নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষাই দরিদ্রদের জন্য সম্পদ।

সোনাগাজী

একমাত্র সোস্যালিষ্ট অর্থনীতি বাংগালী জাতিকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

সোনাগাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি আবার কোন দেশী বিল গেইটস?

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১৩



এক কপিশপের ক্যাশিয়ার আমার উপর অকারণে রেগে গিয়েছিলো; আমি তাকে আরেকটু রাগানোর চেষ্টা করেছিলাম।

পরিচিতদের একজন গ্রুপের সবাইকে ব্রুকলীনের ইটালিয়ান পাড়ার একটি রেষ্টুরেন্টে লান্চের নিমন্ত্রণ করেছিলেন; আমি ট্রেনে গেলাম; এক্সপ্রেস ট্রেন, ২০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেলাম, কেহ আসেনি; সাবওয়ের কাছেই খুবই সুন্দর একটি কফিশপ, লাইনে দাঁড়ালাম। মধ্য বয়সী ইটালিয়ান পুরুষ ক্যাশিয়ার একজন সাদা মহিলাকে কফি বানিয়ে দিচ্ছে ও মহিলার সাথে বকবক করছে; লাইনে, আমার সামনে মাত্র ১ জন কাষ্টমার, ১ জন আফ্রিকান আমেরিকান মেয়ে। দোকানের ভেতরে, একটি সুশ্রী ইটালিয়ান মেয়ে ব্যাগল, পেষ্ট্রি, কেইক, ইত্যাদি সাজিয়ে রাখছে। আমার সামনের মেয়েটা ১টা টোষ্টেড বেগল নিলো; সে আগের থেকে খুচরা পয়সা গুণে হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছিলো, পয়সাগুলো ক্যাশিয়ারকে দিলো; ক্যাশিয়ার, খুচরা পয়সাগুলোকে গুণে নিচ্ছে, আমি হতবাক ও বিরক্ত, গুনে নেয়ার কি আছে! মেয়েটা ব্যাগল নিয়ে সরলো না, সে খুবই নরম ও নীচু গলায় ক্যাশিয়ারকে বললো,
-আমার কাছে আর পয়সা নেই, আমাকে ১ কাপ কফি ফ্রি দেবেন?
-সরে দাঁড়াও, এটা রেডক্রস নয়, এটা ব্যবসা।

মেয়েটা সরে যেতেই আমি মেয়েকে বললাম,
-দাঁড়াও, আমি তোমাকে কফি কিনে দেবো।
ক্যশিয়ারকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
-ওকে ১ কাপ কফি দাও, পয়সা আমি দেবো!

লোকটি রেগে, উঁচু গলায় আমাকে বললো,
-তুমি আবার কোন দেশী বিল গেইটস? তোমার কাছে আমার থেকে বেশী টাকা? বের হও দোকান থেকে!
-আমি বের হচ্ছি না, তুমি কফি বানাও।

ভেতরের কাজের মেয়েটা ক্যাশিয়ারকে বললো,
-আংকেল, তুমি ভেতরে যাও, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।
-তুমি এই লোককে কফি দিলে, তোমার চাকুরী এখানেই শেষ। নিজ দেশে খেতে পায় না, এইদেশে এসে বিল গেইটস হয়ে যায়।

লোকটা রেগে মেগে পেছনে চলে গেলো। কাজের মেয়েটি ঝটপট ২ কাপ কফি বানিয়ে আমার হাতে দিয়ে চলে যেতে ইশারা করলো; আমি পয়সা বের করছিলাম, সে চলে যেতে ইশারা করলো। আফ্রিকান আমেরিকান মেয়েটা পরিস্হিতি গরম দেখে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অবস্হা দেখছিলো; মেয়েটাকে কফি দিয়ে দোকানের নাম ও ঠিকানাটা দেখে নিলাম।

২ সপ্তাহ পরে প্রেসিডেন্ট-ডে; আমি দোকানের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ২০০ লিফলেট তৈরি করলাম; লিফলেটে বড় করে ইংরেজীতে লেখা:
"প্রেসিডেন্ট-ডে'এর সন্মানে আমরা আজ, দিনের ১১:০০ তা থেকে ১:০০ টা অবধি জনপ্রতি ১টি ছোট কফি ফ্রি দিচ্ছি, শুভেচ্ছা।"

