নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেনা জীবনের অচিন কাব্য

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০১

বাতাসের ধাক্কায় দরজাটা বিকট শব্দ করে বন্ধ হয়।রূপ চমকে উঠে।এতক্ষন ঠিকই ছিল কিন্ত এখন তার কেমন যেন ভয়ভয় করতে থাকে।পাঁচতলার এই নির্জন ফ্লাটে আজ সে একদম একা।তার স্বামী অয়ন আজ তাকে ছেড়ে চলে গেছে।এখন তার মন গভীর দুঃখে নিমজ্জিত হয়ে থাকার কথা কিন্ত তার বদলে রূপের প্রচন্ড ভয় লাগতে থাকে।সে বিছানা থেকে উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিতেই সারা ঘরে উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পরে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রূপ দেখল রাত প্রায় এগারোটা।সেই যে সন্ধ্যার পর অয়ন বাসায় ফিরে কোনো কথা না বলে ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল তার পর থেকেই সে অন্ধকার ঘরে বসে আছে।হঠাত করেই যার তিন বছরের সুখের সংসার এভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে তার মনে গভীর বিষাদ ছাড়া আর কোনো অনুভুতি থাকার কথা না কিন্ত সে কিছুটা অবাক হয়েই লক্ষ্য করলো যে তার ভীষন ক্ষুধা পেয়েছে।রূপ রান্না ঘরে গিয়ে নিজের জন্য কিছু খাবার গরম করে নেয়।সকালের ঝগড়ার পর অয়নের মন গলাতেই সে গরুর মাংশ আর খিচুরী রেঁধেছিল।ভেবেছিল দুপুরে একসাথে খাবে কিন্ত অয়ন ফিরল সন্ধ্যার পর।ফিরে তাকে কিছুই বলল না শুধু ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেল,তোমার সাথে ঘর করা সম্ভব না আমার পক্ষে তাই চলে যাচ্ছি তোমার জীবন থেকে।রূপ দুপুর থেকেই ক্ষুধার্ত কিন্ত খেতে বসেই আর খাওয়ার ইচ্ছা থাকলনা।সে জোর করেই একগ্রাস খাবার মুখে দেয় কারন মন খারাপ করে না খেয়ে থাকলে কোনো লাভ হবে না তাছাড়া খেতে তো তাকে হবেই।খাওয়া শেষে লাইট জ্বালিয়ে রেখেই সে শুয়ে পড়ে।একা ফ্লাটে থাকার ভয় তাড়াতেই হয়ত সে তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে।







অয়নের সাথে রূপের পরিচয় হয়েছিল খুব অদ্ভুতভাবে।আজ থেকে বছর চারেক আগে এক দুপুরে রূপ তার প্রিয় রেস্টুরেন্ট এ বসে এক বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করছিল।এই রেস্টুরেন্টের পেছনে এক চিলতে বাগান।সেখানে কিছু টেবিল পাতা,কিছু গাছ লাগানো আর ছায়ার জন্য টেবিলের উপরে ছাতার মত ছাউনি।এখানেরই বাগানের এক কোনে,গোলাপী ফুলে ছাওয়া বাগানবিলাসের ঝোপের পাশের টেবিলটা তার খুব প্রিয়।এটাকে তার কেমন যেন নিজের নিজের মনে হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের শুরুতেই একদিন সে জায়গাটা আবিষ্কার করে।তখন থেকেই তার এখানে নিয়মিত আনাগোনা।প্রায়ই তাকে দেখা যেত এই টেবিলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে অথবা একা একা উদাস বসে মগ ভর্তি চায়ে চুমুক দিতে।এইখানে এসে টেবিলটা ফাঁকা না পেলে তার মন ভীষন খারাপ হয়ে যায়।

সেদিনও সে একমগ চা নিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করছিল।হঠাত কি মনে হতে ব্যাগ থেকে সদ্য কেনা জীবনানন্দ দাশের কবিতা সমগ্র বের করে গোটা গোটা অক্ষরে লিখল, মার্শিয়া মেহরীন রূপকথা।নিজের নামটি বই এর পাতায় লেখার পর সে তার প্রিয় কবিতার পাতা গুলো খুলে দেখে।এই বইটি তাকে আবার কিনতে হল এক বন্ধুর কারনে।বন্ধুটি তার বইটি ধার নিয়ে তারপর কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে।মনে মনে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে যখন বান্ধবী এসে ডাক দিল তখনি রূপ উঠে আসে।তারাতারিতে যে সে বইটি ফেলে এসেছে তা তার মনে থাকেনা।পরদিন আবার সেখানে গেলে ক্যাশকাউন্টার থেকে ছেলেটি ডেকে বলে,আপু আপনি কি এই বইটা ফেলে গেছেন?গতকাল এক ভাইয়া বইটা এখানে জমা দিয়ে গেছে।আপনি আসলে তো ওখানেই বসেন তাই জিজ্ঞাসা করছি।রূপ বইটি হাতে নিয়ে টেবিলে এসে বসে।চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বইটা খুলে সে অবাক হয়ে যায়।কারন যেখানে তার নাম লেখা ছিল তার নিচেই অপরিচিত হস্তাক্ষরে লেখা, রূপকথা! বাহ!খুব সুন্দর নাম তো! রূপ লেখাটা পড়ে মুচকি হাসে।তার বাবা বাংলার অধ্যাপক।তিনি তার আদরের ছোট মেয়েটির সখ করে এই নাম রেখেছেন।এই নাম নিয়ে তার যে জীবনে কত রকমের মন্তব্য শুনতে হয়েছে তার ঠিক নেই।বইএর আর একটি পাতা উলটে সে দেখে সেখানে লেখা আছে, সে কোনো অচিনপুরের রাজকন্যা নয় সে নিজেই এক রূপকথা…তার পাতায় পাতায় কত যে রূপ,রং আর রহস্য…এক অচিন যুবকের ইচ্ছা হয় পাতাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে,রূপকথার গোপন রহস্য উন্মোচন করতে…কিন্ত তার সামনে একসমুদ্র ব্যবধান,সে কি পারবে সেই ব্যবধান পাড়ি দিয়ে তার জগতে যেতে… এবং সৃষ্টি করতে রূপকথার মাঝে নতুন আরেক রূপকথা?এই পাতার নিচের দিকে লেখা, প্রিয় কবির বই দেখে হঠাত কবি হতে ইচ্ছা হল।আসা করি ক্ষুব্ধ হবেন না।







