![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কয়েকদিন ধরে ডান চোখটা লাফাচ্ছিল। যে সে লাফ নয়। নিজে নিজে বন্ধও হয়ে যায়। পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনি বললেন ব্যাথা করে?
- না
- আর কোন আসুবিধা?
- যখন বেশি লাফালাফি করে পড়তে আসুবিধা হয়।
আজকাল চোখ দেখার জন্যে চোখের ডাক্তারদের অনেক যন্ত্রপাতি আছে। তার মধ্যে একটি হলো টুলে বসে মাইক্রোস্কোপের মত একটি যন্ত্রে চোখ লাগিয়ে বসা। অন্যপ্রান্তে ডাক্তার বসে রোগীর সাথে চোখা চোখি করেন বেশ রোমান্টিক একটা ব্যাপার। ডাক্তার সাহেব বেশ আবেগ নিয়ে বললেন তোমার চোখে কিছু ময়লা জমেছে। পরিষ্কার করে দিচ্ছি। যদি ঠিক না হয়। বুঝবো চোখের পেছন দিকে ময়লা জমেছে। তার জন্যে অন্য ব্যবস্থা। আমি তখন ফুল টাইম এমবিএর ছাত্র। MISTতে যখন তখন টিউটোরিয়াল হয়। একটি ক্লাশ মিস হওয়া মানে জীবন শেষ। ডাক্তারের কাছ থেকে চলে এলাম। তবে ক্লাশে এসে পড়লাম আরেক ঝামেলায়। সহপাঠিনীরা আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলে না। গ্রুপ এসাইনমেন্টের সময় এক সতীর্থ বললেন ভাই আপনি সাধারণ কথা বারতার সময়ও দেখি চোখ মারেন। আমি আবার ছুটলাম ডাক্তারের কাছে। এবার আর সেনাবাহিনীর ফ্রি ডাক্তার নয়। পিজি হাসপাতালের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে। প্রাথমিক প্রশ্নোত্তর আগের মতই। উনি বললেন তা আপনার আসল অসুবিধাটা কী? বললাম আসুবিধা আমার চেয়ে আমার সহপাঠিনীদের বেশি। সব শুনে উনি বললেন আজ কাল হয়েছে এক ফ্যাশন সবাই এমবিএ পড়ে। কয়েকদিন পর একজন সনাম ধন্য শিক্ষক আমাকে বললেন আমাদের ছোটবেলায় আমরা অনেক ধরণের দুষ্টামি করেছি। কিন্ত সব কিছু সব বয়সে মানায় না। আর দেরি না করে আবার ছুটলাম ডাক্তারের কাছে তিনি বললেন সমস্যাটা সম্ভবত চোখের নয়। একবার ইএনটি স্পেশালিশটকে দেখাবে নাকি? নাক, কান গলার ডাক্তার আমাকে ভালো করে পরীক্ষা করে কয়েকটি ওষুধ লিখে বললেন আপনার কোন আসুবিধা নেই
- তাহলে ওষুধ দিলেন যে!
- ওষুধ তো আর কিনে খেতে হচ্ছে না, খেয়ে দেখেন। কোন সাইড ইফেক্ট নেই।
-
চোখের দুঃখ ভুলে লেখা পড়ায় মন দেবার চেষ্টা করলাম। মেয়েরা বললো বাবা তমার একটা চোখ ছোট হয়ে যাচ্ছে। অনেকদিন পর মা এসেছিলেন। আমার চোখ দেখে মহা দুশ্চিন্তায় পড়লেন। তার রাজপুত্রের মত ছেলেটির চুল আগেই পড়ে গিয়েছিলো, এখন চোখও পুরো দুইটা রইলো না। তিনি বললেন এসব ডাক্তার কোন ডাক্তারই নয়। তুই বিদেশে যা।
মা’র জোরাজুরি আর মহিলাদের কাছে নিজের চরিত্র নিষ্পাপ প্রমানের লোভে সিএমএইচে যেয়ে দেখি ডাক্তার নিজেই মহিলা। ডান চোখের উপর আমার কোন দখল নেই। সেটি যখন তখন বন্ধ হয়ে যায়। আমি চোখ খুলে রাখার জন্যে বড় বড় চোখ করে মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তিনি আদ্যান্ত শোনার পর বললেন রোগটা আসলে আপনার নার্ভের। আপনি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। সম্ভবত এটার নাম হেমিফেসিয়াল স্পাজম। চোখ খোলা বন্ধ করতে যে নার্ভটি কাজ করে সেটি কাজ করছে না। আপনি নিউরো সার্জনকে দেখান।
নিউরো সার্জন আমাকে দেখে খুশিই হলেন। বললেন একটি দুর্লভ রোগ বাধিয়েছেন দেখছি। এই রোগটা আমেরিকায় লাখে পনের জনের হয়। আপনাকে বটুলিনাম দিতে হবে। তবে ওষুধটি অনেক দামি। আমরা রাখি না। আপনি আপাতত ক্যালসিয়াম জাতীয় কিছু ওষুধ আর নার্ভ সামলানোর ট্যাবলেট খান। যদি আরও কয়েকজন রোগী পাই একটি ইনজেকশন এনে সবাইকে একসাথে দিয়ে দেবো। একটি ইঞ্জেকশন চার পাঁচ জনকে ভাগ করে দেওয়া যায়। আমি আশায় বুক বেধে ওষুধ নিয়ে গেলাম। এবার নতুন উপসর্গ শুরু হলো। এতদিন এক চোখ বন্ধ হত। ওষুধ খাবার পর দুই চোখই বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ঘুম আসে।
সিএমএইচ থেকে ডাক পড়লো। ইঞ্জেকশন পাওয়া গেছে। ডাক্তার নিজে ফোন দিয়েছেন। তিনি যত্ন করে আমার ডান চোখের বিভিন্ন কোনায় পাঁচ বার সুঁই ফুটালেন। আমি বললাম ঠিক হবে তো স্যার। টিস্যু পেপার দিয়ে হাত মুছতে মুছতে তিনি বললেন। আশা তো করি। যদি ঠিক হয় আমাকে মনে করে জানাবেন। আমরা এই ইঞ্জেকশন আরও কিছু এনে রাখবো।
২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৪
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৯
আদম_ বলেছেন: এত ভালো একটা লেখা অথচ কোনো কমেন্ট নাই কেনো?