![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগে আমার প্রথম পোস্ট একটি স্টরি দিয়েই শুরু করি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
গল্পঃ সামান্য একটু ভুলের জন্য
.
মেয়েদের টিচ করার অভ্যাস অনেক আগে থেকেই। রাস্তায় কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই মাথা পুরাই নষ্ট হয়ে যাইতো। তাদের ইমপ্রেসড করার জন্য নানা রকম কৌশল প্রয়োগ করতাম। মোস্ট অফ দ্যা টাইম সেগুলো বিফলে যেত। আউটপুট হিসেবে কিছু আধুনিক টাইপের শিক্ষিতা বকা শুনতাম, রাবিশ, ইডিয়েট এই টাইপের। না বুঝে বকা গুলো হাসি মুখে গ্রহন করতাম। এভাবে চলছিলো আমার দিন কাল। হঠাৎ করে মা বাবা আমাকে শহরে পাঠিয়ে দিলেন পড়াশুনা করার জন্য। শহরে এসে একটি হোস্টেলে উঠি। আমার আবার একটা অভ্যাস ভালো ছিলো, যে কারো সাথে ইভেন যে কোন পরিবেশে নিজেকে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারতাম। নিজেকে খুব ভদ্র ভাবে উপস্থাপন করেছিলাম হোস্টেলের মেমবারদের কাছে। তো বড় ভাইরা আমাকে খুব ভালোবাসতো। এক মাসের মধ্যেই সবার মন জয় করে ফেলি, দিন যতই যাচ্ছিলো আমার চাঞ্চল্যও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে বড় ভাইদের সম্পর্ক ফ্রেন্ডলি পর্যায়ে চলে আসে। তাদের কথাও আগের মত শুনি না, তাদের সাথে নিজেকে সমপর্যায় মনে করতাম। এজন্য বড় ভাইদের সমালোচনার বিষয়ে পরিনত হই শেষ পর্যন্ত। তো এভাবে চলছিলো আমার হোস্টেল লাইফ।
.
একদিনকার ঘটনা, মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হোস্টেল থেকে বের হই, বলে রাখা ভালো আমি খারাপ ছিলাম প্রচন্ড বাট নামাজও পড়তাম মাঝে মাঝে। আমার রুম মেট ছিলো একজন আল্লাহওয়ালা লোক, সেই সুবাদে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও নামাজ পড়তে হতো। যাই হোক, মাঝ পথে মধ্যবয়সী একজন মেয়ের দেখা মিললো। মেয়েটা এমন ভাবে হাঁটছিলো যেনো কিয়ামত হয়ে গেলেও আশে পাশে তাকাবে না। মেয়ের ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝে ফেললাম লোকাল হবে। রাস্তায় আর কেউ ছিলো না, তাই মনের মধ্যো সাহস জাগ্রত হলো,,,,সেই সাথে মাথার মধ্যো ইবলিশ নাড়া দিয়ে উঠলো। সাথে সাথে টুপিটা খুলে পকেটে ইনপুট করলাম। মেয়েটা আমার সাথে সমান্তরালে হাঁটছিলো। তো মেয়েটার দৃষ্টি বিচ্যুতি করার জন্য একটা শিস দিলাম আস্তে করে, শিসটা দিয়ে নিজেকে শেষ বারের মত একজন সফল ব্যক্তি মনে হলো। মেয়েটা খানিকটা সময়ের জন্য আমার দিকে তাকালো, মেয়েটা অনেক সুন্দরী ছিলো বাট তাকানোর সময় পেতনি টাইপের একটা ইমো প্রকাশ করলো। ইনস্ট্যান্টলি আমি এর রিপ্লাই দিতে গিয়ে মেয়েটাকে একটা চোখ টিপ মেরে দেই। জানতাম না এই একটা চোখ টিপ আমার জীবনের ইতি টেনে দিবে। যাই হোক মেয়েটা হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে কোথায় যেনো মিলিয়ে গেলো।
.
