![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের গ্রামের পুবের শেষমাথায় গফুর চাচার বাড়ী। বয়স ষাটের কাছাকাছি। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বুড়াবুড়ি মিলে তার দুজনের সংসার। জমি জমা বলতে শুধু বাড়ী ভিটেটা আছে। তাই দুটি জীবন বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে শেষ বয়সেও অপরের ভাড়াটে কাজ করেন। যেমন ধান কাটার মৌসুমে ধানের জমি কনটাক্ট নিয়ে কেটে দেয়া, ধানের চারা রোপনের সময় চারা লাগানো অথবা চারা গুলো বড় হয়ে আগাছা নিড়ানো উপযুক্ত হলে নিড়ানীর কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। শীতের দিনে গফুর চাচার তেমন কাজ থাকেনা। বুরো ক্ষেতে আগাছা নিড়ানোর কাজ থাকলেও শিতকালে পানিতে নামা এই বুড়ো বয়সে তার শরীরে সয়না। গফুর চাচার বাড়ীর পাশেই কয়েক একর উচু জায়গায় বেশ কিছু খেজুর গাছ আছে। শিতকালটায় গফুর চাচা এই খেজুরের গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ করেন। প্রতিদিন বিকালে খেজুর গাছের আগায় গাছের বাঁকল তুলে মাটির হাঁড়ি ঝুলান।হাড়িগুলোতে সারারাতে ফোটা ফোটা খেজুরের রস পড়ে যা জমা হয় সকালবেলা তার অর্ধেক গাছের মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে বাকী টুকু তিনি দুইটা হাঁড়িতে নেন। সমান সাইজের দুইটা হাড়ি কানায় কানায় পূর্ন হলে হাড়ির গলায় দুইটা রশি শক্ত করে বাধেন। তারপর বাঁশের দুই মাথায় দুইটি হাঁড়ি ভাল করে ঝুলিয়ে বাঁশের ভারসাম্য ঠিক করে সেটা কাঁধে উঠিয়ে বাড়ীর নিকটস্থ ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের বগার বাজারে যান। গ্লাস প্রতি 2/3 টাকা করে কাঁচা রস বিক্রি করে যা পান তাই দিয়ে বাজার করে দশটা-এগারটার দিকে বাড়ি ফেরেন। খেজুরের রস বিক্রি করা আয় দিয়ে শীতকালটা তার বেশ চলে যায়।
তো ২০০২ সালের কোন একদিন সকাল বেলা কাঁচা রসের হাড়ি নিয়ে গফুর চাচা বাজারে যাচ্ছিলেন। কুয়াশা ভেদ করে শীতের সকালে যে হালকা মিষ্টিরোধ শরীরে লাগে তা বেশ আরামদায়ক। গ্রামে রাস্তার ধারে বা বাড়ির আঙিনায় বসে এই রোদ পোহানো একটি অতিপরিচিত দৃশ্য। গফুর চাচার বাড়ী থেকে বের হয়ে মুল রাস্তার উঠার মুখের বাঁকে একটু ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে বড় একটা গাছের গুড়িতে কয়েকজন উঠতি তরুন ছেলে সেদিন রোদ পোহাচ্ছিল আর হাসি তামাশা করছিল। এই হাসি তামাশার মাঝখানে অকস্মাৎ এক ছেলে উঠে দৌড় দেয়! আর দুর্ভাগ্য ক্রমে সেই মুহুর্তে গুফুর চাচা তাদের সামনে এসে পড়ে। ছেলেটি গফুর চাচার কাঁধের বাঁশ থেকে ঝুলানো একটি মাটির হাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। ধাক্কা লেগে হাড়িটা ভেঙ্গে যায়। ফলে বাঁশটির অপরপ্রান্ত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তাই উল্টো পাশের হাড়িটিকেও গফুর চাচা আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। সেটাও মাটিতে পড়ে গিয়ে ফেটে যায়।পানির মতো খেজুরের কাঁচারসগুলো মাটিতে পড়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ঘাষের ভিতর,সাদা ধুলোর ভিতর হারিয়ে যেতে থাকে। আর সে রসগুলো শীতের পিপাসার্ত মাটি তড়িৎ গতিতে শুষে নিয়ে তার পিপাসা নিবারন করে।
অকষ্মাৎ ঘটে যাওয়া এঘটনায় ছেলেগুলো হতবিহ্বল হয়ে পড়ে,সবার হাসি থেমে যায়।ধাক্কা লাগা ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠে-
“ওহ!হো!!”
গুফুর চাচা দিশেহারা হয়ে ভাঙা হাড়ির টুকরো গুলো জোড়া দিয়ে তার পুরো দিনের একমাত্র সম্বল বাঁচানোর ব্যার্থ চেষ্টা করেন! কিন্তু একটির হাঁড়ির তলানি ভাঙা অংশে এক গ্লাস পরিমাণ রসের বেশী তিনি বাঁচাতে পারেননি। ভাঙা অংশের অবশিষ্ট রসটুকু হাতে নিয়ে তিনি উঠে দাড়ান, ছেলেটির মুখের দিকে তাঁকিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন -
-বাবারে!! হাড়িদুটো ভাঙাতে তোমার তো শুধু গেলো ‘ওহ!হো!’ আর আমার গেলো সারারাতের ফোটা ফোটা সঞ্চয় !!
আমাদের রাজনীতিবিদদের মুখের হরতালের ঘোষনা দেন! হরতাল পালনে শত শত ছেলে রাস্তায় নামে! সরকার পুলিশ বাহীনি নামায় সেটা মোকাবেলা করার জন্য। গুলাগুলি,বোমাবাজি হয়,ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়!! লাশ পড়ে! রাস্তায় গড়াগড়ি খায় কোন কোন মায়ের টগবগে তরুণের তাজা রক্ত!
তখন আমাদের নেতা-নেত্রীরা তাতে গভির শোক প্রকাশ করেন! আঙুল উচিয়ে ইহার বদলা নেবার হুশিয়ারী দেন!!
ছেলেটির ওহ!হো! এর মতো আমাদের নেতাদের ফুসফুস থেকে তরঙ্গকারে নির্গত কয়েকটি শব্দ এবং আঙুল উচু করতে যে এনার্জি খরচ হয় তা বাদে তেমন কোন ক্ষতি হয়না।
কিন্তু যে ছেলেটি প্রাণ হারায় তার যায় পৃথিবী এবং মা-বাবা্র যায় আদরের ধন, একমাত্র অবলম্বন!!যদি স্ত্রি-সন্তান থাকে তবে তাদের যায় পুরো ভবিষৎ!! আমাদের এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদেরা কি তা একবারেও জন্যও ভাবেন???
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪১
সপ্নচোরা বলেছেন: হুমম...একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই তা জানেন...
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯
স্বপনচারিণী বলেছেন: সবই কঠিন সত্য। কিন্তু যাদের জন্য বলা তাদের বোধোদয় কবে হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই বলতে পারেন।