![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুচি সৈয়দ
ঢাকা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘূক্ষার বাসযাত্রা। রাতের কোচে রওনা দিয়ে অনেক দিনই আমার ওই সময়ের মধ্যে রাজশাহী থেকে ঢাকা এসে পৌঁছার সৌভাগ্য হয়েছে। এই সাড়ে ৪ ঘূক্ষার পথ পেরুতে এবারের ঈদের দু’দিন আগে আমার ১৮ ঘূক্ষা সময় লেগেছে। এর আগেও এরকম এক ঈদের অভিজ্ঞতা আমার আছে। তার আগের অভিজ্ঞতা ফেরিতে যানজটেরÑ একবার নগরবাড়ি-আরিচা ফেরির ধকল থেকে রেহাই পেতে আমি রাজশাহী থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ হয়ে ঢাকায় ফিরতে গিয়ে আরিচা ঘাট থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলাম। গত ঈদে আমার সহকর্মী তরিক খুলনা গিয়েছিল ওর সাইকেলে করে। আমি ওকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলামÑ না জানি পথে কোন দুর্ঘটনার শিকার হয় ও। ভাগ্য তা হয়নিÑ আমার আশংকাকে অমূলক প্রমাণ করে সে সহিসালামতে খুলনা পৌঁছেছিল। গত শনিবারের পত্রিকায় দেখলাম শ্রমজীবী দুই ভাই সাইকেল চালিয়ে রংপুরে বাড়ি ফিরেছে। পয়সাও বেঁচেছে ভোগান্তিও কমেছে। তরিক অবশ্য খুলনা যাওয়ার সময় ফেসবুকে পথের ছবি আপলোড করতে করতে গেছেÑ ওকে বরণের জন্য ওর বন্ধুরা অপেক্ষায় ছিল। এই ডিজিটাল যুগে আমরা প্রিমিটিভ পদযাত্রার পথিক হয়ে পড়ছিও বটে।
ঈদের আগের দিন পাবনা থেকে ফোন করলেন কণিকা আপা। গণশিল্পী সংস্থা পাবনার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ঈদের পরদিন, তাতে থাকতে হবে। রাজি হয়ে গেলাম। গণশিল্পীর পাঠাগারের জন্য কিছু বই গুছিয়ে রেখেছিলাম যেগুলো নিয়ে ঈদের পরদিন পাবনা গেলাম। দেখতে দেখতে আটাশ বছরে পা দিয়েছে আমাদের হাতে গড়া সংগঠনটি। অনুষ্ঠান যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করে ওইদিনই আমার রাজশাহী ফেরার কথাÑ সেই অনুযায়ী কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছি। কিন্তু অনুষ্ঠানটির প্রাণস্পর্শে আমার সিদ্ধান্ত বদলে থেকে গেলাম। বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা তারুণ্যে আমরা গড়েছিলাম যে সংগঠন তারই বয়স তারুণ্য অতিক্রম করছেÑ মনে পড়ল অনেক মানুষের কথা, জীবনের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের নানা স্মৃতি-বিস্মৃতি, নানা প্রসঙ্গ। এটা হয়তো ব্যক্তিগত নস্টালজিয়া। জীবনের প্রতিদিনের পরাজয়ের বিকল্প সান্ত্বনার মতো একটি দিন কাটল আমার।