আমি সেই কফি দোকানের সামনের সাবওয়ে ষ্টেশনে এসে নেমে সব জরীপ করে দেখলাম; কফিশপের ৫/৬ দোকান পরে, একটি 'সেলফ হেলপ লন্ড্রি', সেখান থেকে পুরো এলাকাটা দেখা যায়। ভেবেছিলাম, আমি নিজেই লিফলেট বিলি করবো; দেখি, ৩ জন মেক্সিকান ষ্টেশনের বাহিরে আড্ডা দিচ্ছে; ১জনকে জিজ্ঞাসা করলাম লিফলেটগুলো বিলি করতে পারবে কিনা; তাকে ১০ ডলার হাতে দিয়ে, কফি দোকানটা দেখায়ে দিয়ে, আমি সরে গেলাম। একটু ঘুরে গিয়ে লন্ড্রিতে বসলাম। ৮/১০ মিনিটের মাঝে ২টি মেয়ে ও ১টি ছেলে লিফলেট হাতে দোকানে ঢুকলো, ৬/৭মিনিট পর কফি হাতে বেরিয়ে গেলো। এরপর মধ্য-বয়সী ২জন মহিলা লিফলেট হাতে দোকানে ঢুকলো; আরও ১জন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে; সেই মহুর্তে, ক্যাশিয়ার লোকটা ১টা লিফলেট হাতে দোকান থেকে বের হলো; সে অনেকটা দৌঁড়ে গিয়ে, মেক্সিকানের হাত থেকে লিফলেটগুলো কেড়ে নিয়ে, গার্বেজ ক্যানে ফেলে দিলো ও মেক্সিকানকে ধাক্কা মারলো; ছেলেটা ওখান থেকে কেটে পড়লো।

ক্যাশিয়ার দোকানে ফেরত এসে, ভেতরের কাষ্টমারদের বের করে দিয়ে, দোকানের সার্টার অর্ধেক নামি দিয়ে, সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায়ে, সেলফোনে অনেকক্ষণ কথা বললো। ভেতর থেকে কাজের মেয়েটা বেরিয়ে এলো, কথা বলছে ক্যাশিয়ারের সাথে। প্রায় ১৫ মিনিট পর, একজন মাঝারি বয়সের মহিলা এলো; দোকানে সাটার তুলে দিলো; ৩ জনে ভেতরে গেলো। আমি লন্ড্রির সামনে দাঁড়িয়ে লোকজনের চলাফেরা দেখছি। দেখি, ক্যাশিয়ার দোকান থেকে বের হয়ে সাবওয়েতে ঢুকলো। ১০ মিনিট পর আমি সাবওয়ে ষ্টেশন চেক করে দেখলাম, সে নেই; ট্রেনে করে কোথায়ও চলে গেছে।

আমি কফিশপে গেলাম, মাঝারি বয়সের মহিলাটি ক্যাশে, আমার সামনে ৪ জন কাষ্টমার, কাজের মেয়েটা কফি বানাচ্ছে। সে সামনের কাষ্টমারকে কফি ও একটুকরা কেইক দেয়ার সময় কাষ্টমারদের দিকে একবার তাকালো; মনে হলো, সে আমাকে দেখেছে; তবে, তার মুখে কোন রিএ্যাকশন দেখলাম না, সে খেয়াল করেনি, বোধ হয়; আমাকে মনে রাখার মতো তেমন কোন কারণ ছিলো না। দেখলাম, ক্যাশিয়ার যখন সবে মাত্র লাইনের ১ম ব্যক্তিকে ডাকছে, মেয়েটি ১টা কফি বানালো, এক টুকরা কেইক হাতে ক্যাশ মেশিনের পাশে এসে আমাকে ইশারায় ডাকলো; আমাকে ইশারা করলো কিনা আমি ঠিক বুঝলাম না; সে ক্যাশ মেশিনের পাশ দিয়ে কফি ও কেইক হাতে বেরিয়ে এসে, আমাকে কেইক ও কফি হাতে দিয়ে বললো,
-প্লীজ চলে যাও, পয়সা দেয়া লাগবে না।
আমি টিপস দিতে চাইলাম; সে বললো,
-প্লীজ আজকে নয়, অন্য আরেক দিন।


মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

রি-পোস্ট মনে হচ্ছে।


লিফলেট বিতরণের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে কতক্ষণ ভাবতে হয়েছে?

