নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন গুলো বার বার রং বদলায়....

ধূসর সপ্ন

জীবনের দেনা শুধু বাড়ে; চক্রবৃদ্ধি হারে !

ধূসর সপ্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মসজিদ কমিটি ( একটি ছোট গল্প)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

আসসালামু আলাইকুম আব্বা । হুজুর রিকশা হইতে নামিবার আগেই ইমাম ছাহেব পায়ের উপর হাত রাখিয়া কদমবুচি করিল । এর পর হুজুরের চিবুকদ্বয় দুই হাতে দশ আঙ্গুল দিয়া শুভ্র দাড়ির ভিতর দিয়া বিলি কাটিয়া নিচের দিকে নামাইয়া পরম শ্রদ্ধায় ও স্নেহে ইমাম ছাহেব ভক্তিভরে তার নিজের করজোরে চুম্বুন করিল । এর পর হুজুর কেবলা রিকশা হইতে অতিকষ্টে নামিয়া দুই কদম ফেলিয়া মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বেই ইমাম ছাহেব হুজুর কেবলার পাদুকা খুলিয়া লইল যেন তার পৈত্রিক সম্পদ । বক্ষের মাঝখানে পরম যত্বে চুম্বন করিয়া একেবারে মসজিদের মিম্বারের পাশে নিয়ে গেলেন । চুম্বনের শব্দই বলিয়া দিল কি করিয়িা মুর্শিদ কেবলার ভোজন করতে হয় ! ও দিকে প্রস্তুত থাকা মুয়াজ্জিন ছাহেব পাঁচটা বৈদ্যতিক পাখার পরও হাত পাখা লইয়া দাড়াইয়া পাড়িল আব্বাকে বাতাস করিবার জন্য । বৈদ্যতিক পাখার বাতাস গরম কিনা তাই এই সুব্যবস্থা !
আব্বা হুজুর আজ দক্ষিণ পাড়ার মসজিদে সালাত আদায় করিতে আসিয়াছেন । আজ যে মসজিদ হাসিতেছে । পাড়ার ছেলে বুড়ো সকলেই আজ মসজিদে যাইবে ।
আব্বা দুইটা হেতুতে আজ এই পাড়ার মসজিদে আসিয়াছেন । প্রথম হেতু উনার নিজের হাতে গড়া মসজিদে সুযোগ পাইলেই (সুযোগ সব সময় হয় না) নামাজ আদায় করিতে আসেন । দ্বিতীয় হেতু কয়েক শুক্রবার হইল মসজিদ কমিটি লইয়া একটা তালগোল পাকাইয়াছে উহা সমাধান করিতে তাঁর সুভাগমন ঘটিয়াছে । সবাই স্থির হওয়ার পর হুজুর কেবলাই কথা উঠাইলেন- “কারা যেন আমাকে একটা চিরকুট পাঠাইয়াছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম লেখা তাতে ।
“আব্বা আপনার কথার উপর কথা কয়, আপনার সিদ্ধান্তের উপর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত লয় – এইডা আপনার অপমান না, এইডা আমাগরে অপমান”- আতাব আলী উচ্চস্বরে বলে উঠে । এই কথার সমর্থন দিয়া কালা চাঁদ সরকার খাক খাক করে কেঁদে উঠে আতাব আলীর পাশে থেকেই – আমার হুজুর কেবলা অত্র এলাকার মাথার তাজ, আর তোমরা মিয়াঁরা আব্বাকে এই ভাবে অপমান করলা”। রকিবুল মাস্টার হুজুরের গায়েঁর স্কুলে মাস্টারি করে; সে কোন দিন মসজিদে গিয়ে কখনও কোন কথা বলে নি । মসজিদে সবার শেষে গিয়ে সবার আগে বের হওয়া একজন মুসল্লি। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও কারো কথায় কোনদিন কর্ণপাত করেন নাই । কিন্তু সেই দিন কথা বললেন একেবারে আব্বা হুজুরের দুই হাত ধরিয়া – “আব্বা আপনি এর একটা সুস্থ বিচার করিয়া দেন”।
অনেক দিন হইল দক্ষিন পাড়ার নতুন মসজিদটির কমিটি লইয়া কিছু একটা গণ্ডগোল দেখা দিয়াছে । সভাপতি আর ক্যাশিয়ার পদ দুইটা নিয়া । বর্তমান সভাপতির অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না কিন্তু অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান মসজিদের উন্নতির জন্য গায়ে খেটে অনেক শ্রম দেন । সবাই মৌখিকভাবেই তাকে সমর্থন করিয়া সভাপতির পদ দিয়েছিলেন । কিন্তু ক্যাশিয়ারি পদটা মসজিদের জায়গার মালিক নিজের হাতেই রাখিয়াছিলেন । সমস্যাটা সেইখানেই । ক্যাশিয়ার ছাহেব মসজিদের দান বাক্সটি যখন খোলেন তখন কোন সভাপতি বা অন্যকোন সদস্য লাগে না । উনি এবং উনার ছেলেই যথেষ্ঠ । ভিক্ষাবৃত্তি দুঃখিত মুষ্টিবৃত্তি করিয়া তোলা পাড়া-গায়ের চাউল গুলোরও ঠিক ঠাক হিসেব নাই – তাহাছাড়াও পাড়ার ছোট বড় সকলেই