নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সায়েন্স ফিকশন গল্পঃ সূর্যস্নান (শেষ পর্ব)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৫৪

আগের পর্ব এখানে



বর্তমানের আগে (দুই)
ডক্টর টেরেসা ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বার্থ ইউনিটে একটি সদ্যজাত শিশুকে গভীর মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন।শিশুটির জন্ম হয়েছে মাত্র চার ঘন্টা আগে।এরমধ্যেই অসংখ্য ধরনের চেকাপ করা হয়েছে শিশুটিকে।শরীরের বিভিন্ন অংশের টিস্যুর স্যাম্পল পাঠানো হয়ে গেছে ল্যাবরেটরিগুলোতে।শিশুটি সুস্থ সবল আর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর।একটু আগেও সে ক্ষুধা আর বিরক্তিতে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে কান্না করছিল।এই মূহুর্তে সে খাবার এবং আরাম পেয়ে হাত দুটো মুঠো করে ইনকিউবিটরের নরম কম্বলের ভেতরে শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে।

ছেলে শিশুটির দেহটি আশ্চর্যজনক ভাবে সুস্থ এবং নিখুঁত।শুধু তার গায়ের রংটিতে সবুজ আভা।সবুজ রঙটির কারনে তাকে কিছুটা বিচিত্র দেখালেও বিভৎস দেখাচ্ছে না বরং বেশ সুন্দরই দেখাচ্ছে।তার বড় বড় পল্লবঘেরা ধুসর চোখ গায়ের রঙের সাথে দারুন মানিয়ে গেছে।

কেস 3800 এর এই শিশুটির জন্মের পর থেকেই এই ফার্টিলিটি হোমের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।যদিও এই শিশুটি নিয়ে কোনো তথ্য ফাঁস না করার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষ থেকে এবং ডক্টর টেরেসা শুরু থেকেই তাকে নিজের তত্বাবধানে রেখেছেন তবুও এ কথা যে বেশিদিন গোপন থাকবে না তা তিনি বুঝতে পারছেন।শিশুটির মাকে প্রসব পরবর্তী বিশ্রামের জন্য হালকা ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।শিশুটির বাবা যদিও শিশুটিকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তবুও তাকে শিশুকে দেখতে দেয়া হয়নি।

ডক্টর টেরেসা ধারনা করছেন শিশুটির ভ্রণ মায়ের শরীরে স্থাপনের আগের দূর্ঘটনার সাথে শিশুটির শরীরের বিচিত্র রঙের কোনো সম্পর্ক রয়েছে।এই শিশুটির মায়ের জ্ঞান ফিরলে ডক্টর টেরেসা তার সাথেই আগে কথা বলবেন বলে ঠিক করলেন।2079 সালের এই পৃথিবী যদিও অনেক বিষয়ে উদার তবুও যদি নিজ পরিবার শিশুটিকে গ্রহণ করতে না চায় তবে তার জন্য শহরের বেবি কেয়ার হোমে একটি সিট বরাদ্দ করতে হবে।

শিশুটির জন্মের ঠিক 18 ঘন্টা পরে ডক্টর টেরেসা শিশুটির মায়ের সাথে কথা বলার প্রস্তুতি নিলেন।
ডঃ টেরেসা- লিয়ানা তুমি কি নিশ্চিত যে শিশুটির লালনপালনের ভার নিতে চাও?
লিয়ানা- অবশ্যই। আমার সন্তানের ভার আমি ছাড়া কে নেবে?
ডঃ টেরেসা- আমি তো তোমাকে সবকিছুই খুলে বলেছি।শিশুটিকে দেখার পর তোমার শিশু বলে দাবী করতে পারবে কিনা এটা নিয়ে আমার বেশ সন্দেহ আছে।তুমিতো জান আমাদের শহরে স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য চমৎকার হোম আছে।সেখানে সে কেন্দ্রীয় খরচে চমৎকারভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।
লিয়ানা- উফ!তুমি তোমার বকবকানি থামাবে?স্পেশাল হোমগুলোতে জেনেটিক ডিসওর্ডার, মানসিকভাবে অসুস্থ আর শারীরিক জটিলতা থাকা শিশুদের বড় করা হয়।আমি মোটেও সেখানে আমার বাচ্চা দেব না।তুমি দয়া করে আমার বাচ্চাকে এনে দাও।আমিই মনেহয় পৃথিবীর একমাত্র মা যে জন্মের 18 ঘন্টা পরেও তার সন্তানকে দেখেনি।

