![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেউ কেউ রাত্রি গভীর হওয়ার অজুহাতে তখনই পাত্রীর সম্মতি জানার জন্য অস্থির হয়ে পড়ল। অবশেষে মৌলভী সাহেব তার লেখা কয়েকটি লাইন পড়ে পাত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, বলুন কবুল।
কিন্তু বালিকার বয়স পনেরো /ষোলো বছর হলেও অন্য কারো কণ্ঠেই হোক, ভাবীর কণ্ঠেই হোক আর সংজ্ঞাহীন পাত্রীর কণ্ঠেই হোক তা জানার কারো অবকাশ রইল না। সকলে ঢেকুর ছেড়ে পান চিবাতে চিবাতে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে সুংসবাদের আনন্দধ্বনি ছড়াতে লাগল। শুধু যার বিয়ে তার সম্মতির কথা জানা গেল না। জীবনের এমন আনন্দের দিনকে উপভোগ করা তো দূরের কথা, জীবনের একান্ত আপন পুরুষটিকেও একবার চোখে দেখার সুযোগ হলো না।
একটা অবোধ বালিকা নিজের ইচ্ছা, অধিকার, স্বাধীনতাবুঝবার আগেই সমস্ত আশা আকাংখা বিসর্জন দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে দায়মুক্ত করে ত্রিশোর্ধ একজন পুরুষের কাছে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সঁপে দিয়ে সংসার করতে চলল !
বাড়ি ভর্তি লোকজন , হৈ চৈ । খাবার দাবারের আয়োজন । আজ সোমার বিয়ে । পাত্র লন্ডন প্রবাসী । মাত্র ৩ দিন আগে কনে দেখতে এসে পাত্র পক্ষ পছন্দ করল সোমাকে । সামনে সোমার এইচএস সি পরীক্ষা । ঠিক এই মুহূর্তে বিয়েতে রাজি ছিলোনা সোমা । প্রথম প্রথম আমতা আমতা করলেও আত্মীয় স্বজন এর চাপে সোমার বাবাও আর অমত করলেন না । লন্ডন প্রবাসী বর , দেখতে সুদর্শন , টাকা পয়সারও অভাব নেই । এমন পাত্র হাত ছাড়া করা মোটেই ঠিক হবেনা বললেন সোমার মামি । সোমার বাবা একটা দাবি করেছিলেন , আগে পরীক্ষা শেষ হোক , তারপর বিয়ে । বরের ফুপু বললেন , বিয়ের পড়ে বুঝি মেয়েরা পড়াশুনা করেনা ? অবশেষে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হোল । বধু বেশে পুতুলের মতো করে সাজানো কালো কাজলের চোখ দিয়ে অবিরাম কাঁদতে কাঁদতে বরপক্ষের গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলো সোমা । গাড়ির গ্লাসের ভীতর দিয়ে বাবা মায়ের চোখের মাঝেই আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলো বারবার । কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়া মেয়েটি এইবার এসে দাঁড়ালো শ্বশুরবাড়ির দরজায় । নানা নিয়ম কানুন এর দরজা পাড়ি দিয়ে ফুলশয্যার ঘরে প্রবেশ করলো সোমা । নতুন পরিবেশ , নতুন মানুষজন , বর বেশে একজন সবকিছুই ক্যামন যেন !! নিজেকে সোকেসের পুতুল মনে হচ্ছে । আত্মীয় সজনেরা উঁকি ঝুঁকি মেরে নতুন বৌ কে দেখছে । ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ওর স্বামী বাসর ঘরে প্রবেশ করলো । দরজার সিটকিনি লাগিয়ে পাশে এসে বসলো । সোমার হাতে হাত রাখল । এই প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ পেলো সোমা । অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করলো ওর শরীরে । শিহরিত হোলো ও । এরপর ১০দিন গড়িয়ে যায়! সোমার স্বামী ওর কাছেও আসতে চায়না !! কি কারন জানেনা সে !!
