নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎসর্গ- হুমায়ূন স্যার গল্প : অদ্ভুত প্রেমের বাঁধনে

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৯



শীত এখানে প্রচুর । কনকনের শীত কথাটা এখানে খাটে না কারণ বরফের চাদোয়ার দেশে শীত শব্দটা কোন অর্থ বহন করে না । লন্ডন স্বপ্নের নগরী । বাবা এক রকম জোর করেই পাঠিয়েছে , তার স্বপ্ন ছেলেকে ব্যারিষ্টার বানাবেন । উষ্ণ সবুজের দেশটা ছাড়তে কতটা কষ্ট হয়েছে তা কাকেই বা বুঝাবো । মাও কিছু বলেননি শুধু বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে জড়িয়ে হালকা কেঁদেছেন ।আপাতত এক কফিসপের কফিতে চুমুক দু চুমুক দিয়ে আমার দু বছরেরে র্নিবাসিত জীবন স্মৃতি চারণ করছি । এখানকার কফিশপটা আমার বেশ পছন্দ । কারণ মুলত এর নাম । নাম সামার কফি সপ । ঠান্ডার সময় সামার শব্দটা উষ্ণতা দিবে বলেই মনে করেই মনে হয় নামটা রাখা । আর উষ্ণতাটা আমি বেশ অনুভব করছি ।
.
.
প্রচন্ড থান্ডার স্টর্ম হবে , খবরে বার বার বিশেষ বুলেটিন প্রচার করা হচ্ছে । মনে হয় এই কারণে কফিসপে মানুষ কম । অথচ আজ সানডে । না হলে , উইক এন্ডের এই দিনে প্রচুর টাইট জিন্স পরা টিনএজারের দেখা মিলে । যারা পরে কার কার সাথে ডেটে যাবে তার কথা পাকাপাকি করতে আসে । এদের ভালবাসার কথা চিন্তা করে মনে মনে হাসি । ভালবাসা কতটা না সস্তা । অথচ এখানে এক সময় রোমিও জুলিয়েট মত অমর সাহিত্য রচিত হয়েছে ।একবার আমার এক প্রফেসরকে এই ব্যাপারে মৃদু মন্তব্য করেছিলাম । প্রফেসর বিরক্তে ভ্রু কুঁচকে হয়ে বলেন সবাইকে একই পাল্লায় মেপো না । এখনো এখানে ভালবাসায় মরে যাবার রের্কড আছে । তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ছিলাম । এর ফল ভালো হয় নি । সেমিষ্টার এক্সজামে "সি" ধরিয়ে বলেছেন-
.
"ভালবাসায় পি এইচ ডি না করে বইতে মনসংযোগ কর " এরপর তৃপ্তির এক হাসি হেসেছেন ।
.
.
.
Today we are obliged to be romantic
And think of yet another valentine.
We know the rules and we are both pedantic:
Today’s the day we have to be romantic.
Our love is old and sure, not newand frantic.
You know I’m yours and I know you are mine.
And saying that has made me feel romantic,
My dearest love, my darling valentine.
.
আজ সারাদিন ঘুরে ফিরে এই কবিতাটার কথা মনে আসছে । লিখেছেন Wendy Cope । কোন এক ঠান্ডায় ফায়ারপ্লেসে উষ্ণতা পোহাতে পোহাতে এই কবিতাটা লিখেছেন বলে মনে হয় । উনার পয়েন্ট অব ভিউ ছিল সত্যিকার কাপলরা দীর্ঘকাল এক সাথে থাকে ।কি সব আজে বাজে চিন্তা করছি । আসলে চিন্তা না করেই পারছি না । ৭ টায় আমার ডেন্টিটের সাথে এপয়েন্টমেন্ট । এখনো ৬টা ৩০ । আমার মনে হয় এখানকার সময়গুলো এমনেই লম্বা । অদ্ভুদ এক পরিবেশ । ঝুমঝুম কোন শব্দ নেই । গাছের পাতার শনশনানি নেই । ব্যাঙ ডাকছে না । বরফ সব শব্দ চুসে নিয়েছে ।
.
