নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইদুল ইসলাম

শাহেদ সাইদ

এখনও বেঁচে আছি

শাহেদ সাইদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এরশাদের পতনঃ ৯০ সালের চিঠি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩১

আজকাল চিঠি লেখা হয়না । এস এম এস, টুইটারের যুগে চিঠিকে বাহুল্য মনে হয়। এরশাদের পতনের পর, আমি আমার এক প্রবাসী কাজিনকে একটি চিঠি লিখেছিলাম । আমার সেই কাজিন এখন আনেক বড় মানুষ, তাই তার পোশাকি নামটা লিখছি না। অনেকদিন পর চিঠিটা আমার হাতে এসেছে।অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি এরশাদ পতনের ঘটনা আর সেই সময় সঠিক ভাবেই উঠে এসেছে চিঠিটা। হুবুহু চিঠিটা ছাপিয়ে দিলাম।



চন্দন,

ক’দিন ধরে বাংলাদেশে পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। এক’দিন যা ঘটেছে তা বাংলাদেশ অনেকদিন মনে রাখবে।



আগে যা ঘটেছে

তোরা চলে যাবার পরদিন থেকেই শুরু হয় তুলকালাম কান্ড। (তোদের অনুপ্সথিতি দেশের জন্যে মঙ্গলজনক!!!)গুলিতে ৮জন ছাত্র মারা যায়। এই মৃত্যু ছাত্রদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।৯০ এর আন্দোলন ঠেকাতে সরকার বাধ্য হয়ে ঢাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হয় দেশের যাবতীয় বিশববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ।

ঢাকা বিশববিদ্যালয় শিক্ষক স্মিতি এবং ছাত্র ঐক্য জোর প্রতিবাদ জানায় এই ঘটনার সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। মামলার রায় বেরুনোর আগেই ছাত্র ঐক্য বিশববিদ্যালয় খুলে দেয় ১১ নভেম্বর। এ ঘটনায় সরকার প্রধান সভাসদ সহ নাখোশ হয়ে চ্যালাচামুন্ডা দিয়ে বিশববিদ্যালয় বন্ধের পায়তারা ক্রতে থাকেন।প্রথমে ছাত্র ঐক্যে ফাঁটল ধরানোর চেষ্টা করা হয়, সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয় অভিকে।



পতনের শুরু

ডাকসু নিরবাচনের পরই অভি নীরু ছাত্রদলে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। বিদেশ আর বিলেতি মুদ্রার স্বপ্ন দেখিয়ে সরকার তাদের ব্ল্যাক মেইল করে। ২৬ নভেম্বর অভিরা লোটন ঝোটনদের (পুরান ঢাকার মাস্তান)নিয়ে ক্যাম্পাসে আক্রমণ চালায়।ডিজিএফাই এটাকে ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দল হিসাবে প্রচারের চেষ্টা করে। ইতমধ্যে খালেদা জিয়া অভি-নীরু সহ ১১ জনকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করে। অভি-নীরু ছাত্র ঐক্যের তাড়া খেয়ে সেদিনের মত ক্যাম্পাস ছেড়ে পালায়।



২৭ নভেম্বর

রাত ৩টা থেকে ক্যাম্পাসে গোলাগুলি শুরু হয়। অভি-নীরু আবার ১০/১১টার দিকে ক্যাম্পাস গ্রম করে তোলে। অভি-নীরুকে খেদমত করার জন্যে পুলিশকে গোপনে হেদায়েত করে সরকার।পুলিশের সাথে অভি-নীরুদের ভাসুর- ভাদ্র বধূ আচরণ শুরু হয়।ওদের দেখলেই পুলিশ ঘোমটা দিয়ে ফেলে। চাকরি নিয়ে কথা! দোয়েল চত্বরের পাশ দিয়ে রিক্সা করে যাবার সময় ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় বিএমের যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ মিলনের।আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠায়, জরুরী আবস্থা ঘোষণা করা হয় রাত ১০টার পর। সংবাদপত্র পরিষদের ধর্মঘট শুরু।



২৮ নভেম্বর

জরুরী আবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কার্ফু উপেক্ষা করে হাজার হাজার লোক রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে ২৭ তারিখ রাত্রেই। অভিদের অভিযান অব্যহত থাকে ক্যাম্পাসে।২৮ ত্রিখ দেশব্যাপী হ্রতাল ডাকে ডাক্তাররা। তাদের সাথে যোগদেয় জনতা। পুলিশের গুলিতে হতাহত হয় অগণিত জনতা।পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হতে থাকে। শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দী করা হয়। খালেদা জিয়া পুলিশকে বোকা বানিয়ে আত্মগোপন করেন।



