নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুকের ভেতর মৃত নদী (পর্ব চৌদ্দ )

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

প্রথম পর্ব

একুশ
এক একটা সময় থাকে বড্ড অদ্ভুত।এক একটা রাত থাকে বড্ড মায়াবী। যখন তপ্ত দিনের শেষে রাত্রি আলো করে চাঁদ ওঠে, যখন গভীর রাতে অঝোরে বৃষ্টি নামে কিংবা যে রাতে শীতের কুয়াশায় ঢাকা পরে চরাচর।তখন মাঝে মাঝে শ্রাবনীর মনটা মায়াবী হয়ে ওঠে।তার দেহ সুবাসিত হয়ে ওঠে বর্ষাস্নাত কদম ফুলের গন্ধে।তখন শ্রাবনীর অস্থির লাগে।কারো কোমল ভালবাসা পাওয়ার জন্য দেহমন উন্মুখ হয়ে থাকে।

এমন কতগুলো রাতই না এসেছে শ্রাবণীর জীবনে।একাকী তার পেরিয়ে বিষন্ন একটা ভোর এসেছে তারপর।একেই কি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে?এই সময়টাই হয়ত আদর ভালবাসায় মাখামাখি হয়ে কাটানোর কথা এক জোড়া মানব-মানবীর।

শুধুমাত্র তার একসময়ের প্রিয় পুরুষটির অবিবেচক আচরণের কারনে আজ তাকে সময় কাটাতে হচ্ছে একাকী।

তবে একাকিত্বেরও এক ধরনের চার্ম আছে।একবার এর নেশা ধরে গেলে মানুষের জন্য অন্যের সঙ্গ আর উপভোগ্য হয় না।শ্রাবনীর কি তবে নেশা ধরে যাচ্ছে।আজকাল সে নিজের একাকী সময়টুকু উপভোগ করার চেষ্টা করে আরও বেশি।কেমন যেন একটা শান্ত সমহিত একটা ভাব এসেছে তার মধ্যে।চাকরি জীবনের মেয়াদ তিন বছর পেরিয়ে আরও আট মাস।একাকিত্বের প্রায় চার বছর!

দুঃখ মানুষকে ভেঙে ফেলে।যার ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থাকে অদম্য তার মন একসময় জোড়া লাগে।আরো দুঃখ মানুষকে আবার ভেঙে দেয়,আবার তা জোড়া লাগে।এই ভাঙা গড়ার খেলা চলতে থাকলে মানুষ একসময় এত বেশি শক্ত হয়ে যায় যে তার সাথে অনুভূতিহীন পাথরের মূর্তির কোনো পার্থক্য থাকেনা।শ্রাবণীর হয়েছে সে অবস্থা।

ছাত্রী থাকা অবস্থায় তো বটেই,চাকরিতে ঢোকার আগে বা এর শুরুতে ভবিষ্যতের আশা ছিল।অনেক কিছু করার আশা।অনেক অনেক স্বপ্ন।সেগুলো কেমন যেন দূরে চলে যাচ্ছে।একটা স্বস্তিদায়ক ক্যারিয়ার, একটি গোছানো সংসার।একটি কর্মব্যস্ত প্রশান্ত জীবন!কিন্ত শ্রাবণী নানারকমের সমস্যায় এত বেশি বিপর্যস্ত হয়ে থাকে যে শান্ত হয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারেনি এতদিন।করতে পারেনি কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। বিয়ে, হ্যাঁ বিয়েটা নিয়েই চিন্তাটা বেশি ছিল তার এতকাল।কারন এবয়েসে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সঙ্গীকে সাথে নিয়ে দুজনের বোঝাপড়া নিয়েই করতে হয়।এদেশে একটা মেয়ে একা থাকবে কিভাবে?তাই যার সাথে থাকবে তার সাথে মিলে পরিকল্পনা করাটাই শ্রেয়।

সঙ্গী যে তার ছিলনা তা তো নয়।কিন্ত এখন সেই সঙ্গী আর নেই।সমস্যা হয়ত কমেনি,জীবনের পথটুকু হয়ত কঠিনই আছে।তবে মানসিক পীড়ন আর দোটানা থেকে সে মুক্তি পেয়েছে।এখন সে জানে তাকে কি করতে হবে।

