নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিকল্পিত এক টুকরা বাংলাদেশ – ভাসান চরে, রোহিঙ্গাদের জীবন

১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৯


ভাসান চরে এখন ৩০৫০০ জন রোহিঙ্গা বসবাস করছে। জাতিসংঘ ও এন জি ও গুলো সেখানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয়ণ-৩ নামের এই প্রকল্প হাতে নেয় এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। নৌ বাহিনী সফলতার সাথে এই প্রকল্প সম্পন্ন করে।
প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের জন্য বসবাসের জন্য ১২০টি ক্লাস্টার এবং ১২০টি শেলটার স্টেশন রয়েছে। ভাসান চরের ক্লাস্টার হাউজ ও শেল্টার স্টেশনগুলো ভূমি থেকে চার ফুট উঁচু করে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারে আছে ১২ টি হাউজ। এখানে সব মিলিয়ে ১,৪৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ১৬টি কক্ষ রয়েছে এবং প্রতিটি কক্ষে দুটো ডাবল বাঙ্কার বা দোতলা খাট আছে যাতে একটি পরিবারের চারজন থাকতে পারে।
পরিবারে সদস্য সংখ্যা চারজনের বেশি হলে তাদের জন্য দুটো কক্ষ বরাদ্দ করার ব্যবস্থা রয়েছে। জাতিসংঘের আদর্শ মান অনুযায়ী আবাসনের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ৩৭ বর্গফুট জায়গা দরকার, এসব কক্ষে তার চেয়ে বেশি জায়গা রাখা হয়েছে। প্রতি ৮টি কক্ষের জন্য তিনটি টয়লেট এবং দু'টি গোসলখানা রয়েছে,নারী-পুরুষদের জন্য রয়েছে আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট। রান্নার জন্য প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে চুলার জায়গা বরাদ্দ করা আছে।সেখানে সিলিন্ডারে এল পি জি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।রান্নায় গ্যাস সাশ্রয়ের জন্য একটা এন জি ও বিশেষ বাক্সের ব্যবস্থা করছে। রান্নাঘর, গোসলখানা এবং টয়লেটে পানির সরবরাহ রয়েছে। প্রতিটি হাউজের ওপরে রয়েছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।
প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য আছে একটি করে শেল্টার স্টেশন। ভাসানচরে বড় ধরণের ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা মোকাবেলায় গত ১৭১ বছরের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ভাসানচরে পাঁচ তলা বিশিষ্ট ১২০টি শেল্টার স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় হলেও টিকে থাকতে সক্ষম এই শেলটার স্টেশন। ভাসান চরে কর্মরত ইউ এন এইচ সি আর ও আর আর আর সি’র প্রতিনিধি জানায় যে, কিছুদিন আগে সাইক্লোন মোখার সময় দুই ঘণ্টার মধ্যে ভাসান চরের সবাইকে সাইক্লোন শেল্টারে নেয়া হয়েছিল, এবং তারা সবাই নিরাপদ ছিল, এটা ভাসান চরের জন্য একটা বড় অর্জন।


