![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার কাছে অনেক আইডিয়া আছে এবং আমি তা ব্লগে এপ্লাই করি! জানেনই তো, পৃথিবীর সব কিছুর মূলে রয়েছে আইডিয়া!
বিধ্বস্ত মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রন কক্ষে বসে আছে পিযুস আর সাঈদা। দু'জনের চেহারাতেই রক্তের ছোপ ছোপ ছাপ। মহাকাশযানের একটি বড় গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে দু'জন। ব্যান্ডেজের ফাঁক গলে বেড়িয়ে আসা রক্তগুলো মুছতে ইচ্ছে করছে না তাদের। মঙ্গলগ্রহের বুকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাসের বায়ুমন্ডলে তখন প্রচন্ড ঝড় চলছে। বিষাদ দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের প্রথম মঙ্গল এক্সপিডিশনের দুই মহাকাশচারী।
মহাকাশযান 'দুর্জয় কান্ডারী'-র ভিতরে খুব ঠান্ডা। ক্র্যাশ ল্যান্ড করার পর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি ভালো কাজ করছে না। অক্সিজেন সাপ্লাইও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। অক্সিজেন মিটারের দিকে তাকিয়ে মিশন প্রধান ক্যাপ্টেন পিযূশ বুঝতে পারে, বাকি অক্সিজেন দিয়ে আর মাত্র তিন দিন তারা চলতে পারবে।
সাঈদার সামনের প্যানেলে একটি নীল আলো হঠাৎ 'বিপ বিপ' শব্দে ফ্ল্যাশ করলো। মহামাশযানের মূল ইউনিভার্সিউটার 'দ্রষ্টা' যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে তাদের সাথে। কিছু মনে হয় বলতে চায়। সাঈদা একটা সুইচ টিপতেই, বুড়ো একজন মানুষের গলা স্পিকারে ভেসে উঠে-
'ওহে পিযূস, বাইরে তো তুমুল অবস্থা! দেখেছো নাকি? মঙ্গল তার লীলা-খেলা দেখাতে শুরু করেছে। এ যেন মরুর বুকে দূরন্ত সাইমুম ঝড়!'
ক্যাপ্টেনের কপালে ভাজ পড়ে। বিরক্ত হওয়ার লক্ষণ। একে তো তাকে নাম ধরে ডাকছে, তার উপর আবার এই দার্শনিক সাজার চেষ্টা। যদিও আন্তঃনক্ষত্র মহাকাশ নীতিমালায় যে কোন সপ্তম মাত্রার পঞ্চম সংস্করণের ইউনিভার্সিউটার মহাকাযানের কমান্ডারকে নাম ধরে ডাকতে পারে। কমান্ডারদের নাম ধরে রাখার অনুমতি থাকলেও মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তার ইউনিভার্সিউটারগুলো সাধারণতঃ আগে থেকে ক্যাপ্তেটেনের অনুমতি নিয়ে নেয়। এটাই রেওয়াজ। অথচ, দূর্জয় এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে পিযূসকে প্রায়ই নাম ধরে ডেকে বসে। মাঝে মাঝে ঠাট্টাও করে। দার্শনিকতাও ঝাড়ে মাঝে মাঝে। পিযূসের বয়স অনেক কম বলেই হয়তো সে এই সুযোগটি নেয়।
মহাকাশযানগুলোর কমান্ডারদের মাঝে পিযুশই সবচেয়ে কম বয়সে ক্যাপ্টেন হয়েছে। এখন তার বয়স ৩৮ বছর। মাত্র ছয় মাস আগে তার প্রমোশন হয়েছে। এর মাঝেই মঙ্গল মিশনের জন্যে কমান্ডার হিসেবে তাকে মনোনিত করা হয়। বড় বড় অভিজ্ঞ কমান্ডারদের টপকে তাকে এই ক্যাপ্টেন বানানো বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে দেশে।
নীল আলোর অতিথিরা
মঙ্গলের বিষাক্ত ধুলিঝড় তখনও থামেনি। মহাকাশযানের ভাঙা জানালা দিয়ে মিথেন-ধূলির ঢেউ আছড়ে পড়ছে, যেন পৃথিবীর কাছে নিজের অদম্য শক্তির ঘোষণা দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিভু নিভু আলোয় পিযুস আর সাঈদা একে অপরের দিকে তাকায়। দু’জনের চোখেই একই প্রশ্ন—“এবার কি সব শেষ?”
