![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মালপত্র টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে সপে দিয়ে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিতে লাউঞ্জে বসেছি, হঠাত মেসেজ টোন বেজে উঠলো, ফেবু বন্ধু দেশী পোলা টেক্সট করেছেন মেজর আখতার আহমেদ এই মাত্র সিএমএইচে মারা গেলেন।মৃত্যু সংবাদটা খুব বিস্মিত করেনি। অনেকদিন ধরে স্যার ডায়ালিসিসের পরে ছিলেন। কোন কিডনিই কাজ করতোনা। তাই বলে এভাবে আচমকা চলে যাবেন ভাবিনি। তার একটু আগে আমার বড় বোনকে আখতার আহমেদের বার বার ফিরে যাই বইটা পড়তে দিয়েছি। লাগেজের ওজন বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত যা কিছুর ওপর খড়গ নেমেছে তার মধ্যে আছে বই। বেশির ভাগ বই বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের কাছে রেখে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের যে কয়েকটি বই আমি নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, বার বার ফিরে যাই তাঁর অন্যতম। ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় বেছে বেছে যে ক’টি বই বাদ দিয়েছি তার মধ্যে এই বইটি থাকার কারণ, অনেকবার পড়তে পড়তে বইটি আমার প্রায় মুখস্ত হয়ে গিয়েছে।
স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নেবার বেদনায় মেজর আখতারের ব্যপারটা মন দিয়ে অনুভব করতে পারিনি। প্লেনে ওঠার পর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, একদিকে ছলছলে চোখে মায়ের হাত নাড়া, অন্যদিকে মেজর আখতারের চলে যাবার ব্যপার, আমাকে যুগপৎ ভাবে যন্ত্রণা দিয়ে চললো। আঠারো নম্বর সারিতে মন খারাপ করে বসে থাকলাম। একটু ঝিমুনির ভাব চলে এসেছিলো। সেটা কেটে গেলো, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুর গলার আওয়াজে। নীল নয়না এক সুন্দরী বিমানবালা এক বাঙালি যুবককে মোবাইল বন্ধ করার তাগাদা এমন বাঁজখাই গলায় দিচ্ছেন যে মনে হচ্ছে এদের মেহমানদারী শুরু হয় ঝাড়ি দিয়ে। তূর্কি ভাষা কর্কশ না শ্রুতিমধুর আমি জানিনা। তবে কেবিন ক্রুদের ইংরেজি আদৌ আনন্দদায়ক নয়।সম্ভবত ইংরেজির অপটুতার জন্যে অথবা তাদের ইংরেজির ভাড়ারে শব্দ কম থাকায়, একই শব্দ বারবার বলতে বলতে শেষের দিকের উচ্চারণগুলো রুঢ়তর হতে থাকে। ভিন্ন ভাষাভাষিদের কাছে সেটা ক্রূর মনে হয়।
দীর্ঘ বিমান যাত্রার মত বিরক্তিকর ভ্রমণ আর নেই। অন্যান্য সকল যাত্রায় জানালা তবু এক ঘেয়েমি কাটায়, বিমানের দীর্ঘ যাত্রায় সেই একই মেঘের দৃশ্য, কপালে থাকলে দুই একটি জনপদের অস্পষ্ট ছবি, মাঝে মধ্যে বিপুল কোন জল এসব আর কত ভালো লাগে!
