![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যের পথে এক বলিষ্ঠ কন্ঠ।আমার সত্যই আমার শক্তি।আমি সমাজ আর রাষ্ট্রের অন্যায় নীতি মানি না।সমাজ আমার কাছে বিষধর সাপ,আর রাষ্ট্র আমার কাছে তার সৃষ্টিকর্তা।অন্যায় প্রতিবাদ করতে আমি কখনো ভয় পাইনা।কেননা,আমার সত্যই আমার পথ দেখাবে।
রাফি নিরব মনে আকাশপানে চেয়ে আছে।মেঘলা আকাশ।মনে হচ্ছে এক্ষুনি নেমে আসবে বৃষ্টি।থমথমে পরিবেশ।আশ্চর্য,এতো ঝড়ের পূর্বাভাস।তবু রাফি বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়।একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সেদিকে।মানুষ ছোটাছুটি করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেও তার মধ্যে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না।ছেলেটি ভীষন একা।সেই ক্লাস নাইন থেকে তার জিবনে নেমে আসে দুর্বিষহ নানা বিপর্যয়।কাল রাতের ঘটনাটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।বাম চোখ থেকে মনে হলো এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।কি হচ্ছে,কেন হচ্ছে,কিভাবে হচ্ছে,কিছুই রাফির জানা নেই।একটা মেয়েকেই সে ভালবাসতো।নাম রিতু।সম্পর্কে দূঃসম্পর্কের মামাতো বোন।কিন্তু মেয়েটা তাকে ভালবাসতো না।রাফি তাতে বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি।একাধারে ভালবেসেই গেছে সে।কখনো কাউকে বলেও নি তার মনের না বলা কথাটা।একদিন প্রানভর সাহস নিয়ে রিতু সে বলেই ফেলল, যে সে রিতুকে ভালবাসে।কিন্তু রিতুর থেকে কোন উত্তরই সে পায় নি।রিতু কখনো তাকে বলেও নি ভালবাসি,আবার এটাও বলেনি ঘৃনা করি।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। জানুয়ারি ২৭,২০১৫।রাফি ঘুমিয়ে ছিল।কিন্তু ঘরে শোরগোল শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়।দরজা খুলে মাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? আর প্রতিত্তুরে মা যে জবাব দেয় তা রাফিকে হাটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে।রিতু পালিয়েছে।কোন একটা ছেলেকে নিয়ে।তার মানে রিতু কখনো তাকে ভালই বাসেনি।আর ভালবাসলে সে তাকে ছেড়ে যেতে পারতো না।রাফি বিচলিত হয়নি।একটু কষ্ট পেয়েছে খানিক।পালিয়ে গেছেতো কি হয়েছে,মরেতো যায়নি।আর ও যদি অন্য একটা ছেলের সাথে সুখী থাকতে পারে তবে থাকুক না।ওর সুখই তো রাফির সুখ।
কিন্তু ঘটনা ঘটল তার ১৪ দিন পর।মানে ২ সপ্তাহ পর।রিতু বাসায় ফিরে এসেছে।কিন্তু তার নামে নানা কুৎসা রটিয়ে গেছে সারা এলাকা জুড়ে।রটারই কথা,একটা ছেলের সাথে পালিয়ে ১৪ দিন কাটিয়ে তারপর আবার ঘরে ফিরে আসা মোটেই ভাল কথা নয়।কিন্তু এতে রাফির ভালবাসায় বিন্দুমাত্র কম পড়েনি রিতুর জন্যে।সে এখনো তাকে ভালবাসে ঠিক আগের মত।রিতুকে যখন তার পরিবারের সবাই অগ্রাহ্য করে চলে,তাকে বোঝা মনে করে, ঠিক তখনই রাফি ঘটালো দুর্দান্ত এক সুন্দর কাহিনীর।সমাজের মূখে চুনকালি দিয়ে সে রিতুর পরিবারে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় নিজের পরিবারের শত বাধা স্বত্বেও।রিতুর পরিবার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এক কথায় রাজি হয়ে গেলো।রাফিও খুব খুশি।ভালবাসার মানুষ টাকে কাছে পাওয়ার আনন্দই হয় ভিন্ন।
১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১৫।বিয়ের আর মাত্র চার দিন বাকি।আর তারপরই রাফি রিতুকে নিজের করে নিবে সারাজিবনের জন্যে।কিন্তু সকাল ৮ টায় রাফির মোবাইলে একটা কল আসে।কলের অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়,
"রাফি,তুমি তাড়াতাড়ি রিতুদের বাসায় আসো।"
আর তারপরই লাইন টা কেটে যায়।কে ছিল বুঝতে পারেনি।তবে কথাটায় কষ্ট জড়িয়ে ছিল,সেটা বুঝতে রাফির সমস্যা হয়নি।সে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে রিতুদের বাসায় যায়।
প্রচুর মানুষ ভীড় করেছে রিতুদের বাড়িতে।কারনটা অজানা।একটু একটু করে সে রিতুর ঘরের সামনে যায়।চারিদিকে কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা।শরীরে পঞ্চইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সবকিছুই তার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন এক শূন্য কোটায় ভাসছে সে।হঠাৎ রিতুর আম্মুর কথায় তার হুঁশ ফেরে।কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি একটা চিরকুট রাফির সামনে এনে ধরে।রাফি সেটা হাতে নেয়।যাতে লেখা ছিল,
