নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ছোট্ট ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আশা করি সাথেই থাকবেন। মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন, সবাই।

প্রতিভাহীন লেখক

প্রতিভাহীন লেখক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:১৭


মধ্যরাত এখন, হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো, কি এক ভাবনা মনের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে। জানালাটা খুললাম, মধ্য রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে যেখানে ঝিঁঝি পোকারাও ঘুমিয়ে পড়েছে, চারদিকে কেমন ছমছমে পরিবেশ, ঠান্ডা বাতাস যেনো হঠাৎ করে গা স্পর্শ করেই আবার হারিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে গাছের শুকনো ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ছে, আর অদ্ভুত কিছু শব্দে গা শিউরে উঠছে। দিনের আলোক পর্যায়ে যে শব্দ গুলো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না, রাতের মধ্যভাগে সেই শব্দ গুলোই আমাদের আকর্ষণ করে। উপভোগ্য একটা পরিবেশ তৈরি হয় চারপাশে। কয়েকদিন ধরেই এই পরিবেশটার সন্ধান পেয়েছি। ভালোই লাগে, ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শে নিজেকে গোসল করিয়ে সকল ভাবনা থেকে দূরে থাকা যায়। কে সন্ধান দিলো এই অপরূপ মুহূর্তের? ভাবতে গেলে শুধু অর্পিতার কথা মনে হয়, অর্পিতা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইভার। সে আমার স্কুল বা কলেজ ফ্রেন্ড না ওর সাথে পরিচয় হয় ফেসবুকে। ফেসবুকে ওর আইডির নাম ছিলো Hiden Dark Heaven. অনেক বই বা অক্সফোর্ডের ডিকশনারি গুলা সার্চ করেও নামের অর্থ বের করতে পারিনি। স্বজ্ঞানে যতটুকু বুঝেছি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। মেয়েটা আমার প্রতিটা পোস্টে লাইক দিতো প্রয়োজনে কমেন্ট করতো, এভাবেই চলছিলো ফেসবুকিং। আমি অবশ্য তখন মনে করতাম এটা কোন ছেলের আইডি হবে। কারণ নামের মধ্যে ছেলে ছেলে ভাব আছে, আমি আর প্রোফাইল চেক করি নাই। চেক করলে হয়তো অনেক আগেই ও আমাকে এমন সুন্দর পরিবেশ দেখার সুযোগ করে দিতো। যাইহোক, একদিন ও আমাকে ইনবক্সে নক করে,
- আপনার লাস্ট স্টরিটা কি রিয়েল লাইফ বেসড নাকি ইমাজিনারি।
- ইমাজিনারি, কোন প্রবলেম????
- কিন্তু এমন উইয়ার্ড ঘটনা আপনার মাথায় কিভাবে আসলো, আসাতো পসিবল না।
- আজবতো, আমার মাথায় কি আসবে আর কি না আসবে তা আপনি কিভাবে জানবেন। (হালকা তাচ্ছিল্য)
- বুঝতেছিনা, আমার স্বপ্ন থেকে কি আপনার স্টরিটি রচিত নাকি আপনার স্টরি থেকে আমার স্বপ্নটি বাস্তবায়িত।
- সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, প্লিজ ক্লিয়ারলি বলেন।
তারপর অর্পিতা আমাকে ডিটেইলস বলল। ওর কোন একটা ড্রিম আমার লেখাটার সাথে মিলে যায়, এজন্য ও বার বার জেলাস ফিল করে এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখাটার প্রশংসা করতে থাকে। এর মধ্যে আমি ওর প্রোফাইলটা চেক করি, নিক নেম ছিলো অর্পিতা। ঐ সময় আমার আর কোন মেয়ে বন্ধু ছিলো না যার কারণে অর্পিতার উপর আমার আগ্রহের উদয় হলো। সকালে উঠে গুড মর্নিং আর রাতে গুড নাইট দিতে ভুল হতো না। প্রথম দিকে অর্পিতা অতটা আগ্রহ না দেখালেও পরে রেগুলার সাড়া দেয়। ওর মন খারাপ থাকলে শর্ট স্টরি লিখে দিতাম যা পড়ার পর ওর মন ভালো হয়ে যেতো। এভাবে বন্ধুত্বের হাতটা অনেক শক্ত হয়। ফোন নম্বর যদিও ছিলো তবু কথা হতো খুব