নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রভাতফেরির গল্প

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৩

আজ একুশে ফেব্রুয়ারী, মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।১৯৫২ র এমনি এক ফাল্গুনে মাতৃভাষার উপর আগ্রাসন ঠেকাতে হাজার ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এসেছিল।বুকের রক্ত ঢেলে রক্ষা করেছিল প্রানের ভাষার সন্মান।তখন আমাদের কাছে স্বাধীন দেশ ছিলনা, এই দিনটিকে পালন করার স্বাধীনতা ছিলনা।কেমন ছিল তখনের একুশে ফেব্রুয়ারী???মানুষ কিভাবে পালন করতো দি্নটিকে??খুব কি জাঁকজমক হতো??হয়তো পাকিস্থান সরকারের কড়া নজরদারিতে সেটা সম্ভব হতো না কিন্ত তখন মানুষ অনেক বেশি দরদ নিয়ে,অনেক বিনম্র চিত্তে দিনটি পালন করতো।যা দেখিনি বা কোনো আপনজনের কাছে শুনিনি তা শুধু কল্পনা করা যায়।কিন্ত যে সময়গুলো দেখছি সেটা নিয়েই আমার লেখা।





একুশে ফেব্রুয়ারীর সবচে চমতকার আর সুন্দর জিনিসটি হচ্ছে প্রভাতফেরি।শীত শীত ভোরে উঠে খালি পায়ে হেটে হেটে শহীদ মিনারে যাওয়া।সমস্ত ব্যাপারটির মাঝেই কি যেন একটা মায়ামায়া রুপকথার মত কিছু আছে।আর সেই শিহরন জাগানো সুর----আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি—এই সবকিছুই একটা অদ্ভুত আবেশ সৃষ্টি করে,মনটাকে শিশির ভেজা ফুলের মত সিক্ত করে শ্রদ্ধা আর ভালবাসায়।

আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে খুব উত্তেজিত থাকতাম।ক্লাস ৫ পর্যন্ত স্কুল ছিল বাড়ি থেকে অনেক দুরে।তাই সেদিন সকালে উঠে বাবার সাথে স্কুলে যেতাম।তখন অনেক অনুষ্টান হতো।বাবা আগের রাতেই ফুল কিনে রাখতেন আমার জন্য।একবার ফুল আনতে ভুলে যাওয়ায় আমার সে কি কান্না।অনেক ছোটবেলার কথা তাই বেশি কিছু মনে পরে না।

হাই স্কুলে পড়ার সময় স্কুল ছিল বাসার কাছে।হেটেই যেতাম প্রতিদিন।তখনকার একুশে ফেব্রুয়ারীগুলো আমার সবচে বেশি ভালোলাগত।তখন আগের দিন রাতেই আশেপাশের বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে রাখতাম।আগে থেকে ফুল না নিলে সমস্যা ছিল কারন তখন কারো বাগানে ফুল থাকতো না সব লুট হয়ে যেত।এত ছাত্রছাত্রি এলাকাতে সবারই তো ফুল দরকার শহীদ মিনারে দেবার জন্য।ফুল জোগাড় হলে তারপর লাগবে আলতা।কিন্ত এখন তো মেয়েরা আলতা ব্যাবহার করেনা।তাই খুজে ফিরতাম আশেপাশের বাড়িতে নতুন বউ কে আছে।তার কাছে থেকে আলতা নিয়ে পায়ে পড়তাম।তারপর খুব ভোরে বান্ধবীদের সাথে বের হতাম স্কুলের উদ্দেশ্যে।সেদিন সবাই সকালে উঠতো ।রাস্তায় অন্য বন্ধুদের সাথে দেখা হত।সবাই এক উদ্দেশ্যে একদিকেই চলেছে।খালি পায়ে গ্রাম্য পিচঢালা রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে যেতাম।বাসাগুলো থেকে মানুষ স্নেহমাখা চোখে তাকিয়ে আমাদের দেখত।এখনও যেন দিনগুলো দেখতে পাই।বড় ভাললাগত পরিবেশটা।স্কুলে গিয়ে কত আড্ডা কত হাসি বন্ধুদের সাথে,যদিও সময়মত প্রভাতফেরী কখনোই শুরু হতোনা।নানা কারনে সময়ের হেরফের হতো কিন্ত তাতে যে খারাপ লাগত তা নয়।আমাদের প্রভাতফেরী বেশ বড় এলাকা দিয়ে ঘুরে আবার স্কুলে ফিরে আসত তারপর আমরা ফুল দিতাম।আমাদের স্কুল প্রাঙ্গনেই ছিল আমাদের শহীদ মিনারটি।রড দিয়ে জাতিয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরী সাধাসিধে চেহারার শহীদ মিনারটির অবস্থান ছিল এসেম্বেলী মাঠের সামনে বড় একটা কৃষনচুড়া গাছের নিচে।ফুলের মৌসুমে অসংখ্য ফুলে ফুলে ভরে থাকত শহীদ মিনারের বেদী।দেখে মনে হত প্রকৃতিও যেন জাতির আত্মত্যাগি সাহসি সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।প্রভাতফেরীর পর হাল্কা নাস্তা দেয়া হত।তারপর শুরু হত অনুষ্ঠান—নাচ,গান,আবৃত্তি,নাটক।সব শেষ করে বাসায় ফিরতাম।দিনটা খুব ভাল কাটতো।স্কুলে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ এবং প্রাক্তন ছাত্ররা উপস্থিত হতো তাই চারিদিকে একটা উতসব উতসব ভাব চলে আসত।