ঘটনা ওখানেই ফিনিসড ভেবে হোস্টেলে ফিরে আসি। হোস্টেল লাইফে কেবল তিন মাস চলছিলো আমার। এরই মধ্যো কলেজে কয়েকজন ভালো বন্ধুও হয়ে যায়, যাদের সাথে সারাদিন টাইম পাস করতাম। তো একদিন সকালে কলেজে যাওয়ার পথে কে যেন পিছন থেকে আমার টি-শার্টের কলার টেনে ধরে, সচরাচর এই সব কাজ বন্ধুরাই করে থাকে। তো বন্ধু ভেবেই পিছনে কে তার পরোয়া করি নি, নিজ শক্তি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। দুই পা ফেলার পর সামনে আরেকজন অপরিচিত ছেলে আমার পথ আটকায়। ঘটনা স্বাভাবিক নয় ভেবে পিছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখি পিছনের কলার টেনে ধরা ছেলেটিও অপরিচিত, বন্ধুতো দূরের কথা সেদিনই মনে হয় প্রথম দেখেছি তাকে। ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে আসে, কথা বলতে পারতেছিলাম না। আমি বুঝতেছিলাম না সামনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। তবে এটুকু অনুমান করতে পারলাম যে আমার সাথে যা হতে যাচ্ছে তা ফেস করা কতটা ভয়ংকর। এটা বাংলা মুভির কাহিনী না, হলে অবশ্য ভালো হতো একাই সব গুলারে পিটিয়ে পাটিসাপটা পিঠা বানিয়ে চলে আসতাম। কিন্তু হলো পুরো বিপরীত কিছু বুঝে উঠার আগেই মনে হলো আমার উপর দিয়ে এক প্রলয়ং সৃষ্টিকারী ঘূর্নিঝড় বয়ে গেলো। এরপর আমার কিছু মনে নেই।
.
হোস্টেলের বড় ভাইদের কাছ থেকে যেটুকু শুনলাম, আমি নাকি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে মুখ থুবরে পড়ে ছিলাম। কে বা কারা আমার এই নাজেহাল অবস্থা করেছে জানতে চাইলে আমি সবাইকে শুধু একটা কথায় বলি আমি ওদের কাউকেই চিনি না, কাউকেই না।
.
এরই মধ্যো গ্রাম থেকে আমার মা বাবা চলে আসলেন, সাথে কিছু আত্মীয়ও এসছিলো। আমার কন্ডিশন খুব একটা ভালো ছিলো না, সারা শরীরে প্রচন্ড চোট পেয়েছিলাম। ১৫ দিন টানা শুয়েছিলাম, এরপর ডাক্তার আমাকে হুইল চেয়ার ব্যবহারের অনুমতি দেয়, সাথে আমার চেকাপের একটা রিপোর্টও দিয়েছিলো বাবার হাতে। রিপোর্টটা যদিও সবাইকে দেখানো হয়ছিলো কিন্তু আমাকে দেখানো হয়নি। আর আমিও সেটা দেখার তেমন আগ্রহ প্রকাশ করিনি।
সেদিনের পর থেকে সবাই আমার সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করতে শুরু করলো। সবাই যেনো আমাকে হাসানোর ট্রাই করতেছে কিন্তু তাদের নিজেদের করো মুখে হাসি ছিলো না। যে মা বাবার চোখের কাঁটা ছিলাম আমি, যার জন্য আমার শহরে আসা, যে মা সারাদিন আমাকে বকতো এবং আল্লাহর কাছে বিচার দিতো, আল্লাহ এমন কুলাঙ্গার সন্তান কেনো আমায় দিলা, মরলেইতো শান্তি পাইতাম, সেই মা সারা রাত আমার পা ধরে কান্না কাটি করে। মুখ দিয়ে কোন কিছু উচ্চারণ করতেই বাবা সেটা নিয়ে ইনস্ট্যান্টলি আমার সামনে হাজির হচ্ছে। এমনটা কেন করছে? এর আগেও তো অনেক চোট পেয়েছিলাম বাট এত আদর যত্ন তখন করে নাই, আর এত আত্মীয়ও দেখতে আসে নাই। কয়েকদিন পর হোস্টেলের আশে পাশের এলাকা থেকে আমাকে দেখতে আসা শুরু করে। এটা দেখে আমি অবাক হই। যাই হোক নিজেকে তখন সেলিব্রেটি মনে হচ্ছিলো। হঠাৎ করেই একটা ডিসিশন নিয়ে ফেলি সবাই যখন আমাকে এত্ত ভালোবাসে আমি আর খারাপ কাজ করবো না। সবার সাথে ভদ্র ব্যবহার করবো। এগুলো চিন্তা করতে করতে সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ি।
.