কিশোরী বয়সে একটা চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেত।সে ভাবত যে জীবনে কোনোদিন বিয়ে করবে না।এই চিন্তাটা চিরতরে পরিবর্তন হয়ে গেল তার বাবার মৃত্যুর পর।মানুষ যেন তার অর্ধেকটা নিয়ে চলে গেছে এমনটাই মনে হতো শ্রাবণীর।তারপর থেকেই তার মনে হয় তারা মাত্র তিনজন মানুষ পরিবারে।তিনজন বড্ড কম!আরো কিছু মানুষ যদি থাকত!মায়ের সঙ্গী হারানো রূপটা তাকে কষ্ট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি।সেই থেকেই সে একাকিত্বটাকে ভয় পেয়ে এসেছে।তার কাছে মনে হয় একাকী জীবন কাটানো অসম্ভব। নিজের একটা অন্তত পরিবার থাকতে হবে।

আরোও একটা কারনে এদেশে নারীদের পরিবারের পরিমন্ডলে থাকা প্রয়োজন হয় আর সেটা হচ্ছে নিরাপত্তা। একাকী নারীর দিকে সবাই তার নোংরা হাত বাড়ানোর চেষ্টা করে।গল্প উপন্যাসে অনেক পড়েছে কিন্ত সেটা শ্রাবণী নিজেও ভোগ করছে আজকাল।সে এটা ভেবে অবাক হতো যে একটা পরিবারে বেশিরভাগ নারীই যে অপমান আর অত্যাচারের শিকার হয় তবুও তারা সংসার আঁকড়ে থাকার চেষ্টা কেন করে।এখন সে বিষয়টি একটু বুঝতে পেরেছে।বিষয়টি আর কিছুই নয়,নিরাপত্তার অভাব।শ্রাবণীর মত মেয়েরা যাদের আর্থিক নিরাপত্তা আছে তারা অনেকটা স্বাধীন কিন্ত সামাজিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পরিবার গঠনের জন্য ব্যাকুল হতে হয়।শ্রাবণীর মা অনেক আগে একবার কথায় কথায় বলেছিলেন এদেশে মেয়েদের যদি সামাজিক নিরাপত্তা থাকত তবে অর্ধেক মেয়েই কখনো বিয়ে করতো না।কথাটা মনে হয় ভুল নয়।


এই যে অফিসে কলিগ বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সুযোগ সন্ধানী অনেক লোক তৈরি হয়েছিল।তাদের মধ্যে একজন ছিল অত্যাধিক সাহসী।নানা আকার ইঙ্গিতে তাকে বেশ অনেকদিন বিরক্ত করেছে।সে ট্রান্সফার হয়ে চলে যাওয়ার পর শ্রাবণী হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।মজার ব্যাপার হচ্ছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া কলিগটি শেষপর্যন্ত তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করে ফেলেছে।তবুও সুযোগ পেলে তার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।শ্রাবনীর খুব বাজে অনুভূতি হয়।

তবে আজকাল সবকিছু এড়িয়ে চলার প্র‍্যাক্টিস করছে সে।পারতপক্ষে কিছুই গায়ে লাগায় না।বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করলে আগে খুব মন খারাপ করত,এখন খুব বোল্ড ভাবে উত্তর দেয়।কখনো বলে- 'আপনারা ছেলে দেখেন'।তাতে আসল কষ্টটুকু না গেলেও কিছুটা হালকা লাগে।

শ্রাবণী ইদানিং খুব পড়ছে।সামনে একটা বিসিএস আছে এজন্যই এত তাড়া।নামাজে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছে আর চেষ্টা করছে নিজের যত্ন নেয়ার।তার একটা কেমন যেন নিজের ক্ষতি করার প্রবনতা আছে।সবকিছুর জন্য অবচেতনে সে কোথাও না কোথাও নিজেকে দায়ী ভাবত।নিজেকেই কষ্ট দিয়ে জর্জরিত করত।মেডিটেশন করতে গিয়ে নতুন করে শিখেছে প্রথমে নিজেকে ভালবাসতে।সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে সে প্রাণপনে।

বিয়ের পরে পড়বে বলে তুলে রাখা ড্রেসগুলো একে একে পড়ে ফেলছে।অফিসে আরও পরিপাটি হয়ে যায় সে এখন।অনেকদিন ধরে ফেলে রাখা গল্পের বইগুলো একে একে পড়তে থাকে।হালকা কোনো সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখে একা একাই হাসে।রান্নাঘরে নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করে।গান শুনতে শুনতে নতুন কিছু সেলাই করে।নিজেকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে করতেই পেড়িয়ে গেল আরও কিছুদিন।