মাসিক সর্বনিন্ম ২০ থেকে আরম্ভ করিয়া সর্বাধিক ২০০ টাকা করিয়া জমা দেয় । ইহা ছাড়াও জু’মা বারের কালেকশন হইতে বেশ উঠানো হয় । সভাপতি সাহেব সমাজের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্গের কাছে গিয়ে নতুন মসজিদের জন্য হাত পেতে চেয়ে নিয়ে আসেন । মসজিদের চতুর্দিকের আয়ের মধ্যেও ইমাম এবং মুয়াজ্জিন ছাহেবের সম্মানি সময়মত দেওয়া যায় কেন ? সেখানেই সবার প্রশ্ন । নুরা মোল্লা, জায়গার মালিক, নিজের ক্যাশিয়ারি পদটি হাতছাড়া না করার জন্য তিনি ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবল্বন করে তার মধ্যে অন্যতম হইল সভাপতি বদল! কোন সভাপতি কোন অন্যায়ের নূন্যতম প্রতিবাদ করলেই নুরা মোল্লা তার অনুগত কয়েকজনকে সাথে নিয়া সভাপতি বদলের প্রস্তাব দেয় । পরের দিনই সভাপতি পরিবর্তন ! কিন্তু সভাপতি বেচারা নিতান্তই মোটা অনুদান দিতে পারে না বলে অনেকে কটাক্ষ করে এবং সভাপতি প্রার্থি আতাব আলী সে জন্য মসজিদেই যান না !
এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যেই হুজুর কেবলার আগমন ।
মুসু্ল্লিরা হৈচৈ করে উঠল- ও, এই কারণ তাহলে! কারা ঘটাইল এই ঘটনা, কোন বোয়াদবেরা এহেন ঘৃণ্যকাজ করিল । আব্বা হুজুর তো কথা দিয়েই ছিল সামনের শুক্রবার আমাগরে মসজিদের কমিটি ঠিক করিয়া দিবে । এরই মধ্যে এত বড় একটা বেয়াদবীর ঘটনা ঘইট্টা গেল ? ইত্যাদি ইত্যাদি…..
কেই এই চিরকুট দেওয়া মত ঘৃণ্য কর্ম করিয়াছিল, কার নির্দেশে, কে কে সাথে ছিল, উস্থিত সকলেই তাহা আচ করিতে পারিয়াছিল ।
কুদ্দুস বলিয়া উঠিল- কমিটি বানাই নাই তো, খালি নাম গুলান দিয়া কমিটির প্রস্তাব রাখছি । অমনি আব্বা হুজুর তার মোজাদ্দেদিয় আগুন ঝাড়লেন- “প্রস্তাব কি পদাধিকার (ডেজিগনেশন) উল্লেখ করে দেয়, কাকে কোন পদ দিব, সেটা এখানেই সিদ্ধান্ত করিয়া দিব”।
অপরাধীদ্বয় কিছু না বুঝিয়া পিছন থেকে মুসল্লিদের ফারি দিয়ে এসে হুজুর কেবলা হাত দুইখানা ধরে- আব্বা আমাগরে ভুল হইয়া গেছে। আমাগরে মাফ কইরা দেন আব্বা”। হুজুরের মোজাদ্দেদীয় তেজ আস্তে আস্তে খামশ হইল।
জু’মার সালাতের যে সময় গড়াইয়া যাইতেছে তাহাতে কাহারো ভ্রক্ষেপ নাই । পাঙখা বাবা মুয়াজ্জিন ছাহেব, পাঙখা চালিয়েই যাইতেছে । ইমাম ব্যাটা বার বার ঘরি দেখতেছেন । কিন্তু হুজুর কেবলাকে বলার সাহস পাইতেছে না । কারণ, যদি বেয়াদবি হয়ে যায় ! মাস্টার সাহেবও সকলের কৃত্তিকলাপ দেখিতেছেন আর মনে মনে মৃদু হাসিতেছেন, উচিত শিক্ষা হইতেছে ব্যাটাগুলোর। হুজুরের জালালি তেজ আজ উপস্থিত সকলেই দেখিল ।
ও দিকে নাহু ভাই, অন্যতম নিয়মিত মুসল্লি , হুজুর সালাতের সময় গড়াইয়া যায় ।
ফজর (ইমাম ছাহেবের নাম) , “কা’বলাল জু’মা শুরু কর, সালাত শেষে ইহার সমাধান করতিতেছি”।
সালাত শেষে আব্বা হুজুর উঠে দাড়ালেন সাথে পাঙখা মুয়াজ্জিন, ইমাম ছাহেব হুজুরের পাদুকা হাতে, মসজিদ হইতে জুহুরের আগেই (সম্ভবত তখন বেয়াদবি হইল না) বের হয়ে জুতা হাতে দরজার সামনে উপুরহয়ে কুকুরের ন্যায় পাদুকা পাতিয়া অপেক্ষা করিতে থাকিল । হুজুর দরজায় আসিয়া পাদুকা পড়া অবস্থায় বলিল – “আগে মিঞারা তোমরা ঠিক হও তার পর আমারে ডাকিয়ো” । ও পাশ থেকে হুজুরের রিকশা বাহক আঃমাকেল জোড় সমর্থন দিয়া উচ্চ স্বরে বলিয়া উঠিল –“হ হ, আগে আপনেরা ঠিক অন” ।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

রানার ব্লগ বলেছেন: শুরু টা ভালো এবং আগ্রহ উদ্দিপক পরবরতি সংখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম, আর একটা লাল শালু হতে জাচ্ছে আশা করি।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

ধূসর সপ্ন বলেছেন: চেষ্টা করব দাদা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.