমনে তিনি কাজে
ইস্তফা দেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিল
কোরআন নাযিলের ১০০ বছর পর।
কুরআনের ঐ চ্যালেঞ্জ কত শতাব্দি
পেরিয়ে গেছে আজো বিদ্যমান।
এই চ্যালেঞ্জ থাকবে কেয়ামত
পর্যন্ত।
সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি ভেবে
দেখে না পৃথিবীর তাবত তাগুতি
শক্তি কিভাবে পরাজিত হয়ে
আছে কোরআনের কাছে ?
কোরআন নাজিলের সময়
বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতি :
সপ্তম শতাব্দিতে কোরআন নাযিল
হয়। মানুষ তখন পযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার
কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন
উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। তখন মানুষ
মহাবিশ্ব, পদার্থ, জীববিজ্ঞান,
মানুষের সৃষ্টি, বায়ুমন্ডলের গঠন এবং
জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপাদান
ইত্যাদি সম্বন্ধে সঠিক কিছুই
জানতো না। এই যেমন-
সে সময় তারা বিশ্বাস করত যে,
১. পৃথিবী সমতল। গোলাকার নয়।
২. পাহাড় আকাশকে ধরে রাখে।
অর্থাৎ পাহাড় হল আকাশের খুটি বা
স্তম্ভ।
৩. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিশাল
বিশাল পাহাড় আছে।
৪. মানুষের শুক্রানুর ভিতরে ছোট্ট
একটা মানুষ থাকে। ওটাই মায়ের
পেটে বড় হয়।
৫. বাচ্চার লিঙের জন্য মা দায়ি।
৬. গাছের লিঙ্গ নেই।
৭. কর্মি মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি।
৮. ব্যাথা লাগে মস্তিস্কে।
ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এরকম এক সময়, যখন মানুষের জ্ঞান
বিজ্ঞানের বহর ছিল ঠিক উপরের
অবস্থা সেই সময়েই নাযিল হয়েছিল
আল-কোরআন। যাতে শুধু বিজ্ঞানের
সাথে রিলেটেড আয়াতের
সংখ্যাই আছে হাজারের বেশি।
অথচ সেই কোরআনেরই ১ টি আয়াতও
পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। বরং
বিজ্ঞানেরই কিছু ভুল ধারণা
পরবর্তিতে সংশোধন করলে দেখা
গেছে, তা কোরআনের সাথে
মিলে গেছে। এরকমই কয়েকটি
উদাহরণ দিয়েই বিষয়ভিত্তিক
আলোচনা শুরু করা যাক।
১। আকাশের খুটি :
সেই সময়ে নাযিল হওয়া কোরআনে
লেখা হল- আকাশের কোন দৃশ্যমান
খুটি নেই। “তিনিই আল্লাহ যিনি
আকাশমন্ডলিকে উচুতে স্থাপন
করেছেন কোন দৃশ্যমান স্তম্ভ ছাড়া,
যা তোমরা বুঝতে পারবে। (সূরা
রাদ:২)
আমাদের বিজ্ঞান আজ
জানিয়েছে আকাশমন্ডলির কোন
দৃশ্যমান স্তম্ভ নেই। এর আছে একটি
অদৃশ্য স্তম্ভ-মধ্যাকর্ষন শক্তি! আর
কোরআনও বলে দিচ্ছে একই কথা।
২। পৃথিবীর আকৃতি :
মহাশুন্যে রকেট পাঠানোর সময়কাল
এই তো সেদিন। পৃথিবী গোলাকার
এই সত্যটা মানুষ বিজ্ঞানের কাছে
জেনেছেও অল্প কিছু বছর আগে। আর
মাত্র কিছুদিন আগে মানুষ
জেনেছে পৃথিবী আসলে সম্পূর্ণরূপে
গোলাকার নয়, অনেকটা উপবৃত্তকার
অর্থাৎ পাখির ডিমের মত। চলুন
দেখা যাক পৃথিবীর আকৃতি সম্বন্ধে
কোরআন কি বলছে- “আর পৃথিবী,
তিনি উহাকে তৈরী করলেন
ডিম্বাকৃতির ন্যায়।”(সূরা
নাযিয়াত:৩০)
এই আয়াতে ডিম বুঝাতে দাহাহা
ব্যাবহার করা হয়েছে। যার অর্থ
আরও সঠিকভাবে অষ্ট্রিচ (উট পাখি)
এর ডিম। আজ আমরা এটাও
নিশ্চিতভাবে দেখতে পাই যে,
পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি উট পাখির
ডিমের আকৃতির সাথে সবথেকে
ভালোভাবে মিলে যায়।
একজন নিরক্ষর আরব ব্যাক্তি, কোনরূপ
প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াই এত
নিখুতভাবে পৃথিবীর আকৃতি বলে
দিলেন দেড় হাজার বছর আগে!