রূপের কেমন রাগ রাগ লাগতে থাকে।এই রকম কবিতা কেউ লেখে? এইসব শব্দমালার আড়ালে কোনো গূঢ় ইঙ্গিত আছে কিনা কে জানে?কিন্ত সে রেগে উঠতে গিয়েও ঠিকমত রাগ করতে পারেনা।কেন কে জানে।হয়ত অল্প হলেও ভাললাগা কাজ করছিল তখন।রূপ একটা ঝোঁকের বসেই আজব একটা কাজ করে বসে।ব্যাগ থেকে কলম বের করে বইএর পাতায় লেখে, আপনি যতবড় জীবনানন্দ দাশ এর কাব্যানুরাগী হন আর যতই আপনার মনে গভীর ভাবের সঞ্চার হোক না কেন, অন্যের বই এ এবং অন্যের নাম দিয়ে বিনা অনুমতিতে কবিতা লেখা আপনার একদমই উচিত হয়নি।তারপর কাউন্টারে গিয়ে জিগাসা করে, যে লোকটা এই বই রেখে গেছে সে কি এখানে প্রায়ই আসে?উত্তর আসে, হ্যাঁ আপু,দুইমাস ধরে প্রায়দিনই সে দুপুরের দিকে আসে,শুধু শুক্র শনিবার বাদে।রূপ কাউন্টারে বইটি রেখে বলে,এবার সে আসলে এই বইটি তাকে দিয়ে দিও।







পরদিন দরকার না থাকলেও শুধু কৌতুহলের বসে সে রেস্টুরেন্ট এ যায়।কাউন্টারের ছেলেটি সবগুলো দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে তার দিকে বইটা এগিয়ে দেয়।রূপ বই খুলে দেখে সেখানে লেখা, অন্যায়ের জন্য দন্ড দিতে রাজি আছি।আপনার বই এ লেখার জন্য এক মগ চা আর আপনার নাম নিয়ে লেখার জন্য পেস্ট্রি আর হট প্যাটিস।অপরাধি জরিমানা দেওয়ার জন্য আগামী শুক্রবার ঠিক বিকেল চারটায় সেই স্থানে উপস্থিত থাকবে যেখানে বইটি ফেলে গিয়েছিলেন।আসা করি উপস্থিত হয়ে অপরাধিকে ভার মুক্ত করবেন।রূপের মুখে অজান্তেই একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠে।রাতে বই এর লেখাগুলো বার বার দেখে আর ভাবে সত্যিই কি যাওয়াটা ঠিক হবে? কুতসিত দেখতে বুড়ো কোনো লোক যদি হয়?অথবা বাজে চরিত্রের কোনো লোক হলে?সে অবশ্য চাইলেই রেস্টুরেন্ট এ জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে পারত কিন্ত কেমন যেন সংকোচ হচ্ছিল।এমনিতেই কাউন্টারের ছোকড়াটা যেমন বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছিল।যাই হোক না কেন রূপ ঠিক করে যেয়ে দেখবে শেষ পর্যন্ত কি হয়।শুধু তো দেখাই হবে আর কিছু তো না,সে নিশ্চয় একদিন দেখা করলে কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পরবে না।





পরদিন চারটার একটু পরে গিয়ে দেখে একটা ছেলে তার প্রিয় টেবিলে দুহাত রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে।সে কাছে এসে দাঁড়াতেই ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো।রূপের মনেহল বাহ!ছেলেটি তো বেশ দেখতে।তার বয়স রূপের চেয়ে দু-তিন বছর বেশিই হবে।লম্বা সুঠাম শরীরে নীল জিন্স আর সাদা শার্ট দারুন মানিয়ে গেছে।ফর্সা মুখে হাল্কা দু তিন দিনের দাড়ির আভাস চেহারাটাকে আরো পুরুষালী করে তুলেছে।রূপ তার সামনে কেমন যেন সংকোচ বোধ করে কিন্ত ছেলেটি হাসি মুখে নিজের পরিচয় দেয়।সেই থেকে অয়নের সাথে পরিচয়।প্রথম দিনেই অয়ন রূপের আস্থা অর্জন করে ফেলেছিল।তাই যোগাযোগটা বজায় ছিল।অয়নের বাসা রাজশাহীতে,সেখানেই স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়।চাকরি নিয়ে মাস তিনেক হল ঢাকায় এসেছে।অফিসটা রেস্টুরেন্ট এর কাছে তাই প্রায় দিন লাঞ্চ টাইম এখানে কাটায় সে।এখানকার চা টা তার খুবই পছন্দ তাই সুযোগ পেলেই আসা হয়।রূপ তখন সদ্য পাশ করে চাকরির চেষ্টায় আছে।সময় ছিল তাই অফুরন্ত।মাঝে মাঝেই তাই অয়নের সাথে বসা হত সেই টেবিলটাতে।রূপের খুব ভাল লাগত তার সাথে আড্ডা দিতে।ছেলেটি রূপের মতই বইএর ভক্ত তাছাড়া সে জানেও প্রচুর।সময়টা তাই খুবই ভাল কাটত তার সাথে।শুধু মাঝে মাঝে একসাথে বসে চা খাওয়া এভাবেই কেটে গিয়েছিল একটা বছর।কেউ কাউকে ভালবাসার কথা জানায়নি।আসলে আলাদা করে তাদের জানানোর কিছু ছিল না।দুজনের প্রতি দুজনের ভাললাগাটা তাদের দুজনের কাছেই ছিল স্পষ্ট।ততদিনে রূপ একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে।অন্যসব দিনের মত অফিস শেষে দুজন সেই টেবিলটাতেই বসে গল্প করছিল।চারিদিকে তখন ঘনায়মান সন্ধ্যার আঁধার,ব্যাস্ত নগরীতে একে একে জ্বলে উঠছে রঙ্গিন নিওন আলো।তখন এক অদ্ভুত আলো অয়নের চোখেও জ্বলে উঠেছিল, সে হঠাত গল্প থামিয়ে বলে উঠেছিল, রূপ তোমার সাথে গল্প করতে আমার খুব ভাল লাগে।আমি এমনটা সারা জীবন করতে চাই তবে এভাবে নয়।বর্ষনমুখর রাতে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে পাশাপাশি শুয়ে মোমের আলোয় তোমার মুখ দেখতে দেখতে অথবা শরতের রাতে ছাদে শুয়ে তারা ভরা আকাশ দেখতে দেখতে।সে সুযোগ কি আমি পাব?রূপ কিছুক্ষন অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে মাথা নিচু করে।অয়ন হঠাত রূপের হাতটা টেনে নেয় আর ধীরে ধীরে অনামিকায় পড়িয়ে দেয় সুদৃঢ় বন্ধনের স্মারকচিহ্ন।তারপর এক সুন্দর শুভদিনে তারা একে অন্যের সাথে মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং ইস্পাতের চেয়ে দৃঢ় কিন্ত মাকড়শার জালের চেয়ে সুক্ষ্ম আর নাজুক সেই বন্ধনে আবদ্ধ হলো যাতে যুগ যুগ ধরে নারী পুরুষ আবদ্ধ হয়ে আসছে।ঢাকার বাইরে অতদুরে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যদিও রূপের বাবার দ্বিধা ছিল কিন্ত ছেলের মাঝে তিনি এমন কোনো খুঁত খুঁজে পান নি যাতে তাকে বাতিল করা যায়।তারপর প্রায় আড়াই বছর ধরে তারা বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরভাবে সংসার করছে।





