| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষকদের দাবিই এখন রাষ্ট্রের ন্যায্যতার পরীক্ষাক্ষণ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা আবারও মাঠে নেমেছেন। তাদের দাবি—দশম গ্রেডে উন্নীতকরণ। এই দাবি নতুন কিছু নয়, বরং বহু বছরের বঞ্চনার ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত ও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ার দায়িত্ব যারা পালন করেন, সেই শিক্ষক সমাজ আজ ন্যায্য মর্যাদার জন্য রাস্তায়। এটি শুধু একটি পেশাগত আন্দোলন নয়; এটি রাষ্ট্রীয় ন্যায্যতা ও মূল্যবোধের প্রশ্নও বটে।
শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন—সমমানের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই দশম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। যেমন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই), নার্স, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কিংবা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। অথচ প্রাথমিক শিক্ষার মূল দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা এখনও ১১তম গ্রেডে। বাস্তবতা হলো, এই শিক্ষকরা শুধু পাঠদানই করেন না—তারা প্রশাসনিক কাজ, ভোটের দায়িত্ব, জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় তাদের মূল্যায়ন এখনও পিছিয়ে।
প্রাথমিক শিক্ষা হলো জাতীয় উন্নয়নের শিকড়। এই স্তরে যদি শিক্ষকরা আর্থিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে অবহেলিত থাকেন, তাহলে শিক্ষার মান উন্নয়ন কল্পনাও করা যায় না। একজন প্রাথমিক শিক্ষককে দিনে ৫ থেকে ৬টি শ্রেণি নিতে হয়, শতাধিক শিক্ষার্থীর দেখভাল করতে হয়, তবু তার বেতন কাঠামো অনেক নিচে। অথচ রাষ্ট্রের প্রত্যাশা—তারা যেন “গুণগত শিক্ষা” নিশ্চিত করেন। এই প্রত্যাশা আর বাস্তবের ফারাকই আজকের আন্দোলনের মূল কারণ।
শিক্ষকরা যখন দাবি জানাতে রাস্তায় নামেন, তখন তাদের দিকে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড বা টিয়ারশেল তাক করা হয়—এটি শুধু একটি দুঃখজনক প্রশাসনিক আচরণ নয়, এটি রাষ্ট্রের নৈতিক পরাজয়ের প্রতীকও। একজন শিক্ষককে যে সমাজে সম্মান দেওয়া হয় না, সেই সমাজে উন্নত মানবসম্পদ গড়ে ওঠে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও পে-কমিশনের পারস্পরিক দোষারোপে বিষয়টি ঝুলে আছে মাসের পর মাস। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো ‘প্রক্রিয়াগত’ বিষয় নয়—এটি একটি ন্যায্য দাবি, যা বাস্তবায়ন করাই উচিত ছিল অনেক আগেই।
শিক্ষকদের এই দাবিকে এখন “আন্দোলন” বলে দেখার বদলে রাষ্ট্রের উচিত এটিকে “সম্মানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা” হিসেবে দেখা। প্রাথমিক শিক্ষকরা কেবল চাকুরিজীবী নন; তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নির্মাতা। তাদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করা মানে ভবিষ্যতের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।
এখন সময় এসেছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার। কারণ শিক্ষকরা যদি বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হন, তাহলে শিক্ষা শুধু পাঠ্যবইয়ে নয়, রাষ্ট্রের বিবেকেও পরাজিত হবে।
©somewhere in net ltd.