![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ফুলবাড়ি অভ্যুত্থাণ" এর ৮ বছর:
ফুলবাড়ির অনেক মানুষ এখনো তাদের হারানো স্বজনকে খুজে ফেরেন। লাখো মানুষের মিছিলে বিডিআর (বিজিবি)- পুলিশ যৌথভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে; সালেকীন, আমিন, তরিকুলের লাশ পাওয়া গেলেও গুম করে ফেলা হয় বাকিগুলো; শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, যাদের অনেকে পঙ্গুত্ব জীবন যাপন করছেন এখনো।সারা দেশের সচেতন মানুষের স্মৃতি থেকেও মুছে যায়নি সে হামলা , নির্যাতন আর পৈশাচিক দালালির ইতিহাস । সেদিন সারা বাংলাদেশের সাধারণ এবং মুক্তিকামী মানুষের ঠিকানা ছিল ‘ফুলবাড়ি’, চারদিক কাঁপিয়ে স্লোগান উঠেছিল,‘তোমার বাড়ি আমার বাড়ি, ফুলবাড়ি ফুলবাড়ি।’
সময়টা ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন ও এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে এবং ফুলবাড়ি রক্ষার দাবিতে- ফুলবাড়ি, পার্বতিপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জের লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিল সেদিন। তেল- গ্যাস- জাতীয় সম্পদ ও বিদ্যুত্- বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং ফুলবাড়ি রক্ষা কমিটির আহ্বানে সেদিন সাম্রাজ্যবাদ ও এদেশীয় দালাল শাসকচক্রের লাঠি- গুলি- টিয়ারশেলের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল জনগণ, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লড়াইয়ে অবতীর্ন হয়েছিল তারা; সে লড়াইয়ে আপাত জিত হয়েছিল জনগণেরই। তত্কালিন সরকার জনগণের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়েছিল সেই সময়। জনগণই যে সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে সকল ধরনের অপশক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী সেদিন আবারো তা প্রমাণিত হয়েছিল। জনগণের প্রতিরোধ আর স্লোগানের ভারী আওয়াজে কেঁপে উঠেছিল সাম্রাজ্যবাদি শক্তি এবং তাদের দেশিয় দালাল গোষ্ঠী ।
তত্কালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেদিন এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং বিদেশী কোম্পানির সাথে কোন চুক্তি না করা ও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা না তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ তিনিই এখন ক্ষমতায় আসীন হয়ে উল্টা কাজ করছেন। ফুলবাড়ি আন্দোলনের ৬ দফা দাবিকে উপেক্ষা করে জাতীয় সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পায়তারা করছেন। দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন করছেন।কখনো ভিন্ন নামে আবার কখনো কখনো এশিয়া এনার্জির নামেই বর্তমান সরকার এশিয়া এনার্জির সাথে নানান গোপন চুক্তি করে যাচ্ছে। সংবিধানের মাধ্যমে আবার এই চুক্তিকে আদালতের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সব রকমের জবাবদিহিতার বাইরে নিজেদের শাসন কাঠামোকে শক্ত করে জনগণের সাধারণ সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করার সব কৌশল ধীরে ধীরে উন্মোচন করছে ।
আমরা এতে অবাক হইনা, কেননা এটাই তাদের সংস্কৃতি- এই ক্ষেত্রে বিএনপি- আওয়ামীলীগ পার্থক্য নেই। আওয়ামীলীগ গণবিরোধী কাজের যেটুকু অসমাপ্ত রেখে যায়, বিএনপি নিজ দায়িত্ব মনে করে খুব যত্নের সাথে তা সম্পন্ন করে । আবার বিএনপি যতটুকু বাকি রেখে মেয়াদ শেষ করে, লীগ তা যত্নের সাথে সমাপ্ত করে। যখন তাদের ভাগাভাগিতে কোন বাঁধা আসে তখন বোমা পড়ে এখানে সেখানে, মরে সাধারণ মানুষ।
গণ মানুষের শক্তির মূর্তভাবে প্রকাশের দিন ‘২৬ আগস্ট’। এই দিনকে স্রেফ ফুলবাড়ি দিবস/ ফুলবাড়ি ট্র্যাজেডি বলে অভিহিত করা মানে ঐ দিনের সংগ্রামকে ছোট করা বা স্রেফ দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া । ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের ঘটনা কোন ট্র্যাজেডি নয় বরং গণ মানুষের উপর শাসক শ্রেণির শ্রেণিগত বৈরিতা প্রকাশের মূর্ত ক্ষণ। সাধারণ মানুষের জেগে উঠার দিন, গণ মানুষের সংগ্রামি চেতনার বিজয়ের দিন ...
©somewhere in net ltd.