ভাসান চরে শিশুদের জন্য দুটি খেলার মাঠ, এতিমখানা, ডে-কেয়ার, সুপারশপ, সেলুন, মসজিদ ও বাজার আছে।সেসব বাজারে নোয়াখালী হাতিয়া ও অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ব্যবসা করছে এবং প্রায় সব প্রয়োজনীয় জিনিস সেখানে পাওয়া যায়। প্রকল্প এলাকায় পুকুর এবং লেক কাটা হয়েছে।রোহিঙ্গারা এখানে মাছ ধরে এবং এখানে মাছের চাষ হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাস্টারে ও ১০ ফুট গভীর একটি পুকুর আছে।এসব পুকুরের পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাস্টার একই আকৃতিতে বানানো হয়েছে, এখানকার সব ঘর দেখতে একই রকম। ঘরের পাশের অল্প ফাঁকা জায়গায় মহিলারা শাক সবজী চাষ করছে।
প্রতিটি ঘরের সামনে ২০ থেকে ২৫ ফুট চওড়া পাকা রাস্তা রয়েছে। বাংলাদেশের সব গ্রামে এত সুন্দর মজবুত ও পরিচ্ছন্ন রাস্তা দেখা যায় না। প্রকল্পের ভেতরে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার আছে। এন জি ও দের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গারা সমস্ত আবর্জনা সেখানে এনে জমা করছে। এর ফলে এলাকা পরিচ্ছন্ন থাকছে এবং এই আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে তা কৃষি জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাসান চরে ৪৩২ একর জমিতে রোহিঙ্গাদের আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রকল্পের সম্প্রসারণ ও বনায়নের জন্য বাঁধের ভেতর ৯১৮ একর এলাকা খালি রাখা হয়েছে।
ভাসান চরে দুটি ২০ শয্যার হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। প্রকল্প এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, আরআরআরসি প্রতিনিধি, রেডক্রস, আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর তুলনায় অনেক টেকসই ও উন্নতমানের। কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘরগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকলেও ভাসানচরে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা রয়েছে।


ভাসান চরে জোয়ার ও জলোচ্ছাসের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ করতে ১৭০২ একর জমির চারপাশে ৯ ফুট উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বাঁধ ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হবে। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে তীর রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমুদ্রের যে পাশ থেকে ঢেউ চরে আঘাত করে, সেই পাশেই শোর প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। শোর প্রোটেকশন থেকে ৫০০ মিটার ভেতরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক শক্তিশালী ঝড় এই চরের উপর দিয়ে গেলে ও মানুষের জীবন বিপন্ন হবে না।
১৩,০০০ একরের এই দ্বীপে সারাবছর সুপেয় পানি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ, কৃষি জমি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, দুটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, গুদামঘর, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা, একটি পুলিশ স্টেশন, বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র, খেলার মাঠ এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে। ভাসান চরে ডব্লিউ এফ পি খাদ্য সহযোগিতা দিচ্ছে, পাইলট প্রকল্প আকারে ই ভাউচারের মাধ্যমে এখন ৫০০০ রোহিঙ্গা কে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতে সবাইকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলি থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করা শুরু হয়। ভাসান চরে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের চেয়ে ভাসানচরে নিরাপদ আর স্বস্তিতে আছে। স্বাস্থ্যসেবাসহ ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাগুলি রয়েছে যা বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যাবে না।
রোহিঙ্গারা বর্তমানে ভাসান চরের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও কক্সবাজারের নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তির সুবাতাস হিসেবে দেখছে। ভোর থেকেই ভাসান চরে কর্ম চাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়।রোহিঙ্গাদের কেউ সাগরে কিংবা চরের ভেতরের পুকুর বা লেকে মাছ ধরতে যায়। কেউ ভ্যান কিংবা রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। কেউ তাদের জন্য বরাদ্দ কৃষি জমিতে চাষ করতে চলে আসে। কিছু রোহিঙ্গা তাদের পশুদের চড়াতে বের হয়।এক সময়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা সংস্থা যে ভাসান চরের উপর তাদের আস্থা রাখতে পারেনি আজ সেখানেই রোহিঙ্গারা নিরাপদে উন্নত পরিবেশে বসবাস করছে যা বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: শোভন ভাই,

মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশে কেন বাংগালী হয়ে জন্মাইছি। কেন রোহিংগা হয়ে মায়ানমার থেকে বাংগাল দেশে আসলাম না। তাদের জন্য কোন কাজ-কাম ছাড়াই (তাদের কাছ একটাই - সেটা হলো ১। পুরুষদের শুধু বউকে ;) সময় দেয়া যাতে প্রতিবছর তাদের বউ গর্ভবতী হতে পারে । ২। নারীর কাজ হলো প্রতিবছর বাচচা পয়দা করে রোহিংগা জনসংখ্যা বাড়ানো ) জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সব কিছুর ব্যবস্থা করছে দেশ-বিদেশের সরকার,জাতিসংঘ ও এনজিও। সব কিছুি না চাইতে পাচছে তারা।

আর আমরা?