২৯ নভেম্বর

ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের একযোগে পদত্যাগ।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষক বৃন্দের পদত্যাগ। পুলিশ বিডিয়ারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর রাজপথে অবস্থান।লোটন/ঝোটনের সহযোগিতায় বিরোধী নেতাদের ঘরে ঘরে নীরু বাহিনীর তল্লাশী। সংবাদপত্র পরিষদের ধর্মঘট অব্যহত। আন্দোলনের গতিবেগ বৃদ্ধি। আরও হতাহতের খব্ব্র।



৩০ নভেম্বর

ছাত্র জনতার সাথে পেশাজীবীদের একাত্তবতা ঘোষণা। পুলিশের সাথে সাংস্কৃতিক জোটের লড়াই।

(উল্লেখযোগ্যঃ পুলিশের গালে ফেরদৌসি মজুমদারের থাপ্পড়।) দেশের সর্বত্র কার্ফু অমান্য করে মিছিল। মিছিলে পুলিশের গুলি ও লাঠিবাজি।

০১ ডিসেম্বর

পুলিশের গুলিতে নিহত ১৫ আহত অগণিত। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ।এসোসিয়েশন, শিপিং কর্পোরেশন এবং বেসরকারি জাহাজিদের কর্ম বিরতি। খুলনায় ৩ জন গুলিবিদ্ধ।



০২ ডিসেম্বর

এ যুগের এক মহামানবের জন্মদিন। এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ।টেলিভিস্নের বেহায়াকে সরকার বন্দনার অপরাধে কালতালিকাভুক্ত ঘোষণা। আইঞ্জিবিদের মিছিল। অনির্দিষ্ট কালের জন্য আদালত বর্জন। গণ অভ্যুথ্যান বুলেতিন -১, কামরুল হাসানের বিশ্ব বেহায়া এবং ৩ জোটের নির্দেশাবলী প্রচার। রাজকবি সৈয়দ আলী আহসানের বাসায় হামলা। ছাত্রদের নির্দেশ অনুযায়ী অফিস আদালত।



০৩ ডিসেম্বর

সচিবালয়ে কড়া ঘোষণা দিয়ে বিসিএস প্রশাসনিক ক্যাডারের ২৫৫ জনের পদত্যাগ। মওদুদ, রাবেয়া সহ ৭জন আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল। সম্পাদকদের টোপগেলানোর চেষ্টা। খবরের কড়াকড়ি শিথিল।(সাংবাদিকরা বড়শি গেলেনি) চট্টগ্রামে পুলিশ জন্তা যুদ্ধে নিহত ১ আহত ২৫। এরশাদের বক্ত্রতা।বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার ন্তুন প্রস্তাব।(এরশাদ নিরবাচনের ১৫ দিন আগে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে পদত্যাগ করবেন ইত্যাদি, ইত্যাদি, এই ঘোষণাটি আসলে ছিল আন্দোলন থামানোর জন্য রাজনৈতিক ধাপ্পা।)



০৪ ডিসেম্বর

৩ ডিসেম্বর রাত ১১টায় এরশাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান। রাজপথে লাখো মানুষের ঢল। সচিবালয়ের ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বিক্ষোভ। ৭৫০ জন বিসিএস কর্মকর্তার পদত্যাগ।এদিন থেকে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রনে ছিল অফিস আদালত।ব্যাংকিং থেকে শুরু করে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় ছাত্রদের নিরদেশে। বিবিসিতে শাহ মোয়াজ্জেমের প্রলাপ।রাত ১০টার খবরে এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণা। ৮ তারিখ সংসদ অধিবেশনে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত খবরের সাথে সাথে রাস্তায় মানুষের ঢল। ঢাকা সহ সারাদেশ প্রকম্পিত।



০৫ ডিসেম্বর


ছাত্র ঐক্যের বিজয় মিছিল।টিভিতে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, রাশেদ খান মেনন এবং আব্বাস আলী খানের ভাষণ। সাহেব বিবি গোলামের হাত থেকে বিটিভির পরিত্রাণ। পদত্যাগের আগপর্যন্ত আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা।



০৬ ডিসেম্বর

মও দুদ আহমেদ এবং তিন বাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। তখন সময় BST 1430

আড়ালের খবর

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট

০২ তারিখ থেকে পল্টনের মোড়ে বিকল্প সম্প্রচার কেন্দ্র চালু করে। পরবর্তীতে এর নাম হয় স্বাধীন সম্প্রচার কেন্দ্র।সরকারি নিসেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এখান থেকে প্রতিদিন প্রচারিত হয় আন্দোলনের খবর আর অনুষ্ঠান। প্রায় ৮০ হাজার নিয়মিত দর্শক ছিল এই কেন্দ্রের (অবিশ্বৃস্য!) । প্রতিদিন স্কাল থেকে রাত অবধি চলত এদের অনুষ্ঠান। আসদুজ্জামান নুর, রামেন্দু ও ফেরদৌসি মজুমদার থেকে শুরু করে টিসা পর্যন্ত হাজির হত অনুষ্ঠানে।



