![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই- তবু, গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই- তুমি আজো এই পৃথিবীতে র'য়ে গেছো কোথাও সান্ত্বনা নেই, পৃথিবীতে আজ; বহুদিন থেকে শান্তি নেই... facebook.com/shapnobilash
অনেকক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। ঘুম আসছে না। কিন্তু ঘুমটা খুব দরকার। গত পাঁচ দিনে শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। চট্টগ্রামে ফিরে অনেক কাজ আছে। বাসে যে ৭-৮ ঘন্টা জার্নি করব সেটা ঘুমের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। সবই ঠিক ছিল, ঘুমটাও আসব আসব করছিল, কিন্তু মাঝখানে বাগড়া দিল পাশের সীটে বসা ভদ্রলোক। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সেল ফোনে কারও সংগে কথা বলছেন। কথার বিষয় শুটকি মাছ! ওনার কথা শুনে বুঝলাম উনি শুটকি মাছের ব্যবসায়ী। ছোটখাটো ব্যবসায়ী না, কুতুব টাইপের ব্যবসায়ী। ভদ্রলোক যে স্কেলে কথা বলছেন, আরেকটু জোরে বললে আর পয়সা খরচ হতোনা। নেটওয়ার্ক ছাড়াই অপর প্রান্ত থেকে শোনা যেত। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ভদ্রলোক শুটকি মাছের ব্যবসায়ী বোঝার পর থেকেই মনে হচ্ছে শুটকি মাছের গন্ধ পাচ্ছি। বাস্তবে অস্তিত্ব নেই, অথচ এমন কিছুর ঘ্রাণ পাচ্ছি, এই সমস্যাকে বলে ফ্যান্টসমিয়া। আমি এখন ফ্যান্টসমিয়ায় আক্রান্ত!!
আমি ঘুমানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে হেডফোনে গান শুনতে শুরু করলাম। ওয়ারফেজের প্রতীক্ষা। নরম্যালি আমি মেটাল গান কখনোই শুনিনা। যে কথা সহজে বলা যায়, মেটাল গানে সে একই কথা চিবিয়ে চিবিয়ে চ্যাপ্টা করে বলা হয়। কোন মানে আছে? কিন্তু এই গান বন্ধু সুমন মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, হেডফোন ছাড়াই নিউরণের ভেতর অনবরত বাজতে থাকে! স্পেশালি দুইটা লাইন, “পঁচন ধরে মনে, শরীরে, কবে আসবে ফিরে ভালবাসা, কবে আসবে ফিরে ভালবাসা.....”।
আসলেই কি ভালবাসা ফেরে? ফেরে না। যে যায়, সে সবটুকু নিয়েই যায়। সে ফেরেনা, ভালবাসাও ফেরে না..... শুধু অনুভূতির অপচয় হয় সীমাহীন। পঁচন ধরে মনে, আর আমরা সেই ক্ষত বয়ে বেড়াই আজন্ম।
গানটা আর ভাল লাগছেনা। অসহ্য লাগছে সবকিছু। লং জার্নিতে এই এক সমস্যা, অনেক এলোমেলো ভাবনা চলে আসে মনে, নিতান্ত অনিচ্ছায়। বাইরে তাকিয়ে আছি। রাতের ব্যস্ত সড়ক, সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটে চলেছে আপন গন্তব্যে। কারও গাড়ি যায় কাঙ্খিত ইষ্টিশানে, কারও গাড়ি এমন ইষ্টিশানে নিয়ে যায়, যেখানে সে যেতে চায়নি কখনো। জীবন কত গতিময়! কোন কিছুই থেমে থাকেনি, কিছুই থেমে থাকেনা। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় সবকিছুই ছুটে চলে আপন গতিময়তায়। আমরা শুধু তাল মিলিয়ে স্রোতের অনুকূলে গা ভাসিয়ে দিই, অপেক্ষা করি স্থিরতার। কখনো তা আসে সীমাহীন সুখের অনুভূতি নিয়ে, কখনো অধরাই থেকে যায়, মুখ ফিরিয়ে নেয় ক্লান্ত প্রতীক্ষারা...
