![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার হৃদয় আকাশ থেকে প্রতিনিয়ত ঝড়ছে কিছু জল। জলগুলো স্বচ্ছ নাকি অস্বচ্ছ?
'সাহিত্য' শব্দটির উৎপত্তি 'সহিত' শব্দ থেকে - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। 'সহিত' শব্দটি উপসর্গ যোগে গঠিত শব্দ। এর মূল শব্দ 'হিত', যার অর্থ 'মঙ্গল' কিংবা 'কল্যাণ'। অর্থাৎ মানব মনের যে সকল চিন্তা কিংবা অনুভূতি সমাজকে ও সমাজের মানুষকে আলোকিত চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তাই সাহিত্য। আমি মনের গহিন থেকে ভাবে-আবেগে কয়েক লাইন লিখে বললাম, এটা কাব্য সাহিত্য কিংবা ঘটনার ঘনঘটা ঘটিয়ে দেড়-দু'শ পৃষ্ঠা ভরিয়ে বললাম, এটা উপন্যাস; প্রকৃতপক্ষে সাহিত্য এমনটি নয়। লেখনীর ডগা দিয়ে যদি একটি শব্দ লিখি এবং সেই শব্দে যদি সমাজ আলোকিত করার মতো গন্ধ থাকে, তবে তা সাহিত্য। আর যদি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে সেখানে কল্যাণ কিংবা মঙ্গলের অনুভূতিটুকু না থাকে, তবে তাকে সাহিত্য বলা যেতে পারে না; তা যতই মনোরঞ্জক হোক। সে সাহিত্যের দ্বারা সমাজ অবশ্যই রসাতলে যাবে। আর যে সাহিত্য সমাজকে আলোকিত না করে বরং রসাতলে নিয়ে গেল- সে আবার সাহিত্য কিসে? কারণ সাহিত্যের সৃষ্টিই তো কল্যাণ কিংবা মঙ্গলের নিমিত্তে; সমাজকে আলোকিত করার উদ্দেশ্যে।
এখন বলতে পারেন সুখ্যাত প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, 'সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দান করা। আনন্দ ব্যতীত যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে সাহিত্য স্বধর্মচ্যুত হয়ে পড়বে।' আমি এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু বিদ্বান পাঠক লক্ষ্য করুন, তিনিই বলেছেন, 'সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়।' আর এ শিক্ষা তো কুশিক্ষা নয়; অবশ্যই সুশিক্ষা। আর সুশিক্ষাই তো কল্যাণ; এতেই সমাজের উত্তরণ বিশ্ব দরবারে। আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক, ব্যবসার উদ্দেশ্যে অনেক অসাধু লেখক বাজে-অশ্লীল গল্প লিখে বই আকারে বাজারজাত করেন। আর আনন্দ পিপাসু পাঠকরা ভাবনাহীনভাবে অর্থ ব্যয় করে তা ক্রয় করে এবং পড়ে। শুধু পড়েই না, বরং রাত জেগে এক গল্প দু'তিনবার পড়েন। কারণ এতে আনন্দ আছে। অসৎ আনন্দ। এখন এই আনন্দ দান করা অশ্লীল গল্পগুলোকে যদি সাহিত্য বলা হয়, তাহলে 'সাহিত্য' কি সাহিত্য থাকে? বই পড়া অনেক ভালো কাজ, এটা কে না জানে। কিন্ত ঐ অশ্লীল গল্প সংবলিত বই পড়া কি ভালো?
ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিক জন কিটস্ বলেছেন, 'সাহিত্য সুন্দর ও সত্য।' আসলেই তাই- সাহিত্যের রং-রূপ-রস সবকিছুই সুন্দর ও সত্য। হয়তো বলবেন- কবিতা, গল্প, উপন্যাস সব তো দেখি কল্পনা; এ আবার সত্য কীভাবে? আপনি যখন দর্পণ সম্মুখে নিজেকে দাঁড় করান, তখন কি দর্পণে অঙ্কিত মানবটিকে জীবন্ত মনে হয়, নাকি মৃত? অবশ্যই জীবিত; কারণ আপনি জীবিত। আর মৃত মানুষ কখনও দর্পণ সম্মুখে দাঁড়ায় না। তেমনি সাহিত্য হলো সমাজের দর্পণ স্বরূপ। এই দর্পণে সমাজের চিত্রটি কল্পনার আঁচড়ে বাস্তব-সত্যরূপে প্রস্ফুটিত হয়।
পরিশেষে বলবো, সাহিত্যের উদ্দেশ্য অবশ্যই সমাজের কল্যাণার্থে। একটি সমাজের কীভাবে উত্তরণ ঘটবে, সে দিকটিই ফুটে উঠবে সাহিত্য দর্পণে। সাহিত্য অবশ্যই সত্য ও সুন্দর। তবে হ্যাঁ, সাহিত্যে অবশ্যই আনন্দ থাকবে। সে আনন্দটা একটি আপেক্ষিক বিষয় অর্থাৎ ব্যক্তি সাপেক্ষ। তবে হ্যাঁ, একটি সুন্দর প্রবন্ধ ভালো লাগুক আর না-ই লাগুক, সেটা চিরদিনই সুন্দর। কারণ একটি সুন্দর প্রবন্ধ সুন্দর সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। যদিও সাহিত্য কল্পনা মাত্র। কিন্তু সেই কল্পিত সাহিত্য দর্পণে একবার পদচারণ করে দেখুন না, সাহিত্য কতটা সত্য ও সুন্দর! অতএব এই প্রতিয়মান হয় যে, 'সমাজের কল্যাণের নিমিত্তে একটি কল্পিত সত্য ও সুন্দর ভাবনাই সাহিত্য।'#
★★★'সাহিত্যঃ সত্য, সুন্দর ও কল্যাণময়' প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১২ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে, সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন 'বিকাশ' এর ৩য় সংখ্যায়
©somewhere in net ltd.