বাইশ

শ্রাবণীর বিয়ে।বিয়ে এনেছে স্থানীয় একজন।ছেলেটি স্থানীয় একটা কলেজ থেকে পড়ালেখা করে ময়মনসিংহ এলাকায় বেসরকারি একটা চাকরি করে।একদিন হুট করে ছেলের মা আর ভাই এসে তাকে দেখে গেল।আগে থেকে না জানিয়ে এসেছে বলেই কেউ প্রস্তুত ছিলনা।কোনোভাবে তাদের আপ্যায়ন করা হলো।রোজার মাস।বাসায় সবাই রোজা।ছেলের বড়ভাই রোজা নন।কিছু কিছু করে খেলেন।তারা শ্রাবণীকে দেখে চলে গেল।তারপর কোনো খবর নেই।

রোজার ঈদের পরে তারা হঠাৎ খবর পাঠালেন।ছেলে ছুটিতে বাড়ি এসেছে। তারা চাইলে দেখতে পারেন।পছন্দ হলে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হবে।শ্রাবণীর মা তার ভাইবোনদের ডেকে পাঠালেন।পরদিনই তার এক মামা-মামী আর খালা এসে হাজির হলো।সবাই মিলে খুব ঘটা করে ছেলে দেখতে গেলেন।ফিরে আসার পর জানা গেল ছেলেটির পরিবার একেবারেই হতদরিদ্র। রেললাইন এর পাশে টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে।পরিবারেই এই একটা ছেলেই শিক্ষিত হয়েছে বাকিদের অবস্থা ভাল নয়।শ্রাবণীর সাথে বিয়ে হলে পুরো পরিবার অনেক উপরে উঠে যাবে।এজন্যই হয়ত তাদের এত আগ্রহ।

ছেলেটির ছবি আর বায়োডাটা দেখে শ্রাবণী বুঝেছে এই ছেলে তার চেয়ে লম্বায় অন্তত দেড় ইঞ্চি ছোট।দুবলা পাতলা গড়ন।শ্রাবণী আকারে তারচেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মেয়েকে না দেখেই সে বলেছে মা যা বলবে সে তাই করবে।স্পষ্ট বোঝা যায় শ্রাবণীকে ছেলেটির পছন্দ হয়নি।ছেলেটিকেও শ্রাবণীর পছন্দ হয়নি।শিক্ষিত মানুষের নিজের একটা মতামত থাকা উচিৎ। পরিবারের চাপে অপছন্দ সত্ত্বেও বিয়ে করে এই ছেলে ময়মনসিংহে যদি আরেকটা সংসার পাতে শ্রাবণী তখন কি করবে।তাছাড়া ছেলের কোনোকিছুই তার সাথে যায় না।অথচ এতদিন ধরে টুকটাক কথা হচ্ছিল তার চাচাদের কেউ গিয়ে স্ব চক্ষে তাদের বাড়িঘর দেখে আসতে পারত।

তারা এমন ভাব করছিল যেন এখানেই বিয়েটা হয়ে যাবে।অথচ লোকের বাড়িতে গিয়ে পেট পুরে খেয়েদেয়ে এখন এসে সবাই আলোচনায় বসেছে।তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিলেন এমন জায়গায় মেয়ে দেয়া যায় না।

একটু পরে শ্রাবণীর চাচী তার খালা আর মামীকে নিয়ে তার ঘরে এলেন।তাকে খুব যত্ন করে জিজ্ঞাসা করলেন তার পছন্দের কেও আছে কিনা।শ্রাবণী উত্তর দিল না।তিনি এবার জিজ্ঞাসা করলেন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে এমন কেউ আছে কিনা।এবার শ্রাবণী মুখ খুলল।সে তুষারের নাম বলল।


একটুও দেরি না করে চাচী শ্রাবণীকে চাচা-মামাদের ভরা মজলিসে টেনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল।সেইসাথে বলল ওর সাথে একটা ছেলের সম্পর্ক আছে।বাবার বয়েসী মানুষদের সামনে শ্রাবণীকে তুষার সম্পর্কে ইন্টারভিউ দিতে হলো।কেন ছেলেটি এতদিনেও কিছু করেনা তার ফিরিস্তি দিতে হলো।সবার মধ্যে বসে নিজের মুখে নিজের বিয়ের কথা বলতে হলো।সংকোচে তার মাথা কাটা যাচ্ছিল কিন্ত ছুটে যাওয়া তীর ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়না।


