নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপন মনে, আপন সুরে

I do not agree with what you have to say, but I'll defend to the death your right to say it.

শূন্যবতী

না প্রেমিক না বিপ্লবী

শূন্যবতী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রথ দেখানোর ছলে কলা বেচা-২

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪



পাকিস্তানের রক্ষাকারীরা পড়িয়া নীতির বেশ,

এই রথখানি আগুনে পুড়ায়ে করিলো ভষ্মশেষ।

শিল্পীর হাতের মহা-সান্ত্বনা যুগের যুগের তরে,

একটি নিমিষে শেষ করে গেল এসে কোন বর্বরে।

………………………………

– ধামরাই রথ- পল্লীকবি জসীমউদ্দীন



গ্রামের বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় বলে ধামরাই রথ আমার শৈশবের স্মৃতিতে বড় একটা অংশ জুড়ে আছে। হয়তো পুরো ধামরাইবাসীর মনেই এর একটা স্থায়ী আসন আছে। আমি যতটুকু দেখেছি রথযাত্রা আর রথমেলা ধর্মের সীমানা পেরিয়ে সবার কাছেই উৎসবের উপকরণ। ধামরাই বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একফালি সরু রাস্তার দুপাশ দিয়ে ছড়িয়ে আছে শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যের কিছু স্মৃতিচিহ্ন। যাদের একটি হল রথ।

প্রতি বছর রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয় চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। লোকমুখে জানা যায়, পাল বংশের রাজা যশোবন্ত পাল মাধব মূর্তি আবিষ্কার করেন। একদিন রাজা হাতিতে চড়ে বেড়াতে যান ধামরাইয়ে পাশে শিমুলিয়া এলাকায়। চলতে চলতে হাতিটি এক মাটির ঢিবির সামনে গিয়ে থেমে যায়। তখন তিনি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে মাটির ডিবি খনন কাজ শুরু করেন। সেখানে একটি মন্দির পাওয়া যায়। তাতে বিষ্ণুর মূর্তির ন্যায় শ্রী মাধব মূর্তিও ছিল। রাজা ভক্তি করে সেটা নিয়ে আসেন। তখন থেকে শ্রী মাধবের নামে রাজা যশোবন্ত পালের নামটিও বিগ্রহের সাথে যুক্ত হয়ে এর নাম হয় শ্রীশ্রী যশোমাধব। ধামরাইয়ের কায়েতপাড়ায় শ্রী মাধব অঙ্গনে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত ও অধিষ্ঠিত রয়েছে শ্রীশ্রী যশোমাধব বিগ্রহ।

মানিকগঞ্জের বালিয়াটির তৎকালীন জমিদার ৭ তলা রথ নির্মাণ করেছিলেন। এই রথের উচ্চতা ছিল ৮০ ফুট। রথটিতে ৩২টি বড় কাঠের চাকা ছিল। রথটানার কাজে ব্যবহার করা হত ৮০ মন পাটের দড়ি। ১২০৪ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত বালিয়াটির জমিদাররা পুরুষানুক্রমে পূজা আর মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তারা একসময় খরচ বহন ও জীর্ণ রথের মেরামতের ব্যাপারে অনীহা দেখাতে থাকলে মির্জাপুরের রায়বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহা সে রথটি মেরামত করে দেন। ৭১ সালে পাক আর্মি এ রথটি পুড়িয়ে দেয়। কথিত আছে রথটি পুড়তে নাকি কয়েকদিন লেগেছিল। ঐ সময়ে যারা রথটি দেখেছিলেন তারা আজও সেটির সৌন্দর্য আর বিশালতার কথা ভুলতে পারেন নি। উল্লেখ্য হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ধারায় পাকিস্তান আর্মির বর্বরতার শিকার হন রণদা প্রসাদ সাহা আর তাঁর পরিবার। দেশ হারায় একজন সমাজসেবীকে, একজন সত্যিকারের দানবীরকে।

যাই হোক সময় বয়ে চলে, মানুষ আবার নতুন করে শুরু করে। সেই আড়ম্বর আর জৌলুস না থকলেও এরপর ২৭ ফুট উঁচু একটি ছোট রথ বানানো হয়। আমি ছোটবেলা থেকে সেটিই দেখেছি। মাঝারি মাপের রথটিতে হলুদ রঙ করা আর অনেকগুলো ধর্মীয় ছবি আঁকা ছিল। আমার কাছে বেশ মজাই লাগতো।

