![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জনাব আবুল কালাম আজাদ, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ স্থানীয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা। সরকারী-বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠান/ব্যাংক তাঁকে প্রায়ই ডাকে; সভা-সেমিনার,ট্রেনিং এ বক্তৃতা দেয়ার জন্য। হাই প্রোফাইল,সফল মানুষ। তার কথায় অন্যরা অনুপ্রেরণা পায়,দিক নির্দেশনা পায়। আজকে একটা স্বনামধন্য এনজিও ডেকেছিলো। বক্তৃতার বিষয় ছিলো কর্মজীবনে শুদ্ধাচার চর্চা ও সাফল্য। বক্তৃতা শেষে আজাদ সাহেবের মনে হলো তিনি আজকে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন। সবার তন্ময় হয়ে বক্তৃতা শোনা এবং হাততালি দেওয়া সেটাই বলে। তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে বসেছেন। আয়েশী ভঙ্গিতে সীটে বসে চশমাটা খুলে নরম টিস্যু দিয়ে আলতোভাবে চশমার গ্লাস পরিস্কার করছেন আর মনে মনে নিজের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করছেন। এমন সময় গাড়ীর ড্রাইভার রমজান ভিতরের লুকিং গ্লাস দিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাঁকিয়ে একটা তৈলাক্ত হাসি দিয়ে বললোঃ-
-স্যার, সেইরম বক্তৃতা দিছেন,ফাটিয়ে দেয়া যাকে বলে।"
-"তাই নাকি? ভালো হইছে?" ঠোঁটে আত্নতৃপ্তির হাসি নিয়ে আয়নায় রমজানের চোখের দিক তাঁকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে আজাদ সাহেব।
"অবশ্যই স্যার! হাততালি দেখে বুঝেন নাই!"
- "হুমম!"
ড্রাইভারের সাপোর্ট তার আত্নতৃপ্তি আরও বাড়িয়ে দেয়।
রমজান আলী, আজাদ সাহেবের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী, তার প্রাইভেট কারের ড্রাইভার। অনেক কাজের সাক্ষী এবং সহায়কও। তার ডান হাতও বলা যায়। ছেলেটা বিশ্বস্ত।
"স্যার,বিশেষ করে সফল হতে সততা, সত্যবাদিতা এবং ব্যক্তিত্ত্ব ধরে রাখার অংশটা অসাধারন হইছে।" রমজান আবার বললো।
"তাই নাকি!" এবার আজাদ সাহেবের চোখেমুখে রহস্যময় হাসি, যেটাকে অনেকে শয়তানি হাসিও বলে।
"জি স্যার, অডিটোরিয়ামে তখন পিনপতন নিরবতা ছিলো। বক্তৃতা শেষে সবাই বলছিলো যে ভিতরে ডেডিকেশন ছাড়া এমন বক্তৃতা কেউ দিতে পারে না।"
ডেডিকেশন শব্দটা শুনে উচ্চ স্বরে হেসে উঠেন আজাদ সাহেব।
প্রশংসা সবারই ভালো লাগে। তবে আজাদ সাহেবের বেশী ভালো লাগছে। কারণ এখানে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়েছে। তাই রহস্যময় হাসিটা ধরে রেখেই তাঁকালেন ড্রাইভারের দিকে। ড্রাইভারও তাঁকিয়ে আছে আজাদ সাহেবের দিকে। সম্ভবত স্যারের খুশি ও মনের ভাব আঁচ করতে পারছে।
-স্যার, সবাই তন্ময় হয়ে শুনলেও শহিদ সাব সামনে বসে মুচকি মুচকি হাসছিলো!!
-"কোন শহিদ?"
-"স্যার ওই যে, গত সপ্তাহে যে তার প্রমোশনের জন্য আপনাকে পনের লাখ দিলো। আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম।"
-অঅহ!
- "উকিল সাহেবও হাসছিলো মুচকি মুচকি।"
-কোন উকিল, ইকরা গ্রুপের মামলার?
- না না স্যার। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার আগে যার এডভাইস নেন এবং শেখানো কথা বলে আসেন।
-"হুমম।" আজাদ সাহেবের চোখ নিচের দিকে। মুখে বাঁকা ও শয়তানি হাসি।
"স্যার,মঞ্চে বসে ঘুদক (ঘুষ দমন কমিশন) এর চেয়্যারম্যানও একটু একটু হাসছিলেন।"
ঘুদকের চেয়ারম্যানের নাম শুনে আঁতকে উঠলেন আজাদ সাহেব। কি বাঁচাটাই না বেঁচেছেন তিনি। পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ঘুষ নেয়ার অপরাধে ধরা খেয়েছিলেন হাতে নাতে,অনেক প্রমাণও ছিলো। রক্ষা পাওয়ার কথা ছিলো না। ওইদিন যদি ওনার বাসায় গিয়ে পা'য়ে পড়ে নিরপরাধ,অসহায় কান্নার অভিনয়টা ঠিকমতো না করতেন এবং হেলদি প্যাকেটটা ধরিয়ে না দিতেন তবে চেয়ারম্যান সদয় হতোনা। সদয় না হলে আজকে জেলের ভাত খেতে হতো। মান-সম্মান সব যেত!
নিজের অভিনয় পারদর্শীতার কথা মনে করে নিজেই অভিভূত হলেন,তাই শরীর ঝাঁকিয়ে ফিক করে হেসে উঠলেন আজাদ সাহেব। হাসি শেষে রমজানের দিকে তাঁকিয়ে বললেনঃ-
"বুঝলা রমজান! সততা-ফততা কিচ্ছু না। সব অভিনয়,ভূয়া কথা! উপরে উঠতে লাগে বুদ্ধি আর ভালো সাজার অভিনয় পারদর্শীতা।
এদেশের মানুষগুলো অনেক বোকা,সহজ সরল। অভিনয় দিয়ে এদেরকে খুব সহজেই কাবু করা যায়!"
-"জি স্যার! এ জন্যই আজকাল অভিনেতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে! সবাই অভিনয় করে। নেতা,ব্যবসায়ী,আমলা,পুলিশ সবাই! পারেও সেরম। তয় আপনার মতো কেউ পারে না। আপনি ব্যাংকে চাকরী না করে অভিনয় করলে অস্কার পেতেন!!"
-"চুপ করো! বেশী কতা কও।" ছেলেটা লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছে,থামানো দরকার, তাই নড়েচড়ে বসে ধমক দিয়ে চোখ মুদতে মুদতে বললেন আজাদ সাহেব।
রমজান চুপ হয়ে গেল।
"গান দেও, রবীন্দ সংগীত"
রমজান ক্যাসেট প্লেয়ার অন করলো। গাড়ীর ক্যাসেট প্লেয়ারে রবীন্দ্র সংগীত বেজে উঠলো।
"আগুণের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে, এজীবন পূণ্য করো,
এজীবন পূণ্য করো-------------।"
(সব চরিত্রই কাল্পনিক)
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮
সপ্নচোরা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩২
বিজন রয় বলেছেন: নতুন পোস্ট দিয়েছেন? খুব ভাল।
আপনারা পুরানো ব্লগাররা আবার নিয়মিত হন।
শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১
কানিজ রিনা বলেছেন: খুব সত্যি তুলে ধরেছেন, কাল্পনিক হলেও
সত্য। ধন্যবাদ,