বাড়ি থেকে বের হয়ে অয়ন প্রথমে ভেবে পায় না সে কোথায় যাবে।আগে সে ভেবেছিল কোনো বন্ধুর বাসায় উঠবে কিন্ত এই মুহুর্তে তার চিন্তাটা তেমন ভাল বলে মনে হল না।শেষ পর্যন্ত সে একটা হোটেলে রুম ভাড়া করে উঠে পড়ল।তার মাথাটা ঝিমঝিম করছে।যে কাজটি আজ সে করেছে সেটি নিয়ে ভাবছে।নাহ, তার পক্ষে আর সম্ভব না এভাবে সংসার করা।এত নিচু মন মানসিকতার মেয়ের সাথে মানুষ থাকে কিভাবে?সে তো একটা মানুষ নাকি?সে তো আর খাঁচায় বন্দি জন্ত নয় যে তাকে এভাবে আটকে রাখা যাবে।তার নিজের ইচ্ছার তো কিছুটা হলেও মুল্য আছে।এই যে তার কলেজ জীবনের বন্ধুরা সব যে কক্সবাজারে একটা পুনর্মিলনী আয়োজন করেছে সেখানে সে কেন যেতে পারবে না?সবাই তো আসছে,এমন কি মেয়েরাও আসবে।কই তাদের পরিবার তো এভাবে বাধা দেয় না তবে রূপ কেন দেবে?আজকাল বড় বেশি ঝামেলা করা শুরু করেছে রূপ।অয়ন হচ্ছে এই আয়োজনের উদ্যোক্তাদের একজন।সে কতজনের সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে রাজি করিয়েছে এখন সে নিজেই যদি না যায় তবে কি আর জীবনে মুখ দেখাতে পারবে কারো কাছে?রূপ কেন তাকে সবসময় আঁচলে বেধে রাখতে চায় সে বোঝেনা।আজকাল তার ওকে খুবই অসহ্য লাগে।অসহ্য লাগে ওর জীবনের সব পর্যায়ে রূপের নাকগলানো।অয়ন আর কিছু বোঝে না শুধু এই শৃংখল থেকে মুক্তি চায়।তার ইচ্ছে নেই আর ফিরে যাওয়ার।







পরদিন রূপের ঘুম ভাঙ্গে বেশ বেলা করে।অফিস নেই তাই চিন্তাও নেই কোনো।পাশের খালি বালিশে চোখ পড়তেই তার সবকছু মনে পরে যায়।এই যে অয়নের বালিশটা, এখানে এখনও ওর গায়ের গন্ধ লেগে আছে কিন্ত অয়ন তাকে ছেড়ে চলে গেছে।রূপ বোঝেনা সেই অয়ন কিভাবে এত বদলে গেল যে সামান্য ঝগড়ার পর নিজের বউ কে একা রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।এই প্রথম ভীষন অভিমান হয় তার,এই প্রথম সে ডুকরে কেঁদে উঠে।অয়নের বালিশটা আঁকড়ে ধরে সে একলা ঘরে কেঁদে ভাসায়।একসময় ক্লান্ত হয়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।আবার ঘুম ভাংলে সে প্রচন্ড ক্ষুধা বোধ করে।হাত মুখ ধুয়ে রাতের বাসি খাবার গরম করে খেতে খেতে সে ভাবতে থাকে কি করা যায়।রূপ চিরকালই ধীর স্থির, ঠান্ডা মেজাজের বুদ্ধিমান মেয়ে।তার আর অয়নের মাঝে সমস্যার উতস সে ঠিকই খুঁজে বের করেছে।ঘটনাগুলো কি কারনে ঘটছে সে তা জানে তবে কিভাবে এর সমাধান হবে তা সে জানে না।তবে এটুকু বুঝতে পারছে যে তার এবং অয়নের কারো পরিবারেরই এসব কিছু জানা চলবে না।অফিসে বা অন্য কোথাও সে এসব জানাতে পারবে না।সে অপেক্ষা করতে চায়।অপেক্ষা করে দেখতে চায় অয়ন তার ভুল বুঝতে পারে কিনা,সে ফেরে কিনা।যদি নিতান্তই না ফেরে তবে রূপের হাতে তো আর কিছুই থাকবে না।তখন নাহয় সবাই জানবে।কিন্ত ততদিন তো সে একা থাকতে পারবে না।একজন কে তো অন্তত তাকে সাহায্য করতে হবে।একে একে সে তার সব বন্ধুদের বাতিল করে দেয়।নাহ,কোনো বন্ধুকে তার এবং অয়নের মধ্যকার এই ভয়ানক সমস্যা জানানো সম্ভব না।রূপ জানে যে বন্ধুদের কাছে নিজের দুর্বলতা জানানোর ফল সবসময় ভাল হয় না বরং সমস্যা আরো জটিল আকার ধারন করে।সে তার বিবাহিত জীবন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।তাছাড়া,অয়ন তাকে ছেড়ে চলে গেছে এই কথা যে কাওকে জানাতে তার প্রচন্ড আত্মসন্মানে লাগবে।কিন্ত সমস্যা একটাই যে সে একা বাসায় থাকতে পারবে না কখনোই।এই সময় হঠাত তার তুলি আপার কথা মনে পরে।তার চেয়ে দুই ব্যাচ সিনিয়র তুলি আপার সাথে রূপের সম্পর্ক একইসাথে বন্ধুর মত আবার অভিভাবকের মত।সে তুলি আপাকে ফোন করে বাসায় আসার অনুরোধ জানায়।







