নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভৌতিক গল্পঃ কে ডাকে?

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫১



কে যেন ডাকল!চৈতী ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে।কই কেউ নেইত!ফাঁকা ছাদ। হাত ভর্তি শুকনো কাপড় নিয়ে সে নিচে নেমে আসে।

কি জানি কি হয়েছে তার!
কিছুদিন থেকেই তার মনে হয় কে যেন ডাকছে।শোনা যায় কি যায় না।নিঃশ্বাসের শব্দের মত মৃদু আওয়াজ।চকিত স্বরে শুধুই তার নাম ধরে ডাক দেয় কে যেন।প্রথম কয়েকবার চৈতী ভেবেছিল মনের ভুল।তাই পাত্তা দেয়নি।তারপর যখন ঘনঘন ডাক শুরু হলো তখন সে বেশ অবাক হয়েছে।আগে মনে হতো দূরের আওয়াজ, আজকাল মনে হচ্ছে আওয়াজটা যেন কিছুটা কাছে এগিয়ে এসেছে।কিছুটা যেন স্পষ্ট হয়েছে।

বড় আপাকে বলেছে চৈতী ব্যাপারটা।তিনি হেসে বলেছেন, বিয়ের আগে মেয়েদের মন দূর্বল থাকে তো এইজন্য এমন অনেক কিছু মনে হয়।ও কিছু না।বরের আদর যত্ন পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।


চৈতী মনে মনে ভাবে তার আপাটা বড্ড বোকা।স্বামীর যত্নের সাথে এসবের সম্পর্ক কি?আসলে তার বাসার সকলেই কেমন যেন বোকা বোকা সরল স্বভাবের।সবাই অবশ্য ভাবে চৈতীই সবচেয়ে বোকা।সবচেয়ে নরম মনের।আসলে দেখতেও সে নরম কোমল পুতুলের মত।মায়া মায়া চেহারা দেখলেই মন নরম হয়ে যায়।


এইজন্যই হয়ত স্বনামধন্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মালিক তার একমাত্র ছেলের বউ হিসাবে তাকে নির্বাচন করেছেন।ছেলেটি সুদর্শন।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে।বাবার একান্ত ইচ্ছা বিয়ে করে বউ নিয়ে সে যাক।সেজন্য বেশ তারাতারিই সবকিছু ঠিক হয়ে গেল।


বিয়ে হলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে চৈতীর।এবার সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।এটা নিয়ে যদিও তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই।তবুও সে ভাব দেখাচ্ছে তার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। এইরকম ভাব দেখাতে হয়।নইলে দাম থাকেনা।

দেখতে দেখতে বিয়ের সময় এসে গেল।গায়ে হলুদের রাত্রিতে জমকালো অনুষ্ঠান শেষে বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন মেকাপ তুলছিল তখন বেশ স্পষ্ট স্বরে ডাকটা শুনে চমকে উঠলো চৈতী।স্বরটা বেশ চেনা চেনা।রাতে ঘুম ভেঙে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য একটা ছায়া দেখে চমকে উঠলো সে আবার!দরজার কাছে কি কেউ দাঁড়িয়ে? না কেউ তো না।কেউ আসবেই বা কিভাবে?দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।শতভাগ চোখের ভুল।তবুও ছায়াময় অবয়বটা কেন একজনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে?আসলে সব দোষ জুঁই এর।আজেবাজে একগাদা কথা মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।চৈতী চোখদুটো বন্ধ করে আবার ঘুমানোর আয়োজন করল।


বিয়ের তোড়জোড় আর আয়োজন চলতে লাগল কিন্ত চৈতীর মনের ভেতরে থেকে থেকে রাতের কথাটা ভেসে উঠতে লাগল।আসলেই কি সবটা চোখের ভুল?তবে কেন বার বার মুহিতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে?