ঠিক তখনই, সাঈদার প্যানেলে হঠাৎ করে জ্বলে ওঠে এক অচেনা রঙের আলো—মৃদু নীলাভ-সবুজ, যেন সমুদ্রের গভীর থেকে কেউ এক টুকরো আলোর শ্বাস ছেড়ে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দূর্জয়ের সেন্সরগুলো ঘন ঘন ‘বিপ-বিপ’ শব্দ করতে থাকে। পিযুস তড়িঘড়ি করে স্ক্রিনে কোঅর্ডিনেট চেক করল।
এক মুহূর্তের জন্য তার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল—
“কোনো মানুষ না... এটা তো অজানা বস্তু!”
জানালার বাইরে ধুলিঝড়ের বুক চিরে দেখা গেল তিনটি নরম আলোর গোলক ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আকৃতি স্পষ্ট হতে লাগল—তারা ছিল না মানুষের মতো, আবার পুরোপুরিও অচেনা নয়। শরীরটা স্বচ্ছ, ভেতরে নীল আলো টিমটিম করছে। যেন কেউ নক্ষত্রের আলো দিয়ে গড়ে তুলেছে এই সত্তাগুলোকে।
সাঈদা নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
“পিযুস... ওরা আমাদের দিকে আসছে।”
মুহূর্তের মধ্যে মহাকাশযানের বাইরের দরজায় হালকা এক ধাক্কার শব্দ—‘ঠুক!’
দূর্জয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অ্যালার্ম বাজাতে যাচ্ছিল, পিযুস দ্রুত ওভাররাইড করে দিল। দরজার বাইরের স্ক্রিনে দেখা গেল—তিনটি এলিয়েন একসাথে হাতের মতো আকৃতি মেলে মহাকাশযানের ফাটা ফুয়েল-লাইন আর ভাঙা সাপোর্ট বিমের চারপাশে নরম আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সেই আলো কোনো যান্ত্রিক মেরামতি নয়—এ যেন আলোর ভেতর দিয়ে পদার্থকে জুড়ে দেওয়া! ভাঙা ধাতু একে অপরের দিকে গলে গিয়ে আবার নতুন করে একীভূত হয়ে যাচ্ছে।
সাঈদা হতভম্ব হয়ে বলল,
“ওরা... ঠিক করছে! পিযুস, ওরা আমাদের জাহাজ ঠিক করছে!”
পিযুস কিছু বলতে পারল না। শুধু নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকল। তার চোখে তখন ভয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠছে বিস্ময়।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের পাইপলাইন আবার চালু হয়ে গেল। কন্ট্রোল প্যানেলে সবুজ আলো জ্বলে উঠল। নেভিগেশন ইউনিটে সিগন্যাল ফিরল। যেন জাহাজটা মৃত অবস্থা থেকে হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেল।
এলিয়েনদের মধ্যে একজন জানালার কাছে ভেসে এল। তার চোখ দুটো গোল আর উজ্জ্বল—কোনো মুখ নেই, কিন্তু তাতে ভয় ছিল না, ছিল নিঃশব্দ এক শান্তির ছায়া। ধীরে ধীরে সে জানালার দিকে হাত বাড়ালো। পিযুসও অবচেতন মনে নিজের গ্লাভস পরা হাত জানালার দিকে তুলল—এক কাঁচের দেয়ালের দুই প্রান্তে দুই প্রজাতির হাত স্পর্শ করল, যেন মহাবিশ্বের বিশাল নির্জনতায় দুই অচেনা প্রাণ হঠাৎ একে অপরের নিঃশ্বাস চিনে নিল।
কিছু না বলেও, অনেক কিছু বলা হয়ে গেল।
তারপর, যেভাবে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই তারা ধীরে ধীরে মেঘের ভেতরে মিলিয়ে গেল।
কন্ট্রোল প্যানেলে দূর্জয়ের কণ্ঠ ভেসে এল—
“পিযুস, তুমি কি বুঝলে? এরা তোমাদের বাঁচিয়ে দিল।”
পিযুস চুপ করে ছিল। তার বুকের ভেতর অজানা এক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার ঢেউ।
দু’দিন পর, যখন ঝড় থেমে গেল, “দূর্জয় কান্ডারী” আবার আকাশে উঠল। পৃথিবীর নীল আকাশ তখন দূর থেকে ঝিলমিল করছে। সাঈদা কন্ট্রোল প্যানেলে ফাইনাল বাটন চাপল। নেভিগেশন রুটে লেখা —
পিযুস জানালার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমরা একা নই... এই মহাবিশ্বে আমরা কেউই একা নই।”
মহাকাশযানের পেছনে মঙ্গলের ধূলিঝড় ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, আর তাদের সামনে খুলে গেল ফিরে যাওয়ার অসীম নীল পথ।
(চলবে)
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চালিয়ে যান ।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০৯
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চলুক সাথে আছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫১
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
খুশি করার জন্যে বলছি না; বেশ ভালো একটি ফিকশন। প্রচারনা করলে ভালো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।