নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুভ হোক তোমাতে, শুভ হোক আমাতে, শুভ হোক সপ্নরা, শুভ হোক পথচলা।(~সা\'দ আহমেদ শুভ~)https://m.facebook.com/desuja.shuvo?

শুভ৭১

কাব্যিক জাহাজের অচেনা এক নাবিক আমি,অনন্তের পথ খুঁজে চলেছি গহীন সাগরে।সেই সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসে কবিতারা,আর সেই কবিতারা বেঁচে আছে বলেই আমি বেঁচে আছি,আর আমি বেঁচে আছি বলেই আমার কাব্যিক জাহাজ পথ খুঁজে চলেছে এখনো।।।।।।

শুভ৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ "ধূসর কান্নার শব্দ"

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

গেল বছরের কথা,ইমিগ্রেশন কম্পলিট করে ওয়েটিংরুমে এসে পৌছেছি মাত্র, হাতেগোনা ৮-১০ জন লোকের বেশি হবেনা।বেশ কিছুক্ষন সময় ও আছে,তাই সবাই মনে হয় একটু আস্তে ধীরেই আসছে।আসলে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় কেউই তারাতারি যাইতে চায় না,কেমন যেন অচেনা কিছু মায়ার শিকল টেনে ধরে,মায়ার জাল হাটা দেয় পিছুপিছু।

ফোন বেজে চলেছে,এই মূহুর্তে পকেট থেকে ফোন না বের করেই নির্দিধায় বলে দেয়া যায়,এটা আর কেউ নয় আমার
আম্মাজান।যা মনে করা তাই, আম্মু ফোন করেছে,
ঃ হ্যা আম্মু,
ঃইমিগ্রেশন তো শেষ হইছে তাইনা ?
ঃহুমম,
ঃতোর প্লেন ছারতে তো আরো বেশ কিছুক্ষণ?
ঃহুমম,
ঃতোকে বললাম না,আর একটু পরে যা।
ঃহুমম,
ঃক্ষুধা লাগলে কিছু খেয়ে নিস,আর তোর প্লেনে তো লাঞ্চ দিবেই,তাইনা ?
ঃহুমম,
ঃআচ্ছা,প্লেনে উঠে ফোন দিস,কেমন ?
এই বলেই আম্মু ফোন রেখে দিল,আমি জানি প্লেনে উঠার আগেই আম্মু আরো কয়েকবার ফোন দিবে,তারপরেও আচ্ছা ঠিক আছে বলেই রেখে দিলাম।পাগলী আম্মু আমার,আমার আম্মাজান,সে কোন কিছু না দেখেই বলে দিতে পারে সব,আমি কোথায়,কি করছি,সবকিছুই। যেন চোখ বন্ধ করেই আমাকে দেখতে পায়,আমার চলাফেরা,আমার পেটের ক্ষুধা, সবকিছুই।আম্মুর কথা শুনে এখন আমার একটু একটু করে ক্ষুধা লাগছে, এতক্ষণ কিছুই মনে হয়নি।যেই না আম্মু ফোনে ক্ষুধার কথা বলল অমনি পেটের ভিতর চো চো করা শুরু করে দিয়েছে, আম্মু যে কি করে পেটের ভিতরের খবর ও জানে ??আম্মুর সাথে কথা বলা শেষেই হঠাৎ এক পিচ্চি বাচ্চার কান্নার শব্দে ঘাড় ঘুড়িয়ে নিলাম, বাচ্চাটার বয়স ৭-৮ বছরের বেশি হবেনা,পরনে জিন্সের ত্রি-কোয়াটার আর টি শার্ট,টি শার্টে জিব্বা বের করা একটা মিকি-মাউছের ছবি,দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ অনেক্ষন ধরেই কাঁদছে,ফর্সা গালদুটি ফুলিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে।পাশের লোকটি মনে হয় পিচ্চির বাবা,উনার আংগুল ধরেই কেটস পায়ে পিচ্চিটা হেটে আসছে থপথপ শব্দ করে আর ফোটায় ফোটায় চোখের জল ফেলছে।

পিচ্চিটা কে নিয়ে লোকটা এসে বরাবর আমার পিছনের ওয়েটিং চেয়ারটাতে বসেছে,আর আমি পিচ্চিটার কান্নার ফোঁপানি শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরেই কান্নার শব্দ কিছুটা কম মনে হচ্ছিল, আমি ভাবলাম পিচ্চির মনে হয় মনটা ভালো হয়ে গেছে,তাই পিছনে ফিরে পিচ্চির মুখটা একটু দেখার চেস্টা করলাম।না,মন ভালো হয়নি এখনো, মুখ গম্ভীর করে গালদুটি ফুলিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে নিলাম, আজকালকের পিচ্চিগুলা খুব বেশি অভিমানী, অল্পতেই কিছু একটা নিয়ে জেদ শুরু করে দেয়,আর সাথে তো কান্না আছেই।মনে হয় বাবার সাথে কিছুএকটা নিয়ে জেদ করেছে,এখন অভিমান।আমি এইসব ভাবছিলাম, হঠাৎ পিচ্চির গলার শব্দে কান খাড়া করলাম।লোকটা ফোনে কথা বলছিল, আর পিচ্চিটা ওর বাবাকে ডাকছে,
ঃবাবা,ও বাবা।।
কি সুন্দর মায়াবী গলায় ক্ষাণিকটা অভিমানের প্রতিচ্ছবি, আমি আরো একটু মনোযোগ দিলাম পিচ্চির গলা শুনে,লোকটি ফোন রেখে পিচ্চিকে বাম হাতে জরিয়ে নিল নিজের সাথে।
ঃজী বাবা বল,
ঃআচ্ছা,আম্মু কেন এবার আমাদের সাথে যাচ্ছে না ?
ঃতোমার আম্মুতো একটু অসুস্থ বাবা,সুস্থ হলেই চলে আসবে তোমার কাছে।
ঃতুমিতো সেই এক মাস হইলো বলছ আম্মু অসুস্থ, আম্মুর সাথে এখন দেখা করা যাবেনা।
ঃহ্যা বাবা,তোমার আম্মু যে খুব অসুস্থ।
ঃআচ্ছা বাবা,আম্মু কবে সুস্থ হবে ?
ঃখুব তারাতারিই সুস্থ হয়ে যাবে বাবা।