তুলি আপা বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সে তাকে জড়িয়ে ধরে।তিনি রূপকে জিগাসা করেন,কিরে,খুব কি ঝগড়া করেছিস অয়নের সাথে?অশ্রুভেজা চোখে রূপ উত্তর দেয়,না আপা,বিষয়টা এর চেয়েও সিরিয়াস।তোমার কাছে সব বলতে চাই।রূপ বলে কিভাবে হঠাত করেই আড়াই তিন মাস আগে থেকে অয়ন বদলে যেতে থাকল।কিভাবে তার ছোট ছোট ভুলগুলোকে নিয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করল।কিভাবে মাঝে মাঝে দেরি করে ফেরা শুরু করল,কিছু জিগাসা করলে রাগারাগি শুরু করল।রূপ আরো বলে যে শেষের দিকে অবস্থা এমন খারাপ ছিল যে অয়ন প্রায় সবসময় থেকেই তার উপর বিরক্ত থাকত।প্রায় সবসময় কথা কাটাকাটি আর ঝগড়া হত।রূপ তো ঝগড়া এড়াতে কথাই বলত না প্রায় অয়নের সাথে।তুলি আপা জিজ্ঞাসা করেন,খোঁজ নিয়েছিস ভালমত?রূপ বলে,অবশ্যই।ওর সাথে কলেজে পড়ত মুন নামের একটা মেয়ে।মাস তিনেক আগে ঢাকা এসেছে।আমি জানি ওর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই সমস্যাটা শুরু হয়েছে।অয়নই আমাকে ওর কথা বলেছে।কলেজে নাকি এই মেয়ের পিছনে ঘুরেনি এমন ছেলে ছিলনা।তখনই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়।এখন নাকি কোন এন,জি,ওর সাথে জড়িত,সেই কাজেই ঢাকা এসেছে।অয়নের সাহায্য চেয়েছিল সে ঢাকায় নতুন বলে।প্রথম প্রথম অয়ন ওর সাথে দেখা করে এসে সবকিছু আমায় বলত।পরে আর বলে না তবে আমি বুঝতে পারি।তুলি আপা জিগাসা করেন, অবস্থা কি খুব জটিল হয়ে গেছে তাদের মধ্যে?রূপ বলে,আমার এতটা মনে হয়নি এখনও তবে পরে সেটা হতে পারে।কবে তোর সন্ধেহ হল?আপা বলেন।রূপ বলে,যখন প্রথমবার ও রাতে ফিরল না।এমন ও দুইবার করেছে।প্রথম দিন রাত ১০টার পর সে জানালো যে সে গাজিপুর গিয়েছে।রাত বেশি হওয়ায় বন্ধুর বাড়িতে থাকছে।বন্ধুর স্ত্রীর সাথে ও আমার কথাও বলিয়ে দিয়েছিল নিজে থেকেই।তুলি আপা বলেন,তাহলে সমস্যা কোথায়?রূপ বলে,আপা সমস্যা ওর চিন্তায়,আমার প্রতি ওর যত্নে।ও জানে যে আমি একা থাকতে কত ভয় পাই তারপরও সে রাত হওয়ার আযুহাত দিয়ে সেখানে থেকে গেল কিন্ত এর আগে একবার ওরা বন্ধুরা মিলে নুহাশপল্লীতে গিয়ে অনেক দেরি করে ফেলেছিল।এই বন্ধুর বাসাতেই অন্যরা রাতে খাওয়ার পর থেকে গিয়েছিল কিন্ত অয়ন আমি একা থাকব বলে ১১টার পর রওনা দিয়েছিল গাজিপুর থেকে।এটাই প্রমান করে আমার প্রতি ওর মনোযোগ একেবারেই নেই বরং সেখানে অন্য কারো চিন্তা বিরাজ করছে।আমি পরে জেনেছি দুইবারই মুন কোনো কাজে সেখানে গেছে এবং অয়নকে নিয়ে গেছে।দুইবারই সে রাতে বন্ধুর বাসায় থেকে সকালে মুনকে কর্মস্থল থেকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেছে।







তুলি আপা একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,কাল কি নিয়ে ঝগড়া হল? রূপ উত্তর দেয়,ওরা কলেজের বন্ধুরা সবাই একটা রিইউনিয়ন করতে চাইছে।কক্সবাজারে দুইরাত সবাই এক হোটেলে থাকবে।একসাথে বেড়াবে, পার্টি করবে।জানা কথা সেখানে মুনও থাকবে।আমার ভয় ওখানে গেলে যা নিয়ে আমার সবচেয়ে ভয় তেমন কিছু হয়ে যেতে পারে।আমি তো আর সাথে থাকতে পারব না কারন আগামী দশদিন আমাকে অফিসে থাকতেই হবে।তাই ওকে যেতে নিষেধ করলাম।তারপরেই তুমুল ঝগড়া।তারপর তো দেখতেই পাচ্ছ।আপা জিগাসা করেন,এখন কি করবি?রূপ বলে, অপেক্ষা করবো।আপা আসলেই আমরা খুব সুখি ছিলাম কিছুদিন আগেও।আমাদের মাঝে তো কোনো সমস্যা নেই,কোনো অপ্রাপ্তি নেই।কিছুদিন আগেও অয়ন আমার জন্য পাগল ছিল ঠিক বিয়ের পরের দিনগুলোর মতই।নিশ্চয় ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে।হয়ত ও না চাইতেও কিছুর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে কিন্ত আমায় কিছু বলতে পারছে না সংকোচে।আমি চাই ও সেই জালটা ছিঁড়ে বের হয়ে আসুক।আপা বলেন,বাসায় জানিয়েছিস?আমি কি ওকে ফোন করে কিছু বলবো?রূপ বলে না আপা তোমাদের কিছু বলতে হবেনা।আমাদের ভেতরের সমস্যা আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।আর বাসার লোকের চাপে ও যদি আমার কাছে আসে কিন্ত মন অন্যদিকে থাকে তবে আমার কি লাভ?আমি তো রবোটের মত জীবন চাই না।আমি আমার নিজের মানুষটার সাথে আবার নিজের মত করে বাঁচতে চাই।আপা বলেন,কিন্ত রূপ তুই কি একটু বেশি ঝুঁকি নিয়ে নিচ্ছিস না?ও ছেলে মানুষ।ওদের তো পথভ্রষ্ট হতে সময় লাগে না।ও যদি আর না ফেরে?রূপ মলিন হেসে বলে,যে চলে যাবে তাকে কি আর ধরে রাখা যায় আপা?জোর করে ধরে রাখতে চাইলে শুধু তিক্ততা আর ঘৃনাই বাড়ে।কেউ যদি বিনা দোষে আমায় এভাবে ছুড়ে ফেলে যেতে পারে আমাকে বুঝতে হবে সে কখনোই আমার ছিলনা।তাকে আমি ভালবাসা,আনুগত্য বা সেবা কিছু দিয়েই পুর্ন করতে পারিনি।কিছু শুন্যতা সেখানে রয়ে গেছে।কষ্ট হবে তবে আমি সেটা মেনে নেব কিন্ত ওর সাথে কুকুরের মত ঝগড়া করে জীবন কাটাতে পারব না।বরং তুমি একটা ব্যবস্থা করতে পারো কিনা দেখ যাতে আমার একা না থাকতে হয়।আমার মনে হয় না ও খুব বেশিদিন আমায় ফেলে দূরে থাকতে পারবে।তুলি আপা কিছুক্ষন ভেবে বলেন,একটা কাজ করা যায়,আমার বাসার কাজের মেয়েটাকে রাত নয়টার দিকে পাঠিয়ে দেব ড্রাইভারের সাথে,সকালে আবার বাসায় চলে যাবে।কিছুদিন এভাবে যাক।তারপর অবস্থা বুঝে কাজ করা যাবে।