মুহিত ছেলেটা চৈতীদের ক্লাসেই পড়ত।শান্ত, ভদ্র, নির্বিবাদী ছেলে।কিছুটা হয়ত বোকাও।পড়ালেখায় মাথা অতটা পরিষ্কার ছিল না কিন্ত তার চেষ্টাটা ছিল দেখার মত।এই চেষ্টার জোড়েই ফার্স্ট ইয়ারে রেজাল্টটা বেশ ভাল করেছিল সে।সেকেন্ড ইয়ারেও সেই চেষ্টায় রত ছিল মুহিত।

এদিকে সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা চৈতীর হঠাৎ করেই তাকে চোখে পড়ল।ক্লাসের সব ছেলে যেভাবে তাকে আগ্রহের চোখে দেখে এই ছেলেটি তো তেমন না! সব ছেলে তার পাশে বসার জন্য ঠেলাঠেলি করে, তারজন্য কিছু করতে পারলে বর্তে যায়।সে সাধারণত কাওকেই প্রকাশ্যে বেশি পাত্তা দেয়না,আবার পুরোপুরি নিরাশ করেনা।বেশি পাত্তা দিলে কি দাম থাকে?অনার্সে উঠে চৈতীর নিজেকে অনেকটা প্রিন্সেস প্রিন্সেস লাগে।স্কুল এমনকি কলেজেও সে এত আনন্দ করেনি।সকলের মধ্যমণি হয়ে থাকা খুব মজার ব্যাপার।

কিন্ত এই একটি ছেলের নির্লিপ্ত ভাব দেখে ক্রমশ তার মনের শান্তি নষ্ট হতে চলল।ব্যাপার কি?মুহিত ছেলেটির গায়ে কি পুরুষের রক্ত মাংস নেই!কোথায় যেন নিজের অংহকারে লাগল বিষয়টা চৈতীর।সে স্থির করল এই বিষয়টা তলিয়ে দেখতে হবে।তবে অন্যদের ব্যাপারটা জানতে দেয়া যাবে না।দেখতে দেখতে সুযোগ এসে গেল।

একদিন সকালের ক্লাসটা ক্যান্সেল হয়েছে জেনে চৈতী ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়েছিল সময়টা কাটানোর জন্য।তেমন পরিচিত কেউ ছিলনা সেখানে শুধু এক কোণের টেবিলে মুহিত একাএকা বসে চায়ে ডুবিয়ে পরোটা খাচ্ছে।সামনে খোলা কিছু নোটপত্র।তার চোখ সেদিকে নিমগ্ন।চৈতী সরাসরি গিয়ে তার টেবিলের সামনে দাঁড়ালো।মুহিত মুখ উঠিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেও তাকে দেখে মনে হলো না সে চৈতীকে চিনতে পেরেছে।রাগে চৈতীর মাথায় আগুন ধরে গেল।সে এবার চেয়ার টেনে বসে পড়ল।এতটা সে কখনোই কোনো পাব্লিক প্লেসে করে না।নিজের ক্লিয়ার ইমেজটা তো রাখতে হবে! তবে এই ছেলের ব্যাপারটা আলাদা।তার দেখতেই হবে এই ছেলে কি ধাতুতে গড়া।তার মত মেয়েকে পাত্তা দেয়না!

সেই থেকে শুরু।প্রথমে বন্ধুত্ব। তারপর এখানে সেখানে সবার চোখের আড়ালে মায়াজাল বিছিয়ে চলল চৈতী। এই ব্যাপারে তার দক্ষতা প্রায় শৈল্পিক পর্যায়ে পৌঁছেছে ।তবে সে কখনো তা তৃতীয় কাওকে বুঝতে দেয়না।কারন প্রেম তো সে করেনা।করবেও না।ছেলেদের সঙ্গ তার ভাল লাগে।সবাই তাকে দেবীর মত,রানীর মত দেখে এটা তার ভাল লাগে। নিজের ক্লিয়ার ইমেজটা সে কখনো নষ্ট করবে না।বিয়ে সে করবে পরিবারের পছন্দের প্রতিষ্ঠিত ছেলেকে।তবুও ছেলেরা তাকে ভালবাসে এটা তার ভাললাগে।মুহিতকে বুঝে উঠতে তার সময় লাগছে।ছেলেটা যেন অন্যরকম।কি এমন দ্বিধা তার?চৈতী কি অপূর্ব সুন্দরী নয়?এমন মেয়ের কাছাকাছি আসার এমন সুযোগ পেয়েও হামলে পরেনি এমন ছেলে সে আগে দেখেনি।চৈতীর জেদ বেড়েই চলে।সবাইকে লুকিয়ে সে যেন কিছু বারাবাড়িই করতে থাকে।একসময় পাথর গলে।মুহিতের স্বপ্নালু চোখে রঙ ধরে।