ফোনটা ভাইব্রেট করছে। আঁড়মোড়া ভেঙ্গে পকেট থেকে সেলটা বের করলাম। বন্ধু সুমনের ফোন।
আমি: দোস্ত বল...
সুমন: খবরতো খুব খারাপ!
এতটুকু বলেই ও থেমে গেল। খবর “খুব খারাপ” শুনে আমি আশাবাদী হলাম, অস্বাভাবিক কিছু হয় নাই। এই শালার সবকিছুই “খুব খারাপ”। অনার্স ফাইনালে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হইছে। সেই সুখবরও একই স্টাইলে দিল, ফোন করেই, “দোস্ত, খবর তো খুব খারাপ!! আমি তো ফার্স্ট হইয়া গেছি।” সুতরাং, টেনশানের কোন কারণ নাই। খারাপ কিছু হয় নাই।
আমি খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস কররাম, কি হইছে ক।
ও এখনো চুপ। এবার কিছুটা শংকিত আমি। নঁড়েচড়ে বসলাম।
- কিরে কথা কস্ না ক্যান?
: দোস্ত... তুষার ভাই তো কোমায় চলে গেছে।
- মানে কি? কি কস্ তুই? কোমা মানে কি? কি হইছে?
: দোস্ত, গত কাইল রাইতে হার্ট এ্যাটাক, আমরা সাথে সাথে খবর পাইয়াই হসপিটালে নিয়া গেছি। আজকে দুপুরের পর থেকে কোমায়। ডাক্তার অলরেডি ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করছে। কালকে হয়তো লাইফ সাপোর্ট খুইলা নিবে.....
কথা শেষ না করেই আমি লাইনটা কেটে দিলাম। চারিদিকে হচ্ছেটা কি আসলে? প্রতিটি সকাল আসে রাজ্যের সব দুঃসংবাদ নিয়ে। চারিদিকে শুধু ভাঙ্গনের সুর। কোথাও স্বস্তির কোন সংবাদ নেই! কী এক অদ্ভূত সময়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা ক্রমাগত।
ফোনটা পাবার পর সময়টা যেন আরও স্থবির হয়ে গেছে। তীব্র ঠান্ডার ভেতর আমি ঘামছি রীতিমত। একটা সিগারেট দরকার ছিল এই মুহুর্তে। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে আরও কমপক্ষে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে। এই সময়টুকু পার করা খুব কঠিন হবে। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু লাভ হচ্ছেনা কিছু। অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছেই। সদা হাস্যোজ্জ্বল একটা মানুষ এভাবে, এই অসময়ে চলে যাবেন তা হয়না। ভার্সিটি লাইফে যে ক’জন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বড় ভাইয়ের সংস্পর্শে এসেছি তুষার ভাই তাঁদের একজন। সাংঘাতিক রকমের শীস বাজাতে পারতেন। টেবিল চাপড়ে চমতকার ছন্দে গান গাইতে পারতেন। প্রেমিক পুরুষ হিসেবেই পরিচিতি ছিল বেশি।
তুষার ভাইয়ের সংগে পরিচয়টা খুব মজার। আমার চেয়ে দুই ইয়ারের সিনিয়র ছিলেন। ভার্সিটির প্রথম দিকের ঘটনা, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে তাস খেলছিলাম ফ্যাকাল্টির সামনের ঝুপড়িতে (ছোট ছোট চায়ের দোকান)। কিছুক্ষণ পরে উনি এসে বসলেন আমাদের পাশের টেবিলে। আমাকে ডেকে হাতে একটা চাইনিজ মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন আকাশের ছবি তোল। আমি কিছু না বলেই ছবি তোলা শুরু করলাম। মাঘ মাসের শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। টু মেগা পিক্সেলের ক্যামেরায় মোটেও ভাল ছবি আসছিল না। ওনাকে ছবি দেখালাম, ছবি দেখে প্রচন্ড ধমক দিয়ে বললেন আকাশের রং এমন ক্যান ব্যাটা? নীলাকাশের ছবি তোল, নীলাকাশের বুকে সাদা সাদা মেঘ, গাঙচিল!