উল্লেখ্য ১৫৫৭ সালে স্যার
ফ্রান্সিস ড্রেক, পৃথিবী
গোলাকার এটা প্রমাণ করেন।
৩ । মহাবিশ্বের আদি অবস্থা :
আজকের বিজ্ঞান বলছে মহাবিশ্ব
গ্যালাক্সিগুলো তৈরী হওয়ার
পূর্বে সব পদার্থগুলো গ্যাসিয়
অবস্থায় একত্রে ছিল।চলুন দেখি
দেড় হাজার বছর আগের কোরআন এ
বিষয়ে কি বলে- পৃথিবী সৃষ্টি
সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কোরআন
বলেছে- “অত:পর তিনি আকাশের
দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল
ধুমৃকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও
পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে
আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়।
তারা বলল স্বেচ্ছায় আসলাম।” (সূরা
হামিম আস সিজদাহ : ১১)।
কিভাবে এই আধুনিক বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যাটা কোরআনে এলো!
৪। মহাবিশ্বের প্রসারনশীলতা :
“আমি আকাশ নির্মান করিয়াছি
আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই
মহা-সম্প্রসারণকারী” (সূরা
জারিয়াত : ৪৭)
মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা এই
কিছুদিন আগে প্রমাতি হয়েছে।
বিজ্ঞানী আরভিন সর্বপ্রথম আলোর
লোহিত অপসারন পদ্ধতি ব্যবহার
করে প্রমাণ করেন এ বিশ্বজগত
সম্প্রসারিত হচ্ছে, গ্যালাক্সিগুলো
একটার থেকে আরেকটা দূরে সরে
যাচ্ছে।
মুহাম্মদ (স এর কাছে কি শক্তিশালী
কোন টেলিস্কোপ ছিলো, যা
দিয়ে উনি গ্যালাক্সিগুলোর সরে
যাওয়া দেখেছিলেন ?
৫। বিগ ব্যাং থিওরি :
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা কি
ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলি
ও পৃথিবী মিশে ছিল
ওতপ্রোতভাবে; অত:পর আমি উভয়কে
পৃথক করে দিলাম” (আম্বিয়া:৩০)।
আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে
পরিস্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও
অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময়
একজায়গায় পুঞ্জিভুত ছিল। এবং
একটা নির্দিষ্ট সময়ে এদের জন্ম হয়।
আজকের বিজ্ঞান কি বলে এ
সম্বন্ধে ? ষ্টিফেন হকিং এর বিগ
ব্যাং থিওরী আজ সর্বময় স্বীকৃত। এ
থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্বের সকল
দৃশ্য অদৃশ্য গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে
একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভুত ছিল। এবং
একটা বিশাল বিষ্ফোরণের
মাধ্যমে এরা চারিদেকে ছড়িয়ে
যেতে থাকে। কিভাবে মরুভুমির
বুকে সংকলিত দেড় হাজার বছর
আগের একটি বই এ এই বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যাটা ধারণ করতে পারল ?
ড:মিলার বলেছেন, এই আয়াতটি
নিয়ে চিন্তা-গবেষণার পর কোরআন
যে ঐশী গ্রন্থ তা মেনে নিতে
বাধ্য হই। যারা প্রচার চালাচ্ছে
কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সএর নিজস্ব
বক্তব্য তাদের দাবি নাকচ করার জন্য
এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
ড:মিলার বলেছেন, দেড় হাজার বছর
আগে ইসলামের নবীর পক্ষে
কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য
নিয়ে কথা বলা সম্ভব, যিনি কোন
দিন কোন স্কুলে পড়ালেখা করেন
নি। কারণ এটি এমন এক বৈজ্ঞানিক
বিষয়, যা সম্পর্কে তত্ত্ব আবিষ্কার
করে মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯৭৩
সালে নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন
এক বিজ্ঞানী। মিলারের মতে এই
আয়াতে সেই বিগ ব্যাং এর কথাই
বলা হয়েছে যার মাধ্যমে পৃথিবী,
আকাশমন্ডলী ও তারকারাজি সৃষ্টি
হয়েছে।এই বিগ ব্যাং থিওরীর
একটা অনুসিদ্ধান্ত হল “অনবরত দূরে
সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময়
আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে
কেন্দ্রবিমুখী বল শুন্য হয়ে যাওয়ার
ফলে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব গ্রহ
নক্ষত্র আবার একত্রে মিলিত হয়ে
একটা পিন্ডে পরিনত হবে”।
“সেই দিন আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে
ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত
দফতর” (সূরা আম্বিয়া : ১০৪)
কি কিছু বুঝা গেল ? এই হল কোরআন
———–!