খানিকক্ষণ পিচ্চির আর কোন কথা নেই,চুপ করে আছে।আমি ও চুপ হয়ে গেছি,এই মূহুর্তে আমি নিশ্চিত পিচ্চির চোখ জোড়া ছল ছল করছে।কানায় কানায় ভরে গেছে যে কোন সময় পাড় ভেংগে বেরিয়ে আসবে।কিন্তু না, পিচ্চি আবার কথা বলছে,ওর মিষ্টি অভিমানী গলার শব্দ আবার কানে পৌছাইতে লাগল।
ঃআচ্ছা বাবা,
ঃহুমম বাবা বল।
ঃচল আমরা,বাসায় গিয়ে আম্মুকে নিয়ে আসি, বিদেশে তো অনেক ভালো ডাঃ আছে,তাইনা বাবা ??
ঃহুমম আছে,
ঃতাইলে চল আম্মুকে নিয়ে আসি।

পিচ্চির বাবা চুপ করে আছে,কোন উত্তর করছেনা।পিচ্চিটা ওর বাবার হাত ধরে টানছে আর বলছে, চলনা বাবা,ও বাবা চল।আরো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে লোকটি পিচ্চিকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলছে,
ঃআমাদের দেশের বড় ডাঃ আছেনা,সে বলেছে তোমার আম্মু খুব তারাতারিই সুস্থ হয়ে যাবে।
ঃতাইলে,এ কয়দিন সকালবেলা আমার টিফিন আর স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে দিবে কে ?
ঃআমি আছিনা,আমি দিব বাবা।
ঃতুমিতো সকালবেলা উঠতেই পারনা।

এই বলে পিচ্চিটা আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিল।আমি আর ওর ধূসর কান্নার শব্দ আর নিজের কানের স্পর্শে নিতে পারছিনা,নিজের অজান্তেই আমারো চোখজোড়া ছল ছল করছে। ইচ্ছে থাকা সত্তেও আমি আর পিচ্চিটার দিকে ফিরে তাকাতে পারছিনা। আমার ছোট্ট ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে প্লেনে উঠার জন্য হাটছি আর পিচ্চিটার কান্নার শব্দ আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে।আমি জানি ওর আম্মু আর কখনওই ফিরে আসবেনা, কখনই না।টিফিন আর স্কুলের ব্যাগ ও কেউ ওর আম্মুর মত করে গুছিয়ে দিতে পারবেনা।আর এভাবেই পিচ্চির আব্বুকে প্রতিদিন হাজারো মিথ্যে বুলি গেয়ে যেতে হবে।পিচ্চির অভিমানী চেহারাটা আমার চোখে ভাসছে,স্তব্ধ হয়ে বসে পরেছি আমি প্লেনে।রানওয়ে দিয়ে আমার প্লেন ছেরে যাচ্ছে আর চোখজোড়া ছলছল করছে।আম্মুর মুখে বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।।।।।।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫০

মোঃ হৃদয় শেখ বলেছেন: ঘরের বাতিটা জ্বলতে জ্বলতে যেমন একদিন নিভে যায় আর জ্বলে না ঠিক তেমনি আমরাও সবাই একদিন এইভাবে না ফেরার পথে চলে যাবো। মা পৃথিবীর এমন একজন তার শূন্যতা বাবাও পুরন করতে পারেনা !

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২২

শুভ৭১ বলেছেন: আসলেই তাই পৃথিবীর কেউই কারো জায়গা পূরন করতে পারেনা।।।।আর মা তো মা'ই,তার সাথে আর কারোই তুলনা হয়না ।।।। অনেক অনেক ধন্যবাদ

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৩০

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: ভালো লিখেছেন । টাইপ সর্তক হতে হবে।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৩

শুভ৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: অসাধারণ! আমার মন ছুঁয়ে গেল। বিশেষত মায়ের ব্যাপারটা। আমার মাও এইরকম পাগলামো করে। মাকে মনে পড়ল!!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

শুভ৭১ বলেছেন: ভাইয়া,আজ আমি মায়ের কাছে থেকে অনেক দূরে।।।। তারপরেও মনে হয় সব সময় মা আমার সাথেই, ওই ছোট্ট ছোট্ট ভালবাসার সৃতি গুলই সম্বল।আর আমার জন্য আপনার মা কে মনে পরেছে,এর চাইতে আর কি পাওয়া হতে পারে।।।।।অনেক অনেক ধন্যবাদ

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:



একদম সাধারণ একটা লিখা কিন্তু একদম মন ছুয়ে গেলো ...

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

শুভ৭১ বলেছেন: মন ছোঁয়াতে পেরেছি শুনে ভালো লাগছে।।।অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া,সাথেই থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.