নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চীন‑আমেরিকা দ্বৈরথ অনেকদিন ধরেই চলছে। চীন যেমন আমেরিকার অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার, তেমনি সবচেয়ে বড় বাণিজ্য প্রতিযোগীও বটে। এই প্রতিযোগিতা শুধু বাণিজ্যের ময়দানে সীমাবদ্ধ নয়, এর সাথে জুড়িগাড়ি হিসেবে আসে সামরিক বিষয়াদিও। এ ক্ষেত্রেও আসছে। দক্ষিণ চীন সাগর হোক কিংবা তাইওয়ান ইস্যু, নানা কারণেই বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার তুলনা আলোচনায় এসেছে। এবার আরেকবার এল। আর তা চীনের বেইজিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টার গড়ার খবর। এ নিয়ে সবার আগ্রহ আরও জোরদার হয়েছে, চীনের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সবাই যেন নড়েচড়ে বসেছে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ে চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিক আমেরিকাসহ সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়ার পরপরই এল বেইজিং-এর সবচেয়ে বড় যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টার গড়ার খবর।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, বেইজিংয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টার। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সেন্টারটি পেন্টাগনের চেয়েও বেশ বড়। যদিও আমেরিকার চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এমন কিছু সম্পর্কে অবহিত নয়। একই সঙ্গে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, চীন ‘প্রতিরক্ষার ধর্ম ধারণ করে করা প্রতিরক্ষা নীতি’র প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিজেদের হাতে আসা স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এই ছবিগুলো মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরও পরীক্ষা করেছে। এতে দেখা গেছে, বেইজিংয়ের পশ্চিমাঞ্চলে একটি নতুন সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে, যা সংঘাতের সময় নেতৃত্ব পর্যায়কে এমনকি নিউক্লিয়ার হামলা থেকেও সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি অনুযায়ী, নতুন এই কমপ্লেক্স বেইজিংয়ের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ‑পশ্চিমে দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে। এর নিচে রয়েছে টানেল এবং এর ভিতে রয়েছে ভারী কংক্রিট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের স্থাপনা অতিকায় ও মজবুত বাংকার গড়তে করা হয়।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর পর্যবেক্ষণ যদি সত্য হয়, তাহলে চীনের এই যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টারই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক কমান্ড সেন্টার, যার আকার পেন্টাগনের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বড়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই স্থাপনাকে ‘বেইজিং মিলিটারি সিটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি।
এই ঘটনা যখন চলছে, তখন চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নতুন নতুন অস্ত্র তৈরিতে নতুন সব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ফলে বাণিজ্য ও সামরিক প্রতিযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন সামরিক স্থাপনাকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবে, তাতে আর বিস্ময়ের কী? করছেও তাই। পাশাপাশি তাইওয়ান পরিস্থিতিসহ সার্বিক দিকে নজর রাখছে তারা।
এ বিষয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর চীন সম্পর্কিত শীর্ষ বিশ্লেষক ডেনিস ওয়াইল্ডার বলছেন, ‘মাটির নিচে অত্যাধুনিক বাংকার তৈরির বিষয়টি সত্য হলে বলতে হয়, এটি শুধু চীনের শীর্ষ নেতৃত্বকে সংঘাত পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত রাখতেই গড়া হচ্ছে না, এর সাথে যুক্ত রয়েছে চীনের পরমাণু যুদ্ধের সক্ষমতা বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষাও।’
স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, পাঁচ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এলাকাটিতে অন্তত এক শটি ক্রেন টানা কাজ করছে। পুরো এলাকা অনেক দিন ধরেই নির্মাণকাজ নিয়ে ব্যস্ত। বিরাট এলাকাজুড়ে হওয়ায় অঞ্চলটির প্রতি অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কী ধরনের স্থাপনার নির্মাণ চলছে, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণাও নেই। যদিও চীনে বড় কোনো নির্মাণকাজ চললে, বিশেষত বাণিজ্যিক কোনো স্থাপনার কাজ চললে সে সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়া থাকে। পুরো এলাকায় নিরাপত্তা বজ্রআঁটুনি রয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। অবশ্য সেখানে কোনো সামরিক বাহিনীর সদস্যের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, পোশাকে কোনো সেনাসদস্য সেখানে যাচ্ছে না। যদিও এই নির্মাণকাজকে স্থানীয়রা বলছে, ‘সেনাবাহিনীর কাজ’ বা এলাকাটিকে বলছে, ‘সামরিক এলাকা’।
