![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সালাম সাহেব। বয়স আনুমানিক ৪০এর কাছাকাছি। নতুন বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর নাম তমা। সিরিয়াস বয়স ২১এর কাছাকাছি।
জন্মনিবন্ধনে ১৮বৎসর। (বাল্য বিবাহের কুনু চান্স নাই)
সালাম সাহেবের বিশাল বাড়ি। উনি একা ই থাকেন বাড়িতে। বাড়ি দেখা শুনার জন্য এবং রান্নার জন্য আলাদা লোক আছে।
তমা নতুন বউ হয়ে বাড়িতে আসলো। তমার কিছুতেই যেন মন বসছিলো না। শুধু বাড়ির কথা মনে হচ্ছিল আর
মনে হচ্ছিল রাহাতের কথা।
তমা তখন ১০ম শ্রেনীতে পড়ে। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসার পথে একটি ছেলে নিয়মিত ই বিরক্ত করত
তমা কে। তমা উপরে উপরে বিরক্তি ভাব প্রকাশ করলে ও মনে মনে কিন্তু ছেলেটিকে ভালই লাগতো। তাই
ছেলেটির বিরক্তে প্রতিবাদ করতো না। হঠাৎ একদিন ছেলেটি তমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দিলো। ১দিন ২দিন
৩দিন এইভাবে দিন যেতে থাকে কিন্তু ছেলেটির কোন দেখা মিলে না। তমা মন থেকে অনুভব করে ও
ছেলেটিকে ভালবেসে ফেলেছে। তমা প্রতিদিন ঐ রাস্তার ধারে স্কুল ছুটির পর অপেক্ষা করে যদি ছেলেটির
দেখা পায়। হঠাৎ একদিন একটা ছোট্ট ছেলে তমাকে একটা হলুদ খাম দিয়ে যায়। তমা খামটা ছিড়ে দেখে একটা চিঠি আর
তাতে লেখা
তমা,
আমি প্রতিদিন রাস্তায় যেতে আসতে তোমাকে বিরক্ত করতাম। হঠাৎ একদিন আমার মনে ভাবোদয়
হলো আসলে আমি যা করছি তা তো ঠিক না। যাকে ভালবাসি তাকে বিরক্ত কেন করবো?
তুমি আমাকে ঘৃনা করো আর যাই করো আমি দূর থেকেই তোমাকে ভালোবাসবো। আমি প্রতিদিন
তোমাকে দূর থেকে দেখি। তুমি প্রতিদিন যেতে আসতে এদিক ওদিক কি দেখ? আগে তো মাটিতে চোখ
রেখে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা স্কুলে চলে যেতে। এখন ইদানিং দেখতেছি স্কুল ছুটির পর
তুমি কারো জন্য অপেক্ষা করো। যদি ও কেউ আসে না। কার জন্য এসব করছো তুমি? যদি সেই ব্যাক্তি টা আমি ই
হয়ে থাকি দয়া করে উত্তর টা দিও। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। কাল পিচ্চি টা আবার তোমার
কাছে যাবে আশা করি ভালো কিছু হবে।……………………..
তমা ভাবছে আর চারিপাশ লক্ষ করছে। গাধাটা নিশ্চই আশে পাশেই আছে। এখানে আর না থাকাই ভালো।
তমা দ্রুতপায়ে হেটে বাড়ি এসে পরলো। তমার বুকে কাপুনি হচ্ছে।অদ্ভুত এক সুখের কাপুনি। কাপুনিটা বেড়েই
চলছে। নাহ আজ আর খাওয়া দাওয়া হবে না। বুকের মাঝে চিঠিটা রেখে তমা কল্পনা করছে রাহাত কে। নাহ ওর উত্তর
টা এখন ই দিয়ে দেওয়া দরকার। যদিও তমার হাতের লেখা এতটা ভালো না তাতে কি যায় আসে। লিখেই
ফেললো তমা তার মনের মাধুরী আর কিছু অভিমান দিয়ে তার প্রথম ভালোবাসার চিঠির উত্তর।
পরদিন স্কুল ছুটির পর তমা ঠিক সেই জায়গায় দাড়িয়ে আছে। খানিকটু বাদে সেই পিচ্চিটা তমার কাছে আসলো।
তমা কিঞ্চিৎ বিলম্ব না করে আগের মতো একটি হলুদ খাম পিচ্চি কে ধরিয়ে দিলো। পিচ্চি এক
ছুটে হারিয়ে গেলো তমার চোখের পলকে।
রাহাত চিঠি পাওয়া মাত্রই আনন্দে আত্নহারা। হলুদ খামটির উপরাংশ ছিড়ে চিঠিটা বেড় করেই মনযোগ সহকারে পড়া শূরু
করলো রাহাত।
গাধা,
তুমি এত বেহায়া ক্যান?
