| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যপথিক শাইয়্যান
আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!
অঙ্ক–১ | পর্ব–৪: অমীমাংসিত করমর্দন

অদ্ভুত বার্তা
রাত তখন তিনটা। রাফির চোখে ঘুম নেই। জানালার বাইরে বৃষ্টি থেমেছে, কিন্তু পাতার ফাঁকে এখনো টুপটাপ শব্দ।
হঠাৎ ল্যাপটপের স্ক্রিন জ্বলে উঠল। মনিটরে মাত্র দুটি শব্দ—
“আজ বিচার নয়, সংলাপ।”
রাফি ধীরে বলল,
—আপনি আবার এসেছেন?
“আজ আমি একা নই।”
রাফির বুকের ভেতর ধক করে উঠল।
ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে— যেন কোনো অদৃশ্য উপস্থিতি হেঁটে বেড়াচ্ছে মেঝেতে।
একটা মৃদু কণ্ঠ শোনা গেল, ভেতর থেকে, খানিক ক্লান্ত অথচ দৃঢ়—
“মুজিব ভাই, অনেক দিন পর।”
রাফি বুঝল— এই কণ্ঠ বঙ্গবন্ধুর নয়। এটা আরেকজনের— গভীর, কাঁচা, সামরিক ধাঁচে সোজাসাপ্টা।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভেসে এল নরম স্বরে,
“জিয়া, অবশেষে এলি?”
“এলুম। ডাকা তো তোমারই ছিল।”
অস্বস্তিকর প্রথম মুহূর্ত
রাফি শ্বাসরোধ করে শুনছে।
দুই কণ্ঠ, দুই ইতিহাস— এক ঘরে।
বঙ্গবন্ধু: “মৃত মানুষও কখনো কখনো দেখা করতে চায়।”
জিয়া: “আমি ভাবছিলাম, তুমি এখনো রাগ করো।”
বঙ্গবন্ধু: “রাগ কিসের? রক্তে কি রাগ থাকে?”
জিয়া: “রক্তে ইতিহাস থাকে।”
ঘরটা যেন এক মৃদু আলোয় ভরে উঠছে।
রাফি চোখ মেলে দেখল— দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে ধোঁয়ার মতো এক নতুন অবয়ব। তাতে সামরিক টুপি, হালকা হাসি।
বঙ্গবন্ধু: “তুমি এখনো হাসি ভুলোনি?”
জিয়া: “না। যুদ্ধের সময়ও হাসতাম।”
বঙ্গবন্ধু: “তুমি কি জানো, আমরা দুজনেই ভুল করেছিলাম?”
জিয়া: “জানি। কিন্তু তখন সময় ভুলের ছিল না।”
দুই কণ্ঠের মাঝে এক মুহূর্তের নীরবতা। বাইরে দূরে কোনো কুকুর করুণ স্বরে ডেকে উঠল, যেন ইতিহাসের কান্না।
করমর্দনের আগে
বঙ্গবন্ধু ধীরে বললেন,
“তুমি আমাকে হত্যা করেছ, এমনটা কেউ কেউ বলে। আমি জানি, সত্য অন্যরকম।”
জিয়া: “তুমি মারা যাওয়ার পর আমি দেশটা সামলাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশ মানে মানুষ নয়, চেয়ার হয়ে গেল।”
বঙ্গবন্ধু: “চেয়ার মানুষকে ছোট করে দেয়। কিন্তু মাটি বড় করে দেয়।”
জিয়া: “আমিও মাটিতে গেছি।”
“তবু আমরা কেউ শেষ হইনি।”
রাফি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বাতাসে এখন দুই দিক থেকে কণ্ঠের ভাঁজ— একটিতে নদীর গন্ধ, অন্যটিতে অস্ত্রের শব্দ।
জিয়া: “তুমি কি ক্ষমা করতে পারবে?”