কেন এমন সামরিক স্থাপনা করছে চীন? পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার কাছে বাংকার বাস্টার বোমা আছে। অর্থাৎ, এমন বোমা বা বিস্ফোরক আছে, যা দিয়ে বাংকার গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে চীন সেই সক্ষমতার বিরুদ্ধে নিজেদের নিরাপদ রাখতে সামরিক স্থাপনা ও বাংকার ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করবে–এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া নানা সময়ে নানা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে চীন‑আমেরিকা সামরিক সক্ষমতার তুলনা হয়েছে ও হচ্ছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীন কোনো পদক্ষেপ নিলে আমেরিকার তরফ থেকে কড়া প্রত্যুত্তর আসতে পারে–এটা তো সবাই জানে। এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মার্কিন মিত্রের সঙ্গে চীনের রয়েছে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব। ফলে যুদ্ধের আশঙ্কা অবাস্তব নয়। তাই নিজেদের প্রতিরক্ষার স্বার্থেও এই স্থাপনা গড়ে তোলা হতে পারে।
পাশাপাশি এটাও মনে রাখা জরুরি যে, প্রতিযোগী দেশগুলো সাধারণত এক ধরনের অনিঃশেষ সামরিকায়নের দৌড়ে থাকে। তারা প্রতিনিয়ত পাল্টাপাল্টি সামরিক সক্ষমতা অর্জনের এক ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ে। এর কারণও আছে। কোনো একটি দেশ যদি কোনো বিশেষ ক্ষমতার বোমা তৈরি করে, তাহলে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকেও সেই বোমা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে হয়। এ কারণেই, পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সব সময় নিজের ও অপরের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ও সক্ষমতা নিয়ে মত্ত থাকেন।
চীনা সামাজিক মাধ্যম বাইদুতে এ নিয়ে স্থানীয়দের পোস্টের দিকে তাকালে এই দ্বিতীয় কারণটিও সামনে আসে। বাইদুতে দেওয়া এক পোস্টে বেইজিংয়ের স্থানীয় এক বাসিন্দা লিখেছেন, ‘তারা কি চীনা পেন্টাগন তৈরি করছে?’ প্রশ্নটি সরাসরি অস্ত্র, প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ সক্ষমতার তুলনাগত জায়গাটিকে সামনে আনে।
সারা বিশ্বে মার্কিন প্রভাব ও মুরব্বিয়ানার পেছনে যেমন পেন্টাগন একই সঙ্গে সামরিক মগজ ও পেশির চিহ্ন হিসেবে ক্রিয়াশীল, তেমনি করে চীনের এই নয়া সামরিক স্থাপনাও একটি বড় চিহ্ন তৈরিতে ব্যস্ত। প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি যে সামরিক স্থাপনাই, সে বিষয়ে তো এখনো চীনা বয়ানটি পাওয়া যায়নি। ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস তো এটি ‘জানে না’ বলেই জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে? পাল্টা প্রশ্ন তো করাই যায় যে, চীন কি এই প্রতিবেদন বা এমন গুঞ্জনকে অস্বীকার করেছে? চীন কি বলেছে, এই স্থাপনাটি আসলে কীসের?
এই নীরবতা যতক্ষণ না ভাঙা হচ্ছে, ততক্ষণ এই স্থাপনার সাথে লেপ্টে যাওয়া ‘যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টারের’ সাইনবোর্ডটি সরবে না। কথা হলো–এই সাইনবোর্ড বা স্থাপনাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? চীন-আমেরিকা সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধের দামামা কি বাজছে? যেকোনো সামরিক স্থাপনা বা কার্যক্রম যুদ্ধের বা বারুদের গন্ধ ছড়াবেই। তবে এই স্থাপনা বাস্তব কোনো যুদ্ধের ইঙ্গিত দিক না দিক, ভবিষ্যতের বিশ্বে চীনের কূটনৈতিক প্রভাব অনেকটাই বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ, ক্ষমতার ওপরই শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে যে, কোন বসের কৌতুকে কতটা হাসবে লোকে। তাই ক্ষমতার চিহ্ন ও প্রচার জরুরি। এ কারণেই সমরাস্ত্র বা সামরিক বাজেট যেমন, তেমনি সামরিক স্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
চীন বা আমেরিকা উভয়েই ভালো করে জানে যে, তাদের দুজনের কোনো সংঘাত গোটা বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যাবে। আর নগর পুড়লে যে দেবালয় এড়ায় না, তা তো শিশুও জানে। ফলে বাস্তব যুদ্ধের চেয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব এবং এই যুদ্ধ শক্তিকে বাণিজ্য সুবিধা নেওয়ায় কাজে লাগানোর দিকেই সম্ভবত উভয় পক্ষের নজর থাকবে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করা যাক। নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদের প্রবেশের আগ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন নিয়ে একের পর এক বোমা ছুড়েছেন। বলেছেন, ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের কথাও। কিন্তু মেক্সিকো, কানাডার মতো প্রতিবেশীর ওপর শুল্ক আরোপ করে ফেললেও চীন এখনো নতুন শুল্ক হার জানতে পারেনি। উপরন্তু ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দুই দেশের নেতা শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ আলাপ হয়েছে। একে উদাহরণ হিসেবে টেনে অনেকেই বলছেন ট্রাম্পের সুর নরম। তাদের মনে রাখা দরকার যে, ২০১৬ সালে ক্ষমতা নিয়ে শি‑ট্রাম্প প্রথম সাক্ষাতের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘শি‑তে মুগ্ধ’। সেই মুগ্ধতা বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে পারেনি। ফলে এ ধরনের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগী নিয়ে আগাম কথা বলাটা অনেক সময়ই বালখিল্য হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অপেক্ষা ভালো ফল দিতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:১৯
আহরণ বলেছেন: ভাইয়া, আপনি একজন নিরেট বাংলাদেশি মুমিন মুসলমান, ভুখা কাঙাল। "আমেরিকা-চীন"!! তো, বেল পাঁকলে কাকের কী? আপনি বরংচ উট, গাধা নিয়েই থাকেন। আপনি তো জানেন : ঢিলা-কুলপ, দাসী সহবাস, বাল্যবিয়ে........... এসবে অনেক বেশি সাওয়াব। যাক, আপনাকে ধন্যবাদ।