নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইদুল ইসলাম

শাহেদ সাইদ

এখনও বেঁচে আছি

শাহেদ সাইদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রত্নদার পেরসিডেন

৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩

রতনদার পেরসিডেন্ট



আমরা তখন ক্লাশ টুয়েলভে উঠি উঠি করছি। ক্যাডেট কলেজে এই সময়টি বড় আনন্দময়। পড়াশোনার চাপ কম। ক্লাশ টুয়েলভের মত দায়িত্ব নেই। শয়তানি আছে ষোল আনা। ক্লাশ ইলেভেনের সবচেয়ে বড় কাজ দুষ্টুমিতে বৈচিত্র আনা। আমরা সেই মহৎ কর্মটিই করছিলাম কেমিস্ট্রি ল্যাবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা, মিস্টার রাখাল চন্দ্র ধর আমাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এমন সময় ইউসুফ (ডঃ আবু ইউসুফ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, আইবিএ) পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে বলে উঠলো জিয়া মারা গিয়েছেন। তার কণ্ঠস্বর কারো কানে পৌছালো কারো কানে পৌছালো না। আমি শুনেও মনে করলাম, সে আমাদের ক্লাশমেট জিয়াকে পচাচ্ছে। শুধু মাত্র রাখাল চন্দ্র ধর কথাটি সিরিয়াসলি নিয়ে আমাদের সবাইকে একটি টেবিলের কাছে জড়ো করে, ইউসুফকে বললেন, ‘ঠিক করে বল,’ ইউসুফ বলল, ‘স্যার, আমি এমা আই রুমের রেডিওতে শুনেছি, প্রেসিডেন্ট জিয়া হ্যাজবিন আসাসিনেটেড। ক্লাশের পরিবেশটা মুহুর্তেই বদলে গেলো। রাখাল চন্দ্র ধর ভালো ছাত্র ছিলেন, কিছু দিন আগে মাত্র তিনি জিয়ার সাথে হিজবুল বাহারে ঘুরে এসেছেন। তিনি ঝর ঝর করে কাঁদতে থাকলেন। আমাদের ক্লাশমেটদের মধ্যে যাদের, প্রেসিডেণ্টের সাথে নৌবিহারের সৌভাগ্য হয়েছিলো, তাঁরা সেই সব টুকরো, টাকরা স্মৃতি হাতড়াতে থাকলো, যাদের সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ, সেনাবাহিনী সম্পর্কেও খোঁজ খবর রাখে তারা সামরিক অভ্যূত্থান সম্পর্কে জ্ঞান গর্ভ বক্তৃতা দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করতে থাকলো।

কর্ণেল নূরুল আনোয়ার আমাদের প্রিন্সিপ্যাল, তিনি একটু পর ক্লাশ ইলেভেনকে ডেকে পাঠালেন তার অফিসের সামনে। ক্লাশ টুয়েলভের পরীক্ষা চলছে, তাই উনি ইলেভেনের সাথে কথা বলবেন। স্যারের অফিসের উল্টো দিকে খেলার মাঠের এক কোনায় আমরা জড়ো হলাম। স্যারদেরও প্রায় সবাই ছিলেন। প্রিন্সিপ্যাল কেবল বললেন, ইট’স এ গ্রেট লস। তাঁর গলা ধরে এলো, তিনি চোখে কালো সানগ্লাস পরে ফেললেন। একটু পর আবার বললেন, গো টু য়োর হাউসেস, ডু নট লিসেন টু রিউমারস।

হাউসে ফেরার সময় অনেক স্যারকে চোখ মুছতে দেখলাম। সে সময় শনিবারের ক্যাডেট কলেজের আলাদা একটা জেল্লা ছিলো, ক্লাশ হত মাত্র পাঁচ পিরিয়ড, আফটারনুন প্রেপের বদলে থাকত সোসাইটি, আর ডিনারের পর বড় পর্দায় মুভি। সেদিন তার কিছুই হলোনা। সারাটা কলেজ হয়ে রইলো নিষ্প্রাণ। সম্ভবত এর একদিন পর জিয়ার লাশ আনা হল মানিক মিয়া এভিনিউতে। টেলিভিসনে সরাসরি সম্প্রচারকরা হলো, জানাজার দৃশ্য। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এর আগে বা পরে এত গুলি মানুষ একসাথে জড়ো হয়নি মানিক মিয়া এভিনিউতে। টেলিভিসনে জানাজার দৃশ্য দেখে চোখ মুছতে মুছতে বেরুচ্ছিলাম আমরা সবাই। সিড়ির কাছে দেখি আমাদের হাউসের সুইপার দাঁড়িয়ে চোখ মুচছেন। (তার নাম ছিলো সম্ভবত রতন) বললাম কাঁদছেন কেন?

তিনি এবার ডুকরে উঠলেন, এক জন পেরসিডেন্ট আমার সাথে হ্যান্ডশিফ (হ্যন্ডশেক) করছেলো, হ্যারেও মাইরে ফ্যললো, কানবোনা?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

ঢাকাবাসী বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগল।

৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

শাহেদ সাইদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.