এপয়েন্টমেন্ট ৭ টায় থাকলেও এখন ৭টা ১৫ । আমার ডাক এখনো আসে নি । পাশে দুই বুড়া বুড়ি । একজন ম্যাগাজিনের পাতা পাল্টাছে আর একজন দাঁত চেপে বসে আছে । তার দাঁত কিড়মিড় ভাব দেখে আমার দাঁততেও শিরশির ভাব চলে এসেছে । এমন সময় আমার ডাক এলো । মিঃ রবি । তাড়াতাড়ি রেস্পনস করলাম , না হলে দাঁত কিড়মিড় আমারই শুরু হয়ে যাবে । তাড়াতাড়ি ঢুকতে গিয়েই অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম । র্নাসের সাথে ধাক্কা । হাতের সবকিছু ফ্লোরে । সাথে সাথে ডাক্তার মেয়েটাকে কিছুটা কড়া কথা শুনিয়ে দিল । মেয়েটা কোনা চোখে আমাকে দেখে মুদু গলায় স্টুপিড বলে চলে গেল । আমি ওর চোখ দেখে আঁতকে উঠলাম , দেশে থাকতে নানান সময় আমি পুঁজায় গড়েস মা দুঁগাকে দেখেছি , আজ মনে হল তেমন এক প্রতিমাকে দেখেছি । টানাটানা চোখে মোটা কাজল তবে কি কারণে বাম চোখের কোনাটা কাজল লেপটে গেছে । কাজল যেকোন মেয়েকে আর্কষনীয় করে তোলে তবে তা যে শেতাঙ্গিনীকে এত সুন্দর করে তোলে তা প্রথম জানলাম । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল লাইফে আমাকে অনেক মেয়েই স্টুপিড বলেছে কিন্তু আড়চোখে এভাবে কোনো মেয়েই আমাকে স্টুপিড বলেনি । মজা পেলাম । সৃষ্টিকর্তা সব কিছুতেই সৌন্দর্য দিয়েছেন শুধু আমরা দেখিনা বা দেখার মানসিকতা নেই ।
.
.
.
.
জ্যাকশন রোড । লাইটের টিমটিম আলোয় যেন অন্ধকার আরো জাঁকিয়ে ধরেছে । এমন একটা সময় আমি গুটিগুটি পায়ে আমার পার্টটাইম জব শেষে আসছি । ঠান্ডা আজ একটু বেশি , সিগারেটটা না খেলেই নয় । সমস্যা হল লাইটার নেই । কি করব না করব ভাবতে ভাবতে জ্যাকশন ব্রীজের নিচে এসে গেছি । এমন সময় লেদার জ্যাকেট পড়া এক মেয়ের আগমন , হাতে সিগারেট । লেদার জ্যাকেট পড়া মেয়েটা চেহারা দেখা যাচ্ছে না । নম্রতার সাথে চাইলাম যাতে রিজেক্ট হতে না হয় । না হলে সিগারেট না খাবার দুঃখে এইখানে সুইসাইড করতে হবে । লাইটারটা এগিয়ে দিলো । লাইটারটাও সুন্দর , রিভেন্জ ব্যান্ডের । লাইটার জ্বালালাম । সাথে সাথে মেয়েটার চেহারা জ্বলসে উঠলো । সোনালী ঢেউ খেলানো চুল তার । কাজলে রাঙানো চোখ । লাইটারের আলোর জন্যই হোক বা অন্য কিছুর জন্যই হোক আমার মনে হচ্ছিল লিউর্নাদো নিজের হাতে তুলি দিয়ে মেয়েটির চেহারাটা এঁকেছেন । আরো অবাক হলাম মেয়েটাকে দেখে । মেয়েটা আর কেউ না ঐ র্নাসটি যে তাকে স্টুপিড বলেছিল । মেয়েটিও ওকে চিনেছে বলে মনে হলো । আমি অবাক হলাম এক মেয়ের এত রকম রূপ ??
.
চলে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি বললাম সরি । মেয়েটা আমাদের মেয়েদের মত নেকামো না করে বলল "ওকে আই নেভার মাইড ইটস মা জব" বুদ্ধিমতী মেয়ে , বলতে হয়েনি কিসের কথা বলেছি । কথা হচ্ছিল হাঁটতে হাঁটতে । আরো কিছু বলতে যাচ্ছি বাঁধা দিয়ে বলল সে ব্যস্ত কথা বলার সময় নেই । কথাটা আমার নিজের ইগোতে আঘাত আনলো । আমি কন্যা রাশি জাতক জীবনে কখনো মেয়ের পিছে ঘুরতে হয়নি আজ এক শেতাঙ্গিনী আমাকে এই অপমান করলো ? দাঁড়িয়ে গেলাম দরকার নেই মেয়েটার , চাইলে আমি আরো মেয়ে পেতে পারি । চলে যাচ্ছি এমন সময় মেয়েটার ডাক
.
"হ্যালো মিঃ ?"
"হুম ররি হাসান , ফেন্ডস কল মি রবি "
"আমি ব্লিটাল নদীর পাড়ে রোজ মরনিং ওয়াকে আসি । চাইলে আমাকে সঙ্গ দিতে পারো" ( ইংলিশ এ )
.
হাসলাম
.
কি রূপসী অঙ্গে বসি অঙ্গ খসি পড়ে
প্রানদহে কতসহে নাহি রহে ধড়ে
মধ্যে ক্ষীন কুচ পীন শশহীন শর্শী
আস্যবর হাস্যোদর বিম্বাধর রাশি
.
.

