![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাব্যিক জাহাজের অচেনা এক নাবিক আমি,অনন্তের পথ খুঁজে চলেছি গহীন সাগরে।সেই সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসে কবিতারা,আর সেই কবিতারা বেঁচে আছে বলেই আমি বেঁচে আছি,আর আমি বেঁচে আছি বলেই আমার কাব্যিক জাহাজ পথ খুঁজে চলেছে এখনো।।।।।।
বছর তিনেক আগের কথা,সেবার কুরবানির গরু কেনার জন্য হাটে গিয়েছি আমি আর আমার ছোট চাচা।গ্রামের গরুর হাট,প্রায় সব গরুগুলিই এসেছে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের ঘড় থেকে।সারি সারি করে সাজানো প্রত্যেকটা গরুর সাথেই দুই একজন করে দাঁড়ানো, হাতে ধরা গরুর রশি, সবগুলি চেহারার মাঝেই ছুঁয়ে গেছে মলিনতা।সবাই যখন গরু বেচাকেনা নিয়ে হাট সরগরম করে ফেলেছে ঠিক তখনি আমার চোখ হাটের এক কোনায় দাড়িয়ে থাকা এক মুরুব্বীর উপর।বয়স সত্তর-পঁচাত্তর ছারিয়ে গেছে, পরনে পুরনো রংচটা লুংগি আর সাদা পাঞ্জাবী।সারাদিনের অমানুষিক রোদের অত্যাচারে গলা থেকে পুরো শরীর অব্দি ঘামে ভিজে গেছে,ভেজা ঘামে তিলে ধরা পাঞ্জাবির বয়স অনেকটাই স্পষ্ট।পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল, সত্তর বয়সি পায়ের দৃঢ় নখগুলি গর্ত খুড়ে জায়গা করে নিয়েছে স্যান্ডেলের গর্ভে।
তখন সন্ধ্যে প্রায় নিভুনিভু, আমি মুরুব্বীর দিকে এক পা দুই পা করে এগিয়ে গেলাম।মুরুব্বী কে সালামদিলাম, আমার সালাম শুনে মুরুব্বী পান খাওয়া লালচে দাঁত বের করে একগাল হেসে আমার সালামের উত্তর দিলেন। সালাম শুনে তার চোখেমুখে কেমন যেন উদভ্রান্তীর ছাপ, মনে হয় হাট-বাজারে আজকাল কেউ আর সালাম কালাম দেয়না।তো আমি মুরুব্বীরে জিজ্ঞাস করলাম, ক্যা বাহে চাচামিঞা,গরুকোনা কি ঘড়ের?? চাচামিঞা আবার হাসি দিয়ে গরুর ঘাড়ে হাত বুলাইতে বুলাইতে কইলেন,আমার চান্দ মিয়া বাহে,পান্নার ঘড়ের ছোড পোলা !!!!
আমি ক্ষাণিকটা চোখ কপালে তুলে এদিক ওইদিক চাইলাম।না,আশে পাশে আর কেউ নাই।তখন বুঝলাম গরুটার নাম চান্দ মিয়া,আর ওর মায়ের নাম পান্না।তখনো মুরুব্বী চান্দমিয়ার ঘাড়ে হাত বুলিয়েযাচ্ছেন,আর চান্দমিয়া গভীর মমতায় মুরুব্বীর গায়ের সাথে মাথা ঠেসে ধরে উষ্ণতার ঘ্রান নিচ্ছে।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম, আমার মনে হচ্ছিল চান্দমিয়া আমাদের কথোপকথন এর সবটুকুনই বুঝে গেছে।পরে মুরুব্বীর সাথে দামদর ঠিক করে নিলাম,আমাদের ও গরু পছন্দ হয়েছে। কিন্ত সমস্যা হইলো যখন টাকা লেনদেন করব তখন, মুরুব্বী হাটের মধ্যে একা একা এত টাকা নিবে না,টাকা তার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে তারপরে গরু নিতে হবে।তার বাড়িও কমছে কম চার-পাঁচ কিলোমিটার এর কম না,তবে মুরুব্বীর বাড়ির রাস্তা আর আমাদের গন্তব্যএকই দিকে হওয়ায় আমরা রাজি হয়ে গেলাম। মুরুব্বী চান্দমিয়া কে নিয়ে রওনা হয়ে গেল।
ঘন্টাখানেক পর আমরা যখন মুরুব্বীর কুঁড়েঘরের কাছে পৌছে গেলাম,দেখি মুরুব্বী চান্দমিয়ারে ভুসি আর পানি খাইতে দিয়ে ঘাড় মাথায় হাতবুলিয়ে দিচ্ছে।কিন্ত চান্দমিয়া কিছুই খাচ্ছেনা, শুধু মুরুব্বীর দিকে তাকিয়ে আছে, আর মুরুব্বী ও চান্দমিয়ার দিকে।
তারা যেন চোখে চোখে কথা বলছে,কথা বলছে অন্তরে অন্তরে।চান্দমিয়ার চোখ গলে ঝরে পরছে সাদা পশমের উপর কালো রেখার চিহ্ন দিয়ে,আর মুরুব্বী গা-মাথা বুলিয়ে দিচ্ছে।চান্দমিয়া কিছুই বলছে না,আজকে মনে হয় চান্দমিয়া আর কিছুই বলবে না।চান্দমিয়া যে মুরুব্বীর দারিদ্র আর কষ্টের সব কথাই জানে।যখন চান্দমিয়ার রশি আমাদের হাতে তুলে দিল,তখন মুরুব্বীর চোখজোড়া ছলছল করছে।আমি যেন বুঝতে পারছিলাম তার ভিতরের পাড় ভাংগার শব্দ,বুঝতে পারছিলাম কতটা মমতায় চান্দমিয়া কে তিল তিল করে বড় করে তুলেছে।