৬। কে স্থির আর কে গতিশীল :
টলেমী বিশ্বাস করতেন থিওরী অফ
জিওছেনট্রিজম এ। আর মতবাদটি হল-
পৃথিবী একদম স্থির, আর সূর্য সহ সব গ্রহ
নক্ষত্রগুলো ঘুরছে পৃথিবীর
চারিদেকে। এ মতবাদটি ষোরস
শতাব্দি পর্যন্ত বিজ্ঞান হিসেবে
টিকে ছিলো। এরপর কোপার্নিকাস
এসে প্রমাণ করলেন, পৃথিবী সহ
অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের
চারিদেকে প্রদক্ষিণ করছে। মাত্র
২৫ বছর আগেও বিজ্ঞান মানুষকে
জানাচ্ছিল সূর্য স্থির থাকে, এটি
তার নিজ অক্ষের চারপাসে
প্রদক্ষিন করে না।কিন্তু আজ এটা
প্রমানীত যে পৃথিবী ও সূর্য দুটোই
গতিশীল। আর এদের দুজনের রয়েছে
আলাদা কক্ষপথ। চলুন দেথি দেড়
হাজার বছর আগের কোরআন এই
ব্যাপারে কি বলে !
“তিনিই একজন যিনি নিদ ও রাত
সৃষ্টি করেছেন, সুর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি
করেছেন, প্রত্যেকেই তার নিজ
নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমন করছে। (সূরা
আম্বিয়া:৩৩)
“এবং সূর্য তার নিজস্ব পথে চলছ যা
সর্বশক্তিমানেরই আয়ত্বে। তিনিই
সব জানেন।”(সূরা ইয়াসিন:৩৮)
এই কিছুদিন আগে প্রমাণিত হয়েছে
যে, সূর্যও স্থির নয় বরং গতিশীল
এবং ২০ লক্ষ বছরে একবার ওর নিজস্ব
কক্ষপথে আবর্তন করে। আর এর গতি
৭২০০০০ কিমি/ঘন্টা।
“আকাশ, যা পথ ও কক্ষপথ দ্বারা
পরিপূর্ণ”(সূরা জারিয়াত:৭)
এটা প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্বের
অন্য তারকারাজিও স্থির নয় বরং
গতিশীল। যার সাথে আধুনিক
বিজ্ঞান একাত্বতা ঘোষণা
করেছে।
৭। ব্লাক হোলস :
“আমি শপথ করছি সেই জায়গার
যেখানে তারকারাজি পতিত হয়।
নিশ্চই এটা একটা মহাসত্য, যদি
তোমরা তা জানতে।” (সূরা
ওয়াক্বিয়া : ৭৫, ৭৬)
৭৫ নং আয়াতটি স্পষ্টভাবে
জানাচ্ছে, মহাবিশ্বে এমন জায়গা
আছে, যেখানে তারকা পতিত হয়।
ঠিক পরের আয়াতেই এটাকে,
মহাসত্য বলে দাবি করা হয়েছে।
মহাকাশে এরকম স্থান আছে, এটা
মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করা
হয়েছে। এই জায়গাগুলোর নাম
দেয়া হয়েছে ব্লাক হোলস।
এগুলোতে শুধু নক্ষত্র নয়, যে কোন
কিছুই এর কাছাকাছি এলে, এখানে
পতিত হতে বাধ্য।
৮। নিরাপত্তার ছাদ :
“আমরা আকাশে একটি সংরক্ষিত ও
নিরাপত্তার ছাদ
বানিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া : ৩২)।
আয়াতটি বলছে আকাশে এমন কিছু
আছে যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা
দেয়।
১.আমাদের পৃথিবীল বায়ুমন্ডলের
উপরিভাগ কোটি উল্কাপাত
থেকে হামেশা রক্ষা করছে। এটা
এমন কিছু যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা
দেয়।
২. বায়ুমন্ডলের একেবারে
উপরিভাগে ভ্যান-এলেন-বেল্ট
নামের একটি অতিরিক্ত স্তর
রয়েছে। এই স্তরটি প্রায় ৬০,০০০
কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই
স্তর শুধুমাত্র সেই সমস্ত রশ্মিই
পৃথিবীতে আসতে দেয় যা
আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা সত্যি
বিষ্ময়কর যে শুধু রেডিও ওয়েভ বা
আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর মত
ক্ষতিকর রশ্মিগুলোই পৃথিবীতে
আসতে পারে না। যা আমাদের জন্য
ক্ষতিকর। একইসাথে এই স্তর সূর্যের
ক্ষতিকর কসমিক রে কে পৃথিবীকে
আসতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কম
ঘনত্বের কারণে, এই স্তরটি
আয়োনিত বা প্লাজমা অবস্থায়
আছে। এই প্লাজমা মেঘ প্রায় ১০০
বিলিয়ন আনবিক বোমার
(হিরোসিমায় মাত্র ১ টা ফেলা
হয়েছিল) সমান পরিমান ক্ষতিকর
শক্তি বিশিষ্ট রশ্মিকে আটকিয়ে
দিতে পারে!
৩. আবার এই স্তর পৃথিবীকে
মহাকাশের অতিরিক্ত ঠান্ডা
থেকে রক্ষা করে, যা মাইনাস ২৭০
ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (স
কি করে জানলেন, পৃথিবীর উপরের
এই সংরক্ষিত আর নিরাপত্তার
ছাদের কথা ? তার এই তথ্যের উৎস
কোথায় ?