ডঃ টেরেসা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সকে ইশারা করতেই সে নরম কম্বলে জড়ানো শিশুটিকে এনে মায়ের কোলে তুলে দিল।লিয়ানা বুভুক্ষের মত হাত বাড়িয়ে নিজের সন্তানকে কোলে তুলে নেয়।এতক্ষণ শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল।লিয়ানা কোলে যাওয়া মাত্র সে চোখ খুলে তার দিকে তাকায় এবং অপলক তাকিয়েই থাকে।মনেহয় সে তার মাকে চিনতে পেরেছে।লিয়ানা শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে,শিশুটিও তার ছোটো-ছোটো হাত দিয়ে লিয়ানাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে।

পেশাগত কারনেই ডঃ টেরেসা জীবনে এমন অনেক দৃশ্য দেখেছেন তবে আজ কেন জানি তার মনটা খুব আবেগী হয়ে যায়।সে নরম গলায় জিজ্ঞাসা করে-
লিয়ানা তুমি কি নিশ্চিতভাবেই তোমার সন্তানকে তোমার সাথে রাখতে চাও?সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে বড় করতে কিন্ত বেশ বেগ পেতে হবে।সবসময়ই তোমাদের আসেপাশে কিছু কৌতুহলি লোক থাকবে।অনেকে অপ্রীতিকর কথা বলে তার জীবনটিকে দুর্বিষহ করে তুলতে চাইবে।
লিয়ানা-তুমি যতটা ভয় পাচ্ছ ততটা নাও হতে পারে।আজকাল মানুষ সখ করে নিজের আকৃতি পরিবর্তন করে ফেলছে।কিছু লোক সার্জারি করে শিং আর লেজ লাগাচ্ছে। সেদিন ইন্টারনেটে দেখলাম ডাউনটাউনের এক মহিলা সার্জারি করে মাছের মত আঁইশ লাগিয়ে নিজেকে মৎস্যমানবী দাবী করছে।গায়ে আর চুলে নানা রং মাখার কাজটা তো মানুষ আরো আগে থেকেই করছে।

ডঃ টেরেসা চোখ কপালে তুলে বললেন তাই নাকি?

লিয়ানা-- তুমি খালি ল্যাবরেটরিতে ডুবে থাক বলে জানোনা এখনকার পৃথিবীতে দেখতে আলাদা হওয়া তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়।তাছাড়া নিজের একটা শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি,অনেক অপেক্ষা করেছি।এই বাচ্চার শরীরে আমার তেইশটি ক্রোমোজম রয়েছে।কিভাবে আমি তাকে অন্য কোথাও দিয়ে দেব?
ডঃ টেরেসা হার মেনে নিয়ে বললেন বুঝলাম তোমার কথা,আশা করি শিশুটির বাবা তোমার সাথে একমত হবেন।
লিয়ানা- অবশ্যই। তাকে তোমরা কিভাবে ঠেকিয়ে রেখেছ তা তোমরাই জান।