পরদিন গুম থেকে উঠেই শুনি আমাকে গ্রামে নিয়ে চলে যাবে শহরে আর রাখবে না। শুনে আমারও খুব ভালো লাগলো অনেকদিন হলো গ্রামে যাই না। আমাকে ভালো ভাবে তৈরী করে দিলো মা। হুইল চেয়ারে করে গেট পর্যন্ত নিয়ে গেলো। মা আমাকে রেখে জিনিসপত্র আনতে ভিতরে গেলো হোস্টেলের। হুইল চেয়ারে বসে বসে আমি দূরে রাস্তার শেষটা দেখার জন্য তাকিয়ে আছি,,,,,হঠাৎ আচমকা একটা মেয়ে সামনে দাঁড়ালো। রক্তবর্ণের ফুলা চোখ দুটিতে হালকা কান্নার ছাপ, মিডিয়াম সাইজে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যেকোন মুহূর্তে কেঁদে চোখ ভাসিয়ে দিতে পারে এমন অবস্থা। প্রথমে চিনতে পারিনি,,,, পরে অবশ্য চিনে ফেলেছি। আরে এতো ঐ মেয়েটা যাকে চোখ টিপ মারার পর লজ্জায় দৌঁরে পালিয়েছিলো। আমি মেয়েটাকে সেদিনকার আচরনের জন্য ক্ষমা চাইলাম যেহেতু আমি গ্রামে চলে যাচ্ছিলাম, আমাদের আর কখনো দেখা নাও হতে পারে।
মেয়েটা কিছু বলছে না, হয়তো আমার প্রতি রেগে আছে। হঠাৎ করেই মেয়েটা ফেক করে কেঁদে দিলো এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই এক টুকরো ভাজ করা কাগজ আমার হাটুর উপর রেখে দৌঁরে পালালো। আমি কাগজটা পকেটে তুলে রাখলাম, মা খুব কাছে চলে আসছে তাই।
গ্রামে যাওয়ার উত্তেজনা কাজ করছিলো মনের মধ্যো। তাই অন্য কোন বিষয়ে মনোযোগ দিতেও ভালো লাগছে না।
.
অবশেষে ভালো ভাবেই গ্রামে গিয়ে পৌঁছালাম। গ্রামে গিয়ে দেখি ঈদ উৎসব,,,এত মানুষ একসাথে কখনো দেখিনি, যাই হোক এটা ভেবে ভালো লাগছিলো সবাই আমাকে দেখার জন্য আসছিলো। এর আগে অনেকবার চোট পেয়েছি কিন্তু এই বারের মত এত হিউস আত্মীয় স্বজন আমাকে দেখতে আসেনি। নিজের উপর সন্দেহ বেড়ে গেলো। যাই হোক গ্রামের আলো বাতাসে হটাৎ নিজেকে মিলিয়ে নিতে নিতে পকেটে হাত চলে গেলো,,,,,মেয়েটার নিজ হাতে লিখা একটা চিঠি,,,দেখেই হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু যখন পড়তে শুরু করলাম আমার হাসিটা আস্তে আস্তে থেমে গেলো।
চিঠিটা:
প্রিয় অচেনা বালক
আমি তোমার এত বড় একটা ক্ষতি করে ফেলবো ভাবতে পারিনি। সেদিন তোমার অভদ্র আচরনের কথা ভাইয়াকে বলি। ভাইয়া বললো যে তোমাকে হালকা ধমক দিয়ে বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু কে জানতো তোমার এমন অবস্থা করবে। লোক মুখে তোমাকে দেয়া ডাক্তারের রিপোর্ট শুনি। রিপোর্টে নাকি লিখা তোমার লিভার আর দুইটা কিডনি ডেমেজ হয়ে গেছে,,,,তুমি আর বাঁচবে না। এটা শুনার পর তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করতেছিলো। তোমার করুন অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী আমি। আমি আমার পাপের প্রাশ্চিত্ত করে তোমার সাথে এক কাতারে দাঁড়াতে চাই,,
ইতি
অচেনা বালিকা
চিঠিটা কয়েকবার উল্টে পাল্টে পড়লাম। মেয়ের কথা গুলো বিশ্বাস হচ্ছিলো না,, সত্যিই কি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হবে। চোখ দিয়ে বৃষ্টির মত পানি পড়ছিলো, মনে হচ্ছে চিৎকার দিয়ে বলি,,,,,আমি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই না,,,,কিন্তু পারছি না, হয়ত শক্তি হারিয়ে ফেলছি,,,,,
.
হঠাৎ করেই মেয়েটির সাথে কথা বলার ইচ্ছা হলো। হোস্টেলের বড় ভাইকে ফোন করে পাশের বাসার মেয়েটির ফোন নম্বার চাইলাম। বড় ভাই চুপ করে ছিলো কিছুক্ষন তারপর বললো তুই কি মেয়েটিকে ভালোবাসিস? আমি শঙ্কোচ বোধ করে শেষ পর্যন্ত বললাম হ্যা ভালোবাসি। তারপর আর কোন কথা নাই,,,,আমি অনেক রিকুয়েষ্ট করলাম মেয়ের ফোন নাম্বারটা দেয়ার জন্য,,,,,অনেক্ষন পর একটা রিপ্লাই আসলো মেয়েটি আর নেই,,,,গত রাতে সে নিজ রুমে সুইসাইড করেছে।
.
এর পর আর বুঝার বাকি রইলো না। আমার সাথে যা হতে চলেছে সব সত্যি।
.
পৃথিবীটাকে নিষ্টুর মনে হচ্ছিলো আর বাঁচতে ইচ্ছে করছিলো না। অচেনা কারো কাছে চলে যেতে খুব ইচ্ছে করছিলো....
,
,
, Writer: Shuvo
©somewhere in net ltd.