ঘুম ভেঙ্গে অয়ন কিছুক্ষন রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে।সে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।সেই যে তিন মাস আগে মুন ঢাকায় আসল,তারপর থেকে যেন শান্তি নামক জিনিসটা উধাউ হয়েছে তার জীবন থেকে।কলেজ লাইফে মুন ছিল জীবন্ত আগুন।অনেক ছেলের মত অয়ন ও সেই আগুনে পুড়ে মরতে চেয়েছিল।মুন কেন যেন তাকে বেশ প্রশ্রয় দিত।তারপর হঠাত মুনের বিয়ে হয়ে গেল চট্টগ্রামের দিকে। এরপর ঢাকাতেই প্রথম দেখা নতুন করে।তারা শুনেছিল মুনের স্বামী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অথবা বিশাল ব্যবসায়ী।কিন্ত আসলে সে দুবাই প্রবাসী।মুন শশুর বাড়িতে থাকে আর সময় কাটানোর জন্য এটা সেটা করে।কিছুদিন আগে একটা এন,জি,ও তে যুক্ত হয়েছে।সেই কাজেই ঢাকায় আসা।মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখে অয়ন তাকে এড করে।সেখানে অনলাইনে এক দুইবার কথা হয়েছে কিন্ত ঢাকায় আসার আগে তাকে নতুন জায়গায় সাহায্য করার জন্য মুনের অনুরোধ সে ফেলতে পারেনা।মুনকে প্রথম দেখে সে একটা ধাক্কা খেয়েছিল।সেই জীবন্ত আগুনের শিখা যেন আরো ভয়ানক হয়েছে।আসলেই মুনের সমস্ত অস্তিত্বে কেমন যেন আগুনের মত কিছু আছে।কাছাকাছি থাকলে কেমন যেন জ্বালাপোড়ার অনুভুতি হয়।রূপকথাও অসম্ভব সুন্দর দেখতে কিন্ত তার মাঝে যেন আছে এক শান্ত শীতল ছায়া ঢাকা দীঘি।দেখলে চোখ জুড়া্য,মন জুড়ায়।

মুন অয়নকে যেন একদম নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলল কয় দিনেই।প্রতিদিন তাকে ফোন করা চাই,দেখা করা চাই।যেখানে যাবে সেখানে নিয়ে যেতে চাইবে সে কাজ হোক আর শপিং।অয়ন যেন কোনভাবেই তাকে দূরে রাখতে পারে না।সবচেয়ে বিপদ হলো যখন সে অয়নের অফিসে সময় অসময় হাজির হতে থাকল।অন্যদের প্রশ্নযুক্ত দৃষ্টির সামনে পড়ার ভয়ে অয়ন অফিসের কাজ বাদ দিয়ে তাকে সময় দিতে লাগল।এদিকে বাসায় রূপের সাথেও তার নানা ধরনের সমস্যা তৈরী হতে লাগল।মুনের যন্ত্রনায় সে নিজের বউকে ছুটির দিনেও সময় দিতে পারে না।রূপ বোঝে,কোনো প্রশ্ন করেনা,কোনো অভিযোগ করে না।এদিকে অয়নের মনে দিন দিন একটা অপরাধবোধ গড়ে উঠতে থাকে।সে রূপকে সবকিছু খুলে বলতে পারেনা।আর বলবেই বা কি?তার মনের অবস্থা কি সে রূপকে বোঝাতে পারবে?আগুন যেমন পোকাকে আকৃষ্ট করে তার অবস্থা তখন তেমনই।তার মনে হতে থাকে সে কোথায় যেন তার লক্ষী বউটার সাথে বেঈমানী করছে।ভেতরে ভেতরে সে কুঁকড়ে ছোট হয়ে যায়।রূপের সামনে দাঁড়ালে তার কেমন যেন অপরাধবোধ হয়।বিশেষ করে একদিন সে সময় দিতে না পারায় যখন রূপ তার বোনের বাচ্চাটার প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি সেদিন অয়নের মনে হয়েছিল সে নিজের চোখেই নিচে নেমে গেছে।রাত দশটার পরে মুনকে পৌঁছে দিয়ে যখন সে বাড়ি ফিরেছে তখন ধারনা ছিল যে রূপ তার বোনের বাড়িতেই আছে।তাই চাবি দিয়ে দরজা খুলে বেডরুমে এসে সে দেখে বাইরে যাওয়ার শাড়ি পড়ে রূপ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।কান্নার জলে চোখের কাজল গাল বেয়ে ঝরে পড়েছে।অয়নের সেদিন নিজের উপর খুব রাগ হয়েছিল সেই সাথে কোনো অভিযোগ না করার জন্য রাগ হয়েছিল রূপের উপরও।রাগ সামলাতে না পেরে সে সদ্য ঘুম ভাঙ্গা মেয়েটির সাথে বিশ্রিভাবে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিল।সেই থেকে শুরু।নিজের অপরাধবোধের সমস্ত লজ্জা আর তা থেকে সৃষ্ট রাগ সব গিয়ে পড়া শুরু করলো রূপের উপর।রূপ চুপচাপ শুনত কিন্ত কিছুই বলত না।এতে যেন অয়নের রাগ আরো বেড়ে যেত।মনে হত এই মেয়েটি নিজেকে তার চেয়ে ভাল প্রমানিত করার জন্য চুপ করে সব সহ্য করে।এই সবই মেয়েটির ভন্ডামী।তার মনটা অসম্ভব জটিলতায় ভরা।সে আমার সাথে সুখি না সেটা সরাসরি বললেই তো পারে।সেই তুলনায় যেন মুন অনেক সরল।সে কত অবলীলায় কত রকমের গোপন কথা তার সাথে আলোচনা করে।বিয়ের পরে যে তার কত কষ্ট হয়েছে বরের সাথে থাকতে তাও তো সে বলেছে।এটাও তো বলেছে যখন তার প্রথম সন্তান পেটেই মারা গেল তখন তার কত কষ্ট হয়েছিল।অয়নের যেন দিন দিন মুনকেই আপন মনে হতে থাকে আর রূপকে পর।সে রূপের সাথে এতটাই দুরত্ব তৈরী করে ফেলল যে ভালবাসার দাবীটুকু নিয়ে তার কাছে যাওয়াটাও বন্ধ করে দিল।আলাদা বিছানায় না ঘুমালেও যেন দুজনের মাঝে এক অদৃশ্য দেয়াল গড়ে উঠল।ঘুমের মাঝে যখন রূপ তার বুকের কাছে চলে আসে তখনও অয়নের সাহস হয় না হাত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নিতে।আস্তে আস্তে যেন অয়নের কাছে তার নিজের সংসার জীবন অসহ্য হয়ে উঠে।





জানালা দিয়ে দুপুরের রোদ ঘরের ভেতরে এসে পড়ছে।রূপের মনটা যেন আজ খুব বেশিই উদাস উদাস লাগছে।সে উঠে প্লেয়ারে একটা ডিভিডি চালিয়ে দিতেই অয়নের ভরাট কণ্ঠস্বর সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।এটা ছিল অয়নের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া প্রথম জন্মদিনের উপহার।তখনও তাদের বিয়ে হয়নি,সেদিন সারা দিন এবং সন্ধ্যা একসাথে কাটিয়ে যখন বাসায় ফিরছিল তখন অয়ন এই ডিস্কটা বের করে দিয়ে বলেছিল একটা অদ্ভুত জিনিস আছে এটার মাঝে।তুমি কি শুনে দেখবা একটু?বাড়িতে এসে এটা চালাতেই যখন অয়নের কন্ঠে তার সবচেয়ে প্রিয় কবিতাগুলোর আবৃতি শুনেছিল তখন বিস্ময়ে খুশিতে রূপের চোখে পানি চলে এসেছিল।রূপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, সেই চেনা মানুষটা কিভাবে এত অচেনা হয়ে গেল?শেষের দিকে তো সে রূপকে আর রূপের অফিসের আসাদ ভাইকে জড়িয়ে আজেবাজে কথা বলত।আসাদ ভাইএর যে তার প্রতি অফিস জয়েন করার সময় থেকেই দুর্বলতা আছে তা তারা দুজনেই জানে।তাদের জীবনে এটা ছিল একটা বড় কৌতুকের মত বিষয়।যেদিন রূপ একটু সেজে অফিসে যেত তখন অয়ন দুষ্টুমী করে বলত,আজ তো আসাদ মিয়ার কোনো কাজই ঠিক মত হবে না।তখন দুজনেই হাসত।তাকে জড়িয়ে সেই আসাদের সাথে নোংরা কথা রূপের সহ্য হত না।সে বিশ্বাস করতে পারত না যে অয়নের মুখ দিয়ে এমন কথা বের হতে পারে।এবিষয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েই অয়নের সাথে বিশ্রী ঝগড়া লাগত।