ডঃ টেরেসা মৃদু হেসে বললেন সেই কথা পরে কখনো শুনো।তুমি কি তোমার সন্তানের জন্য কোনো নাম ঠিক করেছ।
লিয়ানা- হ্যাঁ ওর নাম ঈশান।পেটে থাকা অবস্থাতেই ওকে আমি এই নামে ডাকি।
ডঃ লিয়ানা-বাহ! মনে হচ্ছে একদম উপযুক্ত নাম হয়েছে ওর জন্য।এখন কিছু জরুরী কথা বলি।সমস্ত টেস্টে দেখা গেছে শারীরিক ভাবে ঈশান একেবারে সুস্থ। শুধু ওর চামড়ার কোষগুলোতেই এক ধরনের সবুজ কনিকা রয়েছে শরীরের অন্যকোনো স্থানের কোষে এই কনিকা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে আরো গবেষণা চলছে আশা করি কিছুদিনের মধ্য বিস্তারিত জানতে পারব।
লিয়ানা- তাহলে তো ভালই।
ডঃ টেরেসা -প্রথম সপ্তাহে তোমাদের এখানেই থাকতে হবে।তারপর প্রতিমাসে একবার ওকে আমরা চেকাপ করব।ভয় নেই তোমার এবং ঈশানের সবকিছু আমি নিজ হাতে দেখাশোনা করব।
লিয়ানা- তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই।আমি জানি তোমার হাতে আমরা নিরাপদ থাকব।


বর্তমানের আগে (তিন)
রাত বারোটা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান একাডেমির মাটির নিচের কনফারেন্স রুমে এক জরুরী সভা বসেছে।বলা যায় বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও গুরুত্বপূর্ণ লোকগুলো এখানে উপস্থিত হয়েছে।কিছুক্ষণ আগে একজন তরুন বৈজ্ঞানিক আজকের বিষয়ে 40 মিনিটের একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে।বর্তমানে এই সুসজ্জিত কনফারেন্স রুমে 7টি মহাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালক ছাড়া কেউ নেই।

এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জিহান বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালককে উদ্দেশ্য করে বললেন--
রুথ তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার উদ্ভট থিওরি প্রমান করেই ছাড়লে।
রুথ মুচকি হেসে বললেন-- তুমি যতই রাগ দেখাও সত্যিটা কিন্ত বদলাবে না।

জিহান- তাই বলে তুমি বলতে চাও আগামী দেড়শো থেকে দুইশ বছরের মধ্যে মানব প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে?
রুথ- হ্যাঁ আমাদের গবেষণা তাই বলছে।যদি এই হারে পরিবেশ ধ্বংস হতে থাকে তবে এই মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

জিহান- তাই বলে হোমো সেপিয়েন্স এর মত এত উন্নত প্রজাতি বিলুপ্ত হবে?

আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মার্গারেট বললেন-- আমার কাছে থিওরিটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে।গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যখন আফ্রিকায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণ হলো তার সাথেই শুরু হলো দূষণ আর প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস। বিশ বছরের মধ্যে খাদ্যাভাব আর মহামারীতে জনসংখ্যা কমতে শুরু করল।এখন আফ্রিকার জনসংখ্যা নিম্নগামী।কিন্ত এসকল কারনে 85 ভাগ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে।যা আসলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ইউরোপের প্রেসিডেন্ট উইলসন বললেন- তাহলে মানুষকে টিকিয়ে রাখার কি কোনো উপায় নেই?
I
রুথ- আমার কাছে কিছু তথ্য আছে।তথ্যগুলো জানার পর তোমরাই ভেবে দেখ এটাকে উপায় হিসাবে গ্রহন করা যায় কিনা।

রুথ একটি বোতাম চেপে ধরতেই একটি শিশুর হলোগ্রাফিক ছবি টেবিলের মাঝখানে ভেসে ওঠে। ছিমছাম এক কাঠের বাড়ির বারান্দায় শিশুটি বসে রয়েছে।বছর খানেকের শিশুটির হাতে টকটকে লাল একটি আপেল।সে তার ধুসর চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
উপস্থিত প্রায় সকলে শিশুটিকে দেখে এক ধরনে বিস্ময়ের শব্দ করে ওঠে।
রুথ বলতে থাকেন--গত শতাব্দীর শেষের দিকে এক ফার্টিলিটি হোমে এই শিশুটির জন্ম হয়।তার ভ্রুনের বিকাশের সময় বিশেষ কিছু জীনে মিউটেশন ঘটার কারনে তার গায়ের চামড়ার কোষগুলোতে পরিবর্তন দেখা যায়।কোষে একধরনের রঞ্জক কণিকার উপস্তিতির জন্য তার চামড়ার রং সবুজ।