পরের দিন নাস্তার টেবিলে লোকজনের ভীড়ে নিজেকে কেবল সঙ সেজে ঢং করে বসে থাকা পাপেট মণে হচ্ছে ।
মানুষের জীবন খুব অল্প সময়ের । এই অল্প সময়ে মানুষ নানা রকম স্বপ্ন দ্যাখে । সো
মার স্বপ্ন ভালো ফলাফল করে মেডিকেল কলেজে পড়বে । পরীক্ষা আর বেশি বাকী দিন নেই । শোমা তার স্বামীকে বলল , আমি একটু পড়াশুনার পরিবেশ চাই । সে বলল বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর পড়াশুনা করে কী হবে ? আমি তো তোমাকে দিয়ে চাকরী করাবো না । লন্ডনে আমার নিজের দোকান আছে । লাখ লাখ টাকা আয় করি । আমার বৌ পড়াশুনা করবে , চাকরী করবে ?? না না একদম না । লোকটার কথা শুনে বিস্মিত সোমা । বিয়ের আগে তো বলেছিলেন পড়াশুনা করাবেন !! এখন তবে ঊল্টো বলছেন কেন ? সে বলল পড়াশুনার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো । বাকরুদ্ধ সোমা । নিঃস্ব নির্জন ভাবে থেমে যেতে লাগলো সোমার স্বপ্ন !! তবে কি বিয়ে মানে পরাধীনতার শিকল পায়ে দিয়ে নিজকে বিসর্জন দেবার নামান্তর ?
আঘাতের আগুনে জর্জরিত সোমার হৃদয় । আমরা কবে মুক্তি পাবো চেতনার এই সর্বনাশ থেকে ?? এও এক বিচিত্র বলি । স্বপ্নের বলি । এস এস শি পরীক্ষায় স্টার মার্ক পেয়েও এখন পরীক্ষা দিতে না পাড়ার কষ্ট তীরের মতো বিদ্ধ করছে সোমা কে । মনে মনে ভেবে চলেছে কেন এই নিয়মের মিথ্যে জ্বালে নিজেকে সঁপে ছিলাম ?? সোমা ওর স্বামীর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসে পড়লো । শুধু আমাকে এই পরীক্ষা টা দিতে দাও ! তারপর নাহয় আমি পড়াশুনা বন্ধ করে দেবো । ইচ্ছা প্রবল হলে অকল্যাণের সাধ্য নেই গন্তব্যকে আড়াল করে । রাজা রাম মোহন চিতার আগুনে সহমরণ বন্ধ করেছিলেন । সংসার সমাজে নারীকে পোড়াবার আগুণ কোন অংশে কি কম লেলিহান ?? ওর কান্না আর কাকুতি মিনতি তে অবশেষে তিনি অনুমতি দিলেন পরীক্ষা দেবার ।
সংসারে সবার মন যুগিয়ে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে , চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে সোমার ।
পড়াশুনার জন্য ২/১ ঘণ্টা সময় বের করা খুব কঠিন । তবুও ভালো ফলাফল ওর চাই !
অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে পরীক্ষা দিলো । প্রথম বিভাগ পেয়ে পাশ করলো । উচ্চতর পড়াশুনার অদম্য বাসনাকে গলা টিপে হত্যা করলো । বিয়ের ৪ মাস পেরিয়ে গেছে । ওর স্বামী আবারো পারি জমাল লন্ডনে । সোমার পেটে এলো সন্তান । আর এই সন্তানের দোহাই দিয়ে ওর স্বামী বেঁচে যায় পড়াশুনা বন্ধ করে দেবার অভিযোগ থেকে । সন্তান পেটে নিয়ে স্বামী ফিরে আসার অপেক্ষায় কেটে যায় দিন গুলো ! একটা ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান প্রসব করে সোমা ।
দেড় বছর পর ফিরে আসে লোকটা । এইবার তাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করে সোমা ।
এইবার যেন আগের থেকে বেশি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো সোমার জীবন !! এখন আর আগের মতো কাছে আসা তো দূরে থাক ! এক বিছানায় ঘুমাতেও চাইতোনা লোকটা !!