এভাবেই মুহিত তার প্রতি একেবারে ডুবে গেল একসময়।ঘন পল্লবের চোখদুটো মেলে চৈতীর দিকে তাকিয়ে থাকে অন্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে।একবার একটা নোট চাইতেই রাজ্যের সব নোট এনে দিল সে চৈতীকে।একদিন নোটের সাথে পাওয়া গেল একটি রক্তগোলাপ।তবে মুখ ফুটে ভালবাসার কথা বলেনি সে কখনো।ক্লাসের কেউ কেউ খেয়াল করেছে তার এই ভাবের পরিবর্তন। এই নিয়ে কানাঘুষা হাসাহাসি ও চলে।সেই হাসাহাসিতে চৈতীও যোগ দেয়।অন্য ছেলেরা মুহিতের উপর রাগান্বিত হয়।কিন্ত কেউ তাকে কিছু বলতে পারেনা।কারন মুহিত এমন কিছু করে না যাতে তাকে ধরা যায়।


সেই শান্ত মুহিত এমন ভয়ানক কান্ড করে ফেলবে ভাবাই যায় না।নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বস্তিমতো একটা ঘরে তার লাশ পাওয়া গেছে।গলায় ফাঁস লাগিয়ে সে নাকি আত্মহত্যা করেছে।সুইসাইড নোটে লেখা 'আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।'পুলিশ বলছে দারিদ্র্য আর হতাশার কারনেই সে এই পথ বেছে নিয়েছে।জুঁই বলছিলো তার বিধবা মা নাকি কলেজে এসেছিল।ছেলেকে হারিয়ে ভদ্রমহিলার সে কি কান্না!সেই হাহাকারে নাকি পাথর গলে যায়।

পুলিশ নাকি তার জীর্ণ ঘরে একটি ডাইরি খুঁজে পেয়েছে।যেখানে এক প্রেয়সীকে নিয়ে অজস্র কথা লেখা আছে।লেখা আছে অনেক কবিতা।মেয়েটির কোনো নাম অবশ্য লেখা নেই।পুলিশ তাই এই বিষয়টা ঘেঁটে দেখতে যায়নি।দু একজন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসা করেছে মাত্র।তারাও কেউ কোনো প্রেয়সীর খবর দিতে পারেনি। সেই প্রেয়সীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার কষ্টের কথা লেখা আছে ডায়েরির শেষ কয়েক পৃষ্ঠায়।পুলিশ ধরে নিয়েছে জীবনের হতাশার সাথে অব্যক্ত প্রেমের হতাশার কারনেই এমন পথ বেছে নিয়েছে ছেলেটি। কেস ক্লোডজ।কারও কোনো অভিযোগ নেই।মুহিত একজন নো বডি।এমন ছেলের জন্য কারই বা কিছু আসবে যাবে শুধুমাত্র তার মা ছাড়া?


স্টেজে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে যায় চৈতী।লম্বা সময় ধরে পার্লারের সাজগোজ। তারউপর কড়া আলোর মধ্যে এতক্ষন বসে থাকা।বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে আগেই।এখন আপ্যায়ন পর্ব চলছে।গত রাতে একফোটা ঘুম হয়নি তার।কারন সেই কন্ঠস্বর।আসলেই কি বিয়ের চাপে তার মাথা এলোমেলো হয়ে গেল?কে ডাকবে তাকে এভাবে?তাছাড়া কাল সারারাত মনে হয়েছে ছায়াছায়া কে যেন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ঘুমিয়ে গেলেই যেন তাকে ছুঁয়ে দেবে।না ঘুমানো চোখের নিচের কালি ঘন মেকাপে ঢাকা পড়লেও এখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে তার।

একসময় সব শেষ হলো।শ্বশুরবাড়িতে নিজেদের ফুলে ফুলে সজ্জিত ঘরে ঢুকে চৈতী হাফ ছেড়ে বাঁচে।মনে মনে আশা করে নতুন এ জীবনে যেন হঠাৎ দেয়া দুঃস্বপ্নটা পিছু ছেড়ে যায়।


গভীর রাতে হঠাৎ চৈতীর ঘুম ভেঙে যায়।কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে কে যেন তাকে ডেকেছে!নাহ ভুল না,সেই কন্ঠস্বর! এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখেছে চৈতী,খাটের পাশে ছায়ামূর্তি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এবার অবয়ব স্পষ্ট।

চোখ বন্ধ করে থাকে চৈতী।পাশে তার গায়ে হাত রেখে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত স্বামীকেও ডাকতে পারেনা।কি বলবে তাকে?কে বিশ্বাস করবে তার কথা?

