নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষাই দরিদ্রদের জন্য সম্পদ।

সোনাগাজী

একমাত্র সোস্যালিষ্ট অর্থনীতি বাংগালী জাতিকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

সোনাগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হামোলীর জীবনটা ছিলো মরীচিকার মতো

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩৮



অবস্হাপন্ন পরিবার যখন দরিদ্র হয়ে যায়, উহা খুবই কষ্টকর ব্যাপার; পরিবারের ছেলেমেয়েরা খুবই ভোগে। হামোলী নামে ১ জন কিশোরীকে এই ভয়ংকর কষ্টের মাঝে আমি দেখেছিলাম।

আমার বাবা আমাদের গ্রাম থেকে দুরে, পাহাড়ের কাছে একখন্ড জমি কিনেছিলেন, উঁচু যায়গা; বাবার ইচ্ছা ছিলো সেই এলাকায় একটি খামার করবেন; উহা হয়ে উঠেনি, উনি সময় পাননি। আমি স্কুলে, নতুন করে খামার করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, আমি ওখনে ধান ও ডাল করতাম। জমিটা বিক্রেতার বাড়ীর সংগেই লাগানো ছিলো, জমিতে যেতে সেই বাড়ীর সামনে দিয়েই যেতে হতো। বিক্রেতা লোকটি গ্রামের অন্য লোকদের চেয়ে আলাদা ছিলেন, বাড়ীঘর বেশ ভালো, বাড়িটা মোটামুটি বেশ বড়, ১টি পরিবারই বাস করে; দেখলে মনে হয়, মোটামুটি ধনী।

জমি কেনার জন্য বাবার সাথে বেশ কয়েকবার গেছি বিক্রেতার বাড়ী; দেখলাম, পরিবারে ৮/৯ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে আছে, এটাই উনাদের একমাত্র সন্তান; ডাক নাম হামোলী। এদের কাপড় চোপড় বেশ ভালো। লোকটা কোন কাজকর্ম করতেন না; উনার বাবা উনাকে বেশ পরিমাণ জমি দিয়ে গেছেন; কিন্তু তিনি চাষ করেন না। উনার বয়স ছিলো প্রায় ৬৫'এর কাছাকাছি; চেয়ার নিয়ে কাছারীর সামনে বসে থাকতেন; জমিতে আমার আসা-যাওয়ার সময় উনার সাথে সামান্য কথাবার্তা হতো। পরে জানলাম, উনার প্রথমা স্ত্রীর ঘরে কোন সন্তান ছিলো না; মহিলা কম বয়সেই পরলোক গমন করেছিলেন। এই লোক দীর্ঘ সময় বিয়ে করেননি। গ্রামের ১টি মেয়ে উনার জন্য রান্নাবান্না করতো, তিনি সেই মেয়েকে বিয়ে করেছেন পরে, সেই ঘরের সন্তান হামোলী।

আমি যখন ৮ম শ্রাণীতে, দেখি লোকটার স্বাস্হ্য খুবই ভেংগে পড়েছে, কাপড় চোপড়ও আগের মতো ভালো নেই; শুনলাম যক্ষারোগে ভুগছেন। সেই বছরই লোকটির মৃত্যু হয়েছে; এর আগে উনি সব যায়গাজমি বিক্রয় করে ফেলেছেন, এমন কি থাকার বাড়ীটাও বিক্রয় করে ফেলেছিলেন। উনার পরিবার তখনো সেখানে; কিন্তু এক সময় উহা ছেড়ে দিতে হবে। হামোলীকে প্রায় দেখতাম ময়লা কাপড়ে একটা ছাগল চরাচ্ছে।

পরের বছর রবিশস্যের সময় আমি জমিতে ভেঁড়ীর ডাল করেছি; ভালোই হয়েছে; আমি স্কুল থেকে ফেরার পথে মাঝে মাঝে দেখে আসি। চৈত্রের এক সকালে আমি ডাল দেখতে গেলাম, দেখি সব পেকে গেছে; ২/১ দিনের মাঝেই লোক পাঠাতে হবে তোলার জন্য। আমি কয়েক ছড়া ডাল নিয়ে হামোলীদের বাড়ীর সামনে দিয়ে হেঁটে আসার সময়, দেখি হামোলী খুবই বিষন্ন মনে কাছারির সামনে দাঁড়ি্যে আছে, পরণে খুবই পুরাতন কাপড়; মনে হচ্ছে, আমাকে কিছু বলতে চায়, আমি আগে কখনো ওর সাথে কথা বলিনি; নিজের থেকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-হামোলী, তুমি কিছু বলতে চাও?
-চাচা, আপনারা ডাল তুলে নেয়ার সময় আমাদেরকে সামান্য ডাল দিয়ে যাবেন; আমরা শুধু শাক দিয়ে ভাত খাই।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম; আমি বললাম,
-জমিটা এক সময় তোমাদেরই ছিলো; এবারের ডালগুলো তোমাদের জন্য। কাল বা পরশু আমি লোকজন নিয়ে ডাল তুলতে আসবো, এবারের ডালগুলো তোমাদের দিয়ে যাবে।





মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

ডাল পুরোটাই দিয়েছিলেন?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১০

সোনাগাজী বলেছেন:



পুরোটাই।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:১৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: যারা দিতে জানে তাদের দিতেও ভালো লাগে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৪

সোনাগাজী বলেছেন:



আমাদের জাতির ইতিহাস, দরিদ্র জাতি।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৫

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো । শুভ কামনা আপনার জন্য

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩১

সোনাগাজী বলেছেন:



আমি ভালো করিনি, দেশ থেকে দুরে থাকটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: লেখক বলেছেন:
আমাদের জাতির ইতিহাস, দরিদ্র জাতি।



ভবিষ্যৎ পাল্টাবে বলে মনে করেন ?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৪

সোনাগাজী বলেছেন:



না, জলবায়ু পরিবর্তন ও নীচু মানের শিক্ষা আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ভূমিহীন হয়ে যাওয়া খুবই কষ্টের বিষয়। একপুরুষের কর্মফল অন্যপুরুষের কাধে আসে এমনি করেই।
-

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৬

সোনাগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশঘওয়ার পরও প্রায় শতকরা ২০ ভাগ মানুষ ভুমিহীন হয়ে গেছে; এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা ইহার ভিকটিম হয়েছে।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৭

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বেশ আবেগময়

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৭

সোনাগাজী বলেছেন:



গরীব থেকে অবস্হা হলে, মানুষ সুখী হয়; ধনী থেকে গরীব হয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা ইহাতে শোকে পাথর হয়ে যায়।

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৬

বাংলার এয়ানা বলেছেন:


দ্বানে কোন ক্ষয় নেই।
এই মহৎ গুন সবার থকে না।
ভাল থাকবেন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৯

সোনাগাজী বলেছেন:



বিশ্ব এখন কমপ্লেক্স, দান এখন আর কাজ করে না; ধনী থেকে গরীব হওয়ার সময় কেহ দান পায় না।

৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: সেই বছরের পর হামোলীর আর খোঁজ নিয়েছিলেন ? সে এখন কোথায় আছে জানেন কিছু ?

ভালো কথা আপনার এই সততাকে আমি কটাক্ষ করছি না কিন্তু !

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২০

সোনাগাজী বলেছেন:



সামান্য দিন মুজুরের সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো, সাম্প্রতিক খবর জানি না।

৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি মনে করি- শুধু নিজে ভালো থাকলে হবে না। আশে পাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হবে।
আসল আনন্দ সেটাই, নিজের ভাগ অন্যকে দিয়ে দেওয়া। এটা সবাই পারে না। অনেক বড় কলিজা লাগে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৪

সোনাগাজী বলেছেন:



বসুন্ধরা তার আশপাশের সবাইকে ভালো রেখেছে; আলম ব্রাদার্শ, শিকদার ব্রাদার্শরা, ফালুরা আমাদের দেশের মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে।

১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৭

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সেজন্যই আপনার অনেক ভক্ত।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২২

সোনাগাজী বলেছেন:



আমি ভালো কিছু এখনো করতে পারিনি, প্রবাসে কাজ করে সময় নষ্ট করেছি।

১১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাগাজী,




কী নিদারুন দারিদ্রের জীবন আমাদের দেশের প্রান্তিক মানুষদের! আমাদের সামর্থ্যের মুঠিতে অতো জোর নেই যে সব দারিদ্রতাকে মুষ্ঠাঘাত করতে পারি!