কম, চেট করতেই আমরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। মজা করে অর্পিতাকে বউ বলতাম, ও রাগ করতো, ওর রাগ ভাঙাতাম অনেক্ষন ধরে, দুই বছর গড়িয়ে যাওয়ার পর মিট করার ইচ্ছা হলো। অর্পিতার আগ্রহটাই বেশি ছিলো এবং মিট করার দিন একটা সারপ্রাইজ দিবে প্রমিস করেছিলো। কিন্তু মিট করবো কিভাবে আমরা!! বাংলাদেশের দুই প্রান্তে দুজন। অর্পিতা জানায়, সামনের মাসে ওদের স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে Fantasy তে আসবে। মিট করার এক সূবর্ণ সুযোগ। আমাদের মিট করার প্লান নিশ্চিত করে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম। দিন যতই কমছে, ততই এক্সাইটেড হচ্ছিলাম।
যেদিন মিট করবো তার আগের রাতে আর ঘুম হলো না, সারাদিন কি কি করবো তার প্ল্যান করেই কাটিয়ে দিলাম।
সকালে খুব ভোরেই উঠলাম যেখানে অন্যান্য দিন আমি দশটায় উঠি। যাইহোক, নতুন পাঞ্জাবিটা পড়ে বসে আছি, এমন সময় অর্পিতার ফোন-
- বাবু, কই তুমি?
- বাসায়, শুয়ে আছি (ঘুমের ভাব নিয়ে)
- এখনও বাসায়? আসবা কখন?? (হালকা আবেগ+রাগ নিয়ে)
- বেবি, একটা প্রবলেম হয়ে গেছে, আজকে আমাদের মিট করা হবে না।
,
টুতটুত করে ফোনটা কেটে গেলো, মনে হলো অর্পিতার সাথে ফোনটাও রাগ করলো। অভিমান যে কত্ত মেয়েটার মধ্যে তা শুধু আমি জানি। পরপর তিন চার বার ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ হলো না। ছোট্ট করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম। "বেবি, আমিতো এসে গেছি তোমার আগে"। রিপ্লাই মেসেজে সে কতগুলো কিল, গুষির ইমো পাঠায়। সাথে সাথে অর্পিতা ফোন ব্যাক করলো এবং ইচ্ছা মত কিছু বকা দিলো। নিশ্পাপ বাবুটার মত শুনলাম।
ওয়াটার কিংডমে আমি অর্পিতার জন্য ওয়েট করতে থাকি, সময় যেন যেতেই চাচ্ছে না, বসে থাকা অবস্থায়ই মনে হলো যেন কয়েকবার স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। হঠাৎ করেই পিছন থেকে কে যেনো আমার চোখ ধরলো। চোখে কিছু দেখছিনা, শুধু ফিল করতেছি একটা কোমল হাত। হাত সরাতেই পিছনে তাকাই, টিনেজ একটা মেয়ে, সিপসিপে দেহ, ঠোঁট গুলো পিনক কালারের হালকা করে কাঁপছে, চোখ দুটো মায়া কাড়ানো কাজলের হালকা প্রবাহ বয়ে গেছে চোখের নিচ দিয়ে, তার চোখে মুখে অজানা কিছু আগ্রহের ছাপ। স্টার জলসার সিরিয়াল গুলোর মত আমরা একে অপরের দিকে প্রায় টানা পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকলাম। নেশা ভরা চোখের বিভোর কাটতেই দেখি আশে পাশের মানুষ গুলো আমাদেরকে আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে দেখছে। ফেসবুকে প্রতিদিন অর্পিতার সেলফি দেখতে দেখতে ও আমার কল্পনার রাজ্যের রানী হয়ে যায়। চিনতে এক মুহূর্ত সময় লাগেনি।
- এভাবে কতক্ষন তাকায় থাকবা? বাবু!!
- সারাজীবন,,,,,,,,,,,,,,,,,
- তোমার কি মাথা খারাপ হলো সবাইতো দেখতেছে,,,
- দেখুক, তাতে আমাদের কি?
- আমি চললাম, তুমি থাকো। (এই বলে হাঁটা শুরু করে)
নেশার ঘোর কাটার পর, দৌঁড়ে গিয়ে অর্পিতার হাতটা ধরলাম। মনে হলো এত দিন যা মুভিতে দেখে এসেছি তা আজ বাস্তব হলো। অর্পিতা আর আমি fantasy থেকে বেড়িয়ে পড়ি। নিরব নিস্তব্ধ পাতাঝরা একটা পার্কে গিয়ে বসি।
- বেবি, তুমি না সারপ্রাইজ দিবা আমাকে?
- দিমুতো, এত তাড়াহুড়ো কিসের। আচ্ছা বাবু, তুমি আর আমি এক সঙ্গে কত দিন আছি আর কত দিন থাকবো?
- আমিতো সারাজীবনই থাকতে চাই,,,,,তুমি আমাকে যতটা বুঝো আর আমি তোমাকে যতটা বুঝি, আমার মনে হয় না আমাদেরকে অন্য কেউ এতটা বুঝবে!!