রুথ একটু থেমে সকলের দিকে তাকালেন তারপর বললেন--
তবে রংটা আসল ব্যাপার নয়।এই মানব সন্তান সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে তার চামড়ার কোষের সবুজ রঞ্জকের সাহায্যে শর্করা তৈরী করতে পারে।ঠিক উদ্ভিদের মত।
তার মা লিয়ানা প্রথম খেয়াল করে যে ঈশান নামক এই বাচ্চাটি রোদের সংস্পর্শে থাকলে দীর্ঘক্ষন খাওয়া দাওয়া করতে চায়না।যে চিকিৎসক শুরু থেকে এই শিশুটির জন্মের সাথে যুক্ত ছিলেন সেই ডক্টর গবেষণা করে আবিষ্কার করে যে শিশুটির এই আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে।

উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষনের সাথে মিল থাকলেও তার শর্করা তৈরীর প্রক্রিয়াটি বেশ ভিন্ন।

মার্গারেট বলল- রোদ পেলে তাকে কি কিছুই খেতে হয়না?

রুথ- অবশ্যই হয়।প্রোটিন বা অন্য ধরনের খাদ্য তাকে গ্রহণ করতে হয়।এখন তোমরা ভেবে দেখ মানুষ যদি এই ক্ষমতাটা পেয়ে যেত তাহলে খাদ্যের জন্য প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়াটি কমে আসত কিনা।

ইউরোপের প্রেসিডেন্ট উইলসন বলল- মানুষ এই ক্ষমতা পাবে কিভাবে?
রুথ-- আমরা চিন্তা করছি এমন আরো কিছু শিশু তৈরী করা হবে।তোমরা জানো যে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি দিকের ভয়াবহ পরিবেশ দূষনের কারনে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা শতকরা 60 ভাগ কমে গেছে।তাছাড়া জীনগত ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্মের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় পঞ্চাশভাগের বেশি মানুষ এখন চাইল্ড ফার্ম থেকে সুস্থ শিশুসন্তান দত্তক নেয়।এই নতুন ধরনের শিশুদের দত্তক হিসাবে দেয়ার মাধ্যমে মানব সভ্যতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।

মার্গারেট বলল-থিওরিটা কিন্ত খারাপ না।পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য একবিংশ শতকের শুরুতে কিছু লোক প্রানীজ খাবার খাওয়া সম্পূর্ন বাদ দিয়েছিল।তারা শুধু উদ্ভিদজাত খাবার গ্রহণ করত।এদের বলা হতো ভেগান।এমন অনেক চেষ্টা মানুষ বিভিন্ন সময়ে করেছে।প্রায় 50 বছরের বেশি হয়েছে প্রানীজ প্রোটিন বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়।আমাদের প্রয়োজনীয় শর্করার খুব কম অংশ ফ্যাক্টরি তৈরি করতে পারছে তাই আমরা এখনও এব্যাপারে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।আবার অন্যদিকে প্রকৃতিতে যে দূষন চলছে তা প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে।এই উভয় সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার এটা একটা ভাল উপায়।


এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জিহান বলল-- রুথ তুমি বলছ এটি মিউটেশনের ফল।মিউটেশন তো আর এমনি এমনি হয় না।আর বেছে বেছে জীনের ঐ জায়গাগুলোতে মিউটেশন হবে এমন কোনো কথা আছে?

উত্তর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সোফিয়া এতক্ষণ চুপচাপ ছিল।এবার সে বলে উঠলো --তুমি বিংশ শতাব্দীর লোকের মত কথা বলছ।এখন মানুষের ক্রোমোজমের প্রতিটা জীন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানে।সঠিক জীনগুলোতে কৃত্রিমভাবে মিউটেশন ঘটানো কোনো ব্যাপার নয়।

উইলসন বলে উঠল- তাই বলে প্রতিটা ভ্রুন ধরে ধরে মিউটেশন ঘটানো ব্যাপারটা ঠিক বাস্তবসম্মত নয়।তাছাড়া এ নিয়ে মানবতাবাদী সংগঠন গুলো ঝামেলা করবে।
জিহান-- এসকল মানুষকে অন্য মানুষেরা ভালভাবে গ্রহন করবে এটাই বা তুমি কিভাবে মনে করছ?