আজ সেই দিনটির কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে তার।একদিনের শিক্ষাসফরে দুজন শিক্ষকের সাথে সহপাঠীরা মিলে গিয়েছিল প্রাচীন এক স্থাপনায়।ঘুরে দেখতে দেখতে একটা ছাদ ধ্বসে পড়া ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল সে।এমন সময় মুহিত এসে পৌঁছায় সেখানে।সে হয়ত চলেই যেত কিন্ত চৈতী তাকে ডাকে ।

স্পষ্ট বোঝা যায় মুহিত তাকে পছন্দ করে কিন্ত ভালবাসি কথাটা মুখে বলেনি।বলেনি বলেই প্রত্যাখ্যানের আনন্দটা পায়নি চৈতী। শুধু দামী না হাতের নাগালের বাইরের দূর্লভ হতে ভাল লাগে তার।এইজন্য মাঝে মাঝে কিছুটা প্রশ্রয় দিতে হয়।চৈতী এক কোনে গিয়ে চুপ করে দাঁড়ায়।মুহিত এগিয়ে আসে।চৈতী তার দিকে তাকিয়ে থাকে চোখে প্রশ্রয় আর প্রত্যাশা নিয়ে।

এবার যেন আরেকটু সাহসী হয় মুহিত।খুব কাছে এগিয়ে আসে সে।ধূলোমেশা বকুলফুলের মত একটা গন্ধ পায় চৈতী।আজ যেন মুহিতের সংযমের বাঁধ ভেঙ্গেছে। একহাতে তার হাত ধরে অন্য হাতে চিবুকটা তুলে ধরে মুগ্ধ চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মুহিত।চৈতী ভাবে চুম্বন করবে নাকি ছেলেটা? কিন্ত মুহিত এবার ফিসফিসিয়ে বলে ''অনেক ভালো লাগে তোমাকে চৈতী।কখনো তোমার হাতটা ছেড়ে যাব না।''

এই সেই মুহূর্ত যার জন্য সে মনে মনে অপেক্ষা করছিল।তবে কিছু বলার আগেই তার কানে যায় ক্রমশ এগিয়ে আসা পদশব্দ,কথাবার্তা। হঠাৎই কিছু না ভেবে একটা চিৎকার করে মুহিতকে সজোরে পেছনে ঠেলে দেয় সে।পদশব্দধারী মানুষগুলো এবার দৌড়ে আসে।তাদের একজন শিক্ষক ও তিন চার জন সহপাঠী। মুহূর্তেই পরিস্থিতি বুঝে নেয় তারা। ছেলেগুলো বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরে মুহিতকে মারতে উদ্যত হয়।শিক্ষক ক্রন্দনরত চৈতীকে জিজ্ঞাসা করেন মুহিত তাকে একা পেয়ে বাজে ভাবে হয়রানি করেছে কিনা।তার মৌনতা অনেককিছুই বুঝিয়ে দেয়।শিক্ষক মুহিতকে একবছরের জন্য বহিস্কৃত করেন।বলে দেন যে,''চৈতীর সম্মানের কথা ভেবে আমি অফিসিয়াল নোটিস দিচ্ছিনা কিন্ত একবছরের মধ্যে যদি তোমাকে ক্যাম্পাসে দেখি তবে আমি লিগালি একশন নিতে বাধ্য হবো।তোমাদের মত কালপ্রিটকে আসলে পুলিশে দেয়া উচিৎ। ''মুহিত মাথা নিচু করে থাকে।কোনো প্রতিবাদ করেনা।