পনের দিন হয়ে গেছে অয়নের চলে যাওয়ার।এতটা দিন বাইরে সবার সাথে সে স্বাভাবিক ব্যবহার করে এসেছে।বাসার মানুষের সাথে ফোনে কথা বলেছে,অফিসে গিয়েছে কিন্ত কাউকে কিছু জানতে দেয় নি।তার বিশ্বাস ছিল অয়ন দুই একদিনের মাঝে ফিরে আসবে।অনেক বার ইচ্ছা হয়েছে ফোন দেওয়ার কিন্ত তার আত্মসন্মানবোধ তাকে বাধা দিয়েছে প্রতিবার।সাতদিন কেটে গেলেও যখন সে ফিরলনা তখন ফোন দিয়ে দেখেছে তার নম্বর বন্ধ।রূপের বুকের মাঝে যেন দুমরেমুচড়ে গিয়েছে।অয়ন শেষ পর্যন্ত নিজের সিমও বন্ধ করেছে শুধু রূপের সাথে যোগাযোগ হওয়ার ভয়ে!দশ দিনের দিন রাতে যখন ফেসবুকে অয়নের একাউন্ট থেকে শেয়ার করা কিছু ছবি দেখেছে তখন থেকেই যেন তার মাঝে সকল আশা নিভে যেতে শুরু করেছে।অয়ন তাহলে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার গিয়েছে?সে গেলই শেষ পর্যন্ত?রূপের মাঝে একটা অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে অয়ন সেখানে যাবে না।ছবিতেই বোঝা যায় সে কত খুশিতে আছে।মুন মেয়েটির সাথেও কিছু ছবি আছে তার। সব ছবিতে দেখা যায় তারা খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে।তবে কি যেটার ভয় ছিল সেটাই হয়েছে?তবে কি আর অয়ন ফিরবে না?রূপের মাথা ঘুরে উঠে,সে আর ভাবতে পারেনা।এতটা দিন শুধু সে ছবির এলবামগুলো দেখত আর মনে মনে বলত,অয়ন ফিরে আস,প্লিজ ফিরে আস।কিন্ত এখন সেই প্রার্থনা করার শক্তিও যেন পায় না।রূপের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে এখন শুধু অবাক করা নির্লিপ্ততা।





ঢাকার হোটেলের রূমে অয়ন একা শুয়ে।তার চেহারা দেখলে চমকে উঠতে হয় এমন অবস্থা হয়েছে।অয়নের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা সে পেয়েছে।পেয়েছে মুনেরই কাছ থেকে।কক্সবাজারে প্রথম দিন সবাই মিলে খুব আনন্দে কাটিয়েছিল তারা।পরদিন সকালে হঠাত মুন বলল সে চট্টগ্রামে তার বাড়িতে চলে যাবে তখনই কারন তার স্বামী আসবে সেদিন রাতের ফ্লাইটে।অয়ন বলেছিল এই একটা দিনই তো,থেকে যাওনা আজ।মুন হেসে বলেছিল,তাই কি হয়?আমার স্বামী আছে,সংসার আছে, একটা ছোট ছেলে আছে।আমার তো সেখানে ফিরতেই হবে।তাদের প্রতি আমার দায়ীত্ব আছে না?অয়ন ভীষন এক ধাক্কার মত খেয়েছিল।ভেবেছিল তাই বটে,দায়ীত্ব তো আছেই মুনের।সে যখন ইচ্ছা রঙ্গিন পেখম মেলে ঘুরে বেড়াতে পারে আবার দায়ীত্ব পালন করতে সংসারে ফিরতে পারে রানীর মত।কিন্ত অয়ন কি করেছে?সে তার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে সমস্ত দায়ীত্বকে পেছনে ফেলে এসেছে।কিসের আসায় তা সে জানে না।কিন্ত অবোধ পতঙ্গের মত আগুনের দিকে ছুটে এসেছে ঠিকই। প্রায় বাকশক্তিহীন হয়ে অয়ন জিগাসা করেছিল,তোমার সন্তান আছে তা তো বলনি।মুন ঝলমল করে হেসে বলেছিল,বলিনি নাকি?দেখ,তুমিও তো বুঝতে পারনি।ও তো জন্মের পর থেকে ওর দাদির কাছেই বেশি থাকে।কেন দেখনি কিছুদিন পর পর আমি বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসতাম?বল আমাকে দেখে কি মনে হয় যে আমার পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে?তাই কেউ না জিজ্ঞাসা করলে নিজে থেকে বলা হয় না।এতবড় বাচ্চা আছে ভাবলেই নিজেকে কেমন বুড়ি বুড়ি মনে হয়।মুন চলে যাওয়ার পর দুপুরের বাস ধরে সেও ঢাকায় ফিরে এসেছে।হোটেলের ঘরে বসে শুয়ে এই কয়দিন শুধু অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছে।শতবার মনে হয়েছে যে নিজের সংসারে ফিরে যাবে কিন্ত লজ্জা আর অপরাধবোধ তার পায়ে শেকল পড়িয়ে রেখেছে।তার সংসারে তার আর রূপের অবস্থান ছিল সমান সমান কিন্ত এখন তার অবস্থান তো অনেক নিচু হয়ে গিয়েছে।বিনা দোষে সে তার লক্ষী বউটার সাথে যা করেছে তার পরে নিশ্চয় রূপ তাকে ক্ষমা করতে পারবে না শুধু করুনা করবে।আগের মত করে আর কোনো দিনই তাকে ভালবাসবে না।অয়ন এখন সারাদিন ভাবে।প্রায় সময়ই তার চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।সে যেন দিন দিন দিশেহারা হয়ে যেতে থাকে।