এই অজায়গায় বিয়ে ঠিক করা নিয়ে সে এমনিতেই ক্ষেপে ছিল সবার উপরে।কিছুদিন আগে তুষার তাকে ফোন দিয়ে প্রথমবারের মত বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।হ্যাঁ ছাড়াছাড়িটা সত্যিই হয়ে গেছে তুষারের সাথে।অন্তত সে মনের দিক থেকে কোনো বাঁধন টের পায়না।।তবুও তুষারে প্রস্তাব শুনে শ্রাবণীর মনে হয়েছিল বুক থেকে যেন একটা পাষাণ নেমে যাচ্ছে।দীর্ঘদিন মেলামেশা করে একটি ছেলে তাকে বিয়ের চেষ্টাও করেনি-এই অপমানের ভার যে কতবড় পাহাড়ের মত তার বুকে চেপে ছিল তা সে সেইদিন বুঝেছিল।সে উত্তর দিয়েছিল আমি নিজে থেকে কিছু বলতে পারব না। তোমার আগ্রহ থাকলে তুমি বাসায় প্রস্তাব দাও।শ্রাবণীর মন মেজাজ ঠান্ডা হওয়ার পর সে ভেবে দেখেছে তুষার যদি যোগ্যতা নিয়ে বাড়িতে প্রস্তাব পাঠায় আর বাড়ির লোক রাজি থাকলে সে তুষারকে গ্রহন করতে পারে।সত্যি বলতে কোনো ছেলেকেই তার তুষারের চেয়ে ভাল লাগেনি।তার স্বপ্ন ছিল তুষার একদিন শ্রাবণীর বাড়িতে গিয়ে ভালবাসার দাবী দিয়ে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে।তা যখন হয়নি তখন শ্রাবণী অন্যদিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে গেছে।কিন্ত তার সাথে যায়না এমন অসংখ্য মানুষের প্রস্তাব এসেছে তার জন্য। যোগ্য মানুষ এসেছে কম।যোগ্য মানুষের মধ্যেও আবার কিছু অমানুষ আর হায়েনা বের হয়েছে।শ্রাবণীর তাই মনে হয়েছে অমানুষ বিয়ে করতে হলে চেনা অমানুষই ভাল।


আজ প্রায় দেড় বছর হতে চললো তুষারের সাথে সম্পর্ক নেই তার।লম্বা একটা বিরতির পর অবশ্য তুষার যখন তখন ফোন দিয়ে শ্রাবণীকে প্রচুর বিরক্ত করেছে।শ্রাবণী মোটেও পাত্তা দেয়নি তাকে।টুকটাক কথা হয়েছে কখনো কখনো । শ্রাবণী সেসব জিনিস খুব হালকা ভাবে নিয়েছে।তুষার খুব অবাক হয়ে বলেছে-তুমি খুব বদলে গেছ।বদলে গেছে বই কি!আগে যার সাথে ঝগড়া হলে কেঁদে বুক ভাসাতো,নির্ঘুম রাত কাটাতো তার কথা এখন তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনা তার মনে।বুকটা যেন তার পাষাণের মত হয়ে গেছে।তার বুকের উচ্ছল নদীটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে,তাতে দিগন্ত বিস্তৃত চর পড়েছে।সম্ভব হলে সে তুষারকে কঠিন একটা শাস্তি দিত।তুষারকে ভুলে যাওয়াটাই হয়তো একটা বড় শাস্তি।সে এখন তুষারের সাথে কথা বলতে বলতে অনায়াসেই অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলতে পারবে।তার বিন্দুমাত্র বুক কাঁপবে না।

তবে বিয়ে করলে তো যোগ্য কাওকেই করা উচিৎ। এই যোগ্য পাত্রটিই যে কেউ খুঁজে দেয় না।এবার ভালো করে না দেখেই বিয়ের জন্য এমন তোড়জোড় করাতে অনেকটা মরিয়া হয়েই সে তুষারের কথা বলেছে।যদিও তুষারকে সে সত্যিকার অর্থে গ্রহন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে তার নিজেরই অনেক সন্দেহ আছে।