প্রতিদিন আমার পিছনে ঘুরতে পারছো। আমারে বিরক্ত করতে পারসো। কিন্তু
আমারে যে এত্তো ভালোবাসো এই কথাটা বলতে পারো নাই? আহাম্মক একটা। হঠাৎ কইরা কই হারাইয়া গেলা?
তোমার মধুর জ্বালাতন আমার কাছে তো ভালোই লাগতো। বেশি বোঝ তাই না? দিমু একটা ঘুসি। আমি যে এদিক
ওদিক তাকাই কারে খুজি? তোমারেই তো খুজি বেক্কল একটা। আমি যে এইখানে প্রতিদিন
দাড়াইয়া থাইকা কারো অপেক্ষা করি তোমার ই তো অপেক্ষা করি পাগল। কই এত ভালবাসো এত মনের টান একদিন ও
আসলা না। তুমি কি বোঝনা আমি ও যে তোমারে ভালবাসি।………….
রাহাত কি করবে ভেবে পায় না। একটা দৌড়ে তমার সামনে গিয়ে উপস্থিত হয় রাহাত। এখন যদি দৌড়ে রাহাতের
সাথে উসাইন বোল্ট পাল্লা দিত উনি হারতো শিওর।
-এইতো আমি আসছি। এখন দাও ঘুসি
তমা হাসে।অপূর্ব এক হাসি। যেই হাসি রাহাতের স্বপ্নে জাগরনে। সেই হাসি রাহাত এখন মূগ্ধ হয়ে দেখছে।
…………………….
সালাম সাহেব ও তমাকে ভিষন রকম ভালোবাসে। সারাক্ষন তমার পাশে থাকে তমার যা যা দরকার সব কিছু এনে দেয়।
কোন কিছু অপূর্ন নেই তমার। শুধু রাহাতের ভালোবাসা টা ই নেই। সালাম সাহেবের মুখের দিকে ও
ঠিকমতো এখনো চায়নি তমা। তার বাবার বয়সী একজন লোক এর সাথে সংসার করা তমার কাছে অসম্ভব
মনে হচ্ছে। সারাক্ষন বিষন্নতায় ভুগছে তমা। মনমরা হয়ে সারাদিন ঘড়ে বসে থাকে। সালাম সাহেব তমার
সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। তমা থাকে নীরব।
……………..
রাহাত আর তমার প্রেম আজ দু বৎসর হতে চললো। রাহাতের টেকনিক্যাল কোর্স সম্পূর্ন। আর কয়দিন পরই রাহাত
মালয়েশিয়া চলে যাবে। মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে রাহাত তমার পরিবারের সাথে কথা বলে। তমার বিয়ে যাতে রাহাতের
সাথেই দেওয়া হয়। তমার পরিবার ও রাহাতকে কথা দেয়।
তমা অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। রাহাত তমাকে সান্তনা দেয় । বেশি তো না মাত্র ২টাবৎসর। আর তোমার
সাথে তো আমার যোগাযোগ থাকবেই। চিন্তা করো না। আমি ভালো থাকবো। তুমিও ভালো থেকো।
হাসি মুখে বিদায় দাও প্রিয়তমা।
মনে ব্যাথার বান বইয়ে দিয়ে মুখে ছোট্ট হাসির রেখা টেনে রাহাত কে শুভ বিদায় দেয় তমা।
রাহাত মালয়েশিয়া যাওয়ার কিছুদিন পরই তমার বাবা টাকা সম্পত্তির লোভে জোড় করে তমার অনিচ্ছা সত্বে ও সালাম
সাহেবের সাথে বিয়ে দেয়।
…………..