অয়নের চলে যাওয়ার আটাশতম দিনে সন্ধ্যায় রূপ তার কিছু জিনিস গুছিয়ে সুটকেসে তুলে রাখছে।দুসপ্তাহ পর তাকে আটমাসের জন্য সিংগাপুর যেতে হবে অফিসের পক্ষ থেকে।অনেক ভেবে,এত দিন অপেক্ষা করে সে কাল পাকা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।সব ঠিক থাকলে সে কোনোমতেই এই সিদ্ধান্ত নিত না।শুধু চেনাপরিচিত সবকিছু থেকে দূরে যাওয়ার জন্যই এতকিছু।রূপের মাঝে আর কোন আশা নেই সে বুঝে গেছে যে তার সংসার ভেঙ্গে গেছে।রূপের মনেহয় তার ভেতরে কি যেন মরে গেছে।তার এতদিনের আবেগের সম্পর্ক যে মিথ্যা সেটা জানতে পেরেই হয়ত মরে গেছে।হঠাত কলিংবেল বেজে উঠে।দরজা খুলে রূপ চমকে যায়।দরজায় অয়ন দাঁড়িয়ে।অয়ন চুপচাপ ঘরে এসে ঢুকে,রূপও কিছু বলতে পারেনা।অয়ন সোফার উপর মাথা নিচু করে বসে থাকে অনেকক্ষন।রূপ বেডরুমে ঢুকে যায়।তার মনে একইসাথে একরাশ্ মায়া ভালবাসা আর অন্ধ অভিমান ভীড় করে আসে।তার ইচ্ছা হয় একছুটে অয়নের বুকে ঝাপিয়ে পড়তে কিন্ত সে পারে না।একপাহাড় সমান অভিমান তাকে সেটা করতে বাধা দেয়।অনেকক্ষন পর অয়ন বেডরূমের দরজায় এসে মৃদুস্বরে বলে,আমাকে কিছু খেতে দেয়া যাবে?রূপ আর পারেনা,সে একছুটে বাথরুমে ঢুকে পানির কল ছেড়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।আহা! কি হাল হয়েছে তার অয়নের।কেমন অনাহারী ছন্নছাড়ার মত হয়েছে তার চেহারা।মনে মনে কত বেশি সংকুচিত হয়ে আছে সেই হাসিখুশি আত্মবিশ্বাসী মানুষটা যে নিজের বাড়িতে নিজের বউএর কাছে ভিখারীর মত করে খাবার চাইছে।কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়ে রূপ বের হয়ে আসে।খাবার গরম করে টেবিলে দিয়ে অয়ন কে খেতে ডাকে।ঘুমানোর সময় সে আশা করে অয়ন আসবে বেডরুমে,তাকে কিছু বলবে।কিন্ত সে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।এদিকে অয়নের ভীষন ইচ্ছা হয় রূপের সাথে কথা বলতে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে কিন্ত কিসের যেন বাধা তাকে তা করতে দেয় না।অয়ন তৃষ্ণার্তের মত অপেক্ষা করে রূপের দিক থেকে একটু আহবানের।সেই অপেক্ষায় থেকে সেও একসময় ঘুমিয়ে যায় সোফাতেই।





অয়ন ফিরে আসার পর আর তিন চারদিন কেটে গেছে।অয়ন আবার অফিসে যাওয়া শুরু করেছে।রূপ তুলি আপাকে সেদিন রাতেই খবরটা জানিয়ে দিয়েছে।রূপের সংসারে অন্য সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে।শুধু তাদের মাঝেই কোথায় যেন সুর কেটে গেছে।তাদের দুজনের মধ্যে কথা হয় খুব কম।তাও সবই সাংসারিক টুকটাক খাও,নাও,দাও ধরনের কথা।অয়ন নিজেই পরদিন থেকে গেস্টরুমের বিছানায় ঘুমাচ্ছে।রূপ যদিও খুব সতর্ক থাকছে যাতে অয়নের মনে আরো আত্মগ্লানি না তৈরী হয় এবং সে আগের মতই সংসারে মিশে যেতে পারে কিন্ত সেও নিজে থেকে আগের মত সহজ হতে পারছে না।দুজনার মধ্যকার এই অদৃশ্য দেয়াল তাদের আবার এক হয়ে মিশে যেতে বাধা দিচ্ছে।অয়ন খুবই কৃতজ্ঞবোধ করছে যে রূপ পরিবারের কাউকে এসব জানায়নি।সে তো ভেবেছিল এদিকে তুলকালাম কান্ড বেধে গেছে।পরিবারের লোকের কাছে কি মুখ দেখাবে এই লজ্জাতেই সে ফিরে আসতে আরো ভয় পাচ্ছিল।তার অবস্থা এমন শোচনীয় যে এই কৃতজ্ঞতাটাও সে রূপ কে জানাতে পারছেনা।এভাবেই চলছিল কিন্ত একদিন হঠাত করে সব বদলে গেল।





সেদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে অনেক বেল বাজিয়ে যখন দরজা খোলা হল না তখন সে চাবি দিয়ে খুলে বেডরুমে ঢুকে দেখে মেঝেতে রূপ বেকায়দাভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।তার মাথার একপাশে কেটে রক্ত ঝরছে।অয়ন পাগলের মত ছুটে এসে পাশে পড়ে থাকা ভেজা তোয়ালে দিয়ে ক্ষতটা চেপে ধরে।কিভাবে ওকে হসপিটালে নেবে সেটা ভেবে অস্থির হতেই হঠাত মনে পরে যে এই বিল্ডিং এর একটা ফ্লাটে একজন ডাক্তার দম্পতি থাকেন।ভাগ্যক্রমে ডাক্তার ভাবী বাসায় ছিলেন।তিনি প্রাথমিক চিকিতসা দিয়ে অয়নকে উপদেশ দেন নিজের বউকে খুব সাবধানে রাখতে।তিনি বলেন,প্রেগন্যান্ট হওয়ার তিন চার মাস পর্যন্ত মাথাঘুরে পড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।তাই এসময় খুবই সতর্ক থাকতে হয়।ভাবীর কাছেই সে জানতে পারে রূপ গর্ভে প্রায় তিন মাসের সন্তান ধারন করছে।এবার তার মনেহয় যেন সে নিজেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।অয়নের মনে পড়ে তিন মাস আগের গভীর আবেগময় একরাতের কথা যখন তাদের মাঝে এত ভয়ানক ব্যবধান তৈরী হয়নি।তারপর আর এমন মুহুর্ত আসেনি তাদের জীবনে এইকয় দিনে।অয়নের মনেহয় যেন অনন্তকাল হয়ে গেছে যে সে রূপের দিকে গভীর ভালবাসা নিয়ে তাকায় না,তার সাথে ভালকরে কথা বলে না।





রূপের আত্মমর্যাদা জ্ঞান বরাবরই খুবই প্রখর কিন্ত তাই বলে এই মেয়ে কি ভয়ানক একটা কাজ করেছে!তাকে কিছুই জানায়নি বরং একদম একা একা এই ফাঁকা বাসায় এমন সংকটময় সময় পাড় করেছে।সেই বা কেন কিছু বুঝতে পারলো না?অয়ন বুঝতে পারে সে কতখানি অন্ধ হয়েছিল যে এতবড় একটা বিষয় তার চোখ এড়িয়ে গেছে।