৯। আকাশের চক্রশীলতা বা
পর্যায়বৃত্ততা :
“শপথ চক্রশীল আকাশের এবং
বিদারণশীল পৃথিবীর”। (সূরা
তারিক:১১-১২)
আমাদের বায়ুমন্ডল সাতটি স্তরে
বিভক্ত। পত্যেকটি স্তর কিছু ভিন্ন
চক্র সম্পূর্ণ করতে কাজ করে। এই যেমন-
ট্রপোস্ফিয়ার : তের থেকে পনের
কিলোমিটার উর্দ্ধে অবস্তিত। বায়ু
থেকে জলীয় বাস্পকে ঠান্ডা করে
বৃষ্টির ফোটা তৈরী করে। এভাবে
পানিকে আবার পৃথিবীতে
পাঠাতে সাহায্য করে। এভাবে
পানি চক্র পূর্ণতা পায়। এই স্তর না
থাকলে পৃথিবী সম্পূর্ণ শুস্ক ও অন্ধকার
থাকতো।
ওযোন স্তর : ২৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ও
রেডিও রশ্মি থেকে পৃথিবীকে
বাচতে সাহায্য করে। এই
রশ্মিগুলোকে পুনরায় মহাকাশে
পাঠিয়ে দেয়।
আয়নোস্ফিয়ার : পৃথিবী হেত
পাঠানো বিভিন্ন রেডিও ওয়েভ
আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতে
সাহায্য করে। যা দ্বারা রেডিও ও
টেলিভিশন সিস্টেম কাজ করছে।
…………………………………………বাকীগুলো আর
লিখলাম না।
১০। সাত আসমান :
“তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি
করেছেন, যা কিছু যমিনে রয়েচে
সেই সমস্ত, অতপর তিনি মনোযোগ
দিয়েচেন আকাশের প্রতি। বস্তুত
তিনি তৈরী করেছেন সাত
আসমান। আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত”।
(সূলা বাকারাহ:২৯)
আমাদের মাথার উপরের আকাশ
অর্থাৎ বায়ুমন্ডল সাতটি বিভিন্ন
স্তরে বিভক্ত। এটা এখন
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই
কিছুদিন আগে বিংশ শতাব্দির
আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ইহা
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানীত
হয়েছে। কোরআনে দেড় হাজার
বাছর আগে এই সাতটি স্তরের কথাই
এভাবে বলেছে!খুবই বিষ্ময়কর।
এই সাতটি স্তরের নামগুলো এরকম-
ট্রাপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
ওযনোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার,
থার্মোস্ফিয়ার, আয়নোস্ফিয়ার,
এক্সোস্ফিযার।
১১। ভূমির সাতটি স্তর :
“তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি
করেছেন সাত আসমান এবং পৃথিবী
সেই একই পরিমানে”। (সূরা
তারেক:১২)
আয়াতটি আমাদের কি বলছে ?
আয়াতটি আমাদের বলছে শুধু
আসমানই নয় বরং পৃথিবীরও সাতটি
স্তর রয়েছে। মোহাম্মদ (স তখনকার
দিনে কিভাবে একথা বলতে
পারেন!যখন মানুষ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ
নির্ণয় করাই শেখেনি ?
আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে,
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর
উপরিভাগ পর্যন্ত সাতটি স্তর
রয়েছে। গঠনগত এবং কার্যগত দিক
থেকে একটার সাথে আরেকটার
কোন মিলই নেই। এগুলো হল – Crust, 2.
Lithosphere, 3. Upper mantle, 4.
Asrenosphere, 5. Lower mantle, 6. Outer core,
7. Inner core. (Robart Gardner, Samuel F,
Allyn and Bacon, Newton, Howe: General
science-1885 Page-319-322)
১২। চাদের আলো কার আলো ? :
“আল্লাহ তায়ালাই এই সূর্যকে
করিয়াছেন তেজস্কর আর চন্দ্রকে
করিয়াছেন পিতিবিম্বিত আলো”।
(সূরা ইউনুস:৫)
“কত কল্যাণময় তিনি, যিনি
নভোমন্ডলে সৃষ্টি করিয়াছেন
রাসিচক্র এবং উহাতে স্থাপন
করিয়াছেন প্রদীপ এবং চাদ-
যাহার রহিয়াছে ধার কার আলো”।
(সূলা ফুরকান:৬১)
চাদের আলো যে প্রতিবিম্বিত
আলো অন্য কথায় ধার করা আলো
একথাটা দেড় হাজার বছর আগের
একটা বইয়ে আসাটা খুবই
স্বাভাবিক, যদি সে বইটা হয় এমন এক
মহাসত্বার কাছ থেকে যিনি
সাময়িক জাগতীক ধ্যান-ধারণার
অনেক উর্ধে। সুবহানাল্লাহ।
বিজ্ঞান সুস্পষ্ট কোরআনের সাথে
এখন একমত।
১৩। থিওরী অফ রিলেটিভিটি :
রিলেটিভিটি থিওরী মতে
আমাদের দৃশ্যমান সময়ের পরিমান,
আমাদের নিজেদের আপেক্ষিক
বেগের উপর নির্ভর করে। সহজ কথায়
সময়ের পরিমাণ বেগের সাথে
পরিবর্তনশীল। আইনস্টাইনের আগে
কোন বিজ্ঞানী আমাদেরকে এই
বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন নি।
মানুষ তখন সময়কে একটা ধ্রুব রাসি
হিসেবে বিবেচনা করতো। আথচ
দেড় হাজার বছর আগের কোরআনে
আছে আমরা যে সময়কে বাস্তবে
বিবেচনা করতে পারি, সেই সময়ই
অন্য একটি ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ
ভিন্ন হতে পারে।
“ফেরেশতারা আর রুহেরা আল্লাহর
দিকে উর্ধগামী হয়, এমন একদিনে
যাহার পরিমান একহাজার বছরের
সমান।” (সূরা মায়ারিজ:৪)
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত
সমস্ত কার্য পরিচালনা করেন, অত:পর
তা তার কাছে পৌছবে এমন এক
দিনে, যাহার পরিমাণ তোমাদের
গণনায় হাজার বছরের সমান”। (সূরা
সেজদাহ:৫)
সময়ের পরিমান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন
হয়, এই কথাটা থিওরী অফ
রিলেটিভিটি যতটা
পরিস্কারভাবে বলেছে, তার
থেকেও বেশি পরিস্কারভাবে
বলা হয়েছে এই আয়াতদুটিতে। ভুলে
গেলে চলবেনা, থিওরীটি
আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক
শতাব্দি আগে!