অদ্ভুত প্রেমের বাঁধনে ২
.
মারিয়া মেয়েটির নাম । আর শেভেরু ওর পদবী । একদিন টেরেসে বসে এই পদবী অর্থ জানতে চাইলাম । স্বশব্দে হাসলো । হাসতে হাসতেই জানালো এর অর্থ আমের বাগান । কি অদ্ভুত !! কারো নামের পদবি আমের বাগান হতে পারে তা আমি জানতাম না । আমি বললাম অম্রকাননে মারিয়া । আমি জানি সে এর অর্থ বুঝেনি তারপরও খিল খিল শব্দে টেরেস ভাসিয়ে দিয়েছিলো । ঢেউয়ের মত থেমে থেমে আসা হাসি । যেন ছন্দ মিলাচ্ছে । মারিয়ার সাথে আমার প্রথম অফিসিয়ালী দেখাতেই আমি ওর খিল খিল হাসির সাথে পরিচিত হই । তখনই ছন্দটা বুঝতে পেরে অবাক হয়েছি । আজো কি যেন আছে ওর হাসিতে । ঠান্ডার সেই দিনটা আজো চোখে ভাসে ।
.
.
বরফের রাজ্যে সাত সকালে উঠার মত বাজে কাজ কেউ করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করতাম না । আজ সে কাজটা আমাকেই করতে হচ্ছে !! কারণ আমার হাত বাঁধা , এক মেয়ে আমাকে সাত সকালে নদীর তীরে তার সঙ্গী হবার অনুরোধ করেছে , ঠান্ডায় এমন উষ্ণ অনুরোধ কে ফেলতে পারে ? তাই আপাতত ঘুমকে বাই বাই জানিয়ে অস্থির পায়ে সকালের প্রথম যাত্রা শুরু করি ।স্বাভাবিকভাবে নিদিষ্ট টাইমের আগে জায়গাটিতে পৌছে গেলাম । জায়গাটাতে বরফ নেই , রাস্তার নিচে হিটার বসানো । মুলত এই কারণে স্বাস্থ্য সচেতনরা নিয়মিত এখানে আসে দীঁঘদিন বেঁচে থাকবার প্রত্যয় নিয়ে ।
ইংরেজরা ঘড়ি ধরে চলে বলে জানি কিন্তু ইয়াং জেনারেশনরা এর ধার ধারে না বলেও বেশ বদনাম আছে । কিন্তু না আমার সব ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে ঠিক টাইমেই সে উপস্থিত ।
.
জগিং সুটে । হাস্য উজ্জ্বল এক চেহারা । ( কথোপোকথন ইংলিশে )
.
-এসেছো তাহলে ?
-এমন আমন্ত্রন কি কেউ ছাড়ে ?.
খিল খিল শব্দে হেসে উঠে । ওর গাঢ় সোনালী চুলগুলো দোলা খেলো । অবাক হয়ে শুনছি আর দেখছি ।
.
-কি দেখো ?
-তোমার চুল
-আগে দেখোনি ?
-এইভাবে দেখিনি
.
আবার সে খিল খিল হাসে । বড় মধুর সে হাসি । ঢেউ ঢেউ
-তুমি কোন দেশের ? ইন্ডিয়ান ?
এই প্রথম বিরক্ত হলাম মেয়েটার প্রতি
-নাহ্ ,বাংলাদেশ ,নাম শুনেছো ?
-হুম শুনেছি । সাথে সাথে মনটা খুশি হয়ে উঠেছিল আর কি ভেবে খারাপও লাগলো । না জানি কি শুনেছে
.
ওখানে আমার বয়ফেন্ড জব করে । একটু চমকালাম । যদিও চমকানোটা যুক্তিসংগত না কারণ এই বয়সে এক ইংরেজ মেয়ের বয়ফেন্ড থাকতেই পারে
.
-ওখানে কি করে ?
-জাতি সংঘের পক্ষ থেকে বাঘের উপর রির্সাচ করতে গেছে তার প্রফেসরের অধীনে ... ব্লা ব্লা ব্লা অন্ধের হস্তি দর্শন করালো । তবে এতটুকু বুঝলাম বেটা কিসের যেন "লজিট" ..
.
মনে মনে আমার কপাল দেখে হাসলাম । এই ব্যাপারে বাংলা ভাষায় কি যেন এক বাঘধারা আছে ? ওহ হ্যাঁ বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো উচিত না । মেয়েটা আমার চেহারাটা যেন পড়তে পারলো , হাসলো
.
-বন্ধু হতে চাও ? শুধু বন্ধু ?
