নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ছোট্ট ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আশা করি সাথেই থাকবেন। মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন, সবাই।

প্রতিভাহীন লেখক

প্রতিভাহীন লেখক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব কিছুতো তোরই জন্য

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:০৯



আমি আর শিহাব একই এলাকায় থাকতাম। আমাদের ফ্লাট থেকে শিহাবদের ফ্লাটের দূরত্ব ছিলো তিন মিনিটের হাঁটার পথ। ছোট থেকেই একই সাথে বড় হই। একই স্কুল থেকে পাস করার পর দুজন একই কলেজে ভর্তি হই। এই কারণে আমাদের বন্ধুত্বও ছিলো অনেক গাঢ়। পথ দিয়ে এমন ভাবে চলতাম যেনো সামনে দিয়ে সিডর বয়ে গেলেও আমাদের আলাদা করতে পারবে না। যে কোন কাজ দুজন একসাথে করতাম। বলা যেতে পারে আমাদের ছিলো দুই প্রান এক মন।
,
একবার পরীক্ষার হলে দুজন দেখাদেখি করতেছিলাম। স্যার এসে শিহাবের খাতা নিয়ে রেখে দিলো। আমি তখন স্যারকে গিয়ে বললাম, স্যার ও খুব ভালো ওর খাতাটা দিয়ে দেন আমারটা নেন, আমিই আসলে ওরটা দেখতেছিলাম। শিহাব বললো না স্যার আসলে আমিই দেখতেছিলাম আমারটাই নেন। স্যার কনফিউসড এ পড়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে দুজনের খাতাই দিয়ে দেন। আমাদের বন্ধুত্ব ছিলো এতটায় গাঢ়। সারাদিন এক সাথেই কাঁটাতাম দুজন।
,
আমি সেদিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছিলাম। গেটের সামনে দেখলাম অনেক আসবাব পত্র। নতুন কোন ভাড়াটিয়া ফ্যামিলি হয়ত বাসায় উঠতেছে ভেবে আমি রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি একটা অপরিচিত মেয়ে রুমে প্রবেশ করে আমার লেপটপে কি যেনো করছে।
- হেলো, এই তুমি কে? কি করতেছো?
- তুমি কে?
- আজব তো!! তোমার হাতে যে লেপটপ টা ওটার মালিক আমি।
- ওহ,,,,,তুমি শুভ তাই না?
- জি,,,,কিন্তু তুমাকেতো চিনতেছিনা? আর তুমি আমাকে কেমনে চিনো?
- ওমনেই,,,,,,, ( বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো)
- মেন্টাল নাকি!!! (মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলছিলাম)
,
আম্মুর কাছ থেকে সব শুনলাম। ওই মেয়েটির নাম সিনহা। সিনহার বাবা মারা গেছে তিন মাস আগে, ওই স্মৃতি গুলো ভুলার জন্যই ওরা আমাদের বাসায় উঠেছে। আম্মু আরও বললো যে ওর মা আর আম্মু বান্ধবী ছিলো।
ভালই হলো এবার দুই বান্ধবী মিলে সারারাত সিরিয়াল দেখবা আর সকাল হলেই ওগুলার প্রতিফলন ঘটাবা। একটা বিকৃতি হাসি দিয়ে আম্মুর হাতের চড় খাওয়ার আগেই ওখান থেকে লিভ নিলাম।
.
সিনহাকে আবার দেখার ইচ্ছা হলো। ওদের রুমে গেলাম, গিয়ে ওকে না দেখার ভাব নিলাম এবং আন্টির সাথে কথা বলা শুরু করলাম। আন্টিকে কোন কাজ করতে না দিয়ে সব আমি করে দিলাম। আন্টি আমার হেল্পফুল বিহেফ দেখে মুগ্ধ প্রায়, শুভ থেকে একটু পরেই আব্বু বলে সম্বোধন করতে লাগলো। যাই হোক আন্টি আমাকে ছেলের মতই দেখতো। আমি সিনহাদের বাজার করে দিতাম যদিও আম্মু বলা সত্ত্বেও আমি আমাদেরটা কখনই করতাম না। কয়েকদিন পর সিনহাও আমার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো। ও তখন ক্লাস টেনে পড়তো আর আমি দ্বাদশ শ্রেনীতে। ওর সাথে ছাদে বেডমিন্টন খেলতাম আর রুমে দাবা খেলতাম। প্রতিবার সে হারতো আর আম্মুর কাছে বিচার দিতো। এভাবে সিনহা আর আমার সম্পর্ক খুব কাছে চলে আসে। দুজন দুজনের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছিলাম। কিন্তু ভালোবাসার কথা কেউ কাউকে কখনই বলার সাহস পাইনি। এরই মধ্যে সিনহাকে আমার বন্ধু বান্ধবীদের সম্পর্কে বলি। স্পেশালি শিহাবের কথা। এক সময় সিনহাকে শিহাবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম এবং সবাই মিলে আড্ডা দিলাম মজা করে।
