| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এস.এম. আজাদ রহমান
সংগঠক, অভিনেতা, ব্লগার, স্যোসাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, ডিজাইনার
বিচারহীনতার শিকড়ে মব-সহিংসতার বিস্তার
দেশজুড়ে একের পর এক মব-সহিংসতার ঘটনা এখন আর বিচ্ছিন্ন নয়; এটি সমাজে এক ভয়াবহ প্রবণতায় রূপ নিচ্ছে। চুরি, অপবাদ কিংবা গুজবের অভিযোগে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা—এই নির্মম বাস্তবতা রাষ্ট্র ও সমাজের বিবেককে বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।
মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেনের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: “বিচার না হলে অন্যায় চলতেই থাকে।” দেশে মব-সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা এখন ন্যায়বিচারহীনতার এক একটি নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলা হলেও তদন্তের গতি শ্লথ, বিচার তো আরও দূরের কথা।
তথ্য বলছে, গত ১৩ মাসে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তারের হার মাত্র ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রায় নয় হাজার আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ১১৪ জন। ১০টি ঘটনায় মামলা হয়নি একেবারেই। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের ঘাটতি।
এদিকে ভুক্তভোগীদের পরিবার—যেমন রংপুরের তারাগঞ্জের রূপলাল রবিদাসের পরিবার—বিচার তো দূরের কথা, ন্যূনতম পুনর্বাসন বা সহায়তাও পায়নি। নবম শ্রেণির ছাত্র জয় রবিদাস এখন সংসার চালাতে সপ্তাহে দুই দিন বাজারে জুতা সেলাই করছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখানে অনুপস্থিত।
গণপিটুনা কোনো তাৎক্ষণিক আবেগ নয়; এটি বিচারহীনতার সামাজিক প্রতিক্রিয়া। যখন জনগণ দেখে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তখন ন্যায়বিচারের বিকল্প হিসেবে জনরোষকে ‘বিচার’ মনে করে। এই ভয়াবহ ভুল ধারণা সমাজে আইনের শাসনকে দুর্বল করে এবং সহিংসতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়।
এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে নিজের দায় স্বীকার করার। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধী যেই হোক—দল, গোষ্ঠী বা ধর্ম নির্বিশেষে—তার শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই কেবল উদাহরণ তৈরি হবে যে “অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।”
©somewhere in net ltd.