নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুভ হোক তোমাতে, শুভ হোক আমাতে, শুভ হোক সপ্নরা, শুভ হোক পথচলা।(~সা\'দ আহমেদ শুভ~)https://m.facebook.com/desuja.shuvo?

শুভ৭১

কাব্যিক জাহাজের অচেনা এক নাবিক আমি,অনন্তের পথ খুঁজে চলেছি গহীন সাগরে।সেই সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসে কবিতারা,আর সেই কবিতারা বেঁচে আছে বলেই আমি বেঁচে আছি,আর আমি বেঁচে আছি বলেই আমার কাব্যিক জাহাজ পথ খুঁজে চলেছে এখনো।।।।।।

শুভ৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন নাবিকের গল্পঃ "সীমানা"

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, নিকশ কালো অন্ধকার রাতের সাথে বৃষ্টির ঝিম ঝিম শব্দ। এইরকম বৃষ্টি ঝরা রাতে দোচালা টিনের ঘরে ঘুমানোর কি যে সুখকর সৃতি, যেন মায়াময় প্রকৃতির সুরেলা আহবান।তা যে কোন যন্ত্র সংগীত এর আদ্ধাতিক ক্ষমতা কে নিয়ে প্রশ্ন তোলে।হঠাৎ সাবিত্রীর ফোনে বৃষ্টির ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলাম।ওর যে কি হয়,মাঝে মাঝে কারনে অকারনে রাত বিরাত ফোন করে বসে।আজকে আবার নতুন বাহানা,একটা  বৃষ্টির কবিতা শুনাতে হবে।বৃষ্টির ঘোর থেকে বেরিয়ে পরলেও এখন ও চোখজোড়া খুলতে পারিনি। একদম-ই চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না।যেন সহস্র তরুণীর বাধ ভাংগা আহবান এ ও চোখজোড়া খুলতে নারাজ।এই মুহূর্তে বৃষ্টির কোন কবিতাই মাথয় আসছে না।শুধু শ্রীকান্তের সেই বিখ্যাত গানটি মাথায় আসছে

 "আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ  বৃষ্টি, তোমাকে দিলাম................" 

বৃষ্টির আবেশ এর সাথে যন্ত্র সংগীত এর মুর্ছনা যে এতটা নিবিড় হতে পারে তা হয়তোবা এই গানটি না শুনলে বোঝা যেত না।যাইহোক, সাবিত্রী আমার খুব কাছের একজন বন্ধুর নাম,আমার ক্লাসমেট। ওর নামটা আমার-ই দেয়া।আমার খুব পছন্দের একটা নাম।আমি সব সময় ওকে সাবিত্রী বলেই ডাকতাম,কেন জানি ওকে দেখলেই সাবিত্রী নামটা খুব করে মনে পরত।দেখতে খুব যে সুন্দরী তা বলা যায় না।সাবিত্রী শ্যামা মেয়ে কিন্তু ওর চোখজোরা ছিল নীলাভ কালো টানা টানা।ওর সাথে আমার পরিচয় কলেজ জীবন এর শুরুতেই।আমাদের কলেজ জীবন এর পুরোটা সময় জুড়েই ছিল ও আর আমার বন্ধুতাপূর্ন দুস্টুমি তুখোড় আড্ডা আর সুস্বাদু ঝালমুড়ির মাঝে।

সাবিত্রী অনেক দুঃখী ছিল,ওর জমাট বাধা কষ্টগুলোর একমাত্র সংগী আমিই ছিলাম।সব সময় চাইতাম ওর মুখে হাসি দেখতে ওর কষ্ট গুলোকে ঘুম পারিয়ে রাখতে।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেরুতাম মাঝে মাঝেই।অনেক সৃতিময় ছিল সেই দিনগুলি,বৃষ্টিতে ভেজা, ফাস্টফুড খাওয়া আর ও কত কি না করতাম।আমাদের বন্ধুত্ব দেখে কলেজের সবাই বাকা চোখে তাকাতো, হিংসা করতো,কিন্ত আমি তা কখনই গায়ে মাখতাম না।

একদিন ঘুরতে বেরিয়েছি, হঠাৎ করেই সাবিত্রী আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার ববন্ধুত্বপূর্ণ সব বিশ্বাস ভেংগে দিয়ে প্রপোজ করে বসে।আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না।ছল ছল চাহুনিতে যেন বিশ্বের সব ভালোবাসা উজার করার অপেক্ষা।