"রাফি,
আমি শুরু থেকেই জানতাম তুমি আমায় অনেক ভালবাসো।কিন্তু আমি কি করবো বলো,আমি যে অন্য একটা ছেলেকে ভালবাসতাম।আর তার হাত ধরেই একটু সুখের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাই।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমার জন্যে তার বিন্দুমাত্র ভালবাসা ছিল না।ছিল শুধু দেহলোভ।আমি পাপ করেছি।সমাজ আমায় ক্ষমা করবেনা।তোমার ভালবাসার মান আমি রাখতে পারলাম না।আমার পাপের ভাগীদার আমি তোমায় করতে পারবোনা।আমি কখনোই শুনতে পারবোনা কেউ তোমাকে আমার নাম ধরে তিরস্কার করুক।ভাল থেকো তুমি।আর একটা কথা তোমায় বলতে চাই,আমি তোমায় ভালবাসি।
ইতি,
তোমার ভালবাসার,
রিতু"
পরিবেশটা থমকে আছে।সময়ও যেন আটকে গেছে।পাখিরের মুখের গান বন্ধ হয়ে গেছে।হয়তো নদীর স্রোতও কিছুক্ষনের জন্যে বিরতি নিয়েছে।রিতুর নিথর দেহটা সামনে দেখে রাফির কিছুই করার ছিল না।শুধু একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল তার মায়াবী মূখ টার দিকে।সমাজ তাকে বাঁচতে দেয়নি।তাকে শ্বাস নিতে দেয় নি মুক্ত আকাশে।
রিতুর দাফন-কাফন আর তার পরের দীর্ঘ এক বছর কিভাবে রাফি কাটিয়েছে সেটা না হয় ইতিহাসই হয়ে থাকুক।
হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হলো।রাফির যেন হুঁশ ফিরে এলো।প্রচুর ঝড় আর বৃষ্টি দেখে সে ভাবল,এতক্ষন খেয়াল করলাম না কেনো।আর হঠাৎই এমন হওয়ার কারন কি!! কিন্তু প্রকৃত অর্থে আকাশপানে তার তাকিয়ে থাকার সময়কাল টা ছিল প্রায় দেড় ঘন্টা।এই বিশাল সময়ে সে একবারও অন্য মনস্ক হয়নি।ভেবে গেছে তার আপন মস্তিষ্কে।তাড়াহুড়ো করে বাসায় আসলো।শরীরের অনেকটা অংশই ভিজে গেছে।একটা তোয়ালে দিয়ে শরীরটা মুছে সে রুমে ডুকে।ভেতর থেকে দরজা টা আটকে দেয়।দেখে খাটের উপর লাইটার টা পড়ে আছে।পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বের করে একটা সিগারেট ধরায়।ভাবতে থাকে কাল রাতের কথা।বিধাতা সবসময় তার সাথেই কেন এমন করে,সে সত্যিই বুঝতে পারেনা।এইতো এনিকে চিনে সে চার মাস হলো।ফেইসবুকে পরিচয়।প্রথমে ফ্রেন্ডশিপ,তারপর ধিরে ধিরে তার মধ্যে রাফি খুঁজে পায় রিতুর মোটামুটি অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য। রাফি ভাবতে শুরু করে,রিতু বুঝি আবার ফিরে এসেছে তার কাছে।আর তাই এই ফ্রেন্ডশিপটাকেই ভালবাসায় রুপান্তর করে রাফি।রাফি এনি কে ঠিক ততটাই ভালবাসে যতটা রিতুকে সে বাসতো।কিন্তু কাল রাতে বিধাতা আবারো একবার শাস্তি দিল রাফিকে।এনি মূখে যতই বলত,ভালবাসি,ভালবাসি।কিন্তু সঠিক অর্থে এনির মনে প্রানে সবসময়ই বসবাস করতো অন্য একটা ছেলে।যে ছিল এনির প্রথম প্রেম।কিন্তু তাই বলে যে রাফির প্রতি তার ভালবাসা নেই এমন নয়।আছে তবে সংকীর্ণ। এনি মেয়েটা খুব ভাল স্বভাবের।রাফির মনের মত।আর সেই ছেলেটার কথা রাফির কাছে গোপন করে সে অন্যায়বোধে ভুগছিল।তার কাছে বার বার মনে হচ্ছিল সত্যটা লুকিয়ে রাখা উচিৎ নয়।তাই সে রাফিকে কাল রাতে সব সত্য কথা খুলে বলে।ছেলেটার কথা বলা মাত্রই এনি কাঁদতে শুরু করে।আর রাফিও এর অর্থটা বুঝতে পেরে কলটা কেটে দেয়।নির্বাক হয়ে যায় সে।লাইফে যাকেই ভালবেসেছে কারো কাছ থেকেই সে ভালবাসা পায়নি।মেয়েটা হয়তো ভুল কিছু করেনি।কিন্তু দ্বিতীয়বারের মত বড় একটা ধাক্কা খেলো সে।আর তাই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল এই মধ্যরাতে।তার কান্না যেন কোন বাধা মানছেনা।ডাক্তার বলেছিল, অতিরিক্ত শকে তার যেকোন কিছু হতে পারে।আর তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাফি।মাথার প্রতিটা টিস্যু যেন ছিড়ে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।সে বুঝতে পারছেনা,কোন ব্যাথাটা বেশী প্রখর।মাথা না বুক।
সিগারেটের অস্পষ্ট ধোঁয়া বাতাসে উড়ছে।আর তার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে ভেজা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সে।আর এরপর থেকে রাফিকে কোথাও কখনো দেখা যায়নি।আমিও তাকে কখনো দেখিনি।খুব খুঁজেছি।কিন্তু লাভ হয়নি।
©somewhere in net ltd.