.
কিছুদিন পরের ঘটনা, আগের মত আমি বাসার বাইরে খুব একটা যাই না। শিহাব ফোন দেয় ঠিকমত রিসিভ করি না। কেমন জানি হয়ে গেছি। অনেক দিন পর পার্কে গেছিলাম বিকালে, একা একা হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি শিহাবের হাত ধরে একটা মেয়ে হাঁটছে। কে সেটা প্রমাণ করার জন্য একটু কাছে যাই। সিনহা আর কেউ না? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলাম না। সিনহাকে কি তাহলে শিহাবকে ভালোবাসে???? নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হলো। এক বুক কষ্ট নিয়ে ওদের সাথে দেখা না করে বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় ঢুকে রুমের দরজা লাগিয়ে রেখে ১১ টা হাই পাওয়ারের ঘুমের টেবলেট খাই। নিয়ত ছিলো এই জনমে আর জাগমু না। এরপর আর কিছু মনে নেই। যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমি হাসপাতালে, সব কিছু আবছা আবছা লাগছে, দেখি সিনহা কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আমি ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম, যতই দেখবো ততই বেশি কষ্ট হবে। হঠাৎ করে শিহাবের বাসা থেকে ওর বাবা ফোন করলো। শিহাব তোমাকে আর সিনহা নামে কাউকে দেখতে চাইছে ও খুব অসুস্থ। আমি হাসপাতালের বেড থেকে উঠে পড়ি পরিবারের সবাই মানা করলেও, যেতেই হবে। সিনহাকে সাথে নিই। ভাবলাম, শিহাব হয়ত সিনহাকে আমার কাছ থেকে চেয়ে নেবে। আমিও প্রস্তুত ছিলাম বন্ধুর ভালোবাসাকে বন্ধুর হাতেই ফিরিয়ে দিবো যত কষ্টই হোক। শিহাবদের বাসায় ডুকার সাথে সাথেই কে যেনো বলছে, তোমরা খুব লেট করে ফেলেছো বাবা। শিহাবের রুমে গিয়ে দেখি সবাই কান্নাকাটি করছে। বুঝার বাকি রইলো না। দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। সিনহা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। শিহাবের নিথর দেহ গোসলের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। সিনহা আর আমি পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ চোখ গেলো টেবিলের উপর, একটা বিষের ছোট শিশি। শিশিটা আস্তে আস্তে হাতে নিলাম, শিশিটার নিচে একটা কাগজ ভাজ করা ছিলো। কাগজটা খুললাম, ছোট করে লেখা একটা চিঠি।
চিঠিটাঃ
দোস্ত সব কিছুতো তোরই জন্য
,
সিনহা তো তোকেই ভালোবাসে। তুই কতটা ভালোবাসিস সেটা প্রমান করার জন্যই আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছিলো সিনহা। যাতে তুই তোর ভালোবাসার কথা সিনহাকে বলিস।
সিনহার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে কখন যে তাকে রিয়েলি ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। দুই দিন পর ১৪ই ফেব্রুয়ারী আসছে, সিনহা তকে ওর ভালোবাসার কথা বলবে। সেটা আমি দেখতে পারবো না কষ্ট হবে রে। আমি শুধু শুধু তদের ভালোবাসার আগাছা হয়ে থাকতে চাই না,,তাই ভালোবেসে বন্ধুর বন্ধুত্ব রক্ষা করেই চলে গেলাম। পারলে ক্ষমা করে দিস।
ইতি তোর জানের দোস্ত
শিহাব
,
,
তুই এমন কেনো রে দোস্ত.....


লেখাঃ প্রতিভাহীন লেখক(Shuvo)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:১৪

আরকিস মল্লিক বলেছেন: ভালো লিখেছ ভাইয়া

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

বিজন রয় বলেছেন: এটিও ভাল লাগল।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.