তারপর টানা দুইদিন ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি।আমার কাছে যেন দুইদিন কে দুই বছর মনে হচ্ছিল। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে আমি কি করব।একদিক এ বন্ধুতা, ভালোবাসা আর অন্য দিকে ওকে হারানোর ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন।তখন ই বুঝতে পেরেছিলাম যে ও আমার কতটা ভেতর এ প্রবেশ করেছে।আমি ওকে বুঝাতে চেয়েও পারিনি যে ওর আর আমার ধর্মের রথ ভিন্ন।আমরা চাইলেও এক সত্ত্বাতে বাধা থাকতে পারিনা। আমাদের দুজনার মাঝে রয়েছে বিশাল আকাড়ের সীমানা। কিন্ত ও কোন কিছুই বুঝতে নারাজ ছিল।সাবিত্রী আমাকে শুধু একটা কথাই বলেছিল যে,আমি তোর সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই তা যে রাস্তায় হোক বা যে  ধর্মেই হোক না কেন।আমি পুরো বিস্মিত ছিলাম ওর ভালোবাসার পরিধি দেখে।ওর ভালোবাসা কে সম্মান জানাতে মাথা নত হয়ে এসেছিল।আর একটি বার ও চিন্তা না করে ওর হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলেছিলাম ভালোবাসি। 

কলেজ জীবন এর প্রত্যেকটা দিন ছিল আমাদের কাছে আনন্দময়। ঈদ,পূজো তে অনেক মজা করতাম আমরা।সাবিত্রী আমার জন্য পূজোতে নানা রকম রান্না করে খাওয়াতো।ও অনেক ভাল রান্না করতে পারতো, অনেক টেস্টি আইটেম সব।খুব তারাতারি যেন শেষ হতে লাগল দিনগুলি। এইস এস সি তে আমরা দুইজনেই খুব ভাল রেজাল্ট করলাম। সাবিত্রী ঢাকা ভার্সিটিতে টিকে গেল,ও যে কি খুশী হয়েছিল,আবার ওর মনটা ও অনেক খারাপ করে দিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে।মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পাওয়াতে আমি আর অন্য কিছু চিন্তা করলাম না।দুচোখ এ তখন অনেক স্বপ্ন ছিল,মেরিন এ থেকে অনেক দেশ ঘুরতে পারব,অনেক সম্মান, অনেক বেশি মাইনে,আর ও কত যে স্বপ্ন।

এই প্রথম আমারা দুজন দুজনের কাছ থেকে এতটা দুরে, তারপরেও আমারা সব সময় চাইতাম কাছাকাছি থাকতে। একবার এক পহেলা বৈশাখ এ সাবিত্রী আমার জন্য একটা সুন্দর পাঞ্জাবি বানিয়েছিল নিজ হাতে।আর সেই পাঞ্জাবি নিয়ে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য সোজা চট্টগ্রাম, কোন কিছু না জানিয়ে, পাগলী ছিল একটা।কি যে সুন্দর ছিল পাঞ্জাবিটা।যেন বৈশাখ এর সব আনন্দ, সব রং আমার গায়ে এসে লুটোপুটি করছিল। 

ইন্টার্নশিপ করার জন্য আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছিল ইউরোপিয় একটি কম্পানিতে,জয়েন করতে হবে তুরস্ক তে।এই খবর পাওয়ার পর প্রথম দিকে আমি খুব উচ্ছাসিত ছিলাম।জীবন এ প্রথম বারের মত দেশের বাহিরে যাচ্ছি,কিন্ত যেদিন আমার ফ্লাইট ছিল সেইদিন খুব খারাপ লাগছিল সাবিত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে।ও অনেক কেঁদেছিল আমাকে জড়িয়ে ধরে। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি অনেক কিছুই ছেরে চলে যাচ্ছি, আমার সাবিত্রী, আমার মা,আমার বাংলাদেশ কে।তবে পৃথিবীর যে দেশেই যাইতাম আমি সাবিত্রীর সাথে,ফোন এ কিংবা ফেসবুক এ ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতাম,চ্যাটিং করতাম।ওর জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর পিক দিতে হইত ফেসবুকে।

তখন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস।শিপ নিয়ে যাচ্ছি স্পেন থেকে কানাডা, প্রায় ২০ দিনের প্যাসেজ, যাইতে হবে আটলান্টিক এর গহিন সমুদ্ররাশি অতিক্রম করে।ঠিক ২৩ শে ডিসেম্বর এ পৌছে যাই কানাডায়।বেকানকওর সিটি শহর এর রাস্তা ধরে হেটে চলেছি সাবিত্রী কে ফোন করব বলে।প্রচুর তুষারপাত হচ্ছে,তাপমাত্রা -২৫।তুষার এ আমার সমস্ত শরীর প্রায় সাদা,হিম শীতল এ যেন পা দুটো থমকে দারিয়ে যাচ্ছে বারংবার, কিন্ত আমার যে সাবিত্রীর সাথে কথা বলতে হবে।কয়েকবার ফোন করলাম ওকে কিন্ত ওর ফোন বন্ধ।মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল।ম্যাসেজ করলাম কিন্ত কোন উত্তর নেই।