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:



গন্ডগোল করার দরকার হলে, আমি সময় নিয়ে ভেবে টেবেই করি।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- গল্প ভালো লিখেছেন।
- আমার বড়বোন জামাই একবার তার এক চাপাবাজ বন্ধুর নামে ইলেকশনের আগে দোয়া চাওয়ার পোস্টার ছাপিয়ে দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছিলো। তবে সে যেই দলের সমর্থক তার বিপক্ষ দলের নামে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৪

সোনাগাজী বলেছেন:



খারাপ নয়; কোন কারণ ছিলো?

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৩

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: সৌদী আরবে বহুবার এমন দেখেছি যে খাবার কিনে বা কিনতে এসে বলেছে টাকা নাই এবং কোন বাক্য ব্যায়ে ফ্রিতে খাবার দিয়ে দিয়েছে। মক্কায় প্রচুর দোকান আছে, যেখানে মানুষ টাকা দিয়ে রেখে যায়, দোকানে কিছু সময় পর পর ঘোষণা দিয়ে ফ্রিতে খাবার বিলি করা হয়।

আমি নিজে কয়েকবার লংড্রাইভে থাকা অবস্থায় এমন হয়েছে যে পকেটে খুচরা রিয়াল নাই, কিন্তু চা/কফি কিনে ফেলেছি, কেউ টাকা নিয়ে এতটুকু শব্দ করে নি। একবার শুধু একজন বলেছিলো, 'এত দামী গাড়ি চালাও, আর এক রিয়াল সাথে রাখো না?' অমনি পাশ থেকে একজন তাকে ধমক লাগিয়ে দিলো!

একবার দেখেছিলাম খুব দামী রেষ্টুরেন্টে একজনকে গিয়ে খাবার অর্ডার দিতে, অর্ডার দিয়ে বললো সাথে কোন টাকা নাই, বাচ্চার এই খাবার খেতে ইচ্ছা হচ্ছে, তাই অর্ডার করেছে। ক্যাশিয়ার সাথা সাথে জিজ্ঞাসা করলো যে পুরা পরিবারে কতজন, এবং সেই অনুযায়ী খাবার দিয়ে দিলো।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

সোনাগাজী বলেছেন:



আরবেরা অতিথিপরায়ন, সন্দেহ নেই; আমেরিকায়, ইটালিয়ান ও আইরিশেরা একটু রেষিষ্ট!

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আপনার প্রবাস জীবনটা খুব বৈচিত্রপূর্ণ ও কৌতুহলদ্দীপক...

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

সোনাগাজী বলেছেন:


বাংলাদেশেও দরকার মতো, আমি এটাসেটার চেষ্টা করেছি মোটামুটি

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৫

কামাল১৮ বলেছেন: ছোট বেলায় একটু দুষ্ট ছিলেন।কিছুটা স্বভাব রয়ে গেছে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩০

সোনাগাজী বলেছেন:



কেউ অকারণে গন্ডগোল করলে, এটাসেটা চেষ্টা করতাম।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৭

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ৯৯৯ কল করলে জেলে যেতে হতো,

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:



এই ধরণের ব্যাপারে ৯১১ কল করলে পুলিশ আসতো?

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১৩

শাহ আজিজ বলেছেন: পারেন ও আপনি :P

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩৬

সোনাগাজী বলেছেন:



মাঝে মাঝে ছোটখাট ব্যবস্হা নিতে হয়।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৪৭

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: লেখক বলেছেন:
গন্ডগোল করার দরকার হলে, আমি সময় নিয়ে ভেবে টেবেই করি।


সরল স্বীকারোক্তি ভালো লেগেছে।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫৮

সোনাগাজী বলেছেন:


গন্ডগোল করলে, ইহার ফলাফল কি হতে পারে, সেটা নিয়ে আগে ভাবতে হয়।

৯| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:০১

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: আপনি তো পুরোদস্তুর আমেরিকান মুভির মত ঘটনা ঘটালেন

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:০৭

সোনাগাজী বলেছেন:



একেবারে চুপ হয়ে গেলে, মানুষজন বেঠিক সিগন্যাল পাবে।

১০| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: কফিওয়লা কে শিক্ষা দিয়ে দিলেন।
আমারও এরকম করে বহু দুষ্টলোককে শিক্ষা দিতে ইচ্ছা করে।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

সোনাগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশে এসব চেষ্টা করবেন না, বিপদে পড়বেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.