আমরা চান্দমিয়া কে নিয়ে রওনা হচ্ছি কিন্তু চান্দমিয়া আর মুরুব্বীর দিকে তাকাচ্ছে না,মাটির দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত শরীরে হেটে চলেছে অভিমানে। আর মুরুব্বী কুঁড়েঘর এর এককোনায় দাড়িয়ে দেখছে চান্দমিয়ার চলে যাওয়া।দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে,আর মায়া-মমতার বাঁধন ছিন্ন করে হেটে চলেছে চান্দমিয়া। দীর্ঘ হচ্ছে সাদা পশমের উপর ঝরে পরা নোনা জলের চিহ্ন।।।
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭
শুভ৭১ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ গেম চেঞ্জার ভাই, ছাত্র জীবনে কখনোই আমি তেমন ভালো ছাত্র ছিলামনা,আর সেই ফলাফল সরুপ A+ নামক সম্মানের দেখা আমার কপালে জুটেনি।।।।। তবে আজ আমার জীবনের প্রথম + এর দেখা পেয়েছি।☺☺☺
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: কনগ্রাচুলেশন্স!!
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪
শুভ৭১ বলেছেন: আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই ☺☺☺
৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
আহলান বলেছেন: পুটু ....
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬
শুভ৭১ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।।।
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৭
HARUNUR-RASHID বলেছেন: মায়া লাগে।
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬
শুভ৭১ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ মতামত প্রকাশ করার জন্য।।।
৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পোষা প্রাণীরে ভালবাসা দিলে তারা এমই করে ভাই!!!
আমার পোষা বিড়ালকে রাগ করে বহুদূরে নিয়ে বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হল। ... কিন্তু ভেতরে ভতরে সবারই মন খারাপ!
গিন্নি, বাবু, নিজেরও..
প্রায় দেড়মাস পর একদিন রাতে অবাক- কিরে পরিচিত বিড়ালের ডাক!
দরজা খুলতেই সেকি দৌড়!!! এক দৌড়ে ঘরময় ছোটোছটি করল। যেন তার কতদিনের আপন ঠিকানায় ফিরেছে.. তারপর সবার মায়া মাথা ঘষতে লাগল!!!
এখনো আছে । বেড়াল এত পোষ মানে আর এত মানুষের ভাষা বোঝে কল্পনার বাইরে..
সেদিন আমার পিছে পিছে হাটতে গিয়ে লেগে পা পড়ায় ঘুরে কামড়াতে গেল- তাই দিলাম ভীষম বকা...দৌড়ানি!!
একটু পর আমি বসে আছি.. প্রায় ৪-৫ ফিট দূর থেকে ক্রলিং করার মতো প্লোরে বুক ঠেকিয়ে ধীরে ধীরে আমার দিকে আসছে। আরচোখে দেখেও কিছূ বলছি না। পায়র কাছে এসে ওভাবেই মাথাটা পায় ঘষতে লাগল!!! পরে আমি সাড়া দিতেই আবার সোজা হয়ে দাড়াল!!!
বোবা প্রাণীরাও আসলে সব বোঝে প্রকাশ করার সুযোগ পেলেই প্রকাশীত হয়।
+++
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
শুভ৭১ বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন,ওরা কথা না বলতে পারলেও এমন মায়ার জালে জরিয়ে ফেলে যে তা থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন।।।।মায়া,মায়া আর মায়া পুরো পৃথিবীটাই মায়ার জালে বন্দিনী হয়ে বেচে আছে,তবে সেটা কেউ দেখতে পায়,কেউ পায় না।।।।অনেক ধন্যবাদ ভাই মন্তব্য ব্যাক্ত করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
গেম চেঞ্জার বলেছেন: পারফেক্ট একটা ছোটগল্প। আসলে বাস্তবই। অনেক অনেক আবেগ কাজ করলো। ১ম প্লাস।
{টাইপো} বছর তিনেক আগের কথা,সেবার কুরবানির গরু কেনার জন্য হাটে গিয়েছি আমি আর আমার ছোট চাচা।গ্রামের গরুর হাট,প্রায় সব গরুগুলিই এসেছে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের ঘড় থেকে।