নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলার জানালা

সামছুল আলম কচি

পড়তে আর লিখতে ভালবাসি

সামছুল আলম কচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিখারিনী।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৩

খিলগাঁও বাজারের চিপা গলিতে টেইলারের অপেক্ষায় তার দোকানের পাশে এক চায়ের দোকানে প্রায় আধ ঘন্টা বসে আছি। এর মধ্যে ইলেক্ট্রিসিটি দুইবার গেল। শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার ! ফোন করে জানলাম, তার আসতে আরও পনর মিনিট লাগবে।
সিটি কর্পোরেশন এ বাজার ভেঙে ছয় তলা মার্কেট করবে। চা দোকানী দুলাল মিয়া, সেও আমার মতই বেদম ঘামছে আর তার দোকান ভাঙা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে ! তার বকবকানিতে যা বোঝা গেল- দোকান সবার নিজের পয়সায় বানানো হলেও, সিটি কর্পোরেশন নাকি ভিতরের মালামাল ছাড়া কাঠের রেক, সিলিং ইত্যাদি সব নিলাম করে দিয়েছে। এমনকি দোকানের সার্টার পর্যন্ত ! মার্কেট কবে তৈরী হবে, ততদিন সে কোথায় কি করবে, নতুন মার্কেটে সে দোকান পাবে কিনা, নতুন দোকানের জন্য অত টাকা সে কই পাবে, ঘুষ-চ্যানেল ছাড়া দোকান তো পাবে না ইত্যাদি টেনশনে কাল সারারাত তার ঘুম হয়নি। এই সব ভাবনায় ডায়াবেটিস অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় তার শরীর চলেনা। তবে দিনমান নিজের দলীয় লোকজনকে ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার ভাষায় বেদম গালাগালি চালিয়ে যাচ্ছে !!!
আমার জন্য কাচা পাতি দিয়ে দুলাল মিয়া ভালো করে চা বানালো। ওয়ান টাইমের কাপে এক-দুই চুমুক দিয়েছি, এ সময় দেখি লাঠি হাতে থুত্থুরে এক বুড়ি মিনমিন করে আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে। চিনতে পারলাম। খিলগাঁও রেলগেট, তিলপা পাড়া এলাকার সে রেগুলার ভিক্ষুক। আমার কাছে সে কিছু চায়নি, কিন্তু এ প্রচন্ড গরমে তাকে দেখে, কেন জানি মনে একটু বিরূপ ও অস্বস্তি ভাব হলো ! তবে পরক্ষণেই তা ঢেকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম; সারা দুনিয়া হাইটা বেড়াও নাকি ?
পিটপিট চাউনি নিয়ে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমাকে সে বল্লো, আমারে চিনবার পারছো ! কেমনে চিনলা ?
সে ভিখারিনী, ভিক্ষা করে; তা জেনেও নিজ মুখে প্রকাশ করতে গিয়ে নিজের কাছে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। বহুকাল আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া আমার বুড়ী দাদী'টার চেহারা মনে ভাসলো ! ধাতস্ত হয়ে তাকে বল্লাম, না আপনাকে তো রেলগেট আমানউল্লাহ মার্কেটে প্রায়ই দেখি। এতদুর হেটে এসেছেন, তাই জিজ্ঞাসা করলাম। এদিকে কোথায় যাবেন ?
বুড়ি বল্লো, ভিক্ষা করি বাবা। সব জায়গায় যাই। কিন্তু আইজকাইল টেকাপয়সা মানুষ দেয় না। ফকিরও বাইরা গেছে বাবা। মাদারটেক থাকি। হাইটা হাইটা এইদিকে আসি। বিকাল পর্যন্ত ভিক্ষা কইরা রাইতে মাইয়ার বাসায় যাইয়া ঘুমাই।
টুকটাক কথায় জানা গেল, জামালপুরের নদী ভাঙা এলাকার মানুষ। স্বামী নেই। ভিক্ষার টাকা থেকে মেয়ের সাথে ঘরভাড়া শেয়ার করেন।
জিজ্ঞেস করলাম, সকালে কি খাইছেন ?
বুড়ি বল্লো, সকালে বাড়িতে কেডা নাস্তা দিবো বাবা। মাইয়া-জামাই ভোরে কামে যায়গা। আমি নয়ডায় বাইর হই। প্রত্যেকদিন বাসাবো'র এক দোকান থিকা 'বাকিতে' একটা বনরুটি আর এককাপ চা খাই, বিকালে ভিক্ষার টাকা থিকা শোদ দেই। গরমে তাও চলা ফিরা কইরা দুইডা টাকা পাই, কিন্তু বিষ্টি হইলে ভিক্ষা বন্ধ। কষ্টের জীবন রে বাবা, খুব কষ্ট।
ভিখারিনী চলে যাওয়ার পর দুলাল মিয়ার দিকে আমার চোখ গেল। সে কিছুটা আড়ষ্ট ভাব নিয়ে আমায় দেখছে ! আমি একটু চড়া গলায় দুলাল মিয়াকে বল্লাম, শুনলেন তো; এই ভিখারিণী, এই বয়সে সকালে বাকিতে নাস্তা খেয়ে এসে বিকালে ভিক্ষার টাকায় তা পরিশোধ করে !! আপনার দোকানের ঘটনার সাথে এর জীবনের, শ্রমের, বেঁচে থাকায় কত আসমান-জমিন পার্থক্য ?? আপনি কি এমন আরও আরও মানুষকে ডেকে তার বেঁচে থাকার ইতিবৃত্ত কখনও শুনেছেন !? দুলার মিযা লা-জবাব, সে যেন আরও বেশী ঘামছে!!
টেইলার আসার পর তার সাথে কাজ সেরে বাজার থেকে বের হলাম। মনে মনে ভাবছি, আমরা সবাই-ই তো আসলে নানান রঙের ভিখারি !! প্রত্যেকেই কোনও না কোনো পেশা নিয়ে অন্যের দ্বারে দৌড়াচ্ছি; নানান কামাইয়ের জন্য। সেও তো এক প্রকার ভিক্ষা করার মতোই !?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০২

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনি কি রিটায়ার করেছেন?

১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪০

সামছুল আলম কচি বলেছেন: !! Do you know me ? Yes.

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



খুব সুন্দর করে লিখেছেন।

এই মানুষগুলোর জীবন কেমন করে যে পার হয়ে যায়!

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাসা কোথায়? শহীদবাগ মসজিদের গলিতে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.