সকাল সাতটায় যথারীতি আকাশে উঠলো টার্কিশ এয়ার লাইন্সের এয়ারবাস। যদিও ভোর চারটায় এয়ারপোর্টে আসার আগে Hasna Hena ভাবী জোর করে নাস্তা করিয়ে দিয়েছিলেন, তবু নাড়ি ছেড়ার যন্ত্রণার মধ্যেও পেটে ইঁদুরের কেত্তন অনুভব করতে পারছি। কেবিন ক্রুদের খুন্তি চামচের শব্দ না পেয়ে সিটের সামনের টিভি স্ক্রীনে মনোযোগ দিলাম। সামনের সিটে আমার দুই কন্যা গভীর মনোযোগে এনিমেটেড মুভি দেখছে। Turkish Airlines মুভির লিস্ট অনেক লম্বা। ওয়ার্ল্ড সিনেমা,অস্কার জেতা মুভি, ব্লক বাস্টার। মুভির বাইরে গেইম, মিউজিক, টিভি শো তো আছেই। সব কিছু থেকে আমি বেছে নিলাম গড ফাদার। মার্লোন ব্র্যন্ডো আর আল পাসিনোর এই সিনেমা আমি আগেও মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। ( আমির খানের সবচেয়ে ফ্লপ ছবি আতঙ্ক হি আতঙ্ক গডফাদারের হিন্দি ভার্সন, আমির খান এখানে মাইকেল কর্লিয়নি ছিলেন, আল পাসিনোকে ছুঁতে পারেননি।) তবে এবার কেন যেন ভালো লাগলো না। মুভি বদলে ক্রিড চালালাম। মনে হল সিল্ভাস্টার স্ট্যালোন বৃদ্ধ এবং পরিণত হয়েছেন। ক্রিডের মধ্যে একটু বলিউডি আবেগ সাবেগের ব্যপার ছিলো। খারাপ লাগছিলো না।
সিনেমার মাঝপথে খাবার চলে এলো। স্যন্ডুইচ, শাক, সালাড, ব্রেড, বাটার, ফল, কেক খেতে খেতে মুভিটা শেষ করলাম। জানালার বাইরে তখন ঝকঝকে রোদ। বাটি ফেরত নিতে এসে কেবিন ক্রুরা সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিয়ে গেলেন। মনে হল, বিমানের ভিতর একটা মায়ার জগত তৈরি হয়েছে। সামনে পেছনে পাশে তাকিয়ে দেখলাম, বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমোচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথের রাত নিজঝুম গাড়ি ভরা ঘুম মনে পড়ে গেলো দিনের আলোয়। ছোট মেয়ে বলল, বাবা আর কতক্ষণ? বললাম ৬ ঘন্টা। বলল, ছাড়ার সময় না বললে সাত ঘন্টা লাগবে, এতক্ষণ কী মাত্র একঘন্টা এসেছি?
আমি আসলে ইস্তাম্বুলের টাইম ডিফারেন্সটা ভুলে গিয়েছিলাম। শ্রেয়াকে বললাম, ইস্তাম্বুলে পৌছাবে সেখানের বেলা এগারোটা পঞ্চাশে। সেটা আসলে ঢাকার তিনটা পঞ্চাশ। আমি হিসাবে গড়বড় করে ফেলেছিলাম। শ্রেয়া বলল, বাবা ভাল্লাগছে না। আমি বললাম বন্ধুদের কথা মনে পড়ছে?
- হু, তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে দাদ দাদের কথা।
মা’র কথা আমারও মনে পড়ছিলো। আমি তাঁর কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানিনা, ঘুম ভাংলো কেবিন ক্রুদের কথা বার্তা আর খাবারের ট্রলি, ট্রে র আওয়াজে। সকালে প্লেন ছাড়ার পর হাতে একটা মেনু কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মেনু কার্ড অনুযায়ী ল্যন্ডিঙ্গের আগে আরেক দফা খাবার দাবার দেবার কথা। তা হলে কী ইস্তাম্বুলের কাছে চলে এসেছি?