-হুম , হতে চাই । হাত বাড়ালাম । হাত ধরলো না । ভ্রুদ্বয় জোড়া লেগে গেল ।
-কোন চাওয়া পাওয়া থাকবে না
-থাকবে না । মৃদু হেসে হাত ধরলো...
.
এরপর সময় গেল । বসন্ত এলো । আমাদের বন্ধুত্ব জমতে লাগলো । নিখাদ এই বন্ধুত্ব । আমাকে সে রর্বাট ফ্রস্টের কবিতা শুনায় আমি রুদ্রের কবিতায় শোনাই । বুঝে না তাই অনুবাদও বলি । আমার কাছে থেকে সে LOVE এর বাংলা জানতে চায় ,বলি । আমার কাছ থেকে আমার জি এফের কাহিনী শুনতে চায় । নীরবে থেমে থেমে হাসি । জিজ্ঞাস করে ছেলেদের প্রতি আমার টান কেমন ? আমি হতভম্ভ হয়ে হেসে দিই । যতই মিশি ততই ভাল লাগে । একে দেখে আমি ভাল লাগার ৫টি রূপ বুঝতে পারি । আমি বক বক করছি মারিয়া কিছু বলছে না । তাকিয়ে দেখি ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি
.
-যখন ওর হাই হিল মাটিতে পেতে রাখা লোহার ফাঁকা পাতে যখন আটকে যায় তখন আমার দিকে তাকানো তার হাসি
.
-সুর্যাস্তের মুর্হুতে ওর টেরেসে ঠান্ডা বিয়ার পানের মুর্হুতে ওর কবিতা
.
-বাঙ্গালীর খাবার খাওয়ানোর সময় ধীরে ধীরে ওর চোখে পানি চলে আসা
.
-আর সে পানি ঐভাবেই ধরে রাখা ।
.
এইভাবে কাটে আমার ও ওর দিনগুলো । প্রতি রবিবার একসাথে বেড়াতে যায় । আমার রুমমেট ও সহপাটিরা ইর্ষায় র্জজরিত । আমাকে নিয়ে কানাঘুষাও চলে । এক প্রফেসর তো তাচ্ছিল্যতার সাথে বলেই ফেলল ,গ্রীনর্কাডের জোগাড় কি করেই ফেলেছো ? আমি নীরব হাসি হেসে সব রহস্য রেখে দিই ।
.
.
বিল্টল লেকের পাশে ওর কারের বনেটের উপর । হাতে বিয়ারের বোতল
.
-রবি একটা কবিতা শুনবে ? রবার্ট ফ্রন্ট্রের ? টেলিফোন নিয়ে লিখেছ । বিরক্ত হলাম । কি সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ । এমন সময় টেলিফোনের মত বাজে জিনিসের কবিতা কার শুনতে ইচ্ছা করে ? তাই চুপ থাকলাম , বাংলায় নীরবতায় সম্মর্তির লক্ষণ বলে একটা কথা আছে । ইংলিশে আছে কি জানি না । থাকতে পারে । আমার নীরবতা দেখেই মনে হয় কবিতা আবৃতি করা শুরু করেছে ।
.
'When I was just as far as I could walk
From here to-day,
There was an hour
All still
When leaning with my head against a flower
I heard you talk.
Don't say I didn't, for I heard you say--
You spoke from that flower on the window sill-
Do you remember what it was you said?'
'First tell me what it was you thought you heard
.
অপলক কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ওর চেহারায় । টেলিফোনের নাম গন্ধ নেই অথচ কি সুন্দর একটা কবিতা । কি যেন হল , মনে হয় আমি ওকে এখনো চিনি না । চিনতে পারিনি । ওর চোখে পানি ।
.
-মারিয়া , কি হয়েছে ? জবাব দিলো না । অকারণে হাসলো । কেন যেন মনে হলো সে খুবই দুঃখী
-রবি ?
-হুম ।
-আমাকে কি ভালোবাসো ? হাসলাম
.
.
"কতবার যে আমি তোমাকে স্পর্শ করতে গিয়ে
গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।
তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও
কতবার যে আমি সে কথা বলিনি
সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন"
.
-আমাদের মাঝে ভালবাসার কথা আসবে না । এমনটাই কথা হয়েছিল তাই না ?
কিছুক্ষন চুপ
-রবি , তোমাকে তো অনেক কথায় বলেছি কিন্তু বি এফের কথা বলিনি আর তুমি কখনো আমার বি এফ সর্ম্পকে জানতে চাওনি , কেন ?
ওর ভাসাভাসা চোখে কিছুক্ষন দেখলাম । আজো তাকে প্রথম দিনের মত গডেস মা দুর্গার মত লাগছে ।
.
গীতার এক শ্লোকের কথা মনে পড়ছে
"তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যের্মামৃতৎ গময় "
হে ইশ্বর , আমাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাও । মৃত্যু থেকে অমৃত্যুতে ..
.
.
অদ্ভুত প্রেমের বাঁধনে ৩
.
বিল্টল লেক । হাতে বিয়ারের ক্যান । গাড়ির বনেটের উপর বসে আছে । নীরব ভঙ্গিতে চেয়ে আছি দুরে
.
- কি নিস্চুপ কেন ?
- কি বলব ?
- যা প্রশ্ন করেছি তারই উত্তর দিবে । ওর ঠোট কামড়ে ধরাতে কোন মায়া ছিল না । ছিলো শুধু জেদ
.
মৃদু হাসলাম । ঠান্ডা বিয়ারে এক চুমুক দিয়ে ওর জ্বলজ্বল চোখে দিকে তাকিয়ে জানালাম ।
"ইর্ষা"
.
কষ্টের হাসি হাসলো । যেন জানতো আমার উত্তর এই হবে
- কেন ? ভাল লাগে আমাকে ?
হুম বেশ লাগে ।
- তাহলে আজ আমার কথা শুনতে হবে , আমার অতীত দেখতে হবে । পারবে ?
.
আবার সেই নীরবতা । মেয়েটা বুঝে না কেন ওর অতীত নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই । আমি ওর বর্তমানকে ভালবাসি । আচ্ছা ওকে কি আমি আসলেই ভালবাসি ?নাকি সাময়িক আবেগ ? এক বাঙালী এক শেতাঙ্গিনীর মাঝে কি ভালবাসা হয় ? অনেকগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন । নিজেকে চিনতে পারছি না । লিভ টলস্তয় তার উপন্যাস "ওয়ার এন্ড পিস" বলছেন মানুষ নিজেকে চিনতে পারে না । আমি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি । কবি মায়াকোভস্কি নিজেকে জেনে ফেলেছিলেন , তাই তাদের জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে । ফলে নীরবেই তারজীবনের ইতি টানেন । যেমনটা রুদ্র শহীদুল্লাহ
.
- একটা কবিতা শোনাও । হঠাৎ মুড চেইঞ্জ । তীক্ষ দৃষ্টিতে দেখলাম । চোখে চোখ ।
-তোমার স্বরচিত কবিতা
.
- অর্থ বুঝবে না ।
- তুমি বল আমি তোমায় দেখে বুঝে নিবো।
.
আমি তার চোখ দেখছি । তারাময় রাতে তার মণি যেন বিন্দু বিন্দুর আলোর উৎস । গডেস দুর্গার মত টানা টানা চোখ তার । যতবার দেখি ততবার মনের মাঝ হতে কি যেন বেরিয়ে আসতে চায় । বুঝতে পারি না ।
.
.
তুমি ভ্রান্তি
তুমি রহস্যময়ী পরিধি
যতই কাছে আসি , ততই দুরে দেখি
.
মিলনান্ত নীলে খুঁজি তোমায়
সূর্যের প্রথম কিরণের উত্তাপে বুঝি তোমায়
.
বেদনা কাতর এই মন ডাকে তোমায়
.
তুমি শোনো ?
নাকি বিধাতার অভিশাপ মনে করে ভুলে থাকো
.
হ্যাঁ , বেসেছি তোমায় ভালো
হ্যাঁ , হারিয়েছি মন এই চুলে
রেখেছি তোমায় নিঃশ্বাসে
পাব তোমায় এই আছে বিশ্বাসে
.