অল্পকথায় জীবনের গল্প বলে গেলেন। এসব লেখা আপনাকে অন্যরকম করে তুলে ধরে।
শুভেচ্ছান্তে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৯

সোনাগাজী বলেছেন:



ধন্যবাদ।

বর্তমান সভ্যতার জন্য আমরা মৃত জাতি, মানব জাতির দু:খ।

১২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: ক্লাস এইটের ছাত্র হলেও সেই অল্প বয়সে আপনি মন-মানসিকতায় অনেক বড় ছিলেন সোনাগাজী ভাই।

কত হামোলী যে আমাদের দেশে আছে! তাদের জন্য যাদের কাজ করার কথা ছিল তারা কি করে যে অথর্ব, অকর্মণ্য রয়ে গেল সেটা ভেবে আশ্চর্য হই! নাকি সেই মানুষগুলোর জন্মই হয়নি এই হতভাগ্য দেশে!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৫

সোনাগাজী বলেছেন:


আমাদের দেশের মানুষ নিজের পরিবারের বাইরের কারো কথা তেমন ভাবতে পারে না।

১৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গরিব হতে ধনী হলে মানুষ বেপরোয়া হয়ে যায় আর ধনী হতে গরিব হলে লজ্জা ও কষ্ট বাড়ে

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:১৭

সোনাগাজী বলেছেন:



ধনী থেকে গরীব হলে, সেটাকে বহন করা খুবই কষ্টকর; বিশেষ করে নারীদের পক্ষে।

১৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভূমিহীনতা আর অপরিণত পরিবার প্রধান এই দুই মিলে হামোলীর জীবন কে করে তুলেছিল দুর্বিষহ। এই ডিজিটাল সমাজ ব্যবস্থায় আরও কতভাবে যে মরীচিকার জীবন পার করছে কত হামোলি।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪৮

সোনাগাজী বলেছেন:



৫০/৬০ ভাগ বাংগালী মেয়ের জীবনটা কখনো জীবন হয়ে উঠে না।

১৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৩১

রানার ব্লগ বলেছেন: আহারে জীবন!!!

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ২:১৭

সোনাগাজী বলেছেন:


দরিদ্র পরিবারের নারীরা পরিবারের জন্য কিছু করতে চায়, কিন্তু অসহায়, কোন সুযোগ নেই।

১৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৪৬

কাছের-মানুষ বলেছেন: ঘটনাটি কষ্টের। আমি অনেক অবস্থা সম্পূর্ন্য পরিবারকে একসময় অর্থকষ্ট করতে দেখেছি ১০-১৫ বছরের ব্যাবধানে, আবার অনেক দরিদ্র পরিবারকে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে দেখেছি।

ভূমিহীন মানুষ অনেক কষ্ট করে, তারা দরিদ্রের চক্র থেকে সহজে বের হতে পারে না।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ২:১৮

সোনাগাজী বলেছেন:



গ্রামের মানুষ যদি ভুমিহীন হয়ে যায়, শেষ!

১৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ২:৩৬

কাছের-মানুষ বলেছেন: গলাকাটা ক্যাপিটালিজম দরিদ্রদের জন্য অভিশাপ! আমি ডেনমার্কে ছিলাম তাদের অর্থনিতিক সিষ্টেম ভাল, পুরোপুরি ক্যাপিটালিজম নয় আবার সমাজতান্ত্রিকও নয়, মিশ্র অর্থনিতি!

সরকার চিকিৎসা, শিক্ষা এবং শেষ বয়সে ভাল পেনশন এবং কম মূল্যে থাকার ব্যাবস্থা করে যদিও ট্যাক্স অনেক কাটে ইনকাম থেকে তবুও মানুষকে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য, চিকিতসার জন্য চিন্তা করতে হয়, ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু সম্পত্তি করতে হবে এমনও ভাবতে হয় না, সুখি জীবন! চাকরী চলে গেলে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ভাতা দেয় (পূর্বের চাকরিতে যেই বেতন পেত তার ৯০ শতাংশ)। অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা এমন হলেও জীবন সহজ হয়।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৬

সোনাগাজী বলেছেন:



স্ক্যানডিনেভিয়ানরা এখন মিশ্র অর্থনীতি করে সবার চেয়ে ভালো আছে।

১৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ২:৩৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: মানুষকে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য, চিকিতসার জন্য চিন্তা করতে হয় না

এই বাক্যে না লিখতে ভুলে গেছিলাম।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৭

সোনাগাজী বলেছেন:



আমাদের সরকার ও শিক্ষিত বুঝতে পারলো না, দেশের সবাইকে শিক্ষিত করাই ১ম দায়িত্ব।

১৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২৪

বিটপি বলেছেন: আমরা দরিদ্র জাতি নয়, অলস জাতি। আমাদের আবহাওয়া আমাদেরকে অলস করে ফেলেছে। এদেশের গড় তাপমাত্রা যদি ২০ ডিগ্রী হত, এবং জাতি যদি জাপানিদের মত হত, তাহলে কোন সন্দেহ নেই যে এদেশের মাটি থেকে সোনা বের করে ফেলা যেত।

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩৯

সোনাগাজী বলেছেন:


আব হাওয়া আমাদের অলস করায় আমরা দরিদ্র হয়ে গেছি, আজগুবি কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.