সেনা বাহিনী

নুরুদ্দিন দেশে ফিরেই লেঃ কর্নেল এবং আরও সিনিয়ারদের একটি মিটিং ডাকেন। এখনে ৯০ শতাংশ অফিসার সংকটের রাজনৈতিক সমাধান কামনা করে, তারা সেনা সম্পৃক্ততারও বিরোধিতা করে।পরদিন তিনহাহিনীর প্রধান্রা এরশাদকে তাদের মতামত জানিয়ে দেন এবং রাজপথ থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেন। ৪ তারিখে পদত্যাগ করে এরশাদ আর একটি কূট চাল চালতে চেয়েছিলেন। তার ধারনা ছিল তিনি জনপ্রিয়, তার পদত্যাগে জন্তা হাহাকার করবে। দ্বিতীয়তঃ নিজেদের অনৈক্যের কারনে তিন জোট অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন দিতে পারবেনা। ফলে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তু পদত্যাগের সাথে সাথে সারাদেশের আনন্দ উল্লাস তাঁকে আশাহত করে। তিনি সেনাপ্রধান কে সামরিক আইন ঘোষণা করতে বলেন। নুরুদ্দিন এক কথায় প্রত্যাখ্যান করেন সে প্রস্তাব। এরপর এরশাদ বুড়া আতিক ও সাভারের জিওসি মেজর জেনারেল রফিক কে ধরেন নুরুদ্দিন কে বশ করতে। সেনাপ্রধান সে কথায় না ভুলে সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন। এরশাদের হায় হায় শুরু হয়ে যায়। শোনা যাচ্ছে DG DGFI, DG NSI কে শাস্তি দেয়া হবে দালালির জন্যে। তালিকায় আর যারা আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্যঃ

সাইফুল বারী, মোসাররফ হোসেন (জিনাত) মাকসুদ আলী খান প্রমুখ।



গুজব

এই মাত্র পালাল এরশাদ, আগেই ভেগেছে রওশন। কাজী জাফর চিনির বস্তা গায়ে আত্মগোপন করেছে।অভি পালিয়েছে। আওরঙ্গ ফির‍্যা আইছে ।হাসমাত হালায় কর্পোরেশনের মেথর গো লগে তাস খেলতাছ।



দুঃথ- কষ্ট

ব্যারিস্টার হাসনাতঃ ক্যাপ্টেন সায়েব, আমারে এরেস্ট করেন, নাইলে বিডিয়ার আমারে ধরব।

নাজিউউর রহমান মঞ্জুর এক কর্তব্যরত বিডিআর অফিসার ( সাম্রিক বাহিনীর কর্মকর্তা) কে বলেন দরকার হলে আমাকে জীপের পেছনে বসিয়ে অন্য কোথাও নামিয়ে দিন। বাসায় থাকলে পাব্লিক আমাকে মেরে ফেলবে। আমিতো রাজনীতি করি নাই ক্রেছি দালালি।

আ,স,ম আব্দুর রবঃ মেজর সাহেব নেতাগিরি আর করবোনা আমারে একটু বাসায় পৌছায় দেন।(বঙ্গ ভবন থেকে বের হতে ভয় পেয়ে)



শ্লোগান

১। শাহ মোয়াজ্জেম আব্বা বলেন জাফর বলেন চাচা

এরশায়দ্যা বলে সবাই আপন পরাণ বাঁচা





২। হৈ হৈ রৈ রৈ খুনী এরশাদ গেল কই? (সবচে’ হিট)



ক্যাপশন

আল্লাওয়ালা ভবনঃ দয়া করিয়া এইখানে একটু জল বিয়োগ করিয়া যান।



পুনশ্চঃ

ছাত্রদের পত্রিকা কক্টেল গদীহারা মন্ত্রীদের পুনর্বাসনের কথা ভাবছে। তাদের ভাবনা চিন্তার অংশবিশেশঃ

মওদুদ - মদ ও দুধের ব্যবসায়ী

কাজী জাফর - চিনি ক্লের কাঁচা মাল (তিঁজে নিংড়ে চিনি বের করা যেতে পারে।

শাহ মোয়াজ্জেম = ম্লম বিক্রতা (এরশাদ পরিক্ষিত )

আবুল হাসনাত - কর্পোরেশনের ক্লিনার।



চিঠিঠা আর চিঠি থাকলো না। এরশাদীয় প্যাচালে ভরা একটি টিস্যু পেপার ধরে নিস। পরে মনোযোগ দিয়ে চিঠি লিখব। ভালো আছি, ভালো থাকিস

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.