নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শয়তানের হাত

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:০৩

১লা বৈশাখ ১৪১৮।আমি আর তারেক এসেছি টি এস সি তে।প্রতিবারই সকাল সকাল আসি,এবার বিকেল করে বেড় হলাম।আমাদের দুজনের কারোরই মেয়েবন্ধু নেই তাই সে দিক থেকে কোন হ্যাপাও নেই,কিন্তু সুন্দরী মেয়ে দেখলে দুইজনই হাহাকার করি।দুইজন উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুড়ছি,বেশ ভালো লাগছে।কেউ এসেছে মেয়েবন্ধু নিয়ে,কেউ এসেছে পরিবার সহ,কেউ এসেছে বন্ধুবান্ধব নিয়ে।এটা প্রাণের উৎসব ।সবার মধ্যেই উচ্ছলতা।সবাই এক একটা প্রাণ আবার সবাই মিলে একটা প্রাণ।এই প্রাণের মেলা পৃথিবীর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই।পুত পবিত্র অনুভুতি।
টি এস সির ভেতরের অংশে প্রচন্ড ভীড়।জেমস এসেছে।আমরা একপাশে দাঁড়িয়ে গান শুনছি।এর মাঝে হঠাৎ করে পাশ দিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে হেঁটে গেল সামনের দিকে।মেয়েটা ডাভ বডি স্প্রে মেখে এসেছে,সেটার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।মেয়েটাকে দেখে মনে হল মাত্রই সে ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে।কোন মফঃস্বল অথবা গ্রাম থেকে এসেছে সে।ঢাকা সম্বন্ধে এখনও সে ঠাহর করে উঠতে পারে নি।পরনে মেরুন ফতুয়া আর জিন্স,বুকের ওপর ওড়না।মেয়েটার সাহস দেখে আমি অবাক হলাম।সে ভীড় ঠেলে তরতর করে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে চাইল।
মেয়েটা কিছুদুর আগালেই ভীড় তাকে গিলে নিল।এরপর একডজন শয়তানের হাত নেমে এল মেয়েটার বুকের দিকে ,পেছনের দিকে।ওরা ছিল বারো পনের জন কি তারও বেশী।মেয়েটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ঘটনার বিহবলতায় হতবাক।সে অনেক চেষ্টা করল নিজেকে শয়তানের হাত থেকে বাঁচাতে,পারল না।তার ওড়না ছিটকে পড়ল একদিকে,কানের দুল ছুটে গেল,পায়ের জুতা ছিঁড়ে গেল।তারপর কি হল জানি না।দেখলাম মেয়েটা দুহাত বুকে চেপে ভীড়ের ভেতর থেকে বেড় হয়ে আসছে।মেয়েটার মুখ দেখে অসম্ভব মায়া লাগল।মেয়েটা ঠিক আমাদের সামনে দিয়েই দৌড়ে বেড় হয়ে গেল।জেমসের গান তখনও সেই হারে চলছে।কতগুলো লোক আমাদের মতই মেয়েটাকে দেখল আবার কেউ কেউ কমেন্ট করল ভীড়ের মধ্যে যাস কেন?
আমি থ হয়ে গেলাম।মেয়েরা কি কোথাও বেড় হতে পারবে না?তাহলে আমরা নারীর ক্ষমতায়ন বা সম অধিকার নিয়ে এত বড় বড় কথা বলি কেন?আমার মা,আমার বোন,আমার স্ত্রী,আমার মেয়ে কেউই নিরাপদ নয়।
আমি আর একমুহুর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না।ভীড়ের মানুষগুলো উত্তাল সংগীতের সাথে বিশৃঙ্খল ভাবে নাচতে থাকে,কেউ মেয়েটার কথা মাথায় নেয় না।হয়ত তাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক ।
আমি তারেককে হাত ধরে টেনে বাসায় নিয়ে আসি।তারপর চারটা বৈশাখ চলে গেল আমি ইচ্ছা করেই বাইরে বেড় হই না,টি এস সি তো দূরে থাক।অথচ এই টিএস সি তে না গেলে আমার পেটের ভাতই হজম হত না।ঘেন্না লাগে নিজের প্রতি আমি নিজেও তো একটা পুরুষ।
এই ঘটনাটা আমি কাউকে বলতে পারি নাই লজ্জায়,নিজে কিছু করতে পারি নাই বলে,তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি নাই বলে।
আমি নিজেও বিয়ে করেছি,ও কতবার করে বলে আমাকে পহেলা বৈশাখে টিএস সি ,চারুকলায় নিয়ে চল না।আমি নিশ্চুপ বসে থাকি,কিছু বলি না।ওর সাথে এ নিয়ে আমার মন মালিন্য হয়।আমি কি করব,পহেলা বৈশাখের কথা মনে হলেই ওই মেয়েটার মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।মনে হয় কোটি কোটি শয়তানের হাত ঘুড়ঘুড় করছে এক একটা মেয়ের পেছনে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.