১৪। পর্বতের গঠন ও কাজ :
“আমি কি করিনি ভূমিকে বিস্তৃত
এবং পর্বতমালাকে পেরেকের মত
করে” (সূরা নাবা:৬,৭)।
আয়াতটি বলছে পর্বতমালাকে
পেরেকের মত করে তৈরী করা
হয়েছে।
পেরেকের কাজ হলো দুই বা
ততোধিক কাষ্ঠখন্ডকে এমনভাবে
জোরা লাগানো, যাতে সংযুক্ত
বস্তুটিকে নাড়াচড়া করে হলেও
খুলে না যায়।
আমরা যে বিস্তির্ণ ভূমির উপর
বিচরণ করি, তা মূলত একধরনের
পাতলা প্লেট। এদেরকে বলা হয়
টেকটোনিক প্লেট। পৃথিবীর
ঘুর্ণনের ফলে এই প্লেটগুলো সদা
নড়াচড়া করে থাকে। আধুনিক
বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিয়েছে, দুই বা
ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর
আরেকটি চলমান হয়, অথবা ধাক্কা
খায়, তখন এদের মিলনস্থলে
পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এই পাহাড়
ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের
অংশে অনেকগুন পরিমানে ভূমির
নিচে দেবে যায়। অনেকটা ভাজ
সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক
প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়।
অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ
স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা
পেরেকের মত কাজ করে। পৃথিবীর
অভ্যন্তরভাগ একটা ভীষণ উত্তপ্ত
গলিত তরল পদার্থে পূর্ণ। পেরেকের
আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে,
পৃথিবীর ঘুর্ননের কারনে, হয়তো
কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ঐ
অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের
হয়ে আসার সুজোগ করে দিতো।
ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো।
যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার
সবচেয়ে উচু মাথা ভূমির প্রায় ৯
মাইল উপরে উঠেছে। ঠিক একই
জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির
নীচে পৌছে গেছে ১২৫ কিমি
পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে আমরা
বিবেচনা করি, তাহলে একে
দেখতে মনে হবে-দৈত্যাকার এক
পেরেকের মত!
আর কোরআন চমৎকার ভাবে বলে
দিয়েছে একথাটাই দেড় হাজার
বছর আগে। আচ্ছা মুহাম্মদ (স কি
পৃথিবী ঘুড়ে পর্বতগুলোর নিচে কি
রকম তা দেখেছিলেন ?