রুথ -জিহান তোমার আশংকার কারন আছে কিন্ত ঈশান নামক এই শিশুটিকে নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।পৃথিবীর মানুষ এখন অনেক উদার।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে সে তোমারই এশিয়ার একটি ছোট্ট শহরে বেড়ে উঠেছে। যেহেতু তোমার কাছে কোনো রিপোর্ট যায়নি সেহেতু বুঝতে হবে তাকে নিয়ে কোনো বড় হইচই হয়নি।

উইলসন তোমার কথার উত্তরে বলতে চাই, না প্রতিটি শিশুকে ধরে ধরে মিউটেশন ঘটানো হবেনা।বরং নতুন শিশু সৃষ্টি হবে স্বাভাবিক ভাবে - পিতামাতার ডিম্বানু শুক্রাণুর মিলনে।

এবার সবাই আসল কথাটি শোনো।সাধারণ মানুষের সাথে এই একটি বিষয়ে বড় পার্থক্য থাকার কারনে আমরা তাদের আলাদা একটা মানব প্রজাতি হিসাবে ঘোষণা করতে চাইছি।

এবারে মার্গারেট আপত্তি করে বলে উঠল আমি যতদূর জানি নতুন প্রজাতি হতে হলে শুধু নিজেদের সব বৈশিষ্ট্যগুলোতে মিল থাকলেই চলবে না তাদের নিজেদের মধ্য মিলনে উর্বর সন্তান সৃষ্টি হতে হবে।তোমার দেয়া তথ্য অনুযায়ী শিশু রয়েছে একজন তাও আবার পুরুষ।

রুথ- ঈশান নামক এই শিশুটির জন্ম হয়েছে অনেক আগে।তাই সে এখন আর শিশু নেই বরং সে এখন ত্রিশ বছর বয়সের এক চমৎকার যুবক। অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষা জীবন শেষ করে সে এখন এশিয়ার স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষনার কাজে নিযুক্ত রয়েছে।

এই বিস্ময়কর শিশুটির জন্মের রিপোর্ট পড়ে আমেরিকার কিছু আগ্রহী বৈজ্ঞানিক হুবহু সেই সকল জীনগুলোতে কৃত্রিম মিউটেশন ঘটিয়ে একটি শিশুর জন্ম দিয়েছে। ইভ নামের
সেই কন্যা শিশুটি বেড়ে উঠেছে আমেরিকার এক চাইল্ড ফার্মে।এখন সে পঁচিশ বছরের মনোমুগ্ধকর এক তরুণী এবং অত্যন্ত দক্ষ বায়োলজিস্ট।

রুথের কথা শুনে সোফিয়া বাদে বাকি সকলে বিস্ময়ের শব্দ করে উঠল।

সোফিয়া বলল এই তরুণীটির কিছুকিছু খবর আমার জানা ছিল।কিন্ত আসলে যে ব্যাপারটা এত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিনি

রুথ বলল আমাদের একটা টিম এই দুজনের ডিম্বাণু শুক্রাণু থেকে সফলভাবে ভ্রুণ তৈরি করতে পেরেছে এবং তাদের শিশুগুলোও যে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে নতুন উর্বর শিশু জন্ম দিতে পারবে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।তাই তাদের নতুন প্রজাতি হতে কোনো বাধা নেই।

তোমরা সকলে একমত হলে আমরা সব মহাদেশেই প্রাথমিকভাবে কিছু কিছু এমন মানুষ জন্ম দিতে চাই।

জিহান বলে উঠল -এরা তো তাহলে আমাদের থেকে উন্নত প্রজাতি।এরা যে আমাদের একসময় নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?