মাঝে মাঝে বলতো মেয়েদের গা এর গন্ধ নাকি তার অসহ্য লাগে । কিছু বূঝে উঠতে পারেনা সোমা । এমন ভাবে বদলে গেলো কেন সে ? লন্ডন থেকে ফিরে বাসায় ছেলে বন্ধু আর মদের আড্ডা চলে প্রতিদিন ! নিজের ছেলেটা কেও কোলে নিতে তার অনীহা ! বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে । যে লোকটার জন্য নিজের সব স্বপ্ন গুলোকে হত্যা করেছে তাকে আজ বড়ো অচেনা লাগছে । ওর স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণের উত্তর খুঁজতে থাকে ও । আজ তাকে জানতেই হবে ঘরের দরজা বন্ধ করে ছেলে বন্ধুদের নিয়ে কী করে লোকটা ? দরজার ফুটো দিয়ে ভীতরে তাকাতেই একি দেখলো ? ছেলেদের সাথে সহবাস ?? তবে কি ওর স্বামী সমকামী ?
মাথাটা ঘুরে ঊঠলো ! কাঁধের উপর একটা সান্ত্বনার হাত এসে পড়লো ! সোমার ননদ এসে বলল ভাবী তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ।
ভাইয়া বহুবছর আগে থেকেই সমকামী ছিল । ভেবেছিলাম বিয়ে করালে সব ঠিক হয়ে যাবে !!
গা ঘিন ঘিন করছে সোমার ! কোলের শিশুটাকে নিয়ে কী করবে ও এখন ? কী করে এই বিকৃত লোকটার সাথে সংসার করবে ??
প্রতিদিন একটি করেও যদি আমরা এমন স্বাধীনতার মৃত্যু দেখি , তবুও আমরা নির্লিপ্ত বসে থাকি । আমাদের মনে কোন চেতনার চাবুক পড়েনা?
অতপর ডিভোর্স !! নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার পরাশুনা শুরু করলাম ছেলেটা কে বুকে নিয়ে ! শেষ করলাম পড়াশুনাও , কোনোদিন খোঁজ নেয়নি সেই পাষণ্ড লোকটি তার ছেলের !! সব ভুলে শুধু ওকে আঁকরে ধরেই বেঁচে ছিলাম , যেদিন ওর ৭ বছর পূরণ হলো হটাত একদিন লন্ডন থেকে ফিরে ছেলেকে নিয়ে যাবার জন্য মামলা করলো ! টাকার জোরে মামলা জিতে আমার একমাত্র সন্তান কে কেড়ে নিয়ে পাড়ি জমালো পরবাসে !!
আর আমি অনাথের মতো পৃথিবীর পথে পথে হাঁটতে লাগলাম । আজো হেঁটে চলেছি । স্রেফ একা ।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৭
বিপ্লব৯৮৪২ বলেছেন: নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার পরাশুনা শুরু করলাম ছেলেটা কে বুকে নিয়ে ! শেষ করলাম পড়াশুনাও
প্রথমদিকে গল্প বলে মনে হলেও শেষের দিকের উপরের লাইনটি পড়ে মনে হল এটা আপনার নিজেরই গল্প। আবার পরপর ২টি পোস্টে দেখলাম ডাঃ আলতাফ নামে কাঊকে খুঁজছেন।
বোঝা যাচ্ছে আপনি একটি কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছেন।তবে যা হারিয়ে যায় তা ফিরে পাওয়া যায় না। আপনার জীবন সুন্দর হোক।
৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
আহসান২০২০ বলেছেন: আমি ছিলাম। আমাকে পাত্তাই দিলো না। আমার সাথে একটু বৃষ্টিতে ভিজলে বা হুট খোলা রিকশায় ঘুরলে হয়তবা এমনটি হতো না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২২
উড়োজাহাজ বলেছেন: গল্প কি শুধু গল্পই?