নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজস্ব ভাবনা চিন্তা নিয়ে আমার ভার্চুয়াল জগত!

এস.এম. আজাদ রহমান

সংগঠক, অভিনেতা, ব্লগার, স্যোসাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, ডিজাইনার

এস.এম. আজাদ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের মেট্রো রেল: থেমে থাকা গতি, হারানো আস্থা[

০৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২৪



স্বপ্নের মেট্রো রেল: থেমে থাকা গতি, হারানো আস্থা

এক সময় ঢাকার মেট্রো রেল প্রকল্প ছিল নগর জীবনের এক উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি— যানজটমুক্ত, সময়-সাশ্রয়ী এক আধুনিক রাজধানীর স্বপ্ন। প্রতিদিনের কয়েক মিলিয়ন মানুষের ভরসা ছিল এই প্রকল্পে। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন যেন বারবার থমকে যাচ্ছে নানা বিতর্ক, অব্যবস্থাপনা আর প্রশাসনিক অনিশ্চয়তায়।

এই সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ— যাঁকে ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন।

বিতর্কিত নিয়োগ ও আইনি প্রশ্ন
ফারুক আহমেদের নিয়োগ শুরু থেকেই বিতর্কিত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও এমডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন— যা বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস আইন ২০১৮-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আইন অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তবে তাঁর সরকারি পদ ধরে রাখার বৈধতা থাকে না। তবু তাঁর নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ গোপনীয়; উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি বা প্রতিযোগিতামূলক বাছাই ছাড়াই অভ্যন্তরীণ প্রভাব খাটিয়ে এই পদে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি আরও বিস্ময়ের বিষয়— “ফারুক আহমেদ” নামে একটি ভারতীয় আধার কার্ড পাওয়া গেছে, যা কেবল ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য।

প্রশ্ন উঠেছে— দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পের দায়িত্ব একজন বিতর্কিত নাগরিকত্বধারীর হাতে তুলে দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

প্রশাসনিক স্থবিরতা ও টেন্ডার বিতর্ক
ফারুক আহমেদের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি কমতে শুরু করে।
এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫— এই দুইটি বড় প্রকল্প কার্যত স্থবির অবস্থায়। সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এমআরটি-১-এর ১২টি প্যাকেজের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছয় মাস ধরে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।

২০২৫ সালের ২ নভেম্বর ডিএমটিসিএল এমআরটি-১ এর সিপি-০৫ টেন্ডার বাতিল করে। প্রকল্প পরিচালক আফতাব হোসেন খান জাইকাকে লেখা এক চিঠিতে জানান— প্রস্তাবিত ব্যয় অনুমোদিত সীমার তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে।

কিন্তু মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, টেন্ডার বাতিলের কারণ শুধু ব্যয় নয়— প্রশাসনিক কূটনীতি ও মধ্যস্থতাকারীদের চাপও এর পেছনে কাজ করেছে।

জাপানি কোম্পানি কাজিমা কর্পোরেশন তুলনামূলকভাবে কম দামে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছিল, তবু সেটি বাতিল হয়। এতে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্বার্থের সংঘাত ও আস্থার সংকট
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ— স্বার্থের সংঘাত।
নিয়োগের আগে ফারুক আহমেদ বিশ্বের বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পে (অস্ট্রেলিয়া, হংকং, সৌদি আরব, ভারত) কাজ করেছেন এবং সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান SYSTRA-তেও যুক্ত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারদের সুবিধা দিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন— যা সরাসরি PPR ২০০৮-এর রেগুলেশন ৫৫ অনুযায়ী বড় ধরনের স্বার্থসংঘাতের শামিল।

জাপান সরকার ও জাইকা এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।

জাইকার কর্মকর্তাদের প্রতি অসহযোগিতা, বৈঠকে অশালীন মন্তব্য এবং প্রকল্প বিলম্বের দায় অন্যের ওপর চাপানোর প্রবণতা জাপানি অংশীদারদের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

দুর্ঘটনা, অবহেলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
সম্প্রতি ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো রেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহত হন।
ঘটনার পর জনগণের প্রশ্ন— “ঢাকার মেট্রো রেল কি নিরাপদ?”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুর্ঘটনার মূল কারণ রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের যথাযথ দায়িত্ব না দেওয়া।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে প্রযুক্তিগত দায়িত্ব পালনের এই প্রবণতা ভয়াবহ ভুল— কারণ এটি প্রকৌশল নিরাপত্তার মৌলিক নীতির পরিপন্থী।

জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকিতে
জাপান শুধু মেট্রো রেল নয়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা পাওয়ার প্রজেক্ট সহ বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১৫–২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

এ অবস্থায়, মেট্রো রেল প্রকল্পের প্রশাসনিক অস্থিরতা শুধু এক প্রকল্প নয়— বরং দুই দেশের কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সময় এখন সাহসী সিদ্ধান্তের
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার মেট্রো রেল কেবল যাতায়াত উন্নয়নের প্রকল্প নয়— এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক।
কিন্তু প্রশাসনিক দ্বিধা, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, এবং দুর্বল নেতৃত্বের কারণে প্রকল্পটি সময় ও ব্যয়ে ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে।

একজন সাবেক প্রকৌশলী যথার্থই বলেছেন—
--< “একটি টেন্ডার বাতিল মানে দেড় বছর দেরি, আর এক ভুল সিদ্ধান্ত মানে এক আস্থার ক্ষতি।”

তাই এখনই সময় সরকারের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার।
যদি অনিয়ম প্রমাণিত হয়— তবে দোষীদের অপসারণ ছাড়া বিকল্প নেই।
কারণ, মেট্রো রেল শুধু এক প্রকল্প নয়— এটি বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

যদি এখনই সংশোধন না আসে, ইতিহাস হয়তো লিখবে—
“ঢাকা মেট্রো রেল থেমে গিয়েছিল রেললাইনে নয়, অফিসে।”

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২১

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



আপনি সবকিছু গরুর রচনার ফরমেটে লেখেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.