নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইদুল ইসলাম

শাহেদ সাইদ

এখনও বেঁচে আছি

শাহেদ সাইদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেপ

২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮



জানুয়ারি ১৯৮৫। প্রথমবারের মত শীতকালীন প্রশক্ষণে গিয়েছি। আমাদের তাবু পড়েছে চান্দিনার কুরছাপ হাইস্কুলের পাশে। চারিদিকে ফসলতোলা মাঠ। শূণ্য খটখটে মাটি আর হাড়কাপানো শীত। প্রায় প্রতিদিন রাতেই লাইন প্লাটুনের সাথে বাইরে যেতে হয়। তাদের কাজ টেলিফোনের তাঁর বিছানো। প্রথাগত যুদধই হোক আর অনুশীলনেই হোক, এই প্লাটুনের খাটাখাটনির শেষ নই। অন্যরা মাঠে নামার আগেই এই প্লাটুনকে মাঠে নামতে হয়। লাইন বিছিয় টেলিফোন লাগানো, ফল্ট কন্ট্রোল বসানো আরো নানান রকম কাজ। অনুশীলন শেষেও তাদের কাজের শেষ নেই। সবাই যখন ঘরের ফিরছে তখনও লাইন প্লাটুনের কাজ শেষ হয়না। তার খোলোরে লাইন গোছাওরে মোট কথা পথে পথেই দিন কাটে। রাতে প্লাটুন নিয়ে বাইরে যাবার সময় কোম্পানী কমান্ডারকে যখন রিপোর্ট দিতে যাই, উনি তাবুর ভেতর থেকেই কথা বলেন। ওনার ১৮০ পাউন্ডের তাঁবু অনেক স্পেশাস। একদিন উঁকি দিয়ে দেখি উনি নরম লেপের নীচ থেকে মাথাটা একটু বের করে রিপোর্ট নিচ্ছেন। আমি থাকি ছোট্ট একটা তাঁবুতে চামড়ার মত শক্ত কম্বল গায়ে। কোম্পানী কমান্ডারের লেপটা দেখে লোভ হল। সেই মুহুর্তে মনে হল জীবনের একটাই লক্ষ, কোম্পানী কমান্ডার হয়ে ১৮০ পাউন্ড তাঁবুতে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা।



কয়েক বছর পর আমি কোম্পানী কমান্ডার হলাম। নিয়ম না থাকলেও লেপ নিয়ে গেলাম শীতকালীন মহড়ায়। আমার সাথে এক জন লেফটেন্যান্ট, একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট, আর আমার কোম্পানী। এবার তাঁবু গেড়েছি লালমাই পাহাড়ের কাছে। সারাদিন অফিসার দু’জনকে সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানা জ্ঞান দিলাম। আর মনে মনে ভাবতে থাকলাম কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ওরা দু’টি লাইন পার্টি নিয়ে দুই দিকে যাবে আর আমি লেপের তলায় শুয়ে থেকে রিপোর্ট নেবো। সন্ধ্যা হতে না হতেই কুয়াশায় ঢেকে গেলো চরাচর। রাত সাড়ে দশটার দিকে তাঁবুতে ঢুকে লেপ গায়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন রিপোর্ট দিতে আসবে অফিসাররা। লেপের তলে দারুন ওম। বাইরে শীত ও অন্ধকার। একটু পর, একজন এলো। লেপের ভেতর থেকে কাছিমের মত গলা বের করে বললাম ক্যারি অন। আধাঘন্টা পর আরেক জনকেও একই ভাবে বিদায় দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আমার কতদিনের স্বপ্ন অন্যরা যখন বাইরে থাকবে আমি লেপের তলে শুয়ে থাকবো। সবাই চলে যাবার পর চারিদিক সুন সান হয়ে গেলো। ঘুম আর আসেনা। তাবুর দরজা ঠেলে বাইরে এলাম। চমতকার জোসনা আর কুয়াশার মাখামাখি, একবার কুয়াশা ভেদ করে চাঁদের আলো ছুয়ে যাচ্ছে ক্যাম্প। একটু পর আবার কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে সব কিছু। এত বড় ক্যম্পে মাত্র কয়েক জন সৈনিক কেউ ঘুমাচ্ছে কেউ ডিউটিতে দাঁড়িয়ে। ওদের খোঁজ খবর নিচ্ছি কিন্তু সময় কাটছে না। রাত আড়াইটার দিকে কিছু পদ শব্দ শুনলাম, তার মানে একদল ফিরে আসছে। দ্রুত গিয়ে লেপের নীচে ঢুকলাম, নতুন অফিসারের সামনে ভাব নিতে হবে না। ওরা রিপোর্ট দিয়ে যার যার তাঁবুতে ঘুমুতে চলে গেলো। একটু পর নাক ঢাকার শব্দও পাওয়া গেলো। আমার ঘুম আসেনা। আবার বাইরে বের হলাম। ওদের উপর হিংসা হতে থাকলো। আহারে আমার লেপেও ঘুম আসছে না। আর ওদের কী নিশ্চিন্ত ঘুম। আরেকটা প্লাটুনের এত দেরী হচ্ছে কেন? কোথাও কোন বিপদে পড়লো না তো! তখন মোবাইলের যুগ নেই।শীতকালে রাতের একটা পর্যায়ে, ওয়্যারলেস যোগাযোগ হয় না। বিশেষকরে এইচ এফ এ তো যোগাযোগ হয়ই না। ঘড়িতে রাত চারটে। লেপের সাধ আমার প্রায় মিটে যাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। রাতের নিস্তব্ধতা ছাড়িয়ে বিভিন্ন তাঁবু থেকে বিচিত্র সব আওয়াজ আসছে নাক ডাকার। আমার রাত কাটছে না আরও কিছুক্ষণ পর শেষ প্লাটুনটি ফিরে এলো। ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের সামনে দাঁড়িয়ে দেরি হবার কারণ জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু ওই ভাব নেবার জন্যেই ওদের পায়ের শব্দে আবার ঢুকলাম লেপের তলে। যাক সবাই ঠিক ঠাক আছে। আমার চোখে যখন ঘুম এলো তখন ওদের এক ঘুম শেষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.