২০০৬ সালে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি নতুন রথ নির্মাণের ঘোষণা দিলে আবার আলোচনায় আসে ধামরাই রথ-যাত্রা। ভারত সরকারের অর্থায়নে রথটি নির্মাণের কাজ করেছে ইউসিস ক্যালভিন টেকনোটাচ কোম্পানি। এতে ব্যয় হয় ৭৮ লাখ টাকা। এটি আদি রথের আদলেই তৈরী করা হয়েছে। ৪১ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন নতুন এ রথে প্রথমে লোহার পাত দিয়ে ৩৭ ফুট দৈর্ঘ্য, ২০ ফুট প্রস্থ ও তিন তলাবিশিষ্ট অবকাঠামো তৈরী করা হয়েছে। এরপর সেগুন কাঠের পাতলা স্তর বসিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে লোহার পাত। কাঠের ওপর করা হয়েছে কারুকার্য ও দেবদেবীর মূর্তিচিহ্ন। কাঠের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ এবং খোদাই করা দেবদেবীর ছবিগুলো হারানো ঐতিহ্য অনেকখানি ফিরিয়ে এনেছে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

লোকজ পণ্যের সমারোহ ছাড়াও পুতুল নাচ, সার্কাস রথমেলার আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দেয়। আমার পছন্দের একটা খাবার পাওয়া যায় মেলায়, একরকম খই যার নাম বিন্নি। এই মেলা ছাড়া বছরের অন্য সময় খুব-একটা হাতের কাছে পাওয়া যায় না। এছাড়া এখানে তামা কাসায় বানানো সৌখিন শৈল্পিক পণ্যের কয়েকটি স্থায়ী দোকান আছে। মানিব্যাগের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যহানিকর হলেও জিনিসগুলো কিন্তু সুন্দর। আমার একটা জিনিস পছন্দ হয়েছে সেটার নাম মনে হয় নটরাজ। দামের কারনে আগেও কয়েকবার শূন্য-হাতে ফিরে এসেছি ভবিষ্যতেও ফিরব আশা রাখি। এখানে এক দাদুর ঢোল, তবলার ছোট্ট একটান দোকান আছে। সত্যি কথা বলতে সব মেলাতেই কেনার চেয়ে দেখার আনন্দটা নেহায়েৎ কম নয়।

রথ, মন্দির, এলাকার পুরাতন কারুকার্য করা বিল্ডিংগুলো দেখলে সহজেই বুঝা যায় পুরো এলাকাটাই ছিল বিত্তশালী হিন্দুদের আবাসস্থল কিন্তু এখানেই রয়েছে শত বছরেরও বেশি পুরনো ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গৌরবময় বন্ধনটা ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে ওতোপ্রতোভাবে। যার ফলে ৭১ সালে রথে লাগানো আগুন হিন্দু মুসলমান সকলের মনেই বেদনার নীল-শিখা হয়ে এখনো জ্বলছে।

সবশেষে যাদের কথা না বললে আমার শৈশবের স্মৃতি আর ধামরাই বাজার এলাকার ইতিহাস আসম্পূর্ণ থেকে যাবে তারা হল বানরের দল। প্রায় সব-বাড়িতেই এদের উপস্থিতি আর দুষ্টুমি, সে অতি মজার অভিজ্ঞতা। এদের সংখ্যাটা একেবারেই কমে গেছে।/:)



(তথ্যসূত্রঃ dnewsbd.com)

ছবিঃ কিছু নিজের কিছু ইন্টারনেটের

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬

শূন্যবতী বলেছেন:
ধামরাই রথ, কোন অতীতের বৃদ্ধ সুত্রধর,
কতকাল ধরে গড়েছিল এরে করি অতি মনোহর।
সূক্ষ্ম হাতের বাটালি ধরিয়া কঠিন কাঠেরে কাটি,
কত পরী আর লতাপাতা ফুল গড়েছিল পরিপাটি।
রথের সামনে যুগল অশ্ব, সেই কত কাল হতে,
ছুটিয়া চলেছে আজিও তাহারা আসে নাই কোন মতে।