জানি না , সব কি ভুল ?
নাকি ছলনা ?
এতো অগ্নিঝরা রাজপথে আমার পদ চারণা
.
জ্বলছে সব
জ্বলছে এ কায়া
জ্বলছে সারাটা ধরণী
কাতর মনে বলছি , এই আমার অসমাপ্ত কাহিনী
.
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ শক্তকরে জড়িয়ে ধরল । সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানালাম । এই আবেগময় আলিঙ্গনের জন্য । যার স্বপ্ন আমি প্রতি নিয়ত দেখেছি । কানে উষ্ণ জলের স্পর্শ পেলাম । মেয়েটা কাঁদছে । মেয়েদের অশ্রু নিয়ে শেক্সপিয়ার রোমিও জুলিয়েটে দারুণ একটা কথা বলেছিলেন । তবে এই আবেগময় মুহুতে এটা মনে এসেও আসছে না ।
.
.
জন দুরের কেউ ছিলো না । আমাদের ফ্যামিলি ফেন্ডের ছেলে সে । আমরা ষ্ট্যান্ডার ফোর থেকে ডেট করছি । পরিবারও খুশি । একদিন নিউ ইয়ারের পার্টিতে হঠাৎ আমাকে রিং পড়িয়ে দিয়ে জানালো সে আমাকে বিয়ে করবে এমনি এক নিই ইয়ারে । এমন একটা দিনের জন্য প্রতিটা মেয়ে অপেক্ষাকরে , আমি করেছি । আমি তখন খুশিতে আত্মহারা । তখনই সে জানালো সে জাতিসংঘের একটি রিসার্চ জব পেয়েছে , ১ বছরের , তাই সে সুত্রে বাংলাদেশের সুন্দরবন যাবে । কষ্ট পেলেও মেনে নিলাম । অফিশিয়াল এন্গেইজমেন্টের পর উষ্ণ চুম্বনের সাথে তাকে বিদায় দিলাম । সেলফোনে ম্যাসেজ এলো ।
.
নাও আই নো হোয়াট ইজ লাভ । ইটস ইউ । মাই লাভ মারিয়া ।
.
Love is feeling cold in the back of vans
Love is a fanclub with only two fans
Love is walking holding paintstained hands
.
Love is
Love is the presents in Christmas shops
Love is when you’re feeling Top ofthe Pops
Love is what happens when the music stops
.
Love is
Love is you and love is me
Love is prison and love is free
.
so i lave you maria
.
৬ মাস পর হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম। জন ইজ ডেড । আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি । সুস্থ হতে হতে ২ সপ্তাহ লাগে । ঠিক হবার জানতে পারলাম । জন তার প্রফেসরের কথা না শুনে সেফ হাউজের বাহিরে যায় । এই অবস্থায় তাকে বাঘে ধরে নিয়ে যায় । পরের দিন প্রফেসর ও তার দলবল তার লাশ খুঁজে পায় একটা গাছের উপর । এক পা ছেঁড়া । প্রফেসরে ধারণা সে কোন ভাবে বাঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে গাছে উঠে যায় । আর রক্তক্ষরণে তার ওখানে মৃত্যু হয় । পোষ্টর্মাটমে সময় ওর মুখ থেকে আমার দেওয়া এনগেইজমেন্ট রিংটা পাওয়া যায় । সে কি মনে করে তা মুখে পুরে নিয়ে ছিলো ।
.
অঝরে কাঁদছে সে , কাঁদুক । উষ্ণজলের বর্ষণ অনেকদিন আটকে রেখেছে , আজ ঝরুক । ঝরে ঝরে শান্ত হোক ।এরপর আমার কাছে এক নতুন মারিয়া আসুক
.
পাশাপাশি
আধশোয়া ভঙ্গিতে শুয়ে আছি ।
.
রাত কাটছে ।
দীর্ঘ এই রাত ।
সকাল হবে ।
মেঘ ঝরে ঝরে শেষ হবে ।
শুরু হবে এক নতুন রৌদ্র উজ্জল দিন।
.
.
সমাপ্ত
ধন্যবার্থে হুমায়ূন স্যার

