নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঠোটকাটা মানুষের কথা । এখন সুটেড বুটেড হয়ে থাকতে হয় । আবার মাঝে মাঝে পুরাই লাফাংগা সাজতে হয় । বাড়ী এলাম । ইচ্ছা আছে অনেকের সাথে দেখা করার ।

[email protected]

ঠোটকাটা মানুষ

[email protected]

ঠোটকাটা মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোনের খোঁজে ৪৩ বছর!

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪২













বোনকে তিনি হারিয়েছেন ৪৩ বছর হয়ে গেলো। এর মাঝে মেঘে মেঘে অনেক বেলা পার হয়েছে। বয়সের কোঠায় তিনি এখন ৭৫ বছরে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবুও হাল ছাড়েননি ঢাকার ফয়জুন্নিসা খানম। মৃত্যুর আগে প্রিয় ছোট বোনটিকে অনন্তত একবার হলেও দেখতে চান দু'চোখ ভরে। আদর করে কাছে ডাকতে চান। আর তাই সেই স্বপ্ন কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছে নিয়েই ছুটে যান কলকাতায়।



গত ৪৩ বছর ধরে তিনি বোনের খোঁজে কলকাতায় যাচ্ছেন। এখানে ওখানে খুঁজছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। তবে এখনো দেখা পাননি হারিয়ে যাওয়া বোন মনোয়ারা চৌধুরীর। তবে আশা ছাড়েননি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও আশা জিইয়ে রেখে গত মাসেও (এপ্রিল) ঘুরে আসেন কলকাতা। তবে এবারও ফিরে এলেন শূন্য হাতে। তবে যদি বেঁচে থাকেন তাহলে আবার বোনকে খোঁজতে কলকাতা যাবেন! এমনই ইচ্ছে নিয়ে ফিরেছেন দেশে।



ফয়জুন্নিসা খানমের এমন উদ্যম দেখে অবাক হয়েছে কলকাতা পুলিশ। অবাক হয়েছেন সেখানকার গণমাধ্যমকর্মীরাও। মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিববঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দ বাজারে এই খবরটি তুলে ধরে একটি বিশেষ রির্পোট করে। তাদের খবরের শিরোনাম ছিলো ‘বোনের খোঁজে আজও এ শহরে আসেন বাংলাদেশি বৃদ্ধা’।



সেই প্রতিবেদনে উঠে ফয়জুন্নিসার গল্পকে হার মানানো আরেক গল্প। খবরের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়, ‘এত বছরেও হাল ছাড়েননি। হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনের খোঁজে আবার কলকাতা ঘুরে গেলেন ঢাকার বাসিন্দা পঁচাত্তর পার করা ফয়জুন্নিসা খানম, গত ৪৩ বছরে এই নিয়ে ৪৩ বার! কোনও বিরতি না দিয়ে। আর প্রতিবারের মতো এ বারও প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আশা জিইয়ে রেখে ফিরতি বিমান ধরলেন।’



আনন্দ বাজারের প্রতিবেদনে উঠে আসে, পারা-না পারার সব হিসেব ওলটপালট করে দেয়া বাংলাদেশের ফয়জুন্নিসার কথা। তিনি সম্পর্কে প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলির বেয়াইন হন।



কলকাতার লালবাজারের মিসিং পার্সন্স স্কোয়াডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,‘হারানো স্বজনদের খুঁজতে ৬-৭ বছর পর্যন্ত মানুষ এসে খোঁজ নিচ্ছেন, তদ্বির করছেন এমন অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। কিন্তু প্রায় চার যুগ ধরে যে এই উদ্যম জিইয়ে রাখা যায়, সেটা অভাবনীয়!’



বৃদ্ধা ফয়জুন্নিসা গত এপ্রিলেও কলকাতায় এসেছিলেন। খবরের কাগজে ‘নিখোঁজ’ কলামে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক পরে রাজশাহী অঞ্চল থেকে নিখোঁজ শ্রীহট্টের মনোয়ারা চৌধুরীর খোঁজ কেউ দিলে বাধিত হইব।’



এই বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। ৪৩ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে বিজ্ঞাপন!



ফয়জুন্নিসা এখন কানে ভাল শোনেন না, দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে, স্মৃতিও ঝাঁপসা হয়ে আসছে। কিন্তু মনে রয়েছে অটুট আত্মবিশ্বাস। তিনি বিশ্বাস করেন, কলকাতাই ফিরিয়ে দেবে তার ছোট বোনকে। মনোয়ারা তার থেকে প্রায় ১০ বছরের ছোট।



বহু বছর আগে তোলা মনোয়ারা চৌধুরীর একটা সাদা-কালো মলিন হয়ে যাওয়া ছবি নিয়ে এবারও তিনি গিয়েছেন কলকাতার একাধিক থানায়। তার এই সন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তরা ঠিক কী বলবেন বুঝে পাননি।



ছবিতে মনোয়ারার বয়স ১৯-২০ হবে হয়তো। রোগাপাতলা চেহারা, মাঝখানে সিঁথি কেটে চুল আচড়ানো, বাঁ হাতে ঘড়ি। এই ছবি দেখে এখনকার মনোয়ারাকে খুঁজে পাওয়া যাবে কী করে?