১৫। পর্বতমালার অবস্থান :
“তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল
মনে কর (আসলে সেগুলো সচল), অথচ
সেদিন এগুলো মেঘমালার মত সচল
হবে। এটা আল্লাহর কারিগরি
যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংগত।
তোমরা যা কিছু করছ তিনি তা
অবগত।” (সূরা নামল:৮৮)
১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
সোসাইটি (ওয়াশিংটন ডিসি)
প্রমাণ করে যে টেকটোনিক
প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে
পাহাড়গুলোও সম্পূর্ণ স্থির নয় বরং
প্রতি বছর ২-৫ সেন্টিমিটার করে
সরে যাচ্ছে। যদিও এদের কার্যক্রম
পেরেকের মতই। আর আমরা
পাহারকে স্থির মনে করে যে
একটা ভুলের মধ্যে আছি. একথাটাই
কোরআন বলেছে কাব্যিকভাবে।
১৬। লোহার রহস্য :
আমি লৌহ নাযিল করেছি, যার
মাঝে অনেক শক্তি রয়েছে এবং
যা মানবজাতির অনেক ব্যবহারে
আসবে।” (সূরা হাদীদ:২৫)
বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে,
আমাদের সৌরজগতের কোন গঠন
প্রনালী নেই যা লোহার উৎপত্তি
ঘটাতে পারে। লোহা কেবলমাত্র
সূর্যের চেয়ে বড় কোন নক্ষত্রেই
তৈরী হতে পারে যেখানে
তাপমাত্রা কোটি ডিগ্রির
কাছাকাছি। এ রকম কোন গলিত
নক্ষত্রের বিস্ফোরনের মাধ্যমেই
লোহার উৎপত্তি সম্ভব। আর এই ধরনের
বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট লোহার
টুকরাগুলো পরবর্তিতে পৃথিবীতে
পরার ফলেই লোহা অস্তিত্বলাভ
করেছে।
অর্থাৎ লোহা যে আকাশ থেকে
এসেছে এটা বিজ্ঞান মেনে
নিয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, সুরা হাদিদ
(হাদীদ অর্থ লোহা) কোরআনের ৫৭
নং সূরা। আজব ব্যাপারটা হলো
‘আলহাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থও ৫৭,
অর্থাৎ আরবীতে এই শব্দের মান হল
৫৭।
শুধু ‘হাদিদ’ এর সংখ্যাগত অর্থ হল ২৬,
যা লোহার এটমিক নাম্বার (২৬) এর
সাথে মিলে যাচ্ছে। আর সূরাটির
১ থেকে ২৫ নং আয়াত (২৫ নং
আয়াতে লোহার গুন সম্বন্ধে বলা
হয়েছে) পর্যন্ত হাদিদ শব্দটি
এসেছে ২৬ বার। (হা=৮, দাল=৪,
ইয়া=১০, দাল=৪)।
১৭। পেট্রোলিয়ামের সৃষ্টি :
“তিনি তৃনাদি বের করে এনেছেন,
অত:পর তিনিই তাদের পরিনত করেন
কাল বন্যার পানির মত” (সুরা
আলা:৪,৫)
গাছ-গাছরা, ফার্ন, শ্যাওলা এসব
অরগ্যানিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার
দ্বারা আক্রান্ত হয়ে একটা দীর্ঘ
পদ্ধতির মাধ্যামে শেসে
পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) এর রূপ
নেয়। খনিতে পদার্থটি অনেকটা
বন্যার পানির মত গার থাকে, একই
সাথে এটির রং থাকে
কালোবর্ণের। যদিও মানুষ
পেট্রোলিয়ামের ব্যাবহার
শিখেছে অনেক আগে, কিন্তু তারা
জানতো না কি থেকে এই
পদার্থটি পৃথিবীতে তৈরী
হয়েছিল।
কোরআন উক্ত আয়াতে একটি তরলের
কথা বুঝিয়েছে, যা
পেট্রোলিয়ামের বৈশিষ্টের
সাথে মিলে যায়। এভাবে-
১. এটি তৈরী হয় তৃনাদি থেকে।
অর্থাৎ অরগ্যানিক ম্যাটারিয়াল
থেকে।
২. এটির রং কাল হবে, আর এটি
বন্যার পানির মত তরল হবে।
কোরআন হাজার বছর আগে বলে
দিয়েছে পেট্রোলিয়াম তৈরী
হয়েছে গাছ-গাছড়া থেকে। আজ
এটা বৈজ্ঞাকি সত্য।
১৮। বাতাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক :
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ুকে চালিত করে
আকাশের কছে নিয়ে যাই, অত:পর
আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর
তোমাদের তা পান করাই। বস্তুত
তোমাদের কাছে এর ভান্ডার
নেই” (সূরা হিজর:২২)
বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকেও
মানুষের ধারনা ছিল যে, বৃষ্টির
সাথে বাতাসের সম্পর্ক হল, বাতাস
মেঘকে চালিত করে দূরে নিয়ে
যায়, ফলে বৃষ্টি সমভাবে হয়।
বাতাসের মাধ্যমেই যে জলিয়বাস্প
উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে, এ
সম্পর্কে মানুষ জানত না।
বৃষ্টিভর্গ বায়ু বলতে জলিয়বস্পপূর্ণ
বায়ু বুঝানো হয়েছে। “বাতাস
জলিয়বাস্পকে আকাশে উড়িয়ে
নেয়, অত:পর মেঘ সৃষ্টি হয়” একথা এই
আয়াতে। বাতাসের ভুমিকা না
থাকলে সূর্য যতই তাপ দিক না
কেনো জলিয়বাস্প কখনোই আকাশে
পৌছতেই পারতো না, মেঘ হওয়া
তো দূরের কথা।
১৯। পরিমানমত বৃষ্টি :
“তিন সে যিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ
অনুযায়ী পানি পৃথিবীতে বর্ষণ
করেছেন। যা একটি মৃত জমিকেও
জীবিত করতে পারে, ঠিক
সেভাবে যেভাবে একদিন
তোমরা জীবিত হবে” (সূরা
যুখরাফ:১১)
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬ কোটি
পানি বাতাসের সাথে মিশে। যা
বছরে পাচ হাজার তেরশ কোটি টন।
এই পানির পুরোটাই আবার প্রতি বছর
মাটিতে ফিরে আসে। যদি এই
ফিরে আসাটা পরিমিত না হত
তাহলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে
যেতো। যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে
বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পাহাড়ের
জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার জন্য যা
খুবি জরুরী। গবেষনায় দেখা গেছে
যদি ঠিক এই পরিমাণ পানি
বাতাশে না মিশে কিছু কম
মিশতো, তাহলে মেরু অঞ্চলের
জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেত। কারন
মেরু অঞ্জলে বরফ স্তরের গভীরতা
বেড়ে যেতো। যা গোটা পৃথিবীর
জীববৈচিত্র রক্ষার সাথে
সম্পর্কিত।
২০। সমুদ্রের পানির রহস্য :
“তিনি পাশাপশি দুই সমুদ্র প্রবাহিত
করেছেন, উভয়ের মাঝে রয়েছে এক
অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে
না।”(সূরা আর-রহমান:১৯-২০)
সমুদ্রের এই বৈশিষ্ট্য অতি
সম্প্রতীককালে আবিষ্কৃত হয়েছে।
সমুদ্রের সারফেস টেনসন এবং
ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য এক সমুদ্রের
পানি অপরটির পাশ দিয়ে
প্রবাহিত হলেও মিশে যায় না।
যেমন গালফ অফ মেক্সিকোতে এর
হাজার হাজার মাইলব্যাপি
লোনা আর মিষ্টি পানির সাগর
পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও একটির
পানি আরেকটির সাথে মিশে
যায় না। কোরআন নাযিলের সময়
মানুষের মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের
কোন জ্ঞান ছিল না আর মুহাম্মদ (স
ছিলেন মরুভুমির মানুষ।
২১। সমুদ্র বিজ্ঞান :
সূরা নূরের ৩০ ও ৪০ নং আয়াতে বলা
হয়েছে:
“যারা কাফের তাদের কাজ
মরুভুমির মরীচিকার মত, যাকে
পিপাসার্ত ব্যাক্তি পানি মনে
করে। এমনকি সে যখন তার কাছে
যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায়
সেখানে আল্লাহকে, এরপর আল্লাহ
তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ
দ্রুত হিসাব নেন। অথবা (তাদের
কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর
অন্ধকারের মত, যাকে উদ্বেলিত
করে তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন
কালো মেঘ আছে। একের উপর এক
অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে,
তখন তাকে একেবারেই দেখতে
পায় না। আল্লাহ জ্যোতি দেন না,
তার কোন জ্যোতিই নেই”
সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের
আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ
সাগরে প্রতিফলিত হয়। তাই ২০০
মিটার গভীর সাগরে নীল রং
ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়।
আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না
থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে
নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ
নানা উন্নত সাজ সরাঞ্জাম ব্যবহার
করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেনে
গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি
হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়।
উপরের ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ।
নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা
যায় না। ফলে কেউ হাত বের
করলেও সেই হাত দেখতে পারবে
না ।সাগর বিষয়ক জার্মান
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্গারও মনে
করতেন বিজ্ঞানের উন্নতির
কারেনে ধর্মেল দরকার নেই। কিন্তু
সূরা নূরের এ আয়াত শোনার পর
তিনি বলেছেন, “এসব কথা কোন
মানুষের কতা হতে পারে না, এ
আয়াত ইসলামের অলৌকিকতার
প্রমাণ।
২২। বাচ্চার লিংগ :
“তিনিই জোরা সৃষ্টি করেছেন,
ছেলে অথবা মেয়ে, যা একফোটা
বীর্য এর দ্বারাই নির্ধারিত”।
আধুনিক জীববিজ্ঞানের
আবিস্কারের পূর্বে মানুষের ধারনা
ছিল যে, ছেলে বা মেয়ে বাচ্চা
জন্ম দেয়ার জন্য মহিলাই দায়ি।
কিন্তু কোরআনে দেড় হাজার বছর
আগে বলা হয়েছে বাচ্চার লিংগ
নির্ধারন হয় স্পার্ম দ্বারা। অর্থাৎ
বাচ্চার লিংগ কি হবে এটা সম্পূর্ণ
নির্ভর করছে স্বামি বা পুরুষের উপর।
আর আজকে জেনেটিক আর
বায়োলোজিকাল গবেষকগণ বহু
পরিক্ষারিরিক্ষা করে নিশ্চিত
হয়েছে যে, স্পার্ম সেলের
মাধ্যমে লিংগ নিধার্রন হয় যা
আসে পুরুষ হতে।
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের
আগে একথাটা কে জানতে পারে ?