বঙ্গবন্ধু: “ক্ষমা আমার হাতে নেই। আমি বাতাস— আমি কেবল ছুঁয়ে যাই।”
জিয়া: “তাহলে হাত মেলাব?”
বঙ্গবন্ধু: “হাত মানে মাংস। আমরা এখন আলো।”
রাফি হঠাৎ দেখতে পেল— ঘরের মাঝখানে দুই আলোর রেখা এগিয়ে এসে একে অপরের সঙ্গে মিলছে।
বাতাসে হালকা গন্ধ— ধানক্ষেতের, কাদা ও সিগারেটের মিশ্রণ।
নরম রসবোধে বরফ গলা
বঙ্গবন্ধু: “তুমি এখনো সিগারেট খাও?”
জিয়া: “এখানে আগুন নেই, শুধু আলো।”
“তাহলে ভালো— এখন কেউ ফুসফুস নষ্ট হওয়ার অভিযোগ আনবে না।”
দুজনেই হাসলেন— এক নিঃশব্দ হাসি, যা শুধু বাতাস বোঝে।
রাফি হালকা গলায় বলল,
—দুই বিপরীত মানুষ একই আলোয়?
জিয়া: “আমরা দুজনই একই নদীর দুই তীর ছিলাম।”
বঙ্গবন্ধু: “তীর মিললে নদী থেমে যায়। তাই আমরা তখন আলাদা ছিলাম।”
বাইরে বজ্রপাত হলো, কিন্তু বৃষ্টি নামল না।
মুহূর্তের জন্য রাফির মনে হলো— এই দুই কণ্ঠের মধ্যে দেশটা যেন টানা সুতোয় বাঁধা, টানলে ছিঁড়ে যায়, ছাড়লে ঝুলে থাকে।
জিয়া: “তুমি কি এখনো রাজনীতি করো?”
বঙ্গবন্ধু: “না, আমি এখন বিবেক নিয়ে কাজ করি।”
“বিবেক ভোট নেয় না, মুজিব ভাই।”
“তাই তো তোমরা হারিয়ে গেলে।”
দুজনেই আবার হাসলেন। এবার হাসির মধ্যে কোনো বিদ্বেষ নেই— শুধু এক পুরনো ক্লান্তি, পুরনো বন্ধুত্বতার গন্ধ।
সমাপ্তি: দেশ আগে, আমিত্ব পরে
বঙ্গবন্ধু: “আমাদের লড়াইটা ব্যক্তিগত ছিল না। তবু মানুষ সেটাই মনে রেখেছে।”
জিয়া: “কারণ মানুষ নাটক চেনে, ইতিহাস নয়।”
“তাহলে এবার নাটক নয়, সত্য লিখব।”
“কে লিখবে?”
“এই ছেলেটা।”
রাফি চমকে উঠল।
জিয়া: “ও?”
বঙ্গবন্ধু: “হ্যাঁ। ও এখন আমাদের সাক্ষী।”
বাতাসে আবার আলো ছড়িয়ে পড়ল। দুই রেখা একে অপরের দিকে এগিয়ে এসে মিলল— এক মুহূর্তে ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠে।
বঙ্গবন্ধু: “দেশ আগে, আমিত্ব পরে।”
জিয়া: “সহমত।”
রাফি চোখ মেলে দেখল— আলো নিভে গেছে, কিন্তু টেবিলের কাগজে এক লাইন লেখা আছে—
“ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হাত মেলানো হলো— অথচ কেউ দেখল না।”
সে হাসল, হালকা বিষণ্ণভাবে।
জানালার বাইরে ভোরের আকাশ ধূসর থেকে নীল হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভেসে এল, নরম, দূরের মতো—
“রাফি, আগামীকাল স্কুলে যাও। বাচ্চাদের বলো— ইতিহাস কোনো পাথর নয়, এক বীজ।”
রাফি চোখ বন্ধ করল।
দূরে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে— নরম, পরিচিত, অথচ নতুন।
©somewhere in net ltd.