নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সুশীল রাজাকারের পক্ষে নই, আমি সুশীল স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে নই , আমি সুশীল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাহিরে নই ।

সুশীল বাঙালি

আমি সুশীল রাজাকারের পক্ষে নই , আমি সুশীল স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে নই , আমি সুশীল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ।

সুশীল বাঙালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদজননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থটি মেলে ধরা রয়েছে।

২৫ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২১

আসছে ২৬ জুন শহিদ জননী জাহানারা ইমামের উনিশতম প্রয়াণ দিবসকে সামনে রেখে #গণজাগরণ মঞ্চ নতুন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও জামাত-শিবিরমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গঠনে নব্বই দশকের প্রথমার্ধে যে অপ্রতিম গণ-আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম, তারই মশাল বহন করে চলেছে প্রজন্মের সূর্যমুখী তীব্র আন্দোলন- #গণজাগরণ মঞ্চ। #গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মূল প্রেরণা একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধ।



এই মুহূর্তে আমার সামনে শহীদজননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থটি মেলে ধরা রয়েছে। আমি পড়ছি মলাটের ভেতরের বাম ফ্ল্যাপটি। পড়তে পড়তে আমার চোখে জল এবং হূদয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। এখানে লেখা হয়েছে:

‘তবে তাই হোক। হূদয়কে পাথর করে বুকের গহীনে বহন করা বেদনাকে সংহত করে দুঃখের নিবিড় অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনি বিন্দু বিন্দু মুক্তোদানার মত অভিজ্ঞতার সকল নির্যাস।



আবার আমরা ফিরে তাকাই আমাদের চরম শোক ও পরম গৌরবে মণ্ডিত মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলির দিকে। এক মুক্তিযোদ্ধার মাতা, এক সংগ্রামী দেশপ্রেমিকের স্ত্রী, এক দৃঢ়চেতা বাংগালী নারী, আমাদের সকলের হয়ে সম্পাদন করেছেন এই কাজ। বুকচেরা আর্তনাদ নয়, শোকবিহ্বল ফরিয়াদ নয়, তিনি গোলাপ কুঁড়ির মত মেলে ধরেছেন আপনকার নিভৃততম দুঃখ-অনুভূতি। তাঁর ব্যক্তিগত শোকস্মৃতি তাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আমাদের সকলের টুকেরা টুকেরা অগণিত দুঃখবোধের অভিজ্ঞতার সঙ্গে, তাঁর আপনজনের গৌরবগাথা যুক্ত হয়ে যায় জাতির হাজারো বীরত্বগাথার সঙ্গে। রুমী বুঝি কোন অলক্ষ্যে হয়ে যায় আমাদের সকলের আদরের ভাইটি, সজ্জন ব্যক্তিত্ব শরীফ প্রতীক হয়ে পড়েন রাশভারী স্নেহপ্রবণ পিতৃরূপে। কিছুই আমরা ভুলবো না, এই অঙ্গীকারের বাহক জাহানারা ইমামের গ্রন্থ নিছক দিনলিপি নয়, জাতির হূদয়ছবি ফুটে উঠেছে এখানে।’



এই বর্ণনা যথার্থ। মুক্তিযুদ্ধের যে দুঃখ ও গৌরব, তা সমগ্র জাতির দুঃখ ও গৌরব। এই দুঃখ ও গৌরবকে ৪০ বছর পর বাংলাদেশের তরুণেরা শাহবাগ চত্বরে আমাদের সামনে আরেকবার মেলে ধরেছেন। শাহবাগে এলে আমরা ভুলে যাই আমাদের দলীয় পরিচয়ের কথা। সবচেয়ে বড় করে যে স্লোগানটি আমাদের কানে বারবার ধ্বনিত হয়, তা হচ্ছে ‘অপরাধীর শাস্তি চাই—ফাঁসি চাই’।



শহীদজননী জাহানারা ইমামও সেটাই চেয়েছিলেন এবং গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার সম্পন্ন করে তাদের অপরাধকে মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। রাষ্ট্রের আইন-আদালত যখন তাঁর কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হন, তখন যুগে যুগে এভাবে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হয় এবং সেদিনও তাই হয়েছিল। সেদিন বরং বিএনপি সরকারের রাষ্ট্র ওই গণ-আদালতে অংশগ্রহণকারী বুদ্ধিজীবীদের উল্টো রাষ্ট্রীয় আদালতে ডেকে এনে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরে আমরা দেখেছিলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওই মামলাটি যখন আদালতে উঠলে বিচারপতি আনোয়ারুল হক তাঁর বিচারকের আসন থেকে নেমে এসে আসামিদের সাদরে অভ্যর্থনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জাতির বিবেক, আমরা তো আপনাদের এখানে ডাকিনি।’ কেবল তা-ই নয়, বিএনপি সরকারেরই অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল হক ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় অপারগতা জানিয়েছিলেন। তখন তাঁরা জামিন পেলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে মামলাটি প্রত্যাহূত হয়নি। শহীদজননী জাহানারা ইমামকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, আসামিরা সেদিন আইন ভঙ্গকারী ছিলেন না, রাষ্ট্রই ছিল ন্যায়বিচারে ব্যর্থ প্রধান আসামি!