রুথ- এই দু'একটা ব্যাপার ছাড়া এদের সবকিছুই কিন্ত মানুষের মত।তাই উন্নত কিনা সে ব্যাপারটা আপেক্ষিক।তাছাড়া বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে হোমো সেপিয়েন্স এমনিতেই নিশ্চিহ্ন হবে।পৃথিবীতে একসময় কিছু বুনো জন্তু ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।তাছাড়া ভেবে দেখ তারা কিন্ত মানুষের সন্তান হিসাবেই বেড়ে উঠবে প্রতিপক্ষ হিসাবে নয়।এতদিনের গড়ে ওঠা মানব সভ্যতা যদি রক্ষা করতে হয় তবে এটাই হয়ত সবচেয়ে ভাল উপায়।তোমরা কি মনে কর?

সোফিয়া বলল -আমি রাজি আছি।সেই সাথে প্রস্তাব রাখছি যে যথেষ্ট পরিমান মানব ডিম্বানু শুক্রাণু এবং ভ্রুণ হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হোক যাতে যখন কয়েকশত বছর পর পৃথিবীর দূষণ কমে যাবে এবং তা হোমো সেপিয়েন্স এর জন্য বাসযোগ্য হবে তখন যেন পৃথিবীর বুকে নতুন মানব শিশু জন্ম নিতে পারে।

রুথ- সোফিয়া খুবই ভাল প্রস্তাব দিয়েছ তুমি।আমরা ইতোমধ্যেই এব্যাপারে কাজ শুরু করেছি।সব মহাদেশ থেকেই মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মার্গারেট - আমিও রাজি তবে আমি বলতে চাইছিলাম যে চল আমরা ইশান এবং ইভকে একে অন্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।তাদের প্রথম শিশু তারা দুজনে মিলে জন্ম দিক। আমার মহাদেশে পাহাড়ের কোলঘেষে সাগর তীরে গড়ে ওঠা চমৎকার একটা বাসা আমি তাদের উপহার দেব।সেখানেই তারা নতুন জীবন শুরু করতে পারবে।

উপস্থিত সকলেই একমত হলো যে এটা চমৎকার একটা ব্যাপার হবে।

তখন উইলসন বলল- আমার মনে হচ্ছে না আমার অঞ্চলের লোকেরা এইসব ভেজিটেবল ম্যান দের মেনে নিতে পারবে। তোমরা আগে শুরু কর এরপর আমি দেখে বুঝে আমার সিদ্ধান্ত দেব।

জিহান বলল- তোমরা রাজি থাকলে আমিও রাজি।তবে এই নতুন প্রজাতির নাম কি হবে?আমরা নিশ্চয় উইলসনের মত তাদের 'ভেজিটেবল ম্যান' বলে ডাকব না।
রুথ বলল- বৈজ্ঞানিক নামের নিয়ম অনুসারে নামের প্রথম অংশে হোমো থাকতেই হবে।


সোফিয়া বলল- এরা দেখতে রঙিন। তাই এদের নাম হোক 'হোমো পিগমেনটিয়েন্সিস'।












মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: লাগলো খুব

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো খুব

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২২

রাজীব নুর বলেছেন: আগের পর্বের লিংক গুলো পোষ্টের সাথে দিলে ভালো হতো।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৫

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: লিংক একেবারে শুরুতেই দেয়া হয়েছে।প্লিজ ভাল করে দেখবেন কি?
সুপরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

খাঁজা বাবা বলেছেন: তারপর?

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২৭

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: তারপর আমার গল্প ফুরোলো,নটে গাছটি মুরোলো। :)
চাইলে প্রথম পর্বের প্রথম অংশ পড়ে আসতে পারেন।

৫| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৫

নীল আকাশ বলেছেন: এর পরের পর্ব লিখুন। পড়তে ভালোই লাগলো।

৬| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৫

নীল আকাশ বলেছেন: এর পরের পর্ব লিখুন। পড়তে ভালোই লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.