![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছর তিনেক আগে আমি ফেনীতে গিয়েছিলাম একবার। ব্যাক্তিগত কারনে আমাকে সেখানে থাকতে হয় কিছু দিন। স্কুল জীবনের দুই বন্ধু রুপম আর সোহাগের বাসায় থাকি।
অপ্রত্যাশিত ভাবে কামরুল নামের এক মোটাসোটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ক্লাস নাইন থেকে পড়া লিখা বন্ধ তার। ফেনী শহরের ট্রাংরোড এলাকায় একটি বিপনী বিতানে নিজের ফটোস্ট্যাট মেশিন ছিল কামরুলের।এর পর যতবারই ফেনীতে যেতাম ছেলেটার সাথে আমার দেখা হত। কারন নানুর বাড়ি,খালার বাসা,আন্টি আংকেল আর আম্মুর দিকের মোটামুটি আত্মীয়রা ফেনীতেই থাকেন।
আমি যতবারই যেতাম কামরুলের অসাধারন সৌহার্দ্য আমাকে মুগ্ধ করতো। এক সাথে নাস্তা করে বিল দিতে গেলে দোকানদার কে চোখ টিপে দিত। দোকানদার আমার কাছ থেকে বিল নিতোনা। লোকে জিজ্ঞেস করলে বলতো আমার বন্ধু,চিটাগং থেকে আসছে।যদিও আমরা একে অপরকে ভাই বলে সম্মোধন করতাম।
গতবার যখন হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ফেনী শহর উত্তাল তখন আমি ফেনীতে। আলিয়া মাদ্রাসার সামনে হেফাজতে ইসলামের এক কর্মী পুলিশের গুলিতে মারা গেলে পুরো ফেনী শহরে গন্ডগোল ছড়িয়ে পড়ে।কামরুল জানতো আমি ফেনীতে তখন। মহিপালে একটা কাজে গিয়ে কামরুলকে ফোন দিয়েছিলাম। কামরুল দোকান বন্ধ করে সোজা মহিপাল এসে আমাকে জোর করে বাসায় নিয়ে যায়। আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়নি ঐদিন। সারাক্ষন কানের কাছে একই বকাবকি আমি কেন এ অবস্থায় বের হলাম! খুব অস্থির লাগছিল কাজ অসুম্পূর্ণ রেখে চলে এসেছি তাই। তবে কামরুলের জন্য আমার হৃদয়ে সেদিন প্রবল ভালবাসায় খোদাই হয়ে গিয়েছিল।
তাঁরপর থেকে কামরুলের সাথে ঘনিষ্ঠতা আমার আরো বাড়লো। আরো বেশি চিনলাম কামরুলকে। কোনো ভিক্ষুক সামনে এসে হাত বাড়ালে কামরুল নিরাশ করতো না। আমি বলতাম কামরুল ভাই-এইভাবে দিতে থাকলে তো তুমি নিজেও ওদের জায়গায় নামতে হবে থালা হাতে''!আমাকে হাত চেপে ধরে এক গাল হাসি দিয়ে বলতো-গার্লফ্রেন্ডের সাথে না হয় আজ দশ মিনিট কম কথা বলবো!
একদিন ফেনী রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে খোলামাঠে কামরুল ভাইকে নিয়ে বসেছিলাম। আমি ফোনে কথা বলে মাত্র মোবাইল পকেটে রাখছি তখন কামরুল বলেছিল ''যদি থেমে থাকতো এই সময়টা,আমি বেঁচে যেতাম।" আমি হাসছিলাম শুধু। এ কথা,সে কথা অনেক কথাই বলেছি।কামরুলের কথা আর শুনা হয়নি।
আমি জানতাম কামরুল মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে যেত। মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতাম কেন যায় ডাক্তারের কাছে।হেসে বলতো ''লাইফের মেয়াদ বাড়ানোর দরকার আছে''।মায়ের অনেক সপ্ন এখনো পূরনের বাকি।তাড়াতাড়ি যদি মরে যাই আবার! তারপর প্রসংগ ঘুরিয়ে দিত।আমার আর জানা হলোনা কামরুলকে!
এর পর কামরুলের সাথে দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিলোনা! কয়েক দিন আগে জানতে পারি কামরুলের জন্য রক্ত দরকার। মাসুদ ভাই (কামরুলের বন্ধু) হঠাৎ আমাকে ফোন করে বলে আর্জেন্ট রক্ত জোগাড় করতে! আমি শুনেই থ! জিজ্ঞেস করতেই বলে কামরুলের ব্লাড ক্যান্সার তুমি জানোনা?!
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলোনা। নীরবে ফোনটা রেখে দিলাম। আমার সময়টা সত্যিই থেমে গিয়েছিল।রক্ত প্রবাহ মাথার পিছনের দিকে স্পষ্ট জমাট বেঁধে আছে আমি বুঝতে পারছিলাম। কত স্মৃতি ওলট পালট হচ্ছে মাথায়! পিছনে যা রঙিন ছিল আজ তা সাদাকালো!
শেষ তার সাথে দেখা হয় হাসপাতালে। সেদিনো সে খুব হাসছিল।তার সেই হাসি হাতুড়ির মত আমার কলিজায় আঘাত করছিল সেদিন।আমার পিঠ চাপড়ে বলেছিল-মরবো আমি,তুই না।আমি কান্না চেপে রাখতে পারিনি।
কিছুক্ষন আগে শুনলাম আমার বন্ধু মারা গেছে। আমি একটুও বিচলিত হইনি। আমি নিষ্ঠুর ভাবে বেঁচে আছি! এখনো হাতে কলম ধরে আছি। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে কিন্তু আমি লিখে যাচ্ছি। আমি ক্ষমাপার্থী বন্ধুর কাছে,আমি ক্ষমা পার্থী আমার বন্ধুত্ত্বের কাছে। খুব কাছ থেকেও আমি আমার বন্ধুকে চিনতে পারিনি। আমি হয়তো কিছুই করতে পারতাম না কিন্তু চেষ্টা চালয়ে যেতাম-নিজেকে বলতে পারতাম,
"দেখ বন্ধু-আমি তোকে আরো কিছুদিন ধরে রাখার সংগ্রাম করছি।আমরা আবার মাঠে গিয়ে একসাথে গল্প করবো। আবার আমি গোলযোগপূর্ণ রাস্তায় বের হলে তুই আমাকে কুড়িয়ে আনবি,আগলে রাখবি। আমি তোর ভিতর বাঁচতে চাই! "
আমি বেঁচে আছি ঠিকই।কিন্তু কামরুলের সাথে বেঁচে থাকা হলোনা।
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আল্লাহ কামরুলকে বেহেস্ত নসিব করুন ।
৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ''লাইফের মেয়াদ বাড়ানোর দরকার আছে''। আসলেও আছে।।
৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৩
আবু শাকিল বলেছেন: কামরুলের জন্য খারাপ লাগছে।আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আল্লাহ উনাকে বেহেশত বসোন করুন।