দার্শনিক হেগেলের একটি বহুল উদ্ধৃত বচন, ‘Punishment is the right of the criminal’ অর্থাৎ ‘শাস্তি হচ্ছে অপরাধীর অধিকার’। হেগেল অপরাধকারীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে বলেছেন, অপরাধকারী যতক্ষণ ভাববেন যে তিনি কোনো অপরাধ করেননি, ততক্ষণ তিনি পরাধীন থাকবেন। কারণ, অপরাধের যে শাস্তি তার ওপর অর্পিত হবে, সেটিকে তিনি মেনে নিতে পারবেন না। ফলে সেই শাস্তি তখন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর আরোপিত হয়ে তাকে দণ্ড দেবে। এ ধরনের দণ্ড প্রদান একটি সামাজিক প্রয়োজনীয়তা (Social Necessity)। কেউ যদি কারও মূল্যবান সম্পদ চুরি করে পুনরায় তাকে সেটি শুধু ফিরিয়ে দিলেই বিষয়টা শেষ হয়ে যায় না, উপরন্তু তাকে শাস্তি হিসেবে কিছুদিন জেলও খাটতে হয়। সে হিসেবে অপরাধকারীকে শুধু ক্ষমা চেয়ে ‘অপরাধকে’ প্রত্যাহার করে নিলেই চলবে না, বা ক্ষতিপূরণ দিলেই চলবে না। তাকে কৃতকর্মের জন্য বাড়তি শাস্তিও ভোগ করতে হবে। তাই শাস্তি ছাড়া অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হয় না। হেগেলের এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজনৈতিক দল ও সহযোগী বাহিনীর সদস্যরা যেসব অপরাধ করেছিল, আজ তাদের অবশ্যই সে ক্ষতিগুলো প্রথমে পূরণ করে দিতে হবে, তাদের অনুশোচনা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। তারপর তাদের প্রাপ্য শাস্তি এবং দণ্ডও মাথা পেতে নিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার মাধ্যমেই একমাত্র একাত্তরের অপরাধীরা মুক্ত ও স্বাধীন হতে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের অপরাধের মাত্রাটি বিশাল। ৩০ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। অনেক লোককে হত্যা বা ব্যাপক হত্যা এটি নয়, এটি ‘গণহত্যা’।



অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে শিশু, নারী, বৃদ্ধ, অসুস্থ, পাগল, ভিক্ষুক, ঘুমন্ত, জাগ্রত—সব ধরনের বাঙালিকে, বিশেষভাবে হিন্দুদের নির্বিশেষে হত্যার নীতি গ্রহণ করেছিল ঘাতকেরা। এর নিষ্ঠুরতার মাত্রা এতই ভয়াবহ যে সমগ্র বিশ্ব এতে জেগে উঠেছিল এবং বিরোধিতা করেছিল। এ জন্যই নাৎসি পার্টি ও নাৎসিদের হত্যালীলা যেমন বিশ্ববাসী কখনোই ক্ষমা করেনি। তাদের বিচারের প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের বেআইনি বা নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা আজ এত বছর পরও যেমন ফুরোয়নি, তেমনি অত্যন্ত সুসংগঠিত জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সৃষ্ট বদর বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধকারী সদস্যদের বিচার এবং এসব ফ্যাসিবাদী সংগঠনকে বেআইনি বা নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন আমাদের দেশেও কখনো ফুরাবে না।



জামায়াতে ইসলামী আজও একাত্তরে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তানের বহু মানবতাবাদী নাগরিক পাকিস্তানের হয়ে আমাদের কাছে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছেন। নিজেদের সেনাসহ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবির ন্যায্যতা সমর্থন করেছেন। প্রথম আলোতেই প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মিরের উজ্জ্বল সব লেখা। কিন্তু এ দেশের অপরাধীদের মধ্যে আজও সেই প্রায়শ্চিত্তবোধ জাগ্রত হয়নি। এই দলের প্রধান নেতা স্বাধীনতার পরপর পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তখন সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে আপনি কি ভুল করেছিলেন? তাঁর অত্যন্ত দৃঢ় ও নিশ্চিত উত্তর ছিল, ‘হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি।’ অথচ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নবীন সদস্যরা যখন তাঁর মুক্তি দাবি করেন, তখন তাঁর আগে শ্রদ্ধাসহ(!) ‘ভাষাসৈনিক’ উপাধিটি বসিয়ে দেন। এ থেকেই বোঝা যায়, তাঁরা সৎ নন। ধর্মকে তাঁরা ব্যবহার করছেন ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। তিনি এবং তাঁর দল মোটেও অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন না, আগেও করতেন না, এখনো না। এসব কারণেই তরুণ প্রজন্ম আজ সঠিকভাবেই স্লোগান দিচ্ছে: ‘জামায়াতে ইসলাম—মেড ইন পাকিস্তান’ বা জামায়াতে ইসলাম—গো ব্যাক টু পাকিস্তান’।



প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই প্রজন্মের তরুণ সদস্যদের উদ্দেশে প্রকৃত ইতিহাস পাঠের পরামর্শ দিয়েছেন।



আপনাদের নেতাদের বলুন, তাঁরা যেন দোষ স্বীকার করেন, দণ্ড মাথা পেতে নেন এবং প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে আপনাদের ঋণমুক্ত করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.