নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সকল রুদ্ধ বাতায়ন খুলে দাও, আকাশটা দেখতে চাই। অনুভব করতে চাই আমার আমিকে।

শক্তি শুধা

শিল্প-সাহিত্যের মাঝে নিজেকে বিলীন করতে চাই।https://www.facebook.com/sabet.chowdhury.94

শক্তি শুধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূনের প্রিয় নুহাশপল্লী

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

রবিবার বাসায় মোস্তাক এলো। ভর্তি হবে যাত্রাবাড়ী। ওকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে চলে এলাম বাসায়। আনোয়ার, ডি. জে আশরাফ, ফাইয়াজ, ওমায়ের, মহিউদ্দিনকে পেলাম। আলোচনা পর্যালোচনায় ভ্রমণের চিন্তা চেপে বসল মাথায়। বললাম, চলো সবাই মিলে নুহাশপল্লী যাই। স্বানন্দে সবাই প্রস্তাবটি গ্রহণ করল। আনোয়ার ওযর পেশ করায় ওকে বাদ দিয়েই যাওয়ার প্ল্যান করলাম। মঙ্গলবার সকাল সাতটায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত ফাইনাল হল। সোমবার একটা ব্যস্ত দিন কাটিয়ে ঘুমোতে রাত চারটা বাজল। ঘুমাবার পূর্বে ওমায়েরকে ফোন দিলাম। রিসিভ করল না। ইতিপূর্বে বহু প্ল্যান-প্রোগ্রাম ভেস্তে গেছে। তাই এক অজানা শঙ্কা আমায় তাড়া করল। এ যাত্রায় বুঝি যাওয়া হবে না। সাতটা বেজে পাঁচ, এলার্ম বেজে উঠল, দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পুনরায় ফোন দিলাম। মন উতলা হচ্ছিল, না জানি কোন অশুভ সংবাদ পাই। ফোন রিসিভ করে ওমায়ের বলল, আমরা এগারটায় যাব। এগারটার মধ্যে সবাই প্রস্তুত হলাম, বাধ সাধল মহিউদ্দিন। সে আমাদের বারোটা বাজিয়ে বারোটা ত্রিশে এলো। এবার যাওয়ার পালা। ডি.জে ওর কাজিনকে ফোন দিলে তিনি বললেন প্রভাতী বনশ্রী বাস মগবাজার থেকে হোতাপাড়া যায়, ওখান থেকে টেম্পুতে নুহাশপল্লী।

মগবাজার না গিয়ে আমরা মালিবাগ থেকে ছালছাবিলে গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে প্রত্যক্ষ করলাম এক চরম দুর্ঘটনা, ক্যামব্রিয়ান পড়–য়া এক ছেলে আর দুটি মেয়ে বাসে উঠতে চাইল। প্রথমে একটি মেয়ে বাসে উঠল। এরপর ছেলেটি উঠতেই বাস ছেড়ে দিল। অপর মেয়েটি আর বাসে উঠতে পারল না। এ কারণে ছেলেটি নেমে পড়ল। দেখাদেখি মেয়েটিও নামার জন্য লাফ দিল। মাটিতে পা রেখে দাঁড়াতে পারল না। এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়ে গেল। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম তার জীবনলীলা সাঙ্গ হয়েছে। না, যেন স্বপ্ন ছিল, তৎক্ষণাত দাঁড়িয়ে গেল। চোট পেয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ঘটনাটি আমায় মনঃক্ষুণœ করল, ব্যথিত হলাম। পরে পথে কেবল এ চিত্রটিই ভেসে থাকল। ভোলার চেষ্টা করেও পারলাম না ভুলতে। শরীরের শিরা-উপশিরা শিউরে উঠল। বাস থামল গাজীপুর চৌরাস্তায়। ছালছাবিল থেকে নেমে অন্য একটি বাসে হোতাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

হোতাপাড়া পৌঁছে যাত্রা বিলম্ব ক’রে সামান্য শুকনো খাবার খেলাম। পাশেই ছিল একটি মসজিদ, অযু করে যোহর আদায় করলাম। পথে লক্ষ্য করলাম প্রস্তাবিত হুমায়ূন আহমেদ সড়কের সাইনবোর্ড। হোতাপাড়া থেকে সি.এন.জি যোগে রওনা হলাম প্রিয় নুহাশপল্লীতে। সি.এন.জি নুহাশপল্লীর গেটে থামল। প্রবেশ ক’রে সবাই বিষ্মিত নয়নে, পুলোকিত হৃদয়ে, প্রাণ জুড়ে উপভোগ করলাম নুহাশপল্লী। এ এক জীবন্তপল্লী। সবুজ শ্যামল চারিদিক। গাছ-গাছালি আর ফুলে-ফলে ভরপুর। আকাশচুম্বি দাঁড়িয়ে আছে কিছু গাছ। দূর থেকে পাহাড় মনে হয়। খেজুর বাগান, লিচু, আম, জাম, কাঠাল আরো কত শত ঔষধি গাছ। নৈসর্গিক পরিবেশ। গেইট থেকে এগুতেই দেখলাম মমতাময়ী মা ও তার শিশুর মূর্তি। পাশে বেঁতের সোফা, উপরে ছাউনি। সামনে সুইমিংপুল, সুইমিংপুলে বড় মানব কঙ্কালের মাথার মূর্তি। কিছু দূর এগুতেই দেখতে পেলাম বৃষ্টি বিলাস। বৃষ্টি বিলাসের সামনে রয়েছে বড় দুটি গাছে ছোট্ট দুটি কাঠ নির্মিত ঘর। সেই ঘরে বসেই তিনি কবিতা লিখতেন। ইচ্ছে হল কমপক্ষে দু’লাইন হলেও ঐ গাছে বসে লিখি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।

অনুভূতি মিশ্রিত দু’লাইন লেখলাম। কর্ণকুহরে বেজে উঠল পাখির কলতান। খোদা, এ কেবল তোমারি দান। পুরো চল্লিশ বিঘা ঘুরে দারুণ সব স্থাপনা ও শৈলী দেখে মুগ্ধ হলাম। মাটি নির্মিত বড় বড় উদ্ভট প্রাণীর হাত, ডায়নাসর, পানিতে ভেসে থাকা মৎস্যকন্যা, মাটি নির্মিত ঘর, পুকুরের মাঝে ছোট্ট চর, দেখে মনে হয় যেন নদীতে চর জেগেছে। চরে রয়েছে বসার স্থান, ও নয়নাভিরাম তিনটি নারিকেল গাছ। এমন মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক, আকর্ষণীয় দৃশ্য দেখে আমি কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হলাম। পাশে ভূতবিলাস, ভূত নয় ইচ্ছে হয় আমিই বিলাস করি। ফুলে ফুলে ফুলেল। সবুজের মাঝে লালের সমারোহ একেবারে স্বাধীন বাংলার পতাকার মত। শিশুদের দোলনা, সিøপার, আরো কত কি! সবচাইতে নজর কাড়ে মৎস্যকন্যা। আসরের ওয়াক্ত হলে নুহাশপল্লীর নামাজ ঘরে নামাজ আদায় করলাম। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় মায়ের জন্য এই নামাজ ঘর তৈরি করেছেন। সর্বশেষ পেলাম সেই জীবন্ত পল্লীতে প্রাণহীন হুমায়ূন আহমেদকে। লিচু বাগানের নিচে সমাহিত তার নয়নাভিরাম পল্লীতে। পল্লী এখানে নীরব, নিস্তব্দ, বেদনাক্লীষ্ট। থমকে আছে পরিবেশ। পল্লীর ব্যথা আজ কেউ অনুভব করে না। কেউ বলে না তার গাছগুলোকে বাবা তুই এরকম কেন হয়েছিস? তোকে কেউ খাবার দেয়নি? শুকিয়ে গেছিস...

পল্লীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু আদৌ স্যারের মায়া ত্যাগ করতে পারবে না পল্লী। বিদায়! তুমি এতো নিষ্ঠুর। সবাই একদিন এই যমপুরি ত্যাগ করবে। জানি একদিন আমিও চলে যাব সব মায়া-মমতা ত্যাগ করে, ফিরব না কোন দিন এই পৃথিবীতে। থাকবে শুধু আমার সৎকর্ম। এবার আমরাও বিদায় জানালাম প্রিয় নুহাশপল্লীকে। বেরুতেই একটা টেম্পু পেলাম। আমাদের নিয়ে এলো গাজীপুর চৌরাস্তা। পথে টেম্পু থামিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নিলাম। ছালছাবিলে এলাম আবুল হোটেল। রিক্সায় বাসায় ফিরলাম। আল্লাহ এক নিরাপদ ভ্রমণের তৌফিক দান করলেন। লাখো কোটি শুকরিয়া কেবল তারই দরবারে।



_শক্তি শুধা (সাবেত চৌধুরী)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.