ওনার কথা শুনে আমি থ! নীলাকাশ পাবো কোথায়? আর গাঙচিল? সেটা সর্বশেষ কবে স্বচক্ষে দেখেছি নিজেই মনে করতে পারছিনা! আমি ওনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। একটু পর বুঝলাম র্যাগ দেওয়া হচ্ছে আমাকে। উনি আবার হাত নেঁড়ে নেঁড়ে খুব গম্ভীর ভঙ্গীতে বুঝিয়ে দিলেন, মনে মনে কল্পনা কর। শরতের নীলাকাশ... আকাশের বুকে সাদা সাদা মেঘ। কাঁশফুল। নদীর কুল কুল শব্দ। মাথার উপরে গাঙচিল। আহা... মনের আবেগের সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ফুটিয়ে তোল। মন থেকে কল্পনা কর, দেখবি ক্যামেরা সেটা ধরে ফেলবে। এটা কি সস্তা ফোন নাকি ব্যাটা? এটা মনের ছবি তুলতে পারে। নে, ছবি তোল।
আমি অসহায় ভঙ্গিতে ফোনটা হাতে নিলাম। কি করব বুঝতে পারছিনা। বেশি কথা বললে চড় থাপ্পরও খেতে পারি। র্যাগিং খুব খারাপ হচ্ছে ইদানীং। কয়েক দিন আগে হলের এক ফ্রেন্ডকে মাথার চুল ছিড়ে সারা ঘরের পরিসর মাপতে দেয়া হলো। পরীক্ষণের নাম “চুল ছিড়ে ঘর মাপো”! ঐ ছেলে সারা রাত ধরে রুমের পরিসর মাপলো। আমি উপায়ন্তর না দেখে খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ছবি তুলছি, সাথে সাথে ডিলিট করে দিচ্ছি। একটু পরে এক সিনিয়র আপু এসে আমাকে উদ্ধার করলেন। খানিক বাদের জানতে পারলাম আপুর নাম হিমি। তুষার ভাইয়ের প্রেমিকা। কলেজ লাইফ থেকে প্রেম। হিমি আপু ফিন্যান্সের ছাত্রী। র্যাগিং পর্ব শেষে পরিচয় হলো, খাওয়া-দাওয়া হলো। আস্তে আস্তে তুষার ভাই আর হিমি আপুর সংগে খুব খাতির হয়ে গেল।
ভার্সিটির শাটল ট্রেনে প্রায়ই দুজনকে দেখতাম পাশাপাশি বসে। হিমি আপু তুষার ভাইয়ের জন্য বাসা থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে আসতেন মাঝে মাঝে। কখনো কখনো আমরা ভাগ বসাতাম সেই খাবারে। ঈর্ষা করার মত কাপল ছিল দুজন। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। ক্লাস ছাড়া বাকি সময়টুকু দুজন টুকটুক করে চষে বেড়াতেন সারা ক্যাম্পাসে।
এলোমেলো অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে আমার। কুমিল্লা পার হয়েছি অনেক্ষণ আগে। রাস্তা ফাঁকা। জ্যাম-ট্যাম নেই। গাড়ি তুফান বেগে এগিয়ে যাচ্ছে। তবু আমি বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি।
দ্বিতীয়/শেষ পর্ব আসছে শীঘ্রই...
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫
নোমান নমি বলেছেন: ভাই এক দফায় শেষ কইরা ফেলতেন!
৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২১
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
একবারে পুরা স্টোরীটা দিয়া দিলেই ভালো করতেন! পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।
৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫
অনিরূদ্ধ বলেছেন: ধুর ব্যাটা ফাউল। একবারে পুরাটা দিলে কী হইতো?
৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৭
খায়ালামু বলেছেন: নোমান নমি বলেছেন: ভাই এক দফায় শেষ কইরা ফেলতেন!
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪
সানড্যান্স বলেছেন: ওয়েট করছি,হিমিরা খালি বুক ভেঙ্গে দিচ্ছে..