রূপের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে দেখল,তার পাশে তার ডান হাতটা ধরে অয়ন অঝোরে কাঁদছে।রূপের বুকের মধ্যে টনটন করে উঠল।ছেলে মানুষকে কাঁদতে দেখলে তার খুবই মায়া লাগে।ধরা গলায় অয়ন জিজ্ঞাসা করে, আমাকে জানাওনি কেন?রূপ বলে,তুমি যদি আমার সাথে থাকতে না চাও তবে কেন বাচ্চার দোহায় দিয়ে তোমায় আঁটকে রাখব?আমি সবসময় চাই তুমি শুধু ভালবাসার কারনেই আমার সাথে থাক অন্য কিছুর জন্য নয়।তাছাড়া তোমার অফিসের ব্যাগে আমি জীবনানন্দ দাশের সেই বইটা দিয়েছিলাম,তুমি যদি সেটা খুলে দেখতে তবে খামের মাঝে মেডিকেল চেকাপের একটা রিপোর্ট পেতে।অয়নের মনে পড়ে বইটা ব্যাগে দেখে সে রূপের উপর বেশ বিরক্ত হয়েছিল কিন্ত খুলে দেখেনি।সেটা মনে হয় অফিসের ড্রয়ারেই আছে।দুজনে কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রূপ বলে,আমি কিছুদিন পর আটমাসের জন্য সিংগাপুর যাচ্ছি অফিস থেকে।অয়ন তাকে আঁকরে ধরে বলে,আমি আমার বউকে কোথাও যেতে দেবনা।তোমার অফিসে আমি কথা বলবো।অয়নের স্নেহের পরশ পেয়ে রূপের মনে চেপে রাখা এতদিনের কষ্ট আর অভিমান স্রোতের মত বের হয়ে আসে।সে অয়নের আলিঙ্গনের মাঝে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে কেন?অয়ন তাকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,তুমি আমাকে আটকাওনি কেন?আমি তো নিজের সাথে যুদ্ধ করে হেরে যাচ্ছিলাম।তোমাকে বলতে চাইতাম,রূপ আমাকে বাঁচাও!কিন্ত পারতাম না। তুমি মুখ বুজে আমার সকল অন্যায় সহ্য করতে কেন?কেন তোমার সমস্ত অধিকার দিয়ে আমায় ধরে রাখনি?রূপ প্রশ্ন করে,ধরে রাখলে কি থাকতে আমার কাছে?অয়ন বলে,জানিনা কিন্ত এটা জানি যে আর তোমাকে একা ফেলে কোথাও যাবনা।এই দুজন মানব মানবী শক্ত করে একে অন্যকে ধরে রাখে।ধরে রাখতে রাখতেই যেন রূপ সেই আগের রূপ হয়ে যায় আর অয়ন হয়ে যায় আগের অয়ন।





তারপর অনেক দিন পার হয়ে গেছে।এক ছুটির দুপুরে অয়ন ঘরের এক কোনে মেঝেতে পাতা ম্যাটের বিছানায় শুয়ে একটা বই পড়ছে।তার থেকে একটু দূরে মেঝেতে বসে রূপ নতুন এলবামে নতুন ছবিগুলো ঢুকিয়ে রাখছে।আর ছোট্ট রূপ ঘরময় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে।অয়ন তার মেয়ের নাম রেখেছে ‘অভিলাসা’ ,এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে একটা ফোন আসে অয়নের মোবাইলে।ফোন ধরার পর একটা পরিচিত নারী কন্ঠ বলে ওঠে,হ্যালো অয়ন কেমন আছ,আমি ঢাকায় এসেছি।তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসবা না?অয়ন কিছু না বলে কলটা কেটে দেয় তারপর ফোনের সুইচ অফ করে দেয়।ঠিক তখনই এক মুহুর্ত যেন এক মহাকাল হয়ে যায়।ঠিক সেই সময় অয়ন দেখে তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দৃশ্য।ঠিক সেই সময়ই তাদের ছোট্ট মেয়েটি কোনো কিছু না ধরেই নিজে নিজে উঠে দাঁড়ায়।রূপ আর অয়ন দুজনেই তাদের সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকে।আর শিশুটি মাত্র চারটি দাঁত সম্বল করে ফিক করে হেসে উঠে টলোমলো পায়ে তার বাবা মার দিকে বাড়ায় তার জীবনের প্রথম পদক্ষেপ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৬

এস এম কায়েস বলেছেন: সুন্দর ভাললাগার গল্প।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: অনেকটা লম্বা সময় একসাথে ধরতে গিয়ে অনেক জায়গায় দীর্ঘ হয়ে গেছে । সংক্ষিপ্ত করা যেতো । অয়ন আর রুপের ঘটনা যখন আলাদা আলাদাভাবে এসেছে তখন নাম্বার বা শিরোনাম দিয়ে সেটা আলাদা করে দেওয়া উচিত । ছোট গল্পের টুইস্টটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেদিকে আরও খেয়াল দিবেন । তবে সব মিলিয়ে সুন্দর । অনেক পরামর্শ দিলাম, আসা করি কিছু মনে করবেন না । শুভেচ্ছা জানবেন । ধন্যবাদ । :) :)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আসলে ব্লগের পক্ষে লেখাটা বেশিই দীর্ঘ এটা বুঝি কিন্ত লিখতে গিয়ে দেখি কিছুতেই লেখা কম হয় না বরং বড়ই হয়ে যায়।

আসলে আমি পড়তে অনেক ভালবাসি তো তাই কিভাবে কিভাবে যেন বেশি লিখে ফেলি।আর আমার বাক্য গঠনের ক্ষমতা এতই দুর্বল যে অল্প কথায় গুছিয়ে লিখতে গিয়ে দেখি ঠিক যে জিনিসটা বা অনুভুতিটা প্রকাশ করতে চাইছি তা কিছুতেই পেরে উঠছি না।তাই বাধ্য হয়ে বেশি কথা বলতে হয়।

জানি ছোট গল্প হবে' শেষ হইয়াও যেন হইল না শেষ 'ধরনের।কিন্ত জীবনে অনেক গল্পেরই শেষটা জানার খুব ইচ্ছা হয়েছে।নিজে লিখতে গিয়ে তাই জোর করে একটা হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিই।

আপনার মুল্যবান পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা রইল। :) :) :)

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

হু বলেছেন: ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০১, আমার জীবনের একটি অন্যতম ঘটনা ঘটে ছিল। আর আপনার ব্লগ সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল।
আপনার লেখাটা অনেক সুন্দর।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৩

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আমরা কি আশা করতে পারি আপনার জীবনের অন্যতম ঘটনাটি কোনো মনোমুগ্ধকর গল্প হিসাবে কখনো ব্লগে আসবে?

আপনার জন্য রইল ধন্যবাদ সহ শুভেচ্ছা।

৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০০

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: জানি ছোট গল্প হবে' শেষ হইয়াও যেন হইল না শেষ 'ধরনের।কিন্ত জীবনে অনেক গল্পেরই শেষটা জানার খুব ইচ্ছা হয়েছে।নিজে লিখতে গিয়ে তাই জোর করে একটা হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিই।

লোভ সামলাতে হবে :)

৫| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৫

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: দেখা যাক চেষ্টা করে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.