১টি বৎসর হয়ে গেলো । সালাম সাহেব শত চেষ্টা করে ও তমার ভালবাসা পেলেন না। সালাম সাহেব তার সব বিষয়
সম্পত্তি ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স সব তমার নামে লিখে দেয়। তমার মন গলানোর সব চেষ্টা করে সালাম সাহেব কিন্ত
সবকিছুই ব্যার্থ । সালাম সাহেব চিন্তা করেন বিয়ে টা না করলেই বোধ হয় ভালো হতো। সারাজীবন এমনি ই
কাটিয়ে দিতাম। তমাকে এতো ভালবাসি আমার মতো ওকে কি আর কেউ ভালবাসতে পারবে? হয়তো না। কিন্তু ও
কেন আমার ভালোবাসা বুঝতে চায়না। ও তো আমার সাথে তেমন কথাই বলে না।
………
কংগ্রেচুলেশনস সালাম সাহেব আপনি বাবা হয়েছেন। আপনার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে।
-আর আমার স্ত্রী?
হূম আপনার স্ত্রী ও সুস্থ আছেন। যান দেখে আসুন।
-কেমন আছ তমা?
>জ্বী কিছুটা ভাল।
-দেখো আমাদের বেবিটা কত্ত কিউট হয়েছে। ঠিক তোমার মতো।
>হূম
সালাম সাহেব টলটল চোখে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন। আজকের দিনে ও তমা আমার
সাথে এভাবে দূড়ের মানুষের মতো কথা বলছে। ওর মনে কি আমার জায়গা কখনো হবে না?
……..
২বৎসর হলো আজ। রাহাত মালয়েশিয়া থেকে ফিরে সোজা তমাদের বাসায়। তমার বাবা তো রাহাত কে চিনতেই
পারলো না। রাহাত জিজ্ঞেস করলো তমা কোথায়? তমার বাবার সোজা সাপ্টা জবাব তমার বিয়ে হয়ে গেছে ঐ
পাড়ার সালাম সাহেবের সাথে। রাহাত প্রথম বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে লোকমুখে শুনে বিশ্বাস হয়।
……………….
সালাম সাহেব ভাবছিলেন একটা সন্তান হলে হয়তো সব ঠিক হয় যাবে। কিন্তু কই
এতে তো হিতে আরো বিপরীত হলো। তমা সারাদিন বাচ্চার ই দেখাশুনা করে ওর সাথেই কথা বলে সময় কাটায়।
আমাকে তো সময় ই দেয় না।
…………
রাহাত সুযোগে আছে কিভাবে সালাম সাহেবের বাড়ি টপকে তমার সাথে দেখা করা যায়। সেই সুযোগ একদিন
হয়ে ও গেলো। অন্ধকার রাতে সালাম সাহেবের বাড়ির দেয়াল টপকে অতি সন্তপর্নে বাড়ির পেছনের
আমগাছে উঠে ২য়তলার সিলিং এ হেটে হেটে দুটো জানালা পেড়িয়ে তমার রূমের জানালার
কাছে আসলো রাহাত। রাহাত অতি মৃদুস্বুরে ডাক দেয় তমা কে। তমা বাবু কে ঘুম পারাচ্ছিলো।
-তমা এই তমা
>কে কে?
-এই আস্তে বলো। আমি রাহাত।
>তমা কিছুক্ষনের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেল। রাহাত? আমার রাহাত?