পরে সাবিত্রীর এক ক্লোজ ফ্রেন্ড কে ফোন করে যা শুনলাম তাতে আমার হার্ট বিট প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগার।আমি বিশ্বাস ই করতে পারছিলাম না যে সাবিত্রী নামের মেয়েটি আর এই পৃথিবীতে নেই।আমার দুচোখ দিয়ে গরিয়ে পরতে থাকল অশ্রুধারা।সেই তুষার এর মাঝেই রাস্তারধারে বসেছিলাম সারাটা রাত্রি। যেন সমস্ত পৃথিবী মুখ গোমরা করে বসে পরেছিল আমার সামনে। 

আমাদের রিলেশনের কথা ওর বাবা-মা জেনে যাওয়ায় ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল,কিন্তু সাবিত্রী হাজার ও চেষ্টা করে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না আমি নেটওয়ার্ক এর বাইরে অথৈই সাগরে ছিলাম বলে।তাই বিয়ের দিন রাত এ সাবিত্রী ডিসিশন নিতে বাধ্য হয়েছিল আমাকে ছেরে চিরতরে চলে যাওয়ার।

মাঝে মাঝে বড্ড অপরাধী মনে হয়,ঐ দিনগুলি তে ওর পাশে থাকতে পারিনি বলে।নিজের অজান্তেই হয়তোবা আজ আমি নিজেই দোষী।খুব জানতে ইচ্ছে করে সাবিত্রীর শেষ মূহুর্তের আর্তনাদগুলো যা আজ ও আমাকে কাঁদায়।জানতে ইচ্ছে করে ওর চাওয়া গুলো,কষ্টগুলোর কথা,জানতে ইচ্ছে করে ওর সত্তা কে যা সমার্পন করতে পারেনি আমার কাছে। নাকি, অভিমান করেছিল আমার উপর ? খুব জানতে ইচ্ছে করে সাবিত্রীর শেষ দিনগুলির পার করে দেয়া সময়ের অভিপ্রায় কে।

আমি আজও খুঁজে বেড়াই আমার নিজের আমি কে।হাটতে চাই পুরনো সেই রাস্তায় যেখানে তুমি দারিয়ে আছো।আমার ইচ্ছে করে ব্যবচ্ছেদ করতে ধর্মের সীমানা নামক অভেদ্য আস্তরণ কে।নিজেকে মাঝে মাঝেই আবিস্কার করি ফুরিয়ে যাওয়া বিকেলগুলোতে,আর দারিয়ে থাকি অচেনা কালো সূর্যাস্তের সাক্ষী হব বলে।

জানো সাবীত্রি,এখন ও টুপ টুপ করে বৃষ্টি পরে রোজ রাতে,কিন্ত তুমি তো একদিন ও কবিতা শুনতে চেয়ে আমাকে আর ফোন কর না।জানো তোমার জন্য না দু'লাইন বৃষ্টির কবিতা লিখেছি। তুমি শুনবে না ?

"আজি অঝোর বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে,
পৃথিবীর সব ক্লান্তি।
তুমি আছো,তুমি নেই,
তাইতো আমার কান্না,
বৃষ্টি হয়ে ভুলে গেছে,
এ ধরার সব শান্তি ।                                
তুমি আসবেনা জানি,                          
ভিজবে না ওই বৃষ্টিতে আর।
কিন্ত মেঘের কান্না যে
ভুলে থাকা বড় ভার।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভালবাসা দাতে মতো!

হারালে পরেই মর্ম বোঝা যায় ! ;)

গল্পে ভাললাগা!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

শুভ৭১ বলেছেন: আসলেই তাই,যখন আর ফিরে পাওয়া যায়না তখন আকাং্খা আরো বাড়ে।।।।।ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভাই

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ভাল লাগলো। ভালবাসা! আসলেই এইটা যে কী জানিই না।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০১

শুভ৭১ বলেছেন: দিল্লিকালাড্ডু !!!! খাইলেও পস্তাইবেন, না খাইলেও পস্তাইবেন।।।।।। অনেক ধন্যবাদ,আপনার মুখে লাড্ডুর সাধ লাগুক। ☺☺☺

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.