শুধু দু বেলা দু মুটো খাবার যোগার করতে কত কোটি মানুষ দেশে দিন-রাত হাড়ভাংগা খাটুনি খেটেও পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচছে শুধু বেঁচে থাকার জন্য , তার খবর না সরকার রাখছে না বিশ্ববাসী।

চিল্লাইয়া কন - ঠিক কিনা?

১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:০২

শোভন শামস বলেছেন: নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে অনিশ্চিত জীবন কারো কাম্য হতে পারে না।
আপাত মনে হচ্ছে তাদের কিছু করা লাগছে না, তবে তাদের অজানা গন্তব্য ঠিকানা বিহীন জীবন কষ্টের।
ভাসান চর বাংলাদেশ বানিয়েছে, বাংলাদেশ এই ধরনের পরিকল্পিত আবাসন বানাতে পারে। আমাদের গ্রামগুলো এর চেয়ে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করা যায়।
দিন দিন ত্রান সহায়তা কমে আসছে, সামনের দিন গুলোতে সমস্যা আর ও বাড়বে।
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জরুরী।
সাথে থাকবেন ধন্যবাদ

২| ১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৪৮

মোগল সম্রাট বলেছেন:


রোহিঙ্গারা স্থায়ী নাগরিকত্বও পেয়ে যেতে পারে। তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

আজ সারা বাংলাদেশ ইয়াবায় সয়লাব। ওখানকার স্থানীয়দের জীবন কতটা নরক করে ফেলেছে প্রতিদিন তার ফিরিস্তিতে খবরের কাগজ ভর্তি ।

১১ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:০৪

শোভন শামস বলেছেন: দিন দিন ত্রান সহায়তা কমে আসছে, সামনের দিন গুলোতে সমস্যা আর ও বাড়বে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের অপরাধ প্রবনতা বাড়ছে, যা দুঃখ জনক।দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।
সাথে থাকবেন ধন্যবাদ

৩| ১১ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:২৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- দেশের ভূমিহীন দরিদ্রদের জন্য এমন ব্যবস্থা বেশী বেশী করতে পারলে ভালো হতো।

১২ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:১৩

শোভন শামস বলেছেন: আমাদের দেশের গ্রামগুলো এভাবে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। এ রকম রাখলে অবশ্যই ভাল হয়। আশা করি বাংলাদেশ আরও ভাল থাকবে।
সাথে থাকবেন ধন্যবাদ

৪| ১১ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা। খুব সুন্দর।

১২ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

শোভন শামস বলেছেন: সুন্দর পরিকল্পিত সব কিছু
সাথে থাকবেন ধন্যবাদ

৫| ১১ ই জুন, ২০২৩ রাত ১০:০৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
এই দ্বিপ ভাসান চরে শুধু রোহিঙ্গা স্মাগলার জঙ্গি, মাদক, অপরাধ প্রবন রোহিঙ্গাদের বাছাই করে এখানে রাখা উচিত ছিল।
তাহলে তারা ফিরে যাওয়ার চিন্তা করতো। এখন প্রত্যাবাসন ফিরে যেতে চায় না।
এখন চায় নিজ এলাকায় বেহেস্তখানা বানিয়ে না দিলে তার কোন মতেই যাবে না।

১২ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:১৬

শোভন শামস বলেছেন: তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রেষণা দিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি কক্স বাজার থেকে চাপ কমাতে আর ও রোহিঙ্গাকে এখানে আনতে হবে।
দাতা দেশ নতুন করে অর্থায়ন করে আর ও আবাসন বানাতা পারে , পরিবহন ব্যয় দিয়ে বাংলাদেশ কে সহায়তা করতে পারে।
সাথে থাকবেন ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.