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: লেখাটা বেশ ভালো। পড়াটা উপভোগ করছিলাম।

শুভকামনা রইলো। :)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ।
ধৈর্য্য ধরে এতবড় একটা লিখা পড়ার জন্য ।

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা। ভাল লাগলো ভাই। আমিও একটা লিখেছিলাম। আপনার লেখা পড়ে ঐটাকে আর কিছুই মনে হচ্ছে না।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: একেক জনের লিখার ধাঁচ একেক রকম । আমার আপনারটাই বেশি ভালো লেগেছে ।

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:২৭

সুলতানা রহমান বলেছেন: উফ,‌কি যে ভাল লাগ‌লো লিখাটা ৷বন্ধুত্ব ও ভাল লে‌গে‌ছে ,ভালবাসাটা ও ৷ শুভকামনা

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ।
ধৈর্য্য ধরে এতবড় একটা লিখা পড়ার জন্য ।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: চমৎকার! মুগ্ধ হয়ে পুরোটা পড়লাম।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২১

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: পড়লাম , বেশ উপভোগ করলাম , প্রথম দিকে খুব ভালো শুরু করলেও শেষের দিকে একটু বেশি ই নাটকীয় ।

কিন্তু বেশ উপভোগ ই করেছি , একজন জাত লেখকের প্রস্তুতিপর্বই যেন দেখলাম ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: লিখতে গেলে কথাকার লিখা কথায় চলে যায় সেটা তো লেখকও জানে না ।
ভালো লাগলো জেনে ধন্যবাদ ।

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২০

Sefat Ul Alom বলেছেন:
ক্যামনে যে লিখেন এসব।
খালি পড়তে ইচ্ছা করে।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৯

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: যাক কারো তো পড়তে ইচ্ছা করে

৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৯

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: https://www.youtube.com/watch?v=B9YmRn-Jagc

৮| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০৯

shaontex বলেছেন: দারুণ হইছে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.