তারপর এলো নিপুণ পটুয়া, সূক্ষ্ম তুলির ঘায়,
স্বর্গ হতে কত দেবদেবী আনিয়া রথের গায়।
রঙের রেখার মায়ায় বাঁধিয়া চির জনমের তরে,
মহা সান্ত্বনা গড়িয়া রেখেছে ভঙ্গুর ধরা পরে।

কৃষ্ণ চলেছে মথুরার পথে, গোপীরা রথের তলে,
পড়িয়া কহিছে, যেওনা বন্ধু মোদের ছাড়িয়া চলে।
অভাগিনী রাধা, আহা তার ব্যথা যুগ যুগ পার হয়ে,
অঝোরে ঝরিছে গ্রাম্য পোটোর কয়েকটি রেখা লয়ে।

সীতারে হরিয়া নেছে দশানন, নারীর নির্যাতন
সারা দেশ ভরি হৃদয়ে হৃদয়ে জ্বালায়েছে হুতাশন।
রাম-লক্ষ্মণ সুগ্রীব আর নর বানরের দল,
দশমুন্ড সে রাবণে বধিয়া বহালো লহুর ঢল।
বস্ত্র হরণে দ্রৌপদী কাঁদে, এ অপমানের দাদ,
লইবারে সাজে দেশে দেশে বীর করিয়া ভীষণ নাদ।
কত বীর দিল আত্ম-আহুতী, ভগ্ন শঙ্খ শাঁখা।
বোঝায় বোঝায় পড়িয়া কত যে নারীর বিলাপ মাথা।
শ্মশান ঘাটা যে রহিয়া রহিয়া মায়েদের ক্রদনে,
শিখায় শিখায় জ্বলিছে নির্বিছে নব নব ইন্ধনে।

একদল মরে, আর দল পড়ে ঝাপায়ে শক্র মাঝে,
আকাশ ধরণী সাজিল সে-দিন রক্তাশ্বর সাজে।
তারপর সেই দুর্যধনের সবংশ নিধনিয়া,
ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত যে হলো সারা দেশ নিয়া।
এই ছবিগুলি রথের কাঠের লিলায়িত রেখা হতে,
কালে কালে তাহা রুপায়িত হতো জীবন দানের ব্রতে।
নারীরা জানিত, এমনি ছেলেরা সাজিবে যুদ্ধ সাজে,
নারী-নির্যাতন-কারীদের মহানিধনের কাজে।

বছরে দু-বার বসিত হেথায় রথ-যাত্রার মেলা,
কত যে দোকান পসারী আসিত কত সার্কাস খেলা।
কোথাও গাজীর গানের আসরে খোলের মধুর সুরে।
কত যে বাদশা বাদশাজাদীরা হেথায় যাইত ঘুরে।
শ্রোতাদের মনে জাগায়ে তুলিত কত মহিমার কথা,
কত আদর্শ নীতির ন্যায়ের গাঁথিয়া সুরের লতা।
পুতুলের মত ছেলেরা মেয়েরা পুতুল লইয়া হাতে।
খুশীর কুসুম ছড়ায়ে চলিত বাপ ভাইদের সাথে।
কোন যাদুকর গড়েছিল রথ তুচ্ছ কি কাঠ নিয়া,
কি মায়া তাহাতে মেখে দিয়েছিল নিজ হৃদি নিঙাড়িয়া।
তাহারি মায়ায় বছর বছর কোটী কোটী লোক আসি,
রথের সামনে দোলায়ে যাইত প্রীতির প্রদীপ হাসি।

পাকিস্তানের রক্ষাকারীরা পরিয়া নীতির বেশ,
এই রথখানি আগুনে পোড়ায়ে করিল ভস্মশেষ।
শিল্পী হাতের মহা সান্ত্বনা যুগের যুগের তরে,
একটি নিমেষে শেষ করে গেল এসে কোন বর্বরে।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:০৬

নস্টালজিক বলেছেন: কলা বেঁচা স্বার্থক!

ধামরাই রথ আকর্ষণীয় একটা ইভেন্ট!

লেখা আর ছবি মিলিয়ে ভালো লাগলো!


শুভেচ্ছা!

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৪৪

শূন্যবতী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:০৩

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
সুন্দরভাবে উপস্থাপন করসেন, ভাল্লাগলো ||

৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:১৪

শূন্যবতী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.