শিক্ষকের একান্ত তত্ত্বাবধানে বিষয়টি বেশি লোক জানাজানি হয়নি।তবে চৈতীর রূপমুগ্ধ সহপাঠীরা এত সহজে ছেড়ে দেয়নি মুহিতকে।সেই চারজন ছেলে তাকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে মারধোর করার পর স্থানীয় থানায় রেখে এসেছিল চুরির অপবাদে। মুহিত প্রতিবাদ করেনি বরং স্বীকার করেছে সকল অপরাধ।তিনমাস জেল হয়েছিল তার।পরদিন খবরটা কানে গিয়েছিল চৈতীর কিন্ত সে কিই বা করতে পারে?কিছুতেই তার ক্লিয়ার ইমেজে দাগ লাগানো যাবে না।বিশেষ করে সহায় সম্বলহীন এমন ছেলের সাথে তার নাম জড়াক এটা সে কখনোই চায় নি।সেদিন চিৎকার না করেও হয়ত লোকের চোখ এড়ানো যেত।কিন্ত হঠাৎ করে মাথায় কিছু আসেনি তার।সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।তারসাথে মুহিতকে দেখে যদি অন্যরা সন্দেহ করে।জুঁই এর কাছে শুনেছে মুহিত নাকি কারো কারো কাছে বলেছে,'চৈতীর কোনো দোষ নেই।দোষ আমারই।'

চৈতী ভাগ্যবান। তার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েও ছেলেরা নিজেদের অক্ষমতাকে দায়ী করে।তার প্রতি রাগ করে না।ক্লাস নাইনে যে ছেলেটি দুবছর ইয়ার ড্রপ দিল সেও কোনো অভিযোগ করেনি। দ্বাদশ শ্রেণিতে নেশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়া রিহ্যাবে ভর্তি ছেলেটিও কাওকে কিছু বলেনি।এইসব প্রায় সাত আট মাস আগের ব্যাপার।এতদিনে ভুলেও গিয়েছিল সে মুহিতের কথা।তবে সবকিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে তাকে এই ছায়ামূর্তি।


পরদিন রাতে চৈতীরস্বামী বিছানার একপাশে ঘুমে বিভোর। চৈতী জেগে আছে।সে অন্যরকম এক গন্ধ পাচ্ছে।ধূলোমাখা বকুলের মত গন্ধ।না তাকিয়েও সে বুঝতে পারছে তাদের মাঝখানে কেউ শুয়ে আছে।ছায়াছায়া ঠান্ডা মত কেউ।অবিকল মুহিতের মত কেউ।শুধু চেহারটা প্রানহীন,মায়াবী চোখদুটো আবেগহীন।সে চোখের পাতা এক করতে পারেনা।মনেহয় ঘুমালেই কেও তাকে ছুঁয়ে দেবে। চৈতী বুঝতে পেরেছে তার সাজানো সুন্দর জীবনে পাকাপাকিভাবে নেমে এসেছে অন্ধকার।সে বলেছিল ছেড়ে যাবে না।না যায় নি সে।চৈতীর আসেপাশেই থাকে এখন।হঠাৎ করে ডেকে ওঠে- চৈতী,এই চৈতী!



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



এগুলো সঠিক প্লট নয়।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১২

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: বিষয়টি বুঝিয়ে বললে ভাল হতো---

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প ভৌতিক হলেও প্রেম ভালোবাসা আছে।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৫২

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: প্রেম ভালবাসাও তো ভুতের মতই।
ঘাড়ে উঠলে আর নামতে চায়না।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: দেশের প্রচলিত একটা কথা আছে,"পাপের ধন প্রায়শ্চিত্যে যায়" তা একেবারেই যে ভূল তা নয় । সাথে সাথে এ দুনিয়ায় সবকিছুরই একটা সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয় ।তা সে মানুষে পাপ কিংবা পূন্য যাই হোক ।আর প্রকৃতি সব কিছুই ফিরিয়ে দেয় যথাসময়ে কোন কিছুই বাকী না রেখে।

চৈতি যে অন্যায় মুহিতের সাথে করেছে তার জন্য তাকে একজীবনেই মানষিক যন্ত্রণা সহ আরো অনেক ভাবে প্রায়শ্চিত্য করতে হতে পারে।

গল্পে +++।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৯:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: ভৌতিক আবহে প্রেম-ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.