আনন্দ বাজারের প্রতিবেদক পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ফয়জুন্নিসা জানিয়েছেন তার কথা। সেই প্রতিবেদকের দেয়া বর্ননায় উঠে আসে, ‘বৃদ্ধা ছলছলে চোখে অসহায়ের মতো বলেন, “আমার কাছে ওর আর কোনো ছবি তো নেই। এটা বিয়ের আগে আমাদের গোপালগঞ্জের স্টুডিওতে তোলা। এর দেড় বছরের মধ্যে ওর বিয়ে হয়ে গেল, আর তার দু’বছরের মধ্যেই ও হারিয়ে গেল! সবাই বলে, ও আর ফিরবে না। বলল, হয়তো ও মারা গিয়েছে। আমার মন তো মানতে চায় না। আমি মরে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই ওঁর সঙ্গে দেখা হবে।”



বলে চলেন, “সেই ’৭২ সালে গোপালগঞ্জে আমাদের পাড়ার একজন কলকাতায় এসেছিলেন। ফিরে গিয়ে জানালেন, বাসের জানলা দিয়ে কলকাতার রাস্তায় নাকি মনারার (মনোয়ারা) মতো এক জনকে দেখেছেন। এর পর কি আমি চুপ করে থাকতে পারি? ওকে কোলে করে গোটা পাড়ায় ঘুরে বেড়িয়েছি, স্নান করিয়েছি। শান্ত ছিল, খিলখিলিয়ে হাসত। চোখ বন্ধ করলে সব মনে পড়ে যায় যে। ওর গলাটা কানে বাজে”।’



১৯৭১-এর টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সদ্য স্বাধীনতার পর নাটকীয়ভাবে নিখোঁজ হন বছর তেইশের মনোয়ারা। ফয়জুন্নিসা বক্তব্য অনুযায়ী, ‘উর্দুভাষী মুসলিম মজহর উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয় মনোয়ারার। খুব সুখে ছিলেন দু’জন রাজশাহীতে। মজহর ছিলেন পুলিশ বাহিনীতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ভারতীয় সেনার হাতে বন্দি হয়ে বহরমপুর জেলে যান। ধরা পড়বেন বুঝতে পেরেই মজহর স্ত্রীকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন সহকর্মী টিটু মিয়াঁর উপরে। কিন্তু বাড়ির লোকের বক্তব্য, টিটু দায়িত্ব পালন করেননি। মনারার সঙ্গে তাদের আর কোনো দিন যোগাযোগ হয়নি।



এর বেশ কিছুদিন পরে পাকিস্তান থেকে মজহরের একটি চিঠি এসেছিল। সেটাই তার পাঠানো শেষ চিঠি। তাতে তিনি লেখেন, বহরমপুরের জেলে মনোয়ারা নাকি তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, কিন্তু তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আর স্ত্রীর খোঁজ পাননি। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা যাচাই করতে পারেনি ভিনদেশে থাকা মনোয়ারার পরিবার।



ফয়জুন্নিসা ওরফে সোনারার জামাই অর্থাৎ সৈয়দ মুজতবা আলির বড় ছেলে সৈয়দ মুশারফ আলির কথায়, “১৯৭৭ সালে আমার বিয়ে হয় তার মেয়ে জাবেদার সঙ্গে। তার পর থেকেই আমি দেখছি আমার শাশুড়ি তার বোনকে খুঁজে চলেছেন। তার আরো তিন ভাই বেঁচে আছেন। তারা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ফয়জুন্নিসাকে দমানো যায়নি।”



তিনি বলেন, “অনেকবার আমার সঙ্গেই উনি কলকাতায় গিয়েছেন। চেনা-পরিচিত কেউ কলকাতায় যাচ্ছেন শুনলেই তাকে বোনের সম্পর্কে জানান। ছবি দিয়ে দেন। কোনো তথ্য পেলে জানাতে বলেন। আমরা জানি এত বছর পরে এসব অর্থহীন। কিন্তু এত আকুল হয়ে থাকেন যে, আমরা কেউ বাধা দিতে চাননি।”



মৃত্যুর আগে ফয়জুন্নিসার শেষ চাওয়া হলো বোনকে ফিরে পাওয়া। তিনি বিশ্বাস করেন, বোন একদিন ফিরে আসবেন। তখন তারা দু’জনে মিলে যাবেন গোপালগঞ্জে পৈত্রিক ভিটায় যাবেন। সেখানে দুজোন দিলে পা ছড়িয়ে বসে গল্প করবেন। হাসি-ঠাট্টা করবেন। ৪৩ বছর ধরে সেই অপেক্ষায় আছেন।





Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.