নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এনায়েত করিম

এনায়েত করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭৬ শতাংশ খাবারই ভেজাল

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২০

ভেজাল খাদ্যপণ্যের প্রভাবে বর্তমানে আসল খুঁজে পাওয়া দায়! ভেজাল ও রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যের অনাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। ভেজাল প্রতিরোধে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় নিশ্চিত করতে না পারায় দিন দিন বাড়ছে ভেজালের প্রবণতা।



দেশে ভেজাল খাদ্যপণ্য শনাক্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। বিএসটিআই আইন-২০১৩ (সংশোধিত) অনুযায়ী খাদ্যের মান বিএসটিআই দ্বারা প্রত্যায়িত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিত করতে বিএসটিআইয়ের নজরদারি ক্রমান্বয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এদিকে দেশের বড় একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের রফতানি করা পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটিস নেটওয়ার্ক (আইএনএফওএসএএন) প্রতিষ্ঠানটির বাজারজাতকৃত খাদ্যপণ্যের মান যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে (আইপিএইচ) সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে।



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব পরীক্ষাগার থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারছে না। নানা ধরনের বিষাক্ত ও নিম্নমানের খাদ্যের কারণে আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর অসুখের ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। খাবার এমনই বিষাক্ত যে তা ডিএনএকে পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। আর উৎপাদিত প্যাকেটকৃত, প্রক্রিয়াজাত তরল ও কঠিন খাদ্যের অধিকাংশই বিষ ও ভেজালে ভরপুর। খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিকের ব্যবহার রোগ ও মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে। তাই নিয়ন্ত্রণহীন খাদ্য বাজারকে দ্রুততার সঙ্গে কঠোর নজরদারির আওতায় আনাতে না পারলে এসব খাদ্য গ্রহণে সামনের দিনগুলোতে দেশে মৃত্যুহার বাড়বে।



সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরিতে বাজার থেকে সংগৃহীত ৮৪ ধরনের মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এসব পণ্যের ৭৬ শতাংশ ভেজাল। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, শিশু খাদ্যেই ভেজাল সব থেকে বেশি। আর সবচেয়ে বেশি ভেজাল মেশানো হয় শিশুদের প্রিয় সস, জুস, মিষ্টি ও আইসক্রিমে। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ওলোংগং বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে বাংলাদেশের চার ধরনের খাবার মিষ্টি, বিস্কুট, পাউরুটি ও আইসক্রিমে ভেজাল নিয়ে একটি গবেষণা চালায়। তাতে দেখা যায়, রাজধানীর ২৪ শতাংশ বিস্কুট ভেজাল। পাশাপাশি এগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ৫৯ শতাংশ আইসক্রিম স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়-গরুর দুধ দোয়ানোর পরে শতভাগ দুধেই পানি মেশানোর পাশাপাশি ফরমালিন ও সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মেশানো হয়।



এদিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) নমুনা পরীক্ষায়ও বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ খাদ্যপণ্যে অস্বাস্থ্যকর উপাদান পাওয়া যায়। অন্যদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), স্যানিটারি ইন্সপেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিয়াব) ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও জরিপে বেরিয়ে এসেছে খাদ্যপণ্যে ভয়াবহ হারে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে।



এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে নিষিদ্ধ মোম, নিম্নমানের রং, ট্যালকাম পাউডার ও ঘন চিনি ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে চকোলেট। চাল চকচকে করতে মোম মাখানো হয় আর পোকার কবল থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার হয় কীটনাশক। মাছ ও ফল তরতাজা রাখতে ব্যবহার হচ্ছে ফরমালিন। তরমুজে বিষাক্ত রঙের ইনজেকশন দিয়ে লাল করা হচ্ছে। সরিষার তেলে বিষাক্ত অ্যালাইল আইসো-থায়োসায়ান ইডের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে। সয়াবিন তেলে ভেজাল হিসেবে মেশানো হচ্ছে পাম তেল, পরিশোধন করা পোড়া মবিল ও খনিজ তেল (হোয়াইট অয়েল)। মিষ্টিতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যাকারিন, ময়দা, চালের গুঁড়ো ও টিসু পেপার। গুঁড়ো দুধের পরিমাণ বাড়াতে চালের গুঁড়ো ও ময়দা মেশানো হচ্ছে। চানাচুর ও বেকারি সামগ্রী মচমচা ও সুস্বাদু করতে পোড়া মবিল দিয়ে ভাজা হয়ে থাকে। কনডেন্সড মিল্কে মেশানো হচ্ছে উদ্ভিজ্জ চর্বি। ঘি’তে উদ্ভিজ্জ বা প্রাণিজ চর্বি। বিষাক্ত পাউডার ও রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদেশি ব্র্যান্ডের চকোলেট ও আইসক্রিম। কলা, আম ও টমেটো পাকাতে ক্যালশিয়াম কারবাইড ও তুঁতে মেশানো হচ্ছে। হরমোন দিয়ে বড় করা হচ্ছে আনারস, আম অন্যান্য ফল। শাক-সবজি উৎপাদনে বিষাক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশক, মোড়কজাত ফলের রসের (জুস) নামে বিষাক্ত রং ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে কেক, জেলি ও সসে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম গন্ধ, রাসায়নিক ও বিষাক্ত রং। ভোক্তাদের আসক্তি বৃদ্ধি করতে বেশিরভাগ এনার্জি ড্রিংকে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাফেইন ও যৌন উত্তেজক পদার্থ সিলডেনাফিল সাইট্রেট।



এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. গোলাম মওলা বলেন, খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ ১২ থেকে ১৫টি জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিকের ব্যবহারে দেশে মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন খাদ্য বাজারকে দ্রুততার সঙ্গে কঠোর নজরদারির আওতায় আনাতে না পারলে খাদ্য গ্রহণে মৃত্যুহার সামনের দিনগুলোয় আরো বাড়বে।



আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাবেক জ্যেষ্ঠ গবেষক ও বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) চেয়ারম্যান এসকে রয় বলেন, বাজারে যেসব খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে তা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা, তারও সঠিক কোনো তদারকি নেই। ফলে মানহীন এসব খাদ্যগ্রহণে মানবদেহে জটিল রোগ বাসা বাধছে। শিশু খাদ্য নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এছাড়া এনার্জি ড্রিংকস হিসেবে পরিচিত পানীয়তে মেশানো হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান। এসব উপাদান ভোক্তাদের আসক্তি বৃদ্ধি, যৌনশক্তি হ্রাস ও হৃদেরাগের কারণ হতে পারে। তাই খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারিভাবে তদারকি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের অপরাধের শাস্তি ও জরিমানার বিধান আরো কঠোর করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু প্রক্রিয়াজাত খাবার তদারকি করলেই চলবে না, বাজারের প্যাকেটজাত সব পণ্যই এর আওতায় আনতে হবে।



বিএসটিআইয়ের পরিচালক খাদেমুল ইসলাম বলেন, খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী বিএসটিআই আঞ্চলিক পর্যায়ে ছয়টি মেট্রোলজি ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাপের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য একটি মোবাইল ল্যাবরেটরি স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন।



Source: Manobkontho



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.