২৩। গাছের লিংগ :
“তিনি প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি
করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।” (সুরা
রাদ:৩)
“আর তিনি প্রত্যেককে জোড়া
জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন, তা
জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ হোক,
কিংবা তারা স্বয়ং অথবা এমন
সৃষ্টি হোক যার সম্বন্ধে তারা
এখনো জানেই না।” (সূরা
ইয়াসিন:৩৬)
জোড়া অর্থাৎ পুরুষ আর স্ত্রী লিঙ্গ।
এই আয়াতটি আমাদের বলছে
গাছপালারও লিঙ্গ রয়েছে।
আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে
গাছপালারও লিঙ্গ থাকে। পুরুষ গাছ
এবং স্ত্রী গাছ। এমনকি উভলিঙ্গ
গাছে পুরুষ এবং মাহিলা অংশ
আলাদা অবস্থায় থাকে।
সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে
মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ
থাকার কথা উল্লেখ করেছেন
তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী
কার্ল লিনে। খৃষ্টিয় অষ্টাদশ শতকের
মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত
প্রকাশ করেন। তার ওই বক্তব্যে
অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা
গীর্জার কর্মকর্তাদরেকে তার
বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে
কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার
লেখনীকে ভূর মতামত হিসেবে ধরা
হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা
লিনের মতামতকে সত্য বলে
স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি
বৈজ্ঞানিক মূল নীতি হিসেবে
গৃহিত হয়।
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে
কে জানতো যে গাছেরও লিঙ্গ
আছে ?
২৪। গাছের নি:শ্বাস-
ফটোসিনথেসিস :
“শপথ সকালের যখন তারা দিনের
আলোয় নি:শ্বাস নেয়”। (সূরা
তাকভীর:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার
পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী
করে রেখেছিল। মানুষ ভাবতো এটা
এমন কি হতে পারে যা দিনের
আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব
অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা,
কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা।
যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির
কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি
মানুষকে জানালো এমন এক
প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে
গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ
করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য
প্রস্তুত করে। একইসাথে
অক্সিজেনকে পরিবেশ এ মুক্ত করে।
এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের
বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো
এখানে অনঘটক হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের
বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া
চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে
পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ
তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ
করে আয়াতটি নাজিল করেন নি।
বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও
কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই
বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২৫। জমাট রক্ত বা আলাক :
“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি
মানুষকে তৈরী করেছেন জমাট
রক্তপিন্ড(আলাক)থেকে”। (সূরা
আলাক:১,২)
আলাক শব্দটির অর্থ আরবিতে জমাট
রক্তপিন্ড, পরিস্কারকারি যন্ত্র,
জোক। যে কোন একটি বা একাধিক
অর্থ নিতে পারেন আপনার
পর্যবেক্ষনের জন্য, যাই নেন না
কেন, তা ভ্রুনের বৈশিষ্টের সাথে
মিলে যাবে! শব্দটির ব্যাবহার
এতটাই যৌক্তিক!
এটি কি খুবি আশ্চর্য নয় যে,
মাতৃগর্ভাষয়ে একেবারে
প্রথমদিকে জন্ম নেওয়া জাইগট বা
জিগট দেখতে ঠিক জোকের মত,
গর্ভের দেয়ালে ঝুলেও থকে ঠিক
জোকের মত, এটা মায়ের দেহ
থেকে খাবার নেয় অন্য কথায়
মায়ের দেহ পরিস্কারের কাজ করে
আর এটা জৈবিক গঠন ঠিক
রক্তপিন্ডের মত?
শত শত বছর আগে নিশ্চয়ই মানুষ
জানতো না জাইগোটের এই
বৈশিষ্টগুলো!
২৬। আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা :
“মানুষ কি মনে করে যে আমি তার
অস্থিসমূহকে একত্রিত করতে পারব
না? বস্তুত আমি উহাদের অঙ্গুলির
অগ্রভাগ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত করব”। (সূরা
কিয়ামাহ: ৩,৪)
অর্থাৎ কারো আঙ্গুলের অগ্রভাগই
অন্য কারো সাথে পুরোপুরি একই
হবে না।
আজ প্রমানীত এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি
মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের
ছাপ রয়েছে। কারো ছাপই কারো
সাতে মিলবে না। আর এ জন্যই এই
ছাপ এখন ব্যবহার করা হয় পরিচয়পত্র
হিসেবে। ১৯ শতকের পূর্বে মানুষ
আঙ্গুলের ছাপকে শুধু কিছু ভাজ বলেই
জানতো।
উল্লেখ্য আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়,
এটা ১৮৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার
করেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন।
২৭। পেশি ও হাড়ের গঠন :
কোরআনে বলা হয়েছে
মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত
হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়।
“এর পর আমি শুক্রবিন্দুকে
জমাটরক্তবিন্দুতে পরিনত করেছি,
অত:পর জমাট রক্তকে মাংষপিন্ডে
অত:পর সেই পিন্ডকে হাড়-এ আর
তারপর সে হাড়কে মাংসপেশী
দ্বারা সজ্জিত করি। এবং এরপর
তাকে একটি নতুন সৃষ্টিতে
রুপান্তরিত করি, আল্লাহতায়ালার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.