কলেজ পর্যন্ত এভাবেই কেটেছে।ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশ দেখলাম।এখানে মাঝরাতেই হলগুলো থেকে প্রভাতফেরী বের হয়।শহীদ মিনার প্রাঙ্গন আল্পনায় সজ্জিত হয় আগেই।রাত১২টার পর সকলে লাইন করে পুস্পস্তবক দিয়ে আসে।এখানেও আলো,হাসিগল্প,উতসব—সব মিলিয়ে ভাললাগে।





এবার আমার মায়ের মুখে শোনা একুশের গল্প বলি।তিনি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি।৮৬ থেকে ৯২ এর মাঝের সময় হবে তখন।খুব ভোরে অন্ধকার থাকতেই মেয়েদের হলগুলো খুলে দেয়া হত।সেই আধো অন্ধকারে সাদা কামিজ গায়ে,খালি পায়ে,ফুল হাতে মেয়েরা বের হয়ে আসত।ছেলেমেয়েরা সবাই লাইন করে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের দিকে যেত।হাল্কা আলো,শীত শীত আবহাওয়া,সেই সাথে সবার কন্ঠে গুন গুন করে আমার ভায়ের রক্তে রাঙ্গানো…গানটির সুর,ভোরের মিষ্টি বাতাস,ফুলের গন্ধ---সব মিলিয়ে কি যেন যাদুর পৃথিবী তৈরী হত।আমার মা বলেন সেসব দিন মনে পড়লে এখনও তিনি শিহরন অনুভব করেন,তখনও করতেন।



আমাদের সময় পরিবর্তন হয়েছে।সেই মায়াময় দিনগুলো নেই।এখন কেউ মুখে গান গেয়েগেয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায় না।সাউন্ডবক্সে গান বাজে এখন। তা যাই হোক।এখনও ফাল্গুন আসে,একুশ আসে।আমরা ফুলে ফুলে ভাসিয়ে তা পালন করি, অনন্তকাল ধরে করবো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪০

তুহিন আল মামুন বলেছেন: বিজ্ঞান মানুষের জীবনে বেগ দিলেও তার আবেগটা যে কেড়ে নিয়েছে তার একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আপনার লেখায় । আমাদের সময় পরিবর্তন হয়েছে।সেই মায়াময় দিনগুলো নেই।এখন কেউ মুখে গান গেয়েগেয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায় না।সাউন্ডবক্সে গান বাজে এখন। । তবে এই ফাল্গুন ও একুশ সেই ফাল্গুন ও একুশের মতো কি ??

আমার দেখা বিজয় দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারী আর আগের মতো নেই । নেই আগের মতো গাম্ভীর্য ধারার ভাব এখন শুধু আছে হাসি আর অনন্দের মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ । এখন বিজয় মানে খুলা মনে নিজের পছন্দের কারো সাথে হেটে চলা এখন বিজয় মানে বাজার থেকে কয়েকটি টাকার ফুল কিনে শহীদ মিনার বা স্মৃতি সৌধে দিয়ে আসা ।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৫

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনি তাহলে আমার লেখার মাঝে সামান্য হতাশাটুকু খেয়াল করেছেন!!!!
আসলে আমার ধারনা ছিল আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মায়ের মত একুশ দেখবো,সেই মায়াময় পরিবেশে ফুল হাতে যাব কিন্ত বাস্তবে দেখলাম সবকছু অনেক বদলে গেছে।

তবে এটা বুঝি যে বদলানোটাই স্বাভাবিক।অনুষঠান যতই বদল হোক সেই ৫২ বা ৭১ এর চেতনা যেন থাকে সবার হৃদয়ে চিরঅম্লান।এটাই কাম্য তাই না?????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.