নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউঃঃ কারাগারের রোজনামচা

১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৪৩



আমরা যারা পঁচাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম তারা বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা কতটুকু জানি?তার কথা আমরা শুনেছি লোকমুখে,পড়েছি বইয়ে বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননায়। তাই একজন শক্তিশালী নেতা কিভাবে একজন নেতা হয়ে ওঠেন,তার ব্যক্তিত্ব আর চিন্তাভাবনা কেমন ছিল যে এমন একটা আজব জাতিকে তিনি নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন তা লোকমুখে শুনে উপলব্ধি করা কঠিন।

এজন্য বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে হলে পড়তে হবে 'কারাগারের রোজনামচা' বইটি।গ্রন্থটির নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধুর  ছোট কন্যা শেখ রেহানা।শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্ম বার্ষিকীতে ২০১৭ সালে গ্রন্থটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।বইটি প্রকাশের ইতিহাস বইটির শুরুতেই লেখা হয়েছে।বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৩২।রকমারি থেকে বইটি কিনলে মূল্য পড়বে ৪০০ টাকা।

আত্মজীবনীমূলক বইটিতে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকা সময়গুলোর অভিজ্ঞতা আর সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ। বইটির ভাষা বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষা।চিরকাল ধরেই উনি চমৎকার বক্তা ছিলেন।সহজ সরল মুখের ভাষাতেই উনি লিখেগিয়েছেন সবকিছু।তাই বইটি পড়তে বা বুঝতে কষ্ট হয়না বরং মনে হয় বঙ্গবন্ধু কথা বলছেন।

বইটি পড়তে গিয়ে কারাগারের অনেক নিয়ম কানুন আর অজানা বিষয় জানতে পেরেছি।বঙ্গবন্ধুকে তখন আলাদা একটা সেলে একাকী রাখা হয়েছিল।বাইরে তুমুল আন্দোলন।জেলের ভেতরে উনার অস্থিরতা আর একাকিত্ব উনি বর্ননা করেছেন।উনার সেলের সামনে উনি নিজ হাতে বাগান করেছিলেন।সেই বাগানের বর্ননা দিয়েছেন।একটা মুরগী পালতেন তার কিছু বাচ্চা ছিল।সেগুলোর বর্ননা দিয়েছেন।সেলের মধ্যে খাবারের কষ্ট কিন্ত তিনি অনেক খাবার অন্যদের বিলিয়ে দিতেন।এতেই বোঝা যায় উনি কতটা জনদরদী ছিলেন।

একটা জায়গাতে উনি এভাবে বলেছেন যে,এদেশের লোকের মূল সমস্যা কিছু হলেই সব দায়িত্ব আল্লাহর উপর চাপিয়ে দেয়-বলে আল্লাহর গজব।এদেশের লোক এত ধার্মিক পাঁচ বেলা আল্লাহর নাম নিচ্ছে কিন্ত বাইরের উন্নত দেশে আল্লাহর নাম নেয়ার লোক নেই তবুও গজব ওদের উপরে না হয়ে এদেশের উপরেই হয় কেন সেটা তারা ভেবে দেখে না।গোঁড়ামির কলুষতামুক্ত এমন যুক্তিপূর্ন পরিষ্কার চিন্তার অধিকারী ছিলেন বলেন উনি এ দেশ নিয়ে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখতে পেরেছিলেন। বন্যার জন্য বাঁধ নির্মাণ না করা নিয়েও উনি পাকিস্তানি সরকারের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।বলেছে-মিশর, চীন এসব দেশেও তো অতীতে বড় বড় বন্যা হতো।তারা যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তবে আমরা পারব না কেন।কিছু টাকা বরাদ্দ দিয়ে যে বছর বছর হয়ে চলা অনেক ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যায় সেদিকে সরকারের মনোযোগ নেই।এসব কথা থেকেই জানা যায় উনি দেশের উন্নতি আর কল্যাণ নিয়ে ভাবতেন।উন্নতি নিয়ে তার সত্যিই সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল।বেঈমানদের হাতে মৃত্যুবরন না করলে বাংলাকে সোনার বাংলায় পরিনত করার চেষ্টা উনি সর্বশক্তি দিয়েই করতেন।

নব্বইয়ের দশকে যখন স্কুলে ছিলাম তখন পাঠ্যবই বা অন্য জায়গাগুলোতে বঙ্গবন্ধুর অবদান এতটা প্রচারিত হতোনা।বিভিন্নসময় তাঁকে নিয়ে অনেক অপপ্রচারও শুনেছি।বর্তমানের কিছু তেলবাজ নেতা বা দূর্নীতিবাজ লোকের মুখে বঙ্গবন্ধুর গুনগান শুনলে কেমন যেন বিবমিষা জাগে।কারন তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিন্দুমাত্র ধারন করেনা(তারা না থাকলে দেশ আরো এগিয়ে যেত)।সুবিধা দেখলেই তারা অন্য সুরে কথা বলবে,অপপ্রচার চালাবে।অথচ জাতির পিতাকে সমস্ত সমালোচনার উর্ধ্বে রাখা উচিত।
উনি সকল দলের, সকল মানুষের।

এই বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি ভাল আর কেউ বাসেনি।এই অবাধ্য,মূর্খ,শ্যামল বর্নের মানুষগুলোকে তিনি সত্যিই বড় ভালবাসতেন।তাদের জন্য জীবনের অনেকগুলো বছর জেল জুলুম সহ্য করেছেন তবুও হাল ছাড়েননি। তিনি এই জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যাদের উপর কেউ ভরসা রাখতে পারেনা তাদের নিয়ে বহুদূর চলার স্বপ্ন দেখেছেন।আজ কিন্ত আমরা আর 'তলাবিহীন ঝুরি নই'।ভাবলেই লজ্জা লাগে তার এত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা তাকে কিছুই দিতে পারিনি। আমাদের নিজের লোকই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।তারপর মাত্র একটা ৫৭০ সাবানে তার শেষ গোছল দিতে হয়েছে।অথচ জাতির পিতার জানাজায় লাখো মানুষের ঢ্ল নামার কথা ছিল।

স্বাধীন হলেই কিন্ত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না,তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়।সুন্দর জীবন নিজ হাতে গড়ে নিতে হয়।আমাদের দূর্ভাগ্য যে সেই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তিনি বেশিদিন পাননি। তাই বাঙালি জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে উচ্চাশা ছিল,যে ভিশন ছিল তা বুঝতে হলে আপনাকে 'কারাগারের রোজনামচা' বইটি পড়তে হবে।সর্বপরি বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলেও আপনাকে এই মহান নেতার লেখা বইগুলো পড়তে হবে।আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে জাতির পিতার নিজ হাতের লেখা বই আকারে পড়তে পারছি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: এই বইটা প্রতিটা বাঙ্গালীর পড়া উচিত।

১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: একমত।
বইটির একটি সুলভ সংস্করণ বের করা দরকার যাতে সবাই কিনতে পারে।এই বছরে স্কুল কলেজে যত পুরস্কার হবে তা যদি বইগুলো দিয়ে করা হয় তবে অনেকের কাছে বইটি পৌঁছে যাবে।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Salute

১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১:১৪

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: জাতির পিতাকে স্যালুট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.