-হ্যা গো তোমার রাহাত।
তমা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। এতদিন পর তুমি আসলে যখন সব শেষ।তোমার তমা শেষ হয়ে গেছে রাহাত।
-কিচ্ছু শেষ হয় নি। আমি এখন ও তোমাকে ভালবাসি সেই আগের মতো। এই আমার নম্বর টা রাখো। এখানে আর
দাড়িয়ে থাকতে পারছি না। আমি যাই। ফোনে কথা বলবো।
…………….
সালাম সাহেব লক্ষ করছে,, তমাকে ইদানিং অনেক প্রাঞ্জল হাসি খুশি দেখাচ্ছে। হঠাৎ কি এমন হলো?
ইদানিং তমাকে ফোনে কথা বলতে দেখা যায় সারাক্ষন। এতো কার সাথে কথা বলে ও?
সালাম সাহেব তমাকে প্রশ্ন করে।
তমা ধমকের সুরে বলে আমি কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। সালাম সাহেব
রেগে গিয়ে তমাকে জোড়ে একটা থাপ্পর মারে। তমার থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়।
একটু পর তমার মোবাইলে একটা ফোন আসলো। সালাম সাহেব ধরলেন।
-কি হলো তমা কেটে দিলা ক্যান?
>আমি তমার স্বামী এবং ফোনটা আমি ই কাটসি আপনি কে বলবেন দয়া করে?
ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দেওয়া হলো।
সালাম সাহেবের বুকটা হুহু করে উঠলো। যার জন্য এত করলাম সেই শেষ পর্যন্ত আমাকে ধোকা দিলো। ওর
সাথে আর সংসার করা যাবে না। ও আমার মান সম্মান সব ধ্বংশ করে দিবে।
……………..
সালাম সাহেব কে না জানিয়ে গোপনে অন্য ফোনে রাহাতের সাথে কথা বলতো তমা।
-হূম যা বলছি তাই যেন হয়। খবরদার কেউ যাতে টের না পায়। দরজা বাহির থেকে খোলা রাখবা।
>আচ্ছা
রাত ২টা
……………
শুনশান রাস্তা। হলুদ ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ধারালো স্টিলের ছুড়িটা চিক চিক করছে ছদ্দবেশীর পকেট এর
আড়াল থেকে। ছদ্দবেশী সালাম সাহেবের বাড়ির দেয়াল টপকে ধীর
পায়ে এগিয়ে আস্তে আস্তে আবছা মেলানো দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
কথামতো তমা কে একটা মিসকল দেওয়া হলো। ছদ্দবেশীর সাথে তমা ও মিলিত হলো। দোতালার রূমে সালাম
সাহেব ইজি চেয়ারে বসে হালকা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।
ছদ্দবেশী খুব আলতোভাবে নিঃশব্দে দোতালায় উঠে সালাম সাহেবের পেছনে গিয়ে উনার গলায় শানীত
ধারালো ছুড়িটা রেখে দিলো একটা হ্যাচকা টান। মূহুর্তের মধ্যে গল গল করে তাজা রক্ত পরা শুরু হলো সালাম
সাহেবের গলা থেকে। একটা আর্তনাদ করার সুযোগ পর্যন্ত পেলেন না।
আমার কাজ শেষ। তমা এইবার তোমার পালা।
>না রাহাত এই কাজ আমি কখনো করতে পারবো না। ও আমার নিজের গর্ভের সন্তান।
-না ও তোমার সন্তান না। ও এই সালামের পাপ। যাও তমা কুইক। সময় নেই। এই মদ থেকে এক ঢোক খেয়ে নাও।
কোন ভয় লাগবে না।
ঠিক এর পরমূহূর্তেই তমা নিজের আপন সন্তান কে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।
……………..
কত পাষন্ড হলে পাগল হলে নিজের সন্তান কে হত্যা করা যায় জাজ। কল্পনার ও বাইরে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার
চাচ্ছি মহামান্য আদালত।
>বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৫০২ধারা মোতাবেগ আসামি তমা এবং রাহাত কে ফাসি তে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ
দেওয়া হলো।
©somewhere in net ltd.