শ্রাবনীর চাচী ভাবলেন এবার অনেক বড় একটা আবিষ্কার করে ফেলেছেন।তিনি নাকি বিয়ের কথা হলেই তাকে ফোনে কথা বলতে দেখেন।এবার নাকি কাঁদতেও দেখেছেন।তাই নাকি তিনি সন্দেহ করেছেন।তিনি জানতেন না শ্রাবণীর মা এবং মায়ের দিকের সবাই আগে থেকেই তুষারে কথা জানে।আর এবারের কান্নাটা সে তার এক বান্ধবীর কাছে পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে কাঁদছিল।তারা অবশ্য কিছু স্বীকার করলেন না।শ্রাবণীর মা সাফ জানিয়ে দিলেন বেকার ছেলের সাথে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না।আরও আলোচনা হলো।ঠিক হলো তারা একদিন গিয়ে ছেলের ঘরবাড়ি দেখে আসবে। শ্রাবণীকে তারা বললেন এর মধ্যে ছেলেটিকে কিছু একটা করতে বলো।কারন তুমি নিজের কর্মক্ষেত্রে কিভাবে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবে?

শ্রাবণীর কখনো ইচ্ছা ছিলনা তুষারের কথা তার চাচা-চাচীরা জানুক।তবে কিছুদিন পরপর এই আজগুবি প্রস্তাব নিয়ে ড্রামা তার ভাল লাগে না।এদিকে তুষার নিজেও বার বার বিয়ের কথা বলছে।ক্লান্ত শ্রাবণী মনে মনে তাই ঠিক করেছিল যা থাকে কপালে,এবার তুষারকেই বিয়ে করে ফেলবে।এটা হয়ত সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বিয়ে যদি হয় তাকে ধরেই নিতে হবে তুষারের সমস্ত ভার তাকে নিতে হবে কারন সে কাজকর্ম কিছু করবে না।তার মন মানসিকতা হয়ত আর আগের মত হবে না।তবে শ্রাবণী পেছনের অতীত ভুলে সম্পূর্ণ নতুন করে শুরু করবে।অতীতে ভুলভ্রান্তি আর দুঃখের স্মৃতি সে নিজেও মনে করবে না তুষারকেও মনে করতে দেবে না।


শ্রাবণী চুপিচুপি বিয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।অনলাইন থেকে অর্ডার করে হালকা ধরনের কুন্দন আর মুক্তার কিছু গহনা কিনলো।কিছু মেকাপ আর কাপড় কিনে গুছিয়ে রাখল সযতনে। সোনার গহনা তার নেই, এভাবে ছেলে বেকার অবস্থায় ধুমধাম করে বিয়ে করা যাবে না।আপাতত ছোট পরিসরে বিয়ে পড়িয়ে রাখাটাই সবচেয়ে ভাল হবে।


শ্রাবণীর পড়ালেখা মাথায় উঠলো। একেকবার ভাবে এটাই হয়ত ভাল যার সাথে এক সময় প্রেম ছিল তার সাথেই বিয়ে হবে।আবার কখনো মনে হয় সে তুষারের কাছে হেরে গেল,সে অন্যায়ের কাছে হেরে গেল।তুষার কি একটুও বদলেছে?তার সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে যে গভীর ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে সে কাটিয়েছে সেই ব্যাক্তির সাথে সারা জীবনের জন্য বাধা পড়তে যাচ্ছে।সে কি তাকে ভাল রাখবে?মনে হয় না।কিন্ত শ্রাবণী এখন পাত্তা না দিতে শিখেছে,এড়িয়ে যেতে শিখেছে,ভুলে যেতে শিখেছে।তুষারের উপরে তার ভরসা নেই কিন্ত নিজের উপরে তার এই সামান্যটুকু ভরসা।সেই ভালবাসাটা নেই,তাই প্রতিদান না পাওয়ার কষ্টটাও নেই।




চলবে---

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: দুলখ কষ্টই মানুষকে খাটি করে।
স্বর্ন যত পুড়ে তত খাটি হয়। ঠিক তেমনি মানুষ যত দুলখ পায় তত খাটী হয়।

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১১

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: খাটি হবার উপকারিতা কি বলতে পারেন?

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইতো জীবন । দুঃখের পরে সুখের আশা থাকে

২৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১২

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: মানুষের আশাতেই বসতি---

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.