- বাবু, আমি আমার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম, তুমি ধরবানা?
- এই ধরলাম, চলো এবার অনেক টায়ার্ড হয়ে আছি, রেস্টুরেন্টে বসবো কিছু খাবো।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সারাটাদিন চলে গেলো কেউ টেরই পাইনি। মনে হচ্ছিলো অর্পিতার হাতটা কখনোই ছাড়বো না, ছাড়লেই পালাবে, আর কোন দিন খুঁজে পাবো না।
- এই কি ভাবছো???
- কিছু নাতো? চলো তোমাকে fantasy তে পৌঁছে দেই।
দুজন রিকশায় উঠলাম, কারো মুখে কোন কথা নাই। আমি মাঝে মাঝে অর্পিতাকে দেখছিলাম, চোখের মণিটা ভেজা মনে হচ্ছে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে পারলে ওর কিছুটা ভালো লাগতো। দুজনের মনই প্রচন্ড ভাবে খারাপ হয়ে যায় এটা ভেবে যে একটু পরই আর কেউ কাউকে দেখতে পাবো না। অর্পিতাকে বাসে তুলে দিলাম, জানালার পাশের ছিটে গিয়ে বসলো। আমি অর্পিতার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করেই, অর্পিতা একটা ডাইরি ফেলে দিলো। ডাইরিটা হাতে নিলাম। একটুপরই অর্পিতা হাত নাড়াতে শুরু করলো, বুঝলাম গাড়ি স্টার্ট হয়ে গেছে। আমিও হাত উঠিয়ে টা টা দিলাম। যতক্ষন গাড়িটি দৃষ্টিসীমানার মধ্যে ছিলো ততক্ষন তাকিয়েই ছিলাম।
,
বাসায় এসে অধীর আগ্রহে ডায়রিটা খুললাম, ছোট ছোট হাতে লিখা কিছু সুন্দর সুন্দর কবিতা। শেষের তিন চারটা পৃষ্ঠা কোন কবিতা ছিলো না। কিছু ড্রয়িং ছিলো এবং আশ্চর্যের বিষয় লাষ্টের পেজে, আমি যা কখনো ভাবিনি সেটাই ও করেছে। অর্পিতা এবং আমার দুটি পিকের প্রিন্ট কপি পাতায় আইকা দ্বারা এটাচ করা। মাঝখানে একটি লাভ চিহ্নও ছিলো পেন্সিলে আঁকা। তখন আমার এত ভালো লাগতেছিলো মনে হচ্ছে চিৎকার দিয়ে বলি, এটা কোন সারপ্রাইজ ছিলো না অর্পিতা, জীবনের সবচেয়ে বড় গিফটাই তুমি আমাকে উপহার দিলে।
,
এরপর হঠাৎ করেই অর্পিতার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওর সব নাম্বার বন্ধ, ফেসবুক ডিএকটিভেট। যোগাযোগ করার কোন উপায় ছিলো না। জানিনা এমনটা কেনো হলো!! ডাইরিটার দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ ভুলে থাকার ট্রাই করতাম।
,
দীর্ঘ চার মাস পরে হঠাৎ বিদেশি নাম্বার থেকে একটা ফোন আসে। অতটা কেয়ার না করে ফোনটা রিসিভ করি। হেলো বলতেই, ওপাশ থেকে শুধু একটি মেয়ের চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতেছি। কান্না শেষ হলে মেয়েটি বলা শুরু করলো তার জীবনের হিস্ট্রি।
,
যে মেয়েটির কথা শুনছিলাম অর্পিতা, fantasy তে অর্পিতার হাত ধরে বেড়ানো, সারাদিন কোথাই কোথাই যাওয়া, কি করা, সব কিছুর ফোটো ও ভিডিও শুট করেছিলো অর্পিতার সাথে আসা তার ফুফাতো ভাই। কাজটি করেছিলো সিক্রেট ভাবেই। অর্পিতার বাবাকে ক্লিপস গুলো দেখানোর ফলাফল স্বরুপ অর্পিতাকে পড়াশুনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং তার সাথে যোগাযোগের সব মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করা হয়।
,
আমাদের এখানে যখন মধ্যরাত তখন অর্পিতার ওখানে সন্ধারাত। সন্ধার সময়ই ও ফ্রি থাকে এবং ফোন দেয়। আমি এখন সন্ধায় ঘুমায় মধ্যরাতে উঠি। মধ্যরাতের সেই অপরূপ দৃশ্যের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছি। মধ্যরাতে দূর আকাশে তাকিয়ে থাকি তার জন্য যে আমাকে রাত জাগা পাখি বানিয়েছে, কোন একদিন পাওয়ার আশায়.....


লেখাঃ প্রতিভাহীন লেখক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১২

বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.