কেবিন ক্রু দের ইশারায় সকলেই জানালা খুলতে শুরু করেছে। বাইরের ঝকঝকে রোদে বিমানের ভেতরটা যেন হেসে উঠলো মুহুর্তেই। এবারের খাবার তালিকায় স্যান্ডুইচ নেই। অন্য কিসব স্ন্যাক জাতীয় খাবার সাথে ফল, কেক আর আপেল পাই। ঘন্টা খানেক পর বিমান নামতে শুরু করলো। ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক এয়ারপর্ট পৃথিবীর ত্রয়োদশ ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট শুধু নয়। প্রাচীনতম এয়ারপোর্ট গুলিরও অন্যতম। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই এয়ারপোর্ট দিয়ে ৬১ মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করে প্রতি বছর।
আমরা যখন আতাতুর্কে নামছি, ততক্ষণে ৯ ঘন্টার বিমানযাত্রা শেষ হয়েছে। উল্লেখ করার মত কিছু তার মধ্যে নেই।
অসমাপ্ত
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮
শাহেদ সাইদ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল বর্ণনা। গন্তব্য কোথায় জানা গেলনা। প্লেনের যাত্রী হিসেবে দুনিয়ার অন্যতম অসভ্য যাত্রী মনে হয় বাঙালিরা।
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০১
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আসলে প্রথম পর্বে গন্তব্য স্পষ্ট হয়নি । ২য় পর্বে দেখুনঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/shahedsayeed/30126025#nogo
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০১
সায়ান তানভি বলেছেন: দারুন লিখেছেন ,পড়তে ভালো লাগছিল ।নিয়মিত লিখুন ।শুভ কামনা ।
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০২
শাহেদ সাইদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৪
খালি বালতিফারখালি বালতি বলেছেন: মির্জা বাড়ির বউড়া নামে এক বেশরম মাল্টির কারণে বেলের শরবত, শরণার্থী, আখের রস তিনটা নিক ব্যান হয়েছে আমার। তবুও আমি অগ্নিসারথির হয়ে চিকা মারা থামাব না। এখনকার অবস্হা দেখেন
জার্মান প্রবাসেঃ ১৬৪৬
অগ্নি সারথির ব্লগঃ ৩০৭
ইস্টিশন ব্লগঃ ১৯৫
প্রবীর বিধানের ব্লগঃ ৬১
ইতুর ব্লগঃ ৩২
আপনাদের বুঝা উচিত আপনাদের কম ভোট দেয়ার কারণে অন্যরা সুযোগ নিচ্ছে। জার্মান প্রবাসে ওয়েব সাইটটি টাকা দিয়ে ইন্টারনেটে ভোট কিনছে, ওদের প্রতিযোগিতা থেকে বহিঃস্কার করা উচিত। জার্মান প্রবাসে ব্লগ জার্মানীতে একটা চাকচিক্যময় জীবনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে চলা ব্যবসায়ি এজেন্সি ছাড়া কিছু না। সেখানে অগ্নি সারথি এই ব্লগের শতাব্দির সেরা ব্লগার। সেখানে আমার ভরষা শুধু নিজেদের ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট টি যেখানে বন্ধু মাত্র ১০২৪ জন। আর কিছু সহব্লগার।
মাননীয় জুরি বোর্ডের প্রতি আমার আকুল আবেদন, শুধু আমাকে আর ইতুর ব্লগকে বিবেচনা করতে, বাকিরা সব কয়টা ভন্ড। একজন ব্লগার শুধু ব্যাক্তি তথা ইউজার একজন আর একটি ব্লগ হল কয়েক হাজার ব্লগারের সমন্বিত রুপ। আর বিষয়টা যেহেতু যোগ্যতার চেয়ে যোগাযোগের এর সেহেতু আমাকে জয়যুক্ত করা হোউক। একজন ব্লগার কখনোই পুরো একটা ব্লগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে টিকে থাকতে পারেনা। আশা করি আপনারাও বিষয়টা নিয়ে ভাববেন এবং আমাকে ব্লগে রেসিডেন হিসাবে নিয়োগ দেবেন।
নববর্ষের উৎসবে যাওয়ার আগে পরে আমাকে দুইটা করে ভোট দিয়ে যান, আমি জিতলে সামু জিতবে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০২
শাহেদ সাইদ বলেছেন: বুঝি নাই,ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
Safin বলেছেন: ভালো লাগলো . . . এই ধরণের অভিজ্ঞতা আমার ভালোই লাগে!