এই ঈদের ছুটির ভেতরেই পরলোকে পাড়ি জমালেন উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য গণমানুষের শিল্পী ভূপেন হাজারিকা। সেই অবিসংবাদিত শিল্পীর স্মরণে খুব বেশি আলাপ-আলোচনা আমার চোখে পড়ছে না। কোন আয়োজনও দেখছি না তাকে উপলক্ষ করেÑ কেন? খুব সম্ভবত এই শিল্পী শেষ জীবনে এসে কংগ্রেস-বিজেপির মতো রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছিলেন। এমন ঘটনাকে আমরা স্খলন-পতন বলে জানি। সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু যে শিল্পী সত্যিকার যাযাবরের মতোই উপমহাদেশ ঢুঁড়ে নামহীন গোত্রহীন তুচ্ছ মানুষকে জীবন খুঁজে পাওয়ার পথ বাতলে দিলেন তার কি কিছুই প্রাপ্য নেই সেই জীবনানুসন্ধিৎসু মানব প্রজাতির কাছ থেকে? ‘সময় ধারাপাতে দেখ নেই বিয়োগের ঘর ...’ এ কথা যিনি গেয়েছিলেন তাকে কি আমরা সম্পূর্ণই বিয়োগের ঘরে ফেলে ইরেজ করে দেব? আমাদের জীবন থেকে? আমাদের সংস্কৃতি থেকে? বিপ্লবের যে স্বপ্নে তারুণ্য উৎসর্গ করে মৃত্যুপূর্ব জীবনে যে শিল্পী প্রতিক্রিয়াশীলদের দলে নাম লেখান তার জন্য দায়ী কে একথা কি আমরা কখনও ভেবেছি? না ভাবিনি কিন্তু ভাবা প্রয়োজন ছিল, ভাবা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এই কথাগুলো আমি গণশিল্পীর অনুষ্ঠানে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলিনি- কাকে বলব? যাদেরকে বলব তারাতো আমাদের তারুণ্যের বিপ্লবের স্বপ্নের হদিস জানেনা। জানার কথাও নয়। তারা এ প্রজšে§র তরুণ, তাদের চোখে এই প্রজšে§র স্বপ্ন।
বাংলাদেশে আমরা সূচনা করেছিলাম গণতন্ত্রের সংগ্রাম। গত শতকের আশির দশকে সূচিত সেই সংগ্রামের পরিণতি ঘটে নব্বইয়ের নাগরিক গণঅভ্যুত্থানে। আমাদের গণশিল্পী ছিল সেই লড়াইয়ের সারথি। আমরা নতুন সমাজ, নতুন সংস্কৃতির স্বপ্ন দেখেছি- যে সমাজ হবে সাম্য, মৈত্রী ও শান্তির। গণশিল্পীর নাটকে, গণশিল্পীর গানে, গণশিল্পীর সমস্ত কর্মকাণ্ড, তৎপরতায় সেটাই ব্যক্ত হয়েছে। আমরা সে স্বপ্ন গণমানুষের মনে সঞ্চারিত করে দেবার চেষ্টা করেছি। আমাদের সেই সাম্য, মৈত্রী ও শান্তির স্বপ্ন যে সঠিক ছিল এই একুশ শতকেও তার স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে ‘ওয়াল স্ট্রিট অকুপাই’ আন্দোলন, ‘উই আর নাইন্টি নাইন’-এর গণঅভ্যুত্থান।
গত শতকে পারমাণবিক অস্ত্রের ধুন্ধুমার ডামাডোল যখন জমজমাট, দুই পরাশক্তি- আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ- তখনও বিশ্বব্যাপি সাম্য, মৈত্রী ও শান্তির সংগ্রাম সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী মানুষের দ্বারাই চালিত হয়েছে। আজও সে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি বরং আজ তা আরও বেশি করে প্রয়োজন বলে উপলব্ধ হচ্ছে। আজ পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে পারমাণবিক বোমা মুক্ত করে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে।
খ.
প্রয়াত ভুপেন হাজারিকা স্খলিত পতিত হয়েছিলেন বিজেপি-তে যোগ দিয়ে আর জীবিত কবীর সুমন- যিনি এ প্রজšে§র গণমানুষের গায়ক- তিনি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তৃণমূলকে তার মত আরও অনেকে সমর্থন দিয়েছেনÑ কী অর্থ এই স্খলন ও পতনের? কেন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ প্রগতির পথ থেকে ছিটকে চলে যাচ্ছেন প্রতিক্রিয়ার ক্রোড়ে? ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জাগতিক লোভে? ভুল আদর্শ সংশোধনে? কেন ব্যর্থতার তিলক পড়ছে প্রগতির ললাটে? আর অট্টহাস্যে প্রতিক্রিয়া মুড়ে খাচ্ছে যাবতীয় সুন্দরের পূজারি শুভবোধের পক্ষের মানুষদের।
‘আমার কথাটি ফুরালো / নটে গাছটি মুড়ালো’- এমন একটা ছন্দোবদ্ধ পদ বলে কতো রাত্রি যে দাদী আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন তার ইয়াত্তা নেই। সব রাজা-রাণী, রাক্ষস-খোক্ষসদের গল্প শেষে। দাদীর বলা সে সব গল্পে শেষ পর্যন্ত দুষ্ট আত্মারা পরাজিত হতো, জয় হতো ভালো মানুষদের। কিন্তু এ যুগে লিখতে বসে আমার মত এক কথকের মনে ‘নটে গাছটি মুড়ানো’-র চরণটি এলে যেন সুন্দর আর সত্যের পরাজয়ের শরণে! তবে কি শেষ হয়ে গেছে শুভ্র সুন্দর কল্যাণী আনন্দের পথের অভিযাত্রীদের অভিযাত্রা! না, নিশ্চয়ই নয়। বরং তার প্রয়োজনীয়তা ও ব্যাপকতা আরও বিস্তৃত হয়েছে। তাহলে স্বপ্নবান মানুষগুলোকে ‘নটে গাছটির’ মত মুড়ে খাচ্ছে কিভাবে বিজেপি, তৃণমূল?
বয়ান করি আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাÑ সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলাম আমি নিজে! ‘তুমুল’ ‘মতাদর্শগত’ ‘বিতর্ক’ শেষেÑ আশির দশকের মধ্যভাগে একদিন আমার প্রাণপ্রিয় পার্টি দুভাগ হয়ে গেল। তার এক দিকে ১২ জন অপর ভাগে ৪ জন। সেদিন বেশ জ্বর নিয়ে পার্টি অফিসে বসে পত্রিকায় প্রকাশিত পার্টি বিভক্তির সংবাদগুলো পড়তে পড়তে ঝাঁপসা হয়ে আসে আমার চোখ। এক সময় অফিসে আসেন ১২ জন কর্তৃক বহিস্কৃত ৪ জনের অন্যতম দুই নেতা। একজন কৈফিয়ৎ দেন, কিছু জিজ্ঞেস না করতেইÑ ‘... দেখেছ কমরেড, ওরা আমাদের বের করে দিয়েছে!’... বিধ্বস্ত শরীরে পার্টি অফিস থেকে আসার সময় ‘বিপ্লবী’দের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলে একজন প্রশ্ন করেন, ‘কমরেড কোন পক্ষে?’ আমার নিষ্প্রাণ কণ্ঠ থেকে যে জবাব নিঃসৃত হয় তা হচ্ছেÑ ‘আর রাজনীতি করব না, রাজনীতি করবেন তো আপনারা... খানের পোলারা।’ চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার প্রিয় নেতা বলেন, ‘...কমরেড বিপ্লবী ধারার দিকে’Ñ বলেই তিনি দ্রুত কোনও কাজে বেরিয়ে যান। ‘বিপ্লব’ কোনও ব্যক্তি কি-না সে প্রশ্ন সে দিন তাকে করতে পারিনি। তার প্রত্যাশার জবাবও দিতে ইচ্ছে করেনি আর। অতঃপর ‘বিপ্লবীধারা’র ‘বিপলবীরা’ আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগলেন এই দুঃসময়ে দলের হাল ধরতে হবে। যে বিপলবীরা মাত্র কিছুদিন আগে আমাকে আমার জেলা শহরে চলে যাবার জন্য পার্টির সার্কুলারের ভাষায় এই নসিহত দিয়েছে যে, ‘জেলায় চলে যান, সেখানে লেগে-পড়ে-থেকে পার্টি গড়ে তুলে বিপলব করতে হবে’Ñ সেই তারাই এবার হাল ধরাতে পেরেশান হয়ে উঠলেন। অনেক তেল-ঘি-তেও যখন রাধা নাচল না তখন একজন ক্ষুব্ধ হয়ে মধুর ক্যান্টিনে চা খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন, ‘তুমি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হতে পার না, হয় ওদের সঙ্গে যাও নয় আমাদের সঙ্গে এসো!’ পাঠক, এই উক্তিতে জুনিয়র বুশের প্রেতচ্ছায়া দেখতে পারেনÑ এ ছিল বহিস্কৃত ৪ বিপলবীর মূল্যায়ন আমার সম্পর্কে। আর অন্য ভাগের ১২ বিপলবীর মূল্যায়নটি ছিল আরও মজাদার। ছাত্র সংগঠনের কাউন্সিল শেষে ব্যানার গুটিয়ে টিএসসি থেকে পদব্রজে পার্টি অফিসে ফেরার সময় রোকেয়া হলের সামনের স্পিডব্রেকার পেরুবার কালে আমার কানে কানে ফিসফিস করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এক কমরেড বলেন, ‘তুমি একটা বোকা! থাকতে আমাদের সঙ্গে; একটা পদ দিয়ে দিতাম।’Ñ পাঠক এসব আমার জীবনে ঘটেছিলÑ আজ লিখতে গিয়ে নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর গল্প বলে মনে হচ্ছেÑ এই গল্প দুটি আমার মুখে আমার শুভানুধ্যায়ী অনেকেই শুনেছেনÑ আজ তবু লিখতে লিখতে একে এক পরাবাস্তব দুঃস্বপ্ন বলে বোধ হচ্ছে! সত্য যে কখনো কখনো গল্পকে ছাড়িয়ে যায়Ñ আর সেই গল্পকে ছাড়িয়ে যাওয়া সত্য যে আমাদের মত তুচ্ছ মানুষেরও জীবনের অনিবার্য উপাদান সেটা লিখতে লিখতে বোধ হচ্ছে।
হ্যাঁ, এভাবেই ‘ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা’ এবং ‘বোকা’ অভিধা অর্জন করে আমি রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলাম। ছাগলের ‘চালাক’ এক নম্বর, দু নম্বর বাচ্চারা তাদের সক্রিয়তা দিয়ে কি কি অর্জন করেছে? ফিসফিস করে আমার কানে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত যে চালাক কমরেড আমাকে জানিয়েছিলেন আমার প্রকৃত পরিচয়, যার দণ্ড মওকুফের জন্য কত সভা কত মিছিল করেছি সেই চতুর কমরেড এখন কোথায় আমি অনেক খোঁজ করেও তার হদিস পাইনি। আর ছাগলের খাস বাচ্চার সঙ্গে একদিন পলটনে মে দিবসের মিছিলে হঠাৎ দেখাÑ বললাম, ‘ছাগলের ১ নম্বর বাচ্চার খবর কি?’ বললেন, ‘আমাকে তো পার্টি থেকে বের করে দিয়েছে।’ বললাম, ‘কেন?’ জানালেন, তার চাইতেও বিশ্বস্ত খাদেমকে পদায়িত করে সংগঠনকে পকেটে ঢোকাবার সুবিধার্থে বিপলবীরা তাকে বলীর পাঁঠা করেছেন। মনে রাখা হয়নি দুঃসময়ে রাখা তার অবদান। কপালে লাল কাপড়ের পট্টি বেঁধে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশের কর্মসূচি শেষে ফিরছিলেন তিনি। গার্মেন্টসের শ্রমজীবী মেয়েগুলো তার কর্মের মূল্যায়ন করলেও পার্টি তাকেও বিপ্লবের বিরোধী উপাদানের উপাধি দিয়ে দিয়েছে।
গ.
আমার অভিজ্ঞতার কথাগুলো আমি লিখছি পাঠক- জীবন ঘষে আগুন জ্বালিয়ে অন্ধকারে যতটুকু পথ দেখা যায় ততটুকু পথের সন্ধানে। আমরা সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছিÑ নাগরিক গণঅভ্যুত্থানে পতন হয়েছে তার। আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়েছিÑ বিষদাঁত ভেঙেছে তার। বিদেশী শাসক শোষকের সঙ্গে লড়েই তো অর্জন করতে হয়েছে স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা বোধ হয় আসল জায়গাটিতে লড়তে পারিনিÑ ফলে সাম্য, মৈত্রী ও শান্তির সংগ্রামে এই দেশে, উপমহাদেশে বারবার নিজেরাই হেরেছিÑ আমাদের ভূপেন হাজারিকা, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কবীর সুমন, শঙ্খ ঘোষ স্খলিত-পতিত হয়েছেন যাদের কারণে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করিনি, করতে পারিনি।
‘জীবন দখল কর এবং বিলিয়ে দাও’Ñ এই স্লোগান এক বিপলবীর ছবির পোস্টারে ছাপা দেখেছিÑ সেই বিপলবী কেবল জায়গা লীজ নিয়েছেন, অর্পিত সম্পত্তি দখল করেছেন আর পলটের হিস্যা বুঝে নিয়েছেন বিভিন্ন সরকারের আমলে। কাউকে কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন বলে কখনো শুনিনি। আর আমরা যারা গরীব মেহনতী মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে এসেছিলাম বিপ্লবের স্বপ্নাঞ্জন চোখে মেখে তাদের সেই মহত্তম স্বপ্ন এই সব চোরাবালিদের গ্রাসে হারিয়ে গেছে। মূলত বুশতত্ত্বচর্চায় পারদর্শী, পারঙ্গম এদের পাপেই আমরা ভুপেন হাজারিকা, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কবীর সুমন, শঙ্খ ঘোষদের স্খলিত পতিত হতে দেখেছিÑ এরা এই শতাব্দির সেরা ম্যাজেশিয়ান আমাদের দেশে, উপমহাদেশে। কি করেছে এরা তা ছোট্ট একটা উদ্ধৃতির ভেতর তুলে দিচ্ছিÑ
[২। ১৯৩০-৩২ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংগ্রাম ও কমিউনিস্ট পার্টি
সেদিন সমগ্র দেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-দরিদ্র জনগণ কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালনাহীন হইয়াও দেশজোড়া বৈপ্লবিক সংগ্রামের আগুন জ্বালাইয়াছিল। সেই সন্ধিক্ষণে একদিকে ভীত সন্ত্রস্ত বৃহৎ বুর্জোয়াদের জাতীয় নেতৃত্ব সেই বৈপ্লবিক সংগ্রামের আঘাত হইতে আÍরক্ষার জন্য বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদের সহিত আপসরফা করিতেছিল, আর অন্যদিকে ‘স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের’ ধ্বনি লইয়া গঠিত কমিউনিস্ট পার্টি সংগ্রামী শ্রমিক-কৃষকের পাশে না দাঁড়াইয়া দূরে বসিয়া নীরব দর্শকের ভূমিকার অভিনয় করিতেছিল।
{ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের রূপরেখা (১৯২৮-১৯৬৮) পৃ.১৮-১৯}]
হ্যাঁ, ‘পার্টি সংগ্রামী শ্রমিক-কৃষকের পাশে না দাঁড়াইয়া দূরে বসিয়া নীরব দর্শকের ভূমিকার অভিনয় করিতেছিল।’ সেই নীরব দর্শকের ভূমিকার অভিনয় আজও অব্যাহত আছে। আমাদের নক্ষত্রেরা স্খলিত-পতিত কলঙ্ক তিলক পরে চলে গেলেও কাদের আমরা নেতৃত্বে বসিয়ে রেখেছি সে হদিস নেবার সময় এসেছে। এই ‘চালাক’দের চিহ্নিত করা প্রয়োজন নক্ষত্রদের কপালের কলঙ্ক অপনোদনের জন্য। গণশিল্পীর আগামী কোনও পুনর্মিলনীতে সে কথা আমি বলব নতুন প্রজšে§র কাছে।
©somewhere in net ltd.