নিশ্চুপ প্রয়োজনীয়তা

০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১:১৩

রাসেল গণরুমে থাকে । প্রায় ২০ জন মিলে গণরুম । মাঝে মাঝে ৩০ জনেও পৌঁছে যায় । এই পুরো গণরুম জুড়ে রাসেল একমাত্র যে CSE তে পড়ে এবং একটামাত্র ল্যাপটপ তারই । প্রতিদিন রাত ১২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত মুভি আওয়ার চলে । একটা ল্যাপটপের স্ক্রীনে প্রায় ১৫ জোড়া চোখ পড়ে থাকে । রাসেল তখন কার্ড খেলে । টুয়েন্টি নাইন । টুয়েন্টি নাইন খেলতে হয় হিসেব করে । কিছুটা হিসেব এবং অনেকটাই বুদ্ধিমত্তা । রাসেলের বুদ্ধিমত্তার খেলা খুব পছন্দের । খুব গোপনে সে নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করে । শার্লক হোমস কিংবা মিসির আলীর মতো বুদ্ধিমান । রাসেলের একটা কবিতা ডায়রী আছে । ফেবুর কোন এক অখ্যাত কবির সুন্দর সুন্দর কবিতা সে ডায়রীতে টুকে রাখে । কবিতাগুলোর শিরোনামের নিচে তার নামটা শুধু বসিয়ে দেয় । বন্ধু মহলে তার কবিতা ব্যাপক জনপ্রিয় । বান্ধবীকে শোনাবে বলে অনেকেই তার কাছ থেকে কবিতা ধার করে নিয়ে যায় । রাসেল মহত্‍ কোন বন্ধুকেই ফিরিয়ে দেয় না ।



**



কাদেরও গণরুমে থাকে । পুরো গণরুমে সেই একমাত্র স্টুডেন্ট যে ইতিহাসে পড়ে । কাদের ল্যাপটপ নেই । মাঝে মাঝে ফেবুতে আসে রাসেলের ল্যাপটপ দিয়ে । রাতে যখন সবাই মুভি আওয়ারে ব্যস্ত কাদের তখন রাসেলের সাথে কার্ড খেলে । কাদের কার্ড খেলা শিখতে চায় । আরো ভালো শিখতে চায় । প্রতিরাতে কাদের আর তার পার্টনার হেরে যায় রাসেল আর তার পার্টনারের কাছে । হারার পর রাসেল অট্টহাসি দেয় আর কাদের মুখ কাঁচুমাচু করে রাসেলের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করে । অতঃপর কালশী মোড়ে নাস্তা করতে যায় তারা । বিলটা আসে রাসেলের পকেট থেকেই । অনেকদিন থেকেই চলে আসছে এই রীতি । গণরুমে ফিরে কাদের ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফেবুতে । কাদেরের একটা ফেইক আইডি আছে । কবিতার আইডি । কাদের লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ আইডিতে কবিতা লিখে । শুধু কবিতা লেখার জন্যই কাদের ফেক আইডিতে লগইন করে । যখন কাদেরের মন চায় নিজের লেখা কবিতা পড়তে তখন কাদের ফেবুতে ঢোকেনা , রাসেলের ডায়রী খুলে জোর গলায় আবৃত্তি করে । রাসেল খুশী হয় । বিনিময়ে দিনমজুর বাবার ছেলে কাদেরের দুপুরের খাবারটাও ফ্রি হয়ে যায় ।

২ টি +০/-০