নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলার জানালা

সামছুল আলম কচি

পড়তে আর লিখতে ভালবাসি

সামছুল আলম কচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইন প্রনেতা যখন স্বৈরাচার

৩১ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩

সরকার নয়; সরকারের কিছু ‘‘দুই পয়সার কেরানী’’, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচার ও খুনীদের প্রেতাত্মা ‘সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে। যেখানে গত ৮/৯ মাসে পরিকল্পিতভাবে একটার পর একটা দাবি নিয়ে রাস্তা বন্ধ রেখে জনজীবন অতিষ্ঠ করে দেয়া হচ্ছে; তার উপর আইন মন্ত্রণালয়ের এসব ক্রিমিনাল গুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সচিবালয়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরীর উদ্দেশ্যে ‘সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করেছে। এটা একটি স্পর্শকাতর আইন যা সংশোধনের আগে শতবার ভাবা উচিত ছিলো ! তবে কি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জেনে-শুনেই সরকারকে বিকল করার ধান্দায় আছে ??!! এমনিতেই তার বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে অনেক অনেক অভিযোগ !!! কেন এমন পরিস্থিতি; কারা এর পিছনে শ্রম দিচ্ছে !!
এসব তার আগে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা’২০১৮ সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। লেখায় সামান্য পরিবর্তন এনে আমি ওই আইনের অসদাচরণ ও দন্ড সম্পর্কিত কিছু অংশ সরাসরি ‘কোড-আনকোড’ করছি :-
বাংলাদেশ গেজেট
অতিরিক্ত সংখ্যা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
বিধি-৪ শাখা
প্রজ্ঞাপন
তারিখ : ২৯ চৈত্র ১৪২৪ বঙ্গাব্দ/১২ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ।
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রয়োগ
(১) এই বিধিমালা সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা’২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।
(২) এই বিধিমালা নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা কর্মচারী ব্যতীত অন্যান্য সকল সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রজোয্য হইবে, যথা :
(ক) রেলওয়ে সংস্থাপন কোড প্রযোজ্য হয় এমন ব্যক্তি;
(খ) মেট্রোমলিটান পুলিশের অধস্তন কর্মচারী;
(গ) পুলিশ পরিদর্শকের নিম্ন পদমর্যাদার পুলিশ বাহিনীর অন্য কোনও সদস্য;
(ঘ) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর অধস্তন কর্মকর্তা, রাইফেলম্যান ও সিগন্যালম্যান;
(ঙ) জেলার এর নিম্ন পদমর্যাদার বাংলাদেশ জেলের অধস্তন কর্মচারী;
(চ) সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেট-এ প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্দিষ্টকৃত কোনও চাকুরী বা পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগন; এবং
(ছ) এমন কোনও ব্যক্তি যাহার চাকুরীর শর্তাবলী, বেতন, ভাতাদি, পেনশন, শৃঙ্খলা ও আচরন বা এতদসংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে চুক্তির মাধ্যমে বিশেষ বিধান করা হইয়াছে।
২। সংজ্ঞা।
এই বিধিমালায়, বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে,
(ক) ‘‘অভিযুক্ত’’ অর্থ এইরূপ কোনও সরকারি কর্মচারি, যাহার বিরুদ্ধে এই বিধিমালার অধীন কোনও কার্যক্রম (Action) গ্রহন করা হইয়াছে;
(খ) ‘‘অসদাচরণ’’ অর্থ অসংগত আচরণ বা চাকুরী শৃঙ্খলার জন্য হানিকর আচরণ, অথবা সরকারি কর্মচারীদের আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিমালার কোনও বিধানের পরিপন্থী কোনও কার্য, অথবা সরকারি কর্মচারীর পক্ষে শিষ্টাচার বহির্ভূত কোনও আচরণ, এবং নিম্ন বর্ণিত আচরন সমূহও ইহার অন্তর্ভূক্ত হইবে, যথা:
(অ) উর্ধতন কর্মকর্তার আইনসংগত আদেশ অমান্যকরণ;
(আ) কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন;
(ই) আইনসংগত কারন ব্যতিরেকে সরকারের কোনও আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অবজ্ঞাকরণ;
(ঈ) কোনও কর্তৃপক্ষের নিকট কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসংগত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা অথবা তুচ্ছ অভিযোগ সংবলিত দরখাস্ত দাখিল; অথবা
(উ) অন্য কোনও আইন বা বিধি-বিধানে যে সমস্ত কার্য অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হইবে মর্মে উল্লেখ আছে এইরূপ কোনও কার্য।
৩। দন্ডের ভিত্তি
কর্তৃপক্ষের মতে যে ক্ষেত্রে কোনও সরকারি কর্মচারী –
(ক) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থতা, অথবা সাধারণ দক্ষতা বজায় রাখা বা বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত বিভাগীয় পলীক্ষায় পর পর দুই বা ততোধিকবার অকৃতকার্যতা, অথবা যুক্তিসংগত কারন ব্যতিরেকে উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করিতে ব্যর্থ হওয়া , অথবা যুক্তিসংগত কারন ব্যতিরেকে এই বিধিমালার অধীনে তদন্ত কর্মকর্দান হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরম্ভ করিতে কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করিতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে অদক্ষ হন, অথবা দক্ষতা হারান এবং তাঁহার উক্তরূপ দক্ষতা পূনরায় অর্জনের কোন সম্ভাবনা না থাকে; অথবা
(খ) অসদাচরণের দায়ে দোষী হন; অথবা
(গ) পলায়নের দায়ে দোষী হন; অথবা
(ঘ) দূর্নীতিপরায়ন হন, অথবা নিম্ন বর্ণিত কারনে দূর্নীতি পরায়ন বলিয়া যুক্তিসংগতভাবে বিবেচিত হন;
(অ) তিনি বা তাহার উপর নির্ভরশীল অথবা অন্য যে কোনও ব্যক্তি তাহার মাধ্যমে বা তাহার পক্ষে যদি তাহার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনও অর্থ-সম্পদ বা অন্য কোনও সম্পত্তির (যাহার যুক্তিসংগত হিসাব দিতে তিনি অক্ষম) অধিকারী হন; অথবা
(আ) তিনি প্রকাশ্য আয়ের সহিত সংগতিবিহীন জীবন-যাপন করেন; অথবা
(ই) তাহার বিরুদ্ধে দূর্নীতি পরায়নতার অব্যাহত কুখ্যিাতি থাকে; অথবা
(ঈ) নাশকতা মূলক কর্মে লিপ্ত হন, বা লিপ্ত রহিয়াছেন বলিয়া সন্দেহ করিবার যুক্তিসংগত কারন থাকে, অথবা নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত অন্যান্য ব্যক্তির সহিত জড়িত রহিয়াছেন বলিয়া সন্দেহ করিবার থাকে, এবং সেই কাপরনে তাহাকে চাকুরিতে রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর বলিয়া বিবেচিত হয়; তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ, বিধি ৪ এর উপ-বিধি (৬) এর বিধান সাপেক্ষে, তাহার উপর এক বা একাধিক দন্ড আরোপ করিতে পারিবে।
৪। দন্ড।
(১) এই বিধিমালার অধীন নিম্ন বর্ণিত দুই ধরনের দন্ড আরোপ করা যাইবে, যথা
(ক) লঘুদন্ড; এবং
(খ) গুরুদন্ড।
(২) উপ-বিধি (১) এ উল্লেখিত লঘু দন্ডসমূহ হইবে নিম্নরূপ; যথা-
(ক) তিরস্কার
(খ) চাকুরি বা পদ সম্পর্কিত বিধি বা আদেশ অনুযায়ী পদোন্নতি বা আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি ও অযোগ্যতার ক্ষেত্র ব্যতিত, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা;
(গ) কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারী আদেশ অমান্য করিবার কারনে সংঘটিত সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা উহার অংশ বিশেষ, বেতন বা আনুতোষিক হইতে আদায় করা; অথবা
(ঘ) বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ।
(৩) উপ-বিধি (১) এ উল্লেখিত গুরু দন্ডসমূহ হইবে নিম্নরূপ; যথা-
(ক) নিম্ন পদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরন;
(খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান;
(গ) চাকুরী হইতে অপসারন;
(ঘ) চাকুরী হইতে বরখাস্তকরন।
উপরোক্ত আইনে রাস্ট্রের একজন কর্মচারী কি কাজ করলে তা অসদাচরন হবে তার বর্ণনা এবং এজন্য শাস্তি কি হবে সে কথা বলা আছে। আসলে এ আইনটি ১৯৮৫ সালের আইন। ১৯৮৫ থেকে ২০১৮ অর্থাৎ ৩৩ বছর পর্যন্ত এ আইন দিয়ে নির্বিঘ্নে শাসন-শোষন করার পর ২০১৮ এসে দন্ডের হেরফের করে একে সংশোধন করা হয়। শাস্তির বিরুদ্ধে আপীলের সময়সীমা ছিল ০৩ মাস।
২০১৮ সালের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা’২০১৮ আইনের ‘সংগা’ ও ‘দন্ডের ভিত্তি’তে অসদাচরনের যে বিষয়গুলো বলা আছে- ২০২৫ সালের অধ্যাদেশ দ্বারা সংশোধিত হলো তা মূলত: নিম্নবর্ণিত ০৪ টি অপরাধ-কে অন্তর্ভূক্ত করে:-
> এমন কোনো কাজে অংশগ্রহণ করা যা অনানুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।
> যৌক্তিক কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা বা কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হওয়া।
> অন্য কর্মচারীকে কর্তব্য থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করা।
> অন্য কর্মচারীর দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করা।
২০১৮ এর তুলনায় এ সংশোধিত বিধিমালায় কী এমন পরিবর্তন আসলো ??
-লঘু বা গুরুদন্ড উভয় ক্ষেত্রে চাকরি হতে অপসারন ও চাকরি হতে বরখাস্ত’ করা যাবে; যা পূর্বে শুধুমাত্র গুরুদন্ডের ক্ষেত্রে ছিল।
-কৈফিয়ত তলবের ক্ষেত্রে জবাব প্রদানের জন্য ১০ (দশ) দিনের স্থলে ০৭(সাত) দিনের; জবাব প্রদানের পর দোষী সাব্যস্ত হলে আবারও ০৭(সাত) দিনের সময় দিয়ে নোটিশ প্রেরনের উল্লেখ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে কোনও তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দোষীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাক্ষী-সাবুদ উপস্থাপনের কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। দন্ড ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সময়সীমা (যা পূর্বে অনির্ধারিত ছিল) তা একেবারেই কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
-আপীলের সময়সীমা কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে।
পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে; উল্লেখিত ‘সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ টি ন্যায় বিচারের নীতি এবং সংবিধানে প্রদত্ব নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের (৩১ হতে ৪১ ধারা দ্রস্টব্য) সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বিশেষ এ সংশোধনী না আনলে রাস্ট্রের কি এমন ক্ষতি হতো ??!! প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ধরতে চাইলে আরও আরও যে আইন আছে; তা দিয়ে কি ধরা যেত না ?? ১৯৮২ সালের নিয়মিত উপস্থিতি অধ্যাদেশ, সরকারী কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এসব আইনেও তো শৃঙ্খলা/শাস্থিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতো !! এর বাইরেও তো সরকারের সে ভয়াল বাহিনী গুলো আছেই !! যে সচিব মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট জ্বাল করলো; তার শাস্তি হয়নি। যেসব সচিব চরম দূর্নীতিগ্রস্ত; তাদের কিস্সু করতে পারছে না !!
এ বিধিমালা যারা বানিয়েছে, তারা সুস্থ-সুন্দর ও স্বচ্ছ মনের কেউ নয়। এরা নি:সন্দেহে জুলুমবাজ এবং মূর্খ। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এরা কিছুই জানে না। ধিকৃত হোক এরা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪

ফেনিক্স বলেছেন:



যেসব অফিসারের কারণে বিআইডিসি ডুবেছে, আপনি তাদের মাঝে সেরা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.