নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন গুলতেকিন

০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৪৪




প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খান শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পোস্টে এক আবেগঘন ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যেখানে গুলতেকিন খোলামেলাভাবে তুলে ধরেন তাদের দাম্পত্য জীবনের অন্ধকার কিছু অধ্যায়—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এক শীতার্ত রাতে তাকে দরজা থেকে ঠেলে বের করে দেওয়ার মতো নির্মম ঘটনার কথা। এই লেখায় তিনি তার মেয়ে নোভাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিজের প্রতিজ্ঞার কথাও জানান। তার স্ট্যাটাসটির শিরোনাম ছিলো ‘এই লেখাতে আমার সম্পর্কে একটিও খারাপ মন্তব্য দেখতে চাই না!’। নিচে তার ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধু মাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে।
এতো ব‍্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিলো) মত ভুল যেনো না করে।
জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রবিবার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রায় একই ভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম।
ড. ইয়াসমীন হক তার পরিচিত কয়েকজন lawyer আমার বাসায় পাঠান। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব‍্যাংকে টাকা পয়সা কেমন আছে?
আমি বলি, কার ব‍্যাংকে?
আপনাদের জয়েন্ট account এ?
আমাদের তো কোনো জয়েন্ট account নেই!
ব‍্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কতো টাকা আছে?
সেটা তো আমি জানি না

তখন উনি upset হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন?
আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে!
কী ধরণের সম্পর্ক?
: যতদুর জানি সব ধরণের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি করো নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন।কী দরকার তাদের নাম বলার!
Lawyer রা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ‍্যাটে যেখানে আমার মৌখিক agreement নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন, তিনি তো কয়েকটি বই দেখান যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিলো।

: হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরও কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স চাচ্ছিলেন?
: ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! আমেরিকাতে কীভাবে জানবো? ‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে অনেক কিছুই তার কল্পনা থেকে লেখা। ঐসব বই লেখার সময় আমি তাকে বারবার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ‍্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে! আমি শুধু তার পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসার থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন্যে সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ‍্যে তিনটি ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পাননি তখনো। এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাসটেশন কাজ করছিলো। তাছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও। সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও!

:আমি বলি কোথায় যাবো?
:উনি বলেন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও! আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প‍্যান্ট, পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা! আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিলো। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তার বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানারকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে ছিলো সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কিনা! টাকা পরে দেবো! উনি বললেন, টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো। তিনি আমার প্রাইভেসির জন্যে একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নাম্বারে ফোন করলাম।

: এ‍্যান, আমি টিংকু বলছি।
: কী হয়েছে টিংকু, এমনভাবে কথা বলছো কেনো?
: এ‍্যান, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে?
আমি (এ‍্যানের ছেলে, এ‍্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও)
ওকে ঠিকানা বলি।
এ‍্যান চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ‍্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ‍্যাকেট নেই?
ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে।
বাসায় পৌঁছে এ‍্যান আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, এখন তুমি ঘুমাওতো!
সারাদিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কত কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসে না! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতোক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্নার মতো দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে গেলো! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেলো! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কি করে সে পারলো এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো।

বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি।
এ‍্যান আর স্টেইনলি নাস্তার টেবিলে এসে বসে।
আমিও বসি ওদের সাথে॥
টেবিলে এ‍্যান বলে, কি ঠিক করলে?
: কী বলছো, এ‍্যান?
: লয়‍্যারের সাথে কথা বলব না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে?
আমি ভয়ে আতকে উঠি!
না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে!
তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্যে খুব মন খারাপ লাগছে!
ওরা দু’জন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে

বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দু-তলায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি।
আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবো না। ওর হাজবেন্ডের যেনো সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার!
আমার চোখের সামনে অসংখ‍্য ছবি দেখতে পাই যেখানে একটি ১৮/১৯ বয়সের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ঐ লয়‍্যারকে জিজ্ঞেস করতে ‘আসলে তখনি নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ঐ ভদ্রলোক কে ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিলো, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!
ইত্তেফাক/এমএস

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ এর নীতি নৈতিকতা বলতেতো কিছুই ছিল না। ভাই জাফর ইকবালও তাই। এদের জন্য মনে হয় কবি লিখেছিলেন '' দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিতাজ্য।''

০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

শাহ আজিজ বলেছেন: লেখক শিল্পিদের কেন যেন এই ব্যাপারটা বেশি থাকে । একজন আমায় বলেছিল ওতো মুরগি ,লাগাইয়া জল ছাইড়া দেয় ।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:০৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



গুলতেকিনকে আমি ১৯৮৭ সালে নিউজার্সির "বেল ল্যাব"এ জাফর ইকবালের সাথে দেখেছি! বেশ সমস্যাপুর্ণ চরিত্র বলে মনে হয়েছিলো।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জেনারেশন@ভুয়া মুকতিযোদধা জাহাঙগির নামে নতুন নিক খুলেছে কেউ। এটা কে হতে পারে ? :)

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১৭

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: @ জেনারেশন একাত্তর বলেছেন গুলতেকিনকে বেশ সমস্যাপুর্ণ চরিত্র বলে মনে হয়েছিলো।

শাওন নির্ঘাত আপনার পছন্দের তালিকায় রয়েছে!!

৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৩৮

জনারণ্যে একজন বলেছেন: জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:

গুলতেকিনকে আমি ১৯৮৭ সালে নিউজার্সির "বেল ল্যাব"এ জাফর ইকবালের সাথে দেখেছি! বেশ সমস্যাপুর্ণ চরিত্র বলে মনে হয়েছিলো।


- মাঝে মাঝে মনে হয় বাঙালি খুব সম্ভবতঃ ডঃ জাফর ইকবালকে দিয়েই বেল ল্যাব'কে চিনেছে।

যাই হোক, আরো কতো ল্যাবের চিপায় কতো কতো নাদান বাংলাদেশী হারায়া গেলো, সেই খবর কেডা রাখে...

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪০

শ্রাবণধারা বলেছেন: গত বছর ডিসেম্বরে নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে গিয়েছিলাম। হুমায়ূন আহমেদ, গুলতেকিন ও নোভা আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখেছি, হোটেল গ্রেভারইন খুঁজে বের করেছি। গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে পাশে বসা স্ত্রী আর সন্তানদের হুমায়ূন আহমেদের লেখা হোটেল গ্রেভারইন ও পেট্রিফায়েড ফরেস্টের গল্প বলছিলাম। বাংলাদেশ নাইট-এর গল্প, নোভার প্রথম জন্মদিনে এক বস্তা ময়দা কিনে হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ফেরার গল্প, আরও এমন কত গল্প!

সেই গল্পগুলোর পেছনে যে আরও অনেক ছায়া-গল্প আছে, যার একটি গুলতেকিন তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, বলতেই হবে সেগুলোও কম ইন্টারেস্টিং নয়! :)

৭| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪২

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



@মেঠোপথ,

আপনি শেখের বিরুদ্ধে কথা বলেন, নিজামীর মতো রাজাকরকে শহীদ ডাকেন; হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, কায়কোবাদদের ব্যাপারে আপনি কি বলবেন, সেটা পরিস্কার। আপনারা বাংলার হামাস।

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪৭

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



@জনারণ্যে একজন ,

আপনি বেল ল্যাবে চাকুরি করছেন, কিংবা করেছিলেন?

৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



@জনারণ্যে একজন ,

ইহা বর্তমান কোন ব্লগারের মাল্টি নিক হতে পারে!

১০| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:০৮

কাঁউটাল বলেছেন: ১৯৮৭ সালে